কারাগারে পহেলা বৈশাখ
লিখেছেন লিখেছেন নোমান সাইফুল্লাহ ১৪ এপ্রিল, ২০১৪, ০৫:৪৪:১৩ বিকাল
বাঙালী জাতির ইতিহাসে পহেলা বৈশাখ এর রূপ রঙ ঘ্রাণ হয়তবা পান্তা ইলিশ ছিল না। তবুও আবহমান বাঙালী সংস্কৃতিতে পহেলা বৈশাখ একটি উচ্ছাস আনন্দের দিন। অন্ততঃ এক দিনের জন্য হলেও বিভেদ দন্দ্ব ভুলে যেতে পারি। বৈশাখী উচ্ছাসে নোংড়া রাজনীতির খোলস ভেঙে প্রকৃত দেশ প্রেমিক হতে পারি, সেটাইবা কম কিসে?
কারাগারে পহেলা বৈশাখঃ
গত বছর এই দিনে সৌভাগ্য অথবা দুর্ভাগ্যবশতঃ কারাগারে কাটাতে হয়েছিল। যদিও আমি কারা বরনকে সৌভাগ্যই মনে করি। মজলুম জনতার আর্তনাদ আর মিথ্যা মামলায় আটক হাজারো যুবকের কষ্টগুলো খুব কাছ থেকে ছুঁয়ে দেখার সুযোগ সবার হয় না। প্রসঙ্গতঃ বলে রাখি গত বছর মার্চ মাসে গণগ্রেপ্তারের শিকার হয়ে কারাযাপন করেছিলাম সম্পূর্ণ মিথ্যা এবং বানোয়াট অভিযোগে। আর এসব গণগ্রেপ্তারে নেতৃত্ব দিয়েছে গোপালগঞ্জ নামক বিশেষ এলাকার দলীয় কর্মচারী।
প্রথম প্রহরঃ
পহেলা বৈশাখে কারাগার নানান রঙে সাজানো হয়। সকালে নামাজ পড়ার পর থেকেই কারাগারের পুরনো কয়েদিরা সজাগ। কারণ অন্যদিন এ সময় সাধারণতঃ আমরা অল্পকিছু মানুষ ছাড়া ফজরের নামাজ কেউই আদায় করে না। কিন্তু এই দিন সবাই ঘুম থেকে উঠে প্রস্তুত। কিন্তু কিসের প্রস্তুতি সেটা বুঝলাম কিছুক্ষণ পর। একটু পরেই কারাকর্তৃপক্ষের পক্ষ থেকে বিশেষ খাবার প্রদান করা হলো। প্রসঙ্গতঃ বলে রাখি কারাগারে সবচেয়ে বেশী কষ্ট হয় খাওয়া-দাওয়ার। এখানে যেসব খাওয়ার দেয়া হয়, তা এক কথায় খাবারের অযোগ্য। বছরে বিশেষ কয়েকটি দিনে ভালো খাবার দেয়া হয়। আর কয়েদিরা সারা বছর এই দিনের জন্য অপেক্ষা করে থাকেন।
যাহোক প্রহেলা বৈশাখে সকালের খাবারে দেয়া হলো খুব অল্প পরিমানে পান্তা ভাত এবং বেশ ভালো সাইজের ইলিশ মাছ। এরপর দুপুরে প্রদান করা হলো পোলাও এবং গরুর গোশত। কারাগারে সব ধর্মের মানুষই গরুর গোশত খেয়ে থাকেন। আর রাতের বেলা অন্য দিনের মতই সাধারণ খাবার।
প্রিয়জনের সাক্ষাৎ এবং খাবার প্রদাণঃ
বছরের বিশেষ দিনে কারাগারে প্রিয়জনদের সাথে সাক্ষাৎ করতে কোন ফি প্রদান করতে হয় না এবং বাহির থেকে রান্না করা খাবার প্রদান করা যায়। আর তাই এই দিনে হাজার হাজার মানুষ ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে সাক্ষাৎ করতে আসেন। সঙ্গে নিয়ে আসেন বাড়ির রান্না করা খাবার। এই দিন আমার সাথে দেখা করতে আসেন আমার ছোট ভাই এবং দুই বন্ধু। সঙ্গে নিয়ে আসেন বাসায় রান্না করা গরুভুনা, মুরগীর গোশত, ডিম, মাছ এবং পোলাও। প্রিয়জনদের দেখে মন খারাপ হলেও তাদের কাউকেই বুঝতে দেইনি। ভীষণ ভালো লাগলো প্রিয়জনদের সাথে সাক্ষাতের পর। তবে পহেলা বৈশাখে সাক্ষাৎ করতে যাওয়া অত্যন্ত কষ্টকর। কারণ হাজার মানুষের ভীড় ঠেলে সাক্ষাৎ কক্ষে প্রবেশ করতে হয় এবং গ্রিলের ছোট-ছোট ছিদ্র দিয়ে নিজের মানুষকে খুঁজে পাওয়া খুবই দুষ্কর।
ভালো খাবার এবং বিড়ম্বনাঃ
কারাগারে আমার সাথে যারা ছিলেন সবাই একই ধরনের মামলায় আটক ছিলেন। পহেলা বৈশাখে সবার বাসা থেকে ভালো খাবার এসেছিলো। এক সময় দেখাগলো খাবারের স্তুপ হয়ে গেল। কারণ আমরা প্রায় ২০ জনের মত একসাথে ছিলাম। খাবার নষ্ট হয়ে যাওয়ার আশংকায় সবাই খাবার শেষ করার দিকে মনোযোগ দিলাম। সেই সাথে আশপাশের যে সব গরীব কয়েদি ছিল তাদের মাঝেও খাবার বিলিয়ে দিলাম।
কিন্তু বিড়ম্বনা হলো পরের দিন। কারণ পরের দিন ভাতের সাথে আর কোন তরকারী নেই। আগের দিন ভালো খাবার প্রদাণ করা হয়েছে তাই....আর এরই নাম বাংলাদেশ!
কারাগারে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান এবং জামাত-শিবির ভীতিঃ
কারাগারে দুপুরবেলা সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। আর এতে উপস্থিত থাকেন পুলিশের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা, আইজি, জেল সুপার। কর্তৃপক্ষের পক্ষ থেকে জানানো হয়, যারা জামাত শিবির মামলায় আটক তাদের সবাইকে প্রহেলা বৈশাখে একটি কক্ষে আটক করে রাখা হবে, কারণ জামাত শিবিরের লোকজন সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে গেলে নাশকতা ঘটতে পারে! ভারি আজব ব্যাপার। আসলে শয়তান সব সময় প্রকৃত ঈমানদ্বারদের ভয় পায়।
শেষ কথাঃ
অন্ধকার দুঃসহ কারাগারে এখনো আটক রয়েছে শত শত নিরঅপরাধ যুবক। আইনের নামে বেআইনি অপশাসনের শিকার হয়ে নিঃসঙ্গ কারাযাপন করছেন অগনিত ভাইয়েরা। আইন, আদালত সব জায়গায় ফ্যাসিবাদের কালো থাবা। মানবাধিকার আজ পদতলে পিষ্ঠ। আজ পহেলা বৈশাখে কারাগারে আটক সকল নিরঅপরাধ ভাইদের জন্য স্বশ্রদ্ধ সালাম এবং শুভেচ্ছা। তোমাদের অশ্রুই আগুন জ্বালবে ফ্যাসিবাদের কালো শরীরে।
সবাইকে পহেলা বৈশাখের রক্তিম শুভেচ্ছা....
বিষয়: বিবিধ
২৩২৬ বার পঠিত, ২৪ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
সবচেয়ে হাসি পেল সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের ব্যাপারটা শুনে।
দুটো বিষয় জেনে ভালো লাগলোঃ
১। কারাগারে সব ধর্মের মানুষই গরুর গোশত খেয়ে থাকেন।
২। যারা জামাত শিবির মামলায় আটক তাদের সবাইকে প্রহেলা বৈশাখে একটি কক্ষে আটক করে রাখা হবে, কারণ জামাত শিবিরের লোকজন সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে গেলে নাশকতা ঘটতে পারে!
কাঁপে।যাহোক,সুন্দর পোস্ট।ধন্যবাদ
ব্লগারকে সম্পুর্ণ লোকচক্ষুর
আড়ালে থাকা মানুষদের নিয়ে লেখার জন্য।
আপনার লেখাটা চমৎকার।
আপনাকেও ধন্যবাদ। শুভ নববর্ষ...
আপনাকে শুভ কামনা....
আসলেই...
অনেক কিছু জানলাম।
সঙ্গে থাকার জন্য অনেক ধন্যবাদ শুভ কামনা...
মন্তব্য করতে লগইন করুন