শূণ্যে দোল খাওয়া..ফিলিং মোগলী!!

লিখেছেন লিখেছেন শুকনোপাতা ০৪ অক্টোবর, ২০১৩, ০৩:৩৪:৩৮ দুপুর



ঘরে ঝুলানো পর্দা ধরে ঝুলার অভ্যাস কোন কালে ছিলো না ব্যাপারটা এমন না!ব্যাপারটা হলো,ছোট বেলায় 'মোগলী' আর 'টারজান' দেখার প্রতিক্রিয়া স্বরূপ একটা ধারনা মনের ভেতর তৈরী হয়েছিলো,যে 'ওওওঅ' করে চিৎকার দিলে 'টারজান' হওয়া যাবে আর ঘরের দরজায় লাগানো পর্দা ধরে ঝুলার ব্যার্থ চেষ্টা করলে 'মোগলী' হওয়া যাবে!

সেই থেকে পর্দা ধরে প্রথমে শূণ্যে দোল খাওয়ার চেষ্টা থেকে বর্তমানে পর্দা ধরে এ মাথা থেকে ও মাথা পর্যন্ত হাঁটতে হাঁটতে আম্মুর কাছে থেকে এটা-সেটার পারমিশন নেয়া। বেশিরভাগ সময় কাজটা করতে গেলে পর্দাটা 'ঠাশ' করে খুলে পরে যায়। তখন দুই রকমের রিএকশ্যান হয়।

রিএকঃ১ (আম্মু)

'কথা বলতেছিস বল,পর্দা ধরে টানার কি আছে?তুই তো মনে হয় টানতে টানতে কোনদিন পর্দার কাপড়টাই ছিঁড়ে ফেলবি!'

রিএকঃ২ (আমি)

'তোমাকে কতো তোষামদ করা লাগে আম্মু?!!সেই কখন থেকে বলতেছি,বলতে বলতে পর্দাটাই ছিঁড়ে ফেললাম কিন্তু তাও তুমি হ্যাঁ বলতেছো না!আজীব!!!'

এই ধরনের অলীক ধারনা গুলো বা কাজ গুলো জীবনের ছোটবেলার কিংবা কৈশোর কাল পর্যন্ত সীমাবদ্ধ থাকাটা স্বাভাবিক এবং উত্তম। কিন্তু কথায় আছে,'আজাইরা কাজ করার কোন বয়স নাই'! কিংবা 'অকাম বুঝে না বয়স-মন'!! তো সেখানে আমার মতো মানুষের আর কি ই বা বলার থাকতে পারে,করার তো দূরের কথা! :P

সদ্য 'ডেঙ্গু জ্বর' থেকে আল্লাহর অশেষ রহমতে মুক্তি পেলাম,শরীর ভালোই দুর্বল বলা যায়। বেশিক্ষন কোন কাজ করলে চোখে অন্ধকার দেখছি,মনে হচ্ছে সারা দুনিয়া ঘুরছে!একদিকে একের পর এক স্যালাইন পুশের যন্ত্রণা তারউপর এন্টিব্যায়োটিক খাওয়ার পর তো এতো দুর্বল লাগে যে কম করে হলেও আধা ঘন্টা শুয়ে থাকতে হয়। এই অবস্থায় সারাক্ষন এটা সেটা খাওয়া নিয়ে একটু পর পর আম্মু হাজির হচ্ছে,বাসায় সারাদিনই কেউ না কেউ 'রোগী দেখা'র হিসেবটা বাড়ানোর জন্য আসছেন। কেউ আসলে পরে সময়টা ভালোই কাটে,তবে উপদেশের পর উপদেশ শুনতে শুনতে আমি বেজায় ক্লান্ত!

যাইহোক,আল্লাহর রহমতে সেদিন সকাল থেকে বেশ ভালো বোধ করছিলাম। মাথা ঘুরছিলো ঠিকই কিন্তু তাও শরীরটা ভালো লাগছিলো। বেশ কিছুক্ষন পড়লাম,ক'দিন পরেই মিডটার্ম পরীক্ষা তাই,তারপর কিছুক্ষন পিসি তে যেয়ে ফেবু-ব্লগে ঢুকলাম,বান্ধবীদের ফোন দিলাম,সুখ-দুঃখের কথা বললাম :P মাঝখানে আম্মু তার রুম থেকে এলার্ম ঘন্টা বাজালেন,

'কিরে?তুই কি সুস্থ হয়ে গেছিস?তুই চা খাচ্ছিস কেন?তোকে ডাক্তার বলছে,বেশি করে তরল খাবার খেতে,স্যালাইন খেতে আর সে চা খাচ্ছে!দাঁড়া,ডাক্তারকে বলতে হবে আরো ২টা স্যালাইন পুশ করে দেয়ার জন্য!'

কি আর করা?এক বোতল জুস নিয়ে রুমের এই মাথা থেকে ঐ মাথা পর্যন্ত পায়চারী করতে লাগলাম। পায়চারী করতে করতে আবিস্কার করলাম,আমার বিছানা থেকে দরজার পর্দাটা ধরে যদি ঝুলা যায় তাহলে একটানে অনেকদূর যাওয়া যাবে!!! আশ্চর্যজনক ব্যাপার!আমি এটা এতোদিনে খেয়াল করলাম! Surprised

ভাবতে ভাবতে জুসের বোতলটা টেবিলে রেখে আমি লাফ দিয়ে বিছানায় উঠলাম,আমার সম্পূর্ণ মনোযোগ পর্দা ধরে শূণ্যে দোল খাওয়ার দিকে!কিন্তু বাস্তবে ব্যাপারটা কি ঘটতে যাচ্ছে সেটা ঐ মূহুর্তে আমার মাথা থেকে সম্পূর্ণ ভাবে হাওয়া!!

পর্দাটা ধরে আমি লাফ দেয়ার জন্য রেডী,ঠিক তখনই ঘটল একখান বিপত্তি!একদম সেই রকম বিপত্তি যাকে বলে!

বলা নেই কওয়া নেই,আমার পায়ের ধাক্কায় খাটটা গেল একদিকে সরে,আর আমি শূণ্যে দোল খেয়ে ভূপাতিত হওয়ার পূর্বেই ভূমিতে পতিত হলাম!হাতে ধরা পর্দাটাও যথারীতি খুলে পড়ে গেলো। পুরো বাসায় একসাথে তিনবার 'ধাম' শব্দ হলো!!!! :(

পরবর্তী দৃশ্য গুলো বেজায় স্বাভাবিক দৃশ্য!

রিএকঃ১ (আম্মু)

'তুই কি কোনকালে বড় হবি না?ডেঙ্গু জ্বর থেকে উঠতে না উঠতে তোর এখন হাত-পা ভেঙ্গে বিছানায় শোয়ার শখ হয়েছে না?আমাকে তুই আর কতো জ্বালাবি...ব্লা,ব্লা,ব্লা!'

রিএকঃ২ (পিচ্চি বোন)

'আপু,তুমি কি করতে চাচ্ছিলা?লাফ দিতে চাচ্ছিলা?এভাবে দেয়?আমাকে বলতা,আমি শিখায় দিতাম!' ব্লা,ব্লা!

আমার অবশ্য কোন রিএকশ্যান ছিলো না!কারণ,আমি ততোক্ষনে আবারো চোখে অন্ধকার দেখছিলাম। তবে শেষ মুহুর্ত পর্যন্ত আরেকবার মনে হচ্ছিলো,'আমার আর এই জীবনে মোগলীর মতো শূণ্যে দোল খাওয়া হইলো না!আফসোস!' :(

বিষয়: সাহিত্য

২০১৮ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File