বৈরী বাতাসে প্রিয় মৃত্তিকা
লিখেছেন লিখেছেন নোমান সাইফুল্লাহ ০৬ জানুয়ারি, ২০১৪, ০৫:২৯:১৯ বিকাল
প্রিয় মৃত্তিকাঃ
তোমাকে ভালোবাসি কিনা এ প্রশ্ন অর্থহীন। তোমার চোখে অশ্রু দেখে আমি নিশ্চুপ থাকবো কিনা এ প্রশ্ন অবান্তর। কেননা প্রতিটি শিশু জানে মাতৃপ্রেম কি। প্রতিটি নাগরিক জানে জন্মভূমির ভালোবাসা কি? তোমার বাঁধন ছেড়ে যদি শত সহস্র মাইল পাড়ি জমাই, তবুও তোমার প্রতি ভালোবাসার প্রতিটি মুহুর্ত আমি বেভুল থাকতে পারি না। চমকে উঠি। গভীর রাতে। যখন নদীর বুকে জোনাকিরা ঘর বাঁধে। কৃষকের ধান ভানার শব্দ, ভাঁপা পিঠার উষ্ণ প্রেম, কুয়াশার অন্ধকারে খেজুর রসের তৃষ্ণা, নাগরিক চুড়ুই পাখি আরো অজনা অজস্র পাখির পরিচিত কন্ঠস্বর, মফস্বলের নির্বাক পথ, ঘাসের চাদরে ঢেকে রাখা পুরনো দালানের মাঝে মধ্যবিত্ত প্রেম, বাঙালীর নারীর মমতা সব কিছু দু’চোখে চলমান দৃশ্যের সেলুলয়েড ফিতা। আমি জানি তোমার কোলে মাথা রেখে মৃত্যুর প্রশান্তি কি? আমি জানি আমার কবরের উপর তোমার সবুজ ভালোবাসার চাদরের মাঝে কি এক মহাজাগতিক প্রেম লুকিয়ে আছে। এক মুহুর্তের জন্য এই সবুজ ছায়া, বাঙালী বাতাসের অক্সিজেন ছাড়া বেঁচে থাকা বড় কষ্টকর।
বৈরী বাতাসঃ
হাজার বছর ধরে বৈরী বাতাসে আমরা রুখে দাঁড়িয়েছি দুর্বিপাক। যুদ্ধ, সংগ্রাম, দুর্যোগের ভেতর দিয়ে আমাদের ইতিহাস। হাতে হাত রেখে যুদ্ধে যাওয়ার জলন্ত স্মৃতি এখনো অম্লান।
স্বাধীনতা এবং স্বার্বভৌমত্বঃ
ইতিহাসের প্রতিটি বাঁকে আমরা অন্যায়ের বিরুদ্ধে যুদ্ধে রত ছিলাম। স্বাধীনতার প্রশ্নে আমরা আপসহীন। কোন মহারাষ্ট্রের নিকট প্রণাম জানানোর স্বভাব আমাদের পূর্বপুরুষের ছিল না, আমাদেরও নেই। খোদার কালাম পড়ে আমরা অত্যাচারী বুকে ঘৃণার তীর ছুঁড়ে দিতে দ্বিধা করিনি। প্রতিটি ইঞ্চি মাটির নিরাপত্তায় বুকের রক্ত ঢেলে গড়েছি প্রতিরোধ।
প্রিয় মৃত্তিকা, তুমি তো জানো, তোমার স্বাধীনতার যুদ্ধকে পুঁজি করে একদল স্বার্থবাদী মহল হরণ করে নিতে চায় আমার গণতান্ত্রিক অধিকার। হরণ করে নিতে চায় মা এবং বোনের সম্ভ্রম। লুট করে নিতে চায় রাষ্ট্রের সম্পদ। আর দাসত্বের পদতলে বিলাতে চায় রক্তের চাদরে ঢাকা একটি পতাকা।
যুদ্ধ এবং ধর্মঃ
প্রিয় জন্মভূমি, তোমার প্রতি ইঞ্চি মাটিতে ঘুমিয়ে আছে হাজারো সাধক পুরুষ। আওলিয়া, ইলমে দ্বীনের পথিকেরা। সুফি সাধকের ক্লান্তিহীন সাধনায় এ মাটি আল্লার নুরে প্রজ্জ্বল। শাহজালাল, শাহ মাখদুম, আওলাদে রাসুল(সাঃ) সহ অজস্র বুজুর্গে দ্বীন।
প্রিয় স্বদেশ, তুমি তো জানো স্বাধীনতার সংগ্রাম কখনো ধর্মের বিরুদ্ধে হয়নি। ইসলামের বিরুদ্ধে কখনো মুক্তি সংগ্রাম হয়নি। আমরা স্বাধীনতার যুদ্ধ করেছি অন্যায়ের বিরুদ্ধে, অত্যাচারের বিরুদ্ধে, নাগরিক অধিকার হরণ করার বিরুদ্ধে।
কিন্তু আজ!
একদল অবিশ্বাসী হতুম পেঁচা আমাদের প্রাণপ্রিয় ইসলামকে স্বাধীনতা যুদ্ধের চেতনা বিরোধী বলে অপপ্রচারে লিপ্ত। ইতিহাস স্বাক্ষী তারা কেউ যুদ্ধ করেনি, সংগ্রাম করেনি এবং তাদের পূর্ব পুরুষ কেউ ধর্মের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করেনি। তোমার সুর্যসন্তানদের লেখা ইতিহাস থেকে আমরা এ সত্য জেনেছি। মহান আল্লাহ বলেছেন, "ওরা ফুৎকারে দ্বীনের আলো নিভিয়ে দিতে চাইলেও আমি তা কখনো হতে দিব না।"
তাহলে কেন হতুম পেঁচাদের উল্লাসঃ
প্রিয় স্বদেশ, হতুম পেঁচার চিৎকারে তুমি কখনো ভয় পাওনি। বরং তোমার সন্তানদের বুকে খোদার কালাম পড়ে ফুঁ দিয়েছ এবং বলেছ- যাও বাবা, আল্লাহর নামে যুদ্ধে ঝাপিয়ে পড়ো।
ঐ সব হতুম পেঁচার দল, কখনো ইসলামের মুখোমুখি দাঁড়াবার সাহস নেই। আর তাই স্বাধীনতা যুদ্ধকে ধর্মের বিরুদ্ধে যুদ্ধ বলে অপপ্রচার করে মুছে দিতে চায় আল্লাহর পবিত্র নূর। আর দাসত্বের বল্কলে বাঁধতে চায় ৬৮ হাজার বর্গমাইল।
আমরা জেগে আছিঃ
প্রিয় জন্মভূমি, আমরা তোমার স্বার্বভৌমত্বের পাহারায় জেগে আছি নির্ঘুম। এক ইঞ্চি জমিন আমরা রক্ষা করব বর্গীর হাত থেকে। তুমি ভয় পেয়ো না। এই ধুসর রাত্রিতে তোমাকে একটি উজ্জ্বল দিন এনে দিব।
সংবিধানঃ
পবিত্র সংবিধানের অবমাননা কারা করেছে আমরা জানি। আমরা জানি পঞ্চম সংশোধনী বাতিল করে কারা জমিনকে বানিয়ে রক্তের গ্রাম। যে পঞ্চম সংশোধনী এই দেশে বহুদলীয় গণতন্ত্রের পথকে উন্মোচিত করেছিল, সেই পঞ্চম সংশোধনী বাতিল করে, কারা ন্যায়ের শ্লোগান তুলে আমরা তাদের চিনি। আমরা জানি তাদের ইতিহাস। একদলীয় শাসনের করাল গ্রাস। নৈরাজ আর দুর্ভিক্ষের কালো অধ্যায়। মানবাধিকার আর মত প্রকাশের অধিকার হরণ করা, কাদের স্বভাব সে কথা আমরা ভুলি নি।
প্রিয় স্বদেশ,
আমরা এই ন্যায়ের সংগ্রামে বিজয়ের পতাকা ছিনিয়ে আনতে বদ্ধপরিকর।
বিষয়: বিবিধ
২৫১৪ বার পঠিত, ২০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
আমরা জেগে আছি। আমরা জেগে থাকব। আমরা কাজ ফেলে ঘুমুতে শিখিনি। আমরা এখনো জীবিত আছি ক্ষত বিক্ষত শরীর নিয়ে। আমরা হারতে জানিনা...........
মন্তব্য করতে লগইন করুন