তুমি দেখো না আমার বৃষ্টি,তুমি দেখো না আমার ঝড়(২)
লিখেছেন লিখেছেন ইক্লিপ্স ০২ এপ্রিল, ২০১৩, ০৯:৫৯:৫৭ রাত
আর মাত্র কয়েকটা দিন পর অবন্তিকার এংগেজমেন্ট! ভিনদেশী এক রাজকুমার এসেছে সাত সমুদ্র তেরো নদী পাড়ি দিয়ে! দুধের মত সুন্দর রাজকুমারের কাহিনী অবন্তিকা পড়েছিল রুপকথার গল্পে। কিন্তু এ যে গল্প নয় সত্যি! রুপ কথার গল্প থেকে বাস্তবে উঠে এসে এক স্বপ্নমানব দাড়িয়েছে অবন্তিকার সামনে!
এ শহরের ধুলো মাখা পথে একেবারেই বেমানান এই রাজপুত্র! গভীর বিস্ময়ে পথচারিরা তার দিকে তাকিয়ে অবাক হয়ে ভাবে এ কি এই দেশী নাকি ভিন্নদেশী কোন লোক? বহুদিন ইউরোপে থেকে গায়ে চামড়া ,ভাষা সব কিছুই তার ইউরোপিয়ানদের মত।
অবন্তিকার বাবা মার চোখে মুখে খুশির ঝলক! মেয়ে তাদের ভাগ্যবতী বটে! ছেলে যেমন শিক্ষিত তেমন প্রতিষ্ঠিতও বটে! তাছাড়া তাদের মেয়েকে পাগলের মত ভালোবাসে! মেয়েকে দেখে এত পছন্দ করেছে যে কাবিনের জন্য উঠে পড়ে লেগেছে তার পরিবার! কিন্তু তারা এত তাড়াতাড়ি মেয়ের বিয়ে দিতে নারাজ। হাজার হোক তাদের একমাত্র মেয়ে! অনেক আদরের সন্তান। অন্তত পড়াশুনা শেষ হোক। তারপর বিয়ে। কিন্তু বিয়ে ঠিক করে রাখতে তো ক্ষতি নেই। এত ভালো প্রস্তাব হাত ছাড়া করা যায় না!
চারিদিকে নতুনের আহবানে পুরনোকে ভুলে যাবার নিমন্ত্রন! নতুন বরশে নতুন গানে নতুন হালখাতায় পুরনো হিসেবের পাট চুকিয়ে নতুন দিনের সোনালী সকালে নতুন রোদের অপেক্ষা! কিন্তু অবন্তিকার মন জুড়ে এখনো সেই পুরনো মেঘ! পুরনো দাবানলে অঙ্গার ভস্ম, আবার কখনো মনের আকাশ কালো করে অঝোরে শ্রাবন! উথলে উঠা জীবনের বাকে বাকে থই থই বাধভাঙ্গা জল! ভস্মিভুত হৃদয়ের ফসিলে লেখা অনিন্দ্যের সেই পুরনো কথাগুলো ,''ভুলে যাবো! কিভাবে সম্ভব!''
অসম্ভবকে খুব সহজেই সম্ভব করেছে অনিন্দ্য! ভুলে যাবো না বলে মাত্র কয়েক দিনের মধ্যেই ভুলে গেছে হৃদয়ের সব আহবান! ভুলে গেছে অস্তাচলের নৈবদ্যে এক সাথে নীলকন্ঠি পাখির মত জেগে উঠে পিহু পিহু করে ডেকে ওঠার স্বপ্ন!
''কিন্তু আমি তো কিছু ভুলিনি! আমার সীমাহীন হাহাকার জুড়ে এখনো অনিন্দ্যের হাতছানি! কখনো চোখে না দেখেও কত গভীরভাবে ভালোবাসা যায় অনিন্দ্য যদি কখনো তা বুঝতো!'' আনমনে ভেবে যায় অবন্তিকা।
কোন্ ভুলে অনিন্দ্য তাকে ছেড়ে গেছে সে আজো তা জানে না! হয়ত শিক্ষা, সম্পদের অহমিকা অথবা অপসরীর মত রুপের সামান্যতা-এমন কোন কিছুর স্বল্পতা অনিন্দ্য কল্পনায় এঁকে নিয়েছিল অবন্তিকার অবয়বে। তাই তার পদচিহ্ন এসে পৌছায় নি তার ঘরের দুয়ারে! কিন্তু অবন্তিকার অস্তিত্বের সব গুলো মাঠ জুড়ে সজল আঁখি মেলে বাধন হারা গ্রাম্য চঞ্চল বালক বালিকার মত খেলা করে অনিন্দ্যকে নিয়ে সাজানো স্বপ্ন!
'হয়ত পাগলামি! জগতের নিষ্ঠুরতা আর স্বার্থপরতা কাছে নিষ্পাপ আবেগগুলো হয়ত পরাস্ত হয়েছে বহু আগে! কিন্তু এখনো কিছু কুহক কুহকিনী এক টুকরো নিখাদ আবেগের জন্য প্রত্যাশার জাল বুনে রয় দিবস রাত্রি! যেই আবেগ জন্ম দেয় শুদ্ধ এক টুকরো ভালোবাসার যা কামনার উর্দ্ধে উঠে গেয়ে উঠে শুদ্ধতার জয়গান। অর্থবিত্ত, আভিজাত্য, রুপ জৌলস, বিদ্যা, মোহ সব ভোগবাদি ভাবনার ব্যবচ্ছেদ করে হৃদয় বান্ধব একটি জগতের সন্ধান খুঁজে ফেরে আবেগতাড়িত কিছু কপোত-কপোতি!
''সেই ভালোবাসা তুমি বুঝবে না অনিন্দ্য! মোহের মিথ্যা জৌলুসের আবরনে আবৃত তোমার অস্বচ্ছ হৃদয়ের কপাটিকা! তুমি থাকো যেমন আছো ! হয়ত একদিন আমিও হবো তোমার মত পাষন্ড জেদী কোন যন্ত্র মানবী! শুধু অনুরোধ আমার হৃদয়টুকু আমাকে ফিরিয়ে দিও, ফিরিয়ে দিও অনুভুতির সবুজ বাগানে ফোটা লালপদ্ম যা বহুদিন ধরে তোমার হৃদয়ের নিঠুর কারাগারে বন্দি হয়ে নিষ্প্রান প্রায়! আমাকে আবার ফিরিয়ে দিও আমার আমিকে, আমি তোমাকে ভুলে নতুন জীবনের হাতছানিতে স্বপ্নের রঙ মাখাবো।''
বিষয়: সাহিত্য
১৯৫৮ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন