মত প্রকাশের স্বাধীনতাঃ প্রসঙ্গ ফরহাদ মজহার

লিখেছেন লিখেছেন নোমান সাইফুল্লাহ ৩১ অক্টোবর, ২০১৩, ১২:৩৮:২৯ রাত

পৃথিবীর প্রতিটি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে চিন্তা এবং মত প্রকাশের স্বাধীনতা প্রদান করা হয়েছে। এই মত প্রকাশের স্বাধীনতা শুধুমাত্র বাংলাদেশের সাংবিধানিক অধিকার নয়, এটি একটি বৈশ্বিক মানবাধিকার।

মত প্রকাশের আন্তর্জাতিক স্বাধীনতা বা মানবাধিকারঃ



১৯৪৮ সালে গৃহীত Universal Declaration of Human Rights এর আর্টিকেল ১৯ এ রয়েছে-

Everyone has the right to freedom of opinion and expression; this right includes freedom to hold opinions without interference and to seek, receive and impart information and ideas through any media and regardless of frontiers. এই ঘোষণাপত্রে স্বাক্ষরকারী দেশ হিসেবে বাংলাদেশকেও বাক এবং ব্যক্তির স্বাধীনতার নিশ্চয়তা দিতে হবে।

তারপর International Covenant on Civil and Political Rights (ICCPR) এর আর্টিকেল ১৯ ও কথাবলার অধিকারকে স্বীকৃতি দিয়েছে। "the right to hold opinions without interference. Everyone shall have the right to freedom of expression".

প্রসঙ্গ ফরহাদ মজহারঃ

বাংলাদেশ সংবিধানের প্রসঙ্গ পরে আসি। তারআগে কবি দার্শনিক ও কলামিষ্ট ফরহাদ মজহার প্রসঙ্গে একটু দৃষ্টিপাত করি। সম্প্রতি "একুশের রাত" নামক অনুষ্ঠানে ফরহাদ মজহার বাংলাদেশর সাম্প্রতিক রাজনৈতিক অচলাবস্থা বিশ্লেষণ করতে গিয়ে একপর্যায়ে মন্তব্য করেছেন, মিডিয়ার উপর হামলা হওয়া স্বাভাবিক। কারণ বর্তমানে বাংলাশের মিডিয়া একপাক্ষিক এবং একদলীয় মতামত প্রকাশ করে, ফলে বিপরীত শ্রেনী বা বিভিন্ন শ্রেনীর চিন্তা এবং মতামতকে হাজির করা হয় না। বরং সরকার ভিন্ন চিন্তা এবং মতামতকে কন্ঠরোধ করতে দিগন্ত টিভি, আমার দেশ পত্রিকা সম্পূর্ণ বেআইনীভাবে বন্ধ করে দেয়। সরকারের এই অন্যায়ের প্রতিবাদ না করে, মিডিয়া সরকারকে আরো বেশী ফ্যাসীবাদের প্রতি উষ্কে দিচ্ছে। এসব মিডিয়া সন্ত্রাসী মিডিয়া। এসব মিডিয়ায় আরো হামলা হওয়া অস্বাভাবিক নয়।
(তার বক্তব্যের সারমর্ম তুলে ধরা হলো)

কিন্তু তার বক্তব্যের যে অংশটি মিডিয়া প্রচার করছে না তাহলো

ফরহাদ মজহার বলেছেন, ‘এমন একটি সময় আমরা বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করছি, যখন আমার দেশ সম্পাদক মাহমুদুর রহমান কারাগারে এবং দিগন্ত টেলিভিশন, চ্যানেল ওয়ান, ইসলামিক টিভি বন্ধ। কিন্তু এর বিরুদ্ধে সাংবাদিকরা ঐক্যবদ্ধভাবে প্রতিবাদ জানাননি। সে হিসেবে বোমা মারার বদলে ফুটেছে কয়েকটি পটকা। কথাটা বলেছি প্রতীকী অর্থে। আমাকে কেউ ভুল বুঝতে পারেন। প্রকৃতপক্ষে আমি নিজেও গণমাধ্যমের মানুষ। গণমাধ্যমের প্রতি কোনো আঘাত, এমনকি একটি ঢিল কেউ ছুড়ুক, সেটাও আমি মনে করি না। এমন কিছু আমার কাছে গ্রহণযোগ্য নয়। আমি প্রচণ্ডভাবে মত প্রকাশের স্বাধীনতায় বিশ্বাসী। সেটা যদি আমার বিরুদ্ধ মতও হয়। গণমাধ্যমের স্বাধীনতার জন্য আমি সব সময় ভূমিকা রাখতে প্রস্তুত। তবে সেইসঙ্গে আমি এ কথাটাও বলতে চাই— গণমাধ্যমের কাছে মানুষ ন্যায়পরায়ণতা আশা করে।’ ফরহাদ মজহারের এই বক্তব্যকে বিকৃতভাবে সম্প্রচার এবং প্রকাশ করা হয়েছে কয়েকটি গণমাধ্যমে।



ফরহাদ মজহারের এই বক্তব্যের পর সাংবাদিকদের একাংশ বা সরকার সমর্থক গোষ্ঠী নড়েচড়ে বসেন। টিভি মালিকদের এক সংবাদ সম্মেলনে ফরহাদ মজহারের এই বক্তব্যের নিন্দা জানানো হয়। এবং তাকে আইনের আওতায় আনার জন্য আহবান জানানো হয়। ইতোমধ্য তার নামে থানায় জিডি করা হয়েছে। যেকোন সময় তিনি গ্রেপ্তার হতে পারেন।

এখানে একটা বিষয় সুস্পষ্ট, ফরহাদ মজহার যে দাবী করেছেন বর্তমান মিডিয়া সন্ত্রাসী মিডিয়া। এই দাবীর প্রমাণ হচ্ছে, তাকে গ্রেপ্তারের পায়তারা। সেই সাথে তার বক্তব্যকে বিকৃতভাবে প্রচার করে বর্তমান মিডিয়া হলুদ সাংবাদিকতাকে আরো বেশী উন্মোচিত করছে। ফরহাদ মজহার একজন বাম রাজনীতিবীদ, কবি, দার্শনিক এবং লালন গবেষক। তিনি একজন উঁচুমানের বুদ্ধিজীবি। যিনি সাম্রজ্যবাদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের জন্য আম-জনতাকে উদ্বুদ্ধ করছেন। তিনি কোন সন্ত্রাসী নন, তাকে গ্রেপ্তার করে নির্যাতন করতে হবে?

বাংলাদেশের সংবিধান সকল নাগরীকের মত প্রকাশের স্বাধীনতা দিয়েছে।

আর্টিকেল ৩৯ এ বলা হয়েছে-

“Freedom of thought and conscience is guaranteed”

“চিন্তা ও বিবেকের স্বাধীনতার নিশ্চয়তাদান করা হইলো”

এই অনুচ্ছেদটি সংবিধানের তুতীয় ভাগ মৌলিক অধিকার অংশে রযেছে। উল্লেখ্য এই অনুচ্ছেদ ৩৯(১) এ কোন রকমের রেস্ট্রিকশনের (বাধানিষেধ) কথা বলা হয় নি।

এবার আর্টিকেল ৩৯ (২) এর দিকে লক্ষ্য করি-

“Subject to any reasonable restrictions imposed by law in the interests of the security of the State, friendly relations with foreign relations with foreign states, public order, desency or morality, or in relation to contempt of court, defamation or incitement to an offence-

(a) the right of every citizen to freedom of speech and expression

( b) freedom of press

are guaranteed.

“রাষ্ট্রের নিরাপত্তা, বিদেশী রাষ্ট্রসমূহের সহিত বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক, জনশৃঙ্খলঅ, শালীনতা বা নৈতিকতার স্বার্থে কিংবা আদালত-অবমাননা, মানহানী বা অপরাধ, সংগঠনে প্ররোচনা সম্পর্কে আইনের দ্বারা আরোপিত যুক্তিসঙ্গত বাধানিষেধ – সাপেক্ষে

(ক) প্রত্যেক নাগরিকের বাক ও ভাব প্রকাশের স্বাধীনতার অধিকারের ,

এবং

(খ) সংবাদক্ষেত্রের স্বাধীনতার

নিশ্চয়তা দান করা হলো।

ফরহাদ মজহারের বক্তব্য বিকৃত করে যদি আইনের আওতায় আনা হয়, তাহলে যারা ক্ষমতায় থেকে সন্ত্রাসী কর্মকান্ড করছেন, তাদের কেন গ্রেপ্তার করা হচ্ছে না?

যখন বলা হয়, হরতালকারীদেরকে বাড়ী গিয়ে হত্যা করতে হবে,তখন কি আইন লংঘন হয় না


ইউটিব লিংক আপলোড হচ্ছে না। নিচে লিংক দেয়া হলো-

এখানে দেখুন পাট মন্ত্রীর বন্তব্য

সব নাগরীকের মত প্রকাশের অধিকার রয়েছে। তাই আসুন আমরা অপর মতামতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হই।

বিষয়: বিবিধ

১৫৪৭ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File