নৈতিকতা এবং পুঁজির পৃথিবী
লিখেছেন লিখেছেন নোমান সাইফুল্লাহ ০৩ অক্টোবর, ২০১৩, ০১:০৯:৩৮ রাত
একটা সৌম শান্ত নেকাবের আড়ালে মুখ লুকালেই পবিত্রতায় অবগাহন করা হয় না। দরবেশের আলখেল্লা পরে শাদা পান্জাবীর আড়ালে লুকানো মানুষটির বিকৃত চেহারাটি ঢেকে রাখা যায় না। রমনা পার্কের সবুজ ছায়ায় অপেক্ষমান নষ্টা চরিত্রের মেয়েরা খুব সুন্দর করে কালো নেকাবে নিজের মুখটি ঢেকে রাখে। এই শহরের মেকাপ মাখা মানুষগুলো হরেক রঙের বেশভূষায় নিজেদের মেলে ধরেন। দেখো কত সুন্দর! টিভি পর্দার সামনে প্রাণবন্ত অভিনেত্রী প্রতিদিন নৈতিক চরিত্রে অভিনয় করেন। যদিও তার নষ্ট জীবনের কথা খবরের কাগজ, মুক্ত বাতাসে উড়ে বেড়ায়। পাড়ার ছোট ছেলেটিও সে কথা জানে। মহৎ চরিত্রে অভিনয় করে বেশ্যালয়ে যাওয়ার মাঝে কোন সার্থকতা কি আছে?
ধর্মী বাণী আর নৈতিকতার মিষ্টি শব্দগুলো নীল দেয়ালের বুকে প্রতিদিনই আমরা লিখে রাখি। প্রতিদিনই প্রাণবন্ত লেকচার শুনে আমরা মুগ্ধ হই। আমাদের স্বপ্ন এবং কল্পনায় টেকসাসের লাল ঘোড়াটি দৌড়াতে থাকে। যে ঘোড়া মোটা তাজা টগবগে অন্তহীন ছুটে চলা পুঁজি আর শরীর মাখানো নাদুস নুদুস আকাংখার মত। শরীরযাপন অনেক আকাংখার নরম খামার। একটু একটু করে চাষ করা হয়। কিভাবে চাষ করতে হয় শারীরিক আকাংখা? কিভাবে নারী হয়ে যাবে বিলাসী পণ্য! এসব পুঁজির চকচকে বাসনার জ্ঞানতত্ত্ব; অবচেতনভাবে আপ্লুত করে রাখে মেট্রোপলিটন জীবন। যেন একটি ঘোর লাগা প্রহর। এ শহরে সবাই যৌন প্রাণী। যে যার ঘরে যায় যাক। কার ঘরে কে ঘুমাবে এ নিয়ে ফ্রয়েডের চেলাদের কোন দুশ্চিন্তা নেই। লোকাল বাসে বসেও যৌন কাতর প্রাণীর গোঁ গোঁ শব্দ তুলে নাগরিক সমাজ। আমরা সবাই ভদ্র মানুষ। সুতরাং কে কার চোখে তাকিয়ে, উন্নত সুঢৌল বক্ষে তাকিয়ে তৃপ্তি পেতে চায় এসব একেবারেই অবান্তর প্রশ্ন!
পুঁজির উপ্তাপে যখন এই শহরের নাগরিক যৌন কাতরতায় মুগ্ধ, তখন মিছেমিছে ধর্মের লেবাস পরে নৈতিকতার পসরা সাজিয়ে কি লাভ! ঐ নেকাবের আড়ালে মুখ লুকিয়ে রাবেয়া বসরি অথবা জয়নব আল গাজ্জালীর মত মহান মানুষের নাম উচ্চারণ করে, তুমি কি পারবে তোমার চোখের আড়ালে লুকিয়ে রাখা অস্থির উত্তেজনার মুহুর্তগুলো লুকিয়ে ফেলতে? সবার আড়ালে তোমার চোখে যে বিত্ত আর শারিরিক আকাংখার খামার প্রতিদিন চাষ হয়, কল্পনার মাছগুলো লাফিয়ে ওঠে পরম উচ্ছাসে, বাধাহীন আদিমতায় মগ্ন হওয়া স্বপ্নের মৌতাত ঘুরে বেড়ায় হৃদয়ের আনাচে কানাচে, সেই আকাংখার খামারে আয়েসী চায়ের ধুঁয়ায় চুমুক দিয়ে মিছে কেনো ধর্মের বুলি পাঠ করো?
ভন্ডামীর মুখোশ খুলে একবার পবিত্র সায়রে স্নান করো। এসব অভিনয় একদম অর্থহীন মিছে ফানুস। এবার ফানুসগুলো থামাও।
বিষয়: সাহিত্য
২২১৬ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন