সংরক্ষণ ও রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে স্থাপত্যকলার অন্যতম নিদর্শন নাটোর রাজবাড়ী অতীত গৌরব হারাতে বসেছে

লিখেছেন লিখেছেন Abdullah ০৯ মার্চ, ২০১৩, ০৪:৪৯:৫২ বিকাল



অযত্ন, অবহেলা ও সঠিক রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে স্থাপত্যকলার অন্যতম নিদর্শন অর্ধবঙ্গেরশ্বরী রানীভবানী খ্যাত নাটোর রাজবাড়ী অতীত গৌরব হারাতে বসেছে। অথচ এই রাজবাড়ীর রাজাদের অনন্য কৃতিত্বে নাটোরবাসীর কাছে আজো অমর হয়ে রয়েছে। ১৭ শতকে নির্মিত দৃষ্টিনন্দন এই রাজবাড়ীর প্রতিষ্ঠার পেছনে রয়েছে এক অনবদ্য ইতিহাস।

নবাবের কাছ থেকে জমিদারী লাভের পর ১৭১০ সালে রাজা রামজীবন নাটোর শহর থেকে ১ কিলোমিটার দূরে বঙ্গজল এলাকায় ৫১ একর জমি জুড়ে বিশাল এই রাজবাড়ীটি নির্মাণ করেন। রাজবাড়ী নির্মানের স্থানটি এক সময় ছাইভাঙ্গার বিল নামে পরিচিত ছিল। রাজা রামজীবন নৌকা করে এখানে আশার সময় দেখতে পান একটি বড় ব্যাঙ একটি সাপ ধরে খাচ্ছে। আর একটি বেজী সাঁতার কেটে চলে যাচ্ছে। এ দৃশ্য দেখে দুটি বালক হাত তালি দিয়ে নাচা-নাচি করছে। চমকপ্রদ এই দৃশ্য, দেখে রাজা রামজীবন এই ছাইভাঙ্গার বিলে রাজবাড়ী নির্মানের সিদ্বান্ত নেয়। পরে মাটি ভরাট করে এখানে নাকি রাজা রামজীবন দৃষ্টি নন্দন রাজবাড়ীটি নির্মাণ করেন। ১৩৯ টি পরগনা নিয়ে গঠিত নাটোর রাজ্যের এই রাজবাড়ীটি ছিল প্রধান প্রশাসনিক কার্যালয়। পরবর্তীতে রাজ্যের আয়তন বেড়ে দাড়ায় ১২ হাজার বর্গ মাইল। বার্ষিক মূনাফা ছিল ৩৫ ল টাকা। রাজা রামজীবনের প্রধান দেওয়ান ছিলেন দয়ারাম রায়। ১৭১০ সাল থেকে ১৯৪৭ সাল পর্যন্ত পর্যায়ক্রমে বিভিন্ন রাজাগণ রাজ্য শাসন করেন। রাজা রাম জীবনের দত্তক পুত্র রাজা রামকান্তের স্ত্রী রানী ভবানী পরবর্তীতে বিভিন্ন জনহিতকর কর্মের মধ্য দিয়ে এই রাজবংশকে ইতিহাসে স্থান করে নেয়। ১৭৮৬ সাল পর্যন্ত নাটোর রাজ্য ছিল ভারত বর্ষের মধ্যে বৃহত্তম জমিদারী। সে সময় রানী ভবানী রাজ্য ভ্রমন করতে ৩৫ দিন সময় লাগতো। বাৎসরিক রাজস্ব আয় হতো দেড়কোটি টাকা। মহারাণী রাণী ভবানীর দত্তক পুত্র রামকৃষ্ণের মৃত্যুর পর বিশাল এই জমিদারি দুই পুত্র বিশ্বনাথ ও শিবনাথ রায়ের মধ্যে ভাগাভাগি হয়ে বড় তরফ ও ছোট তরফ নামে দুটি জমিদারির উত্থান ঘটে। অপরুপ কারুকার্য খচিত বিশাল এই রাজবাড়ী চত্বরে ছোট বড় মিলিয়ে ১৫টি ভবন রয়েছে। বাহিরের শক্রুর হামলা থেকে রাকল্পে রাজবাড়ীর চতুরদিকে রয়েছে চৌকি বা পরিখা। একতলা বিশিষ্ট মূল রাজপ্রাসাদে ক রয়েছে ১৫টি। এই রাজভবনে রাজা রামজীবন, রামকান্ত ও অর্ধবঙ্গেরশ্বরী রাণী ভবানী প্রশাসনিক কার্যক্রম চালায়।

১৮৯৭ সালের ১২ জুনের এক ভূমিকম্পে রাজ বাড়ীর ব্যাপক তি হয়। মূল রাজ প্রাসাদ, সৈন্য ব্যারাক, মালখানা, মন্দির, পুকুর, দেশী-বিদেশী গাছপালা সহ বিশাল পরিধির এই রাজ বাড়ীর চত্বর সকল ভ্রমন বিলাশীদের হাত ছানি দেয়। অবহেলিত এই রাজ বাড়ীটিকে ঘিরে অনেক পরিকল্পনা গ্রহন করা হলেও আজ পর্যন্ত কোন পরিকল্পনাই বাস্তবায়ন হয়নি। ১৯৯৭ সালে রানী ভবানী ফাউন্ডেশন ও যাদুঘর করার পরিকল্পনা গৃহীত হলেও তা বাস্তবায়িত হয়নি। ১৯৫২ সালে জমিদারী প্রথা উচ্ছেদ হলে পরবর্তী বংশধর সকলে একে একে কলকাতা চলে যায়। এর পর এই রাজবাড়ীতে বিভিন্ন সময় সরকারী অফিস থাকলেও কোন সংস্কার হয়নি। বর্তমানে রাজবাড়ীর দুটি মূল রাজপ্রাসাদ সহ অনেক ভবন, রাণী ভবানী যুব পার্ক আজ ধংসপ্রায়। রাণী ভবানী রাজবাড়ীটি সংশিষ্ট কর্তৃপরে চরম অবহেলা আর উদাসিনতা করুন চিত্র ফুটে উঠেছে। অনেক ভবনের দরজা-জানালা পর্যন্ত নেই। মেঝের মূল্যবান শ্বেতপাথরের টাইলস গুলো পর্যন্ত খুলে নিয়ে গেছে। ভবনের কারুকার্য খচিত দেব-দেবীর চিত্র সহ প্লাষ্টার নষ্ট হয়ে গেছে। সরকারের প্রতœতত্ব বিভাগ রাজবাড়ীটিকে সংস্কার করলে শত শত পর্যটকের আগমন ঘটবে। এতে সরকাররের রাস্বজ বৃদ্ধি পাবে। দৃষ্টিনন্দন ও স্থাপত্বকলার অন্যতম নির্দেশন এখনও অতীতের সুন্দরর্য্য ধরে রেখেছে। ফলে অর্ধবঙ্গশ্বরী খ্যাত রাণী ভবানী রাজবাড়ীটি দেখতে প্রতিদিন দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে শত শত পর্যটক পরিদর্শন করতে আসে।

বিষয়: বিবিধ

২৪৫৯ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File