রাজকুমারী আর এক বাঁদরের গল্প
লিখেছেন লিখেছেন ইক্লিপ্স ২৭ মার্চ, ২০১৩, ০৩:১৩:২১ দুপুর
সে অনেক অনেক দিন আগের কথা। এক রাজ্যে ছিল এক রাজকুমারী। তার ছিল খুব গল্প, কবিতা আর গানের শখ। পাশেই বনে রোজ বসতো পাখিদের কবিতা, গান, গল্পের আসর। হাজার রকমের পাখি আসতো সেখানে। লাল পাখি, হলুদ পাখি, কমলা পাখি ,সবুজ পাখি সারা পৃথিবীর সুকন্ঠি সব পাখি। রাজকুমারী মুগ্ধ হয়ে শুনত পাখিদের গল্প, কবিতা আর গান। সেও মাঝে মাঝে পাখিদের সাথে গলা ছেড়ে গান ধরত, মিহি কন্ঠে আবৃত করে যেতো কবিতা, সবাইকে সুন্দর সুন্দর গল্প বলতো। এক দিন কি হল রাজকুমারী পাখিদের সাথে গান গাইছে এমন সময় দেখে চিহি চিহি করে তাকে দূর থেকে ভেঙাচ্ছে এক বাঁদর। রাজকুমারী বাঁদরের দুষ্টমি দেখে হেসেই খুন। আর বাদরটিও দেখতে ছিল খুব কিউট। অন্য সব বাঁদরদের থেকে দেখতে অনেকটাই আলাদা। মাঝে মাঝে সে মানুষের মত দু পায়ে দাঁড়াতে পারে, কুস্তি করতে পারে, ভিন্দেশী ভাষায় কুটকুট করে কথা বলতে পারে। রাজকুমারী বাঁদরকে দেখে তো অবাক!
বাঁদরটি আস্তে আস্তে কবিতা, গান , গল্পের আসরের মধ্যমণি হয়ে উঠল। সে নির্ধারণ করে দিত কোন পাখি আগে কবিতা, গান , গল্প বলবে। এক দিন কি হল ভাল্লুকের দল এসে পাখিদের আয়োজনে হানা দিল। সব পাখি উড়ে চলে গেলো দূরের দূরের দেশে। রাজকুমারীর খুব মন খারাপ হল তার শখের আসর ভেঙে গেল দেখে।
সে রোজ গল্প, কবিতা, আর গানের আসরের গাছটির নিচে বসে গাল ফুলিয়ে থাকতো। এক দিন কি হল সে দেখল দূর থেকে এক বাঁদর তাকে দেখে বিভিন্ন রকম মুখভঙ্গি করে ভেঙাচ্ছে। রাজকুমারী কোমড়ে হাত দিয়ে রাগত কন্ঠে বলল ,''এই কে তুমি আমাকে ভেঙাচ্ছ?'' বাঁদর আরো বেশি করে রাজকুমারীকে ভেঙাতে লাগল। রাজকুমারী তেলে বেগুনে জ্বলে উঠে গেলো বাঁদরের কান মলে দিতে। কাছে গিয়ে দেখল এ সেই পুরনো বাঁদর! দুঃখে কষ্টে বেচারার মুখ চোখ মলিন হয়ে গেছে। তার তো আর পাখা নেই তাই সে পাখিদের মত উড়ে যেতে পারেনি। লেজ দিয়ে কি আর উড়া যায়!
ভাল্লুকের শংকা থাকা সত্ত্বেও সে এখানেই পড়ে থাকে। মাঝে মাঝে ভাল্লুকের ভয়ে গাছে চড়ে বসে। আবার যেই ভাল্লুক দূরে চলে যায় সে দূর থেকে লেজ নাড়িয়ে ভাল্লুককে ভেঙিয়ে আসে। রাজকুমারীর চোখে পানি চলে এলো। তার মনে আবার প্রচণ্ড মায়া। সে বাঁদরকে কোলে করে তার বাড়িতে নিয়ে এলো। বাঁদরকে সুন্দর করে গোসল করিয়ে নতুন জামা পরিয়ে দিল, বাঁদরের চুল আঁচড়ে দিল। গলায় একটা মুক্তার মালাও পরিয়ে দিল। সেই থেকে প্রবাদ চালু হল বাঁদরের গলায় মুক্তার মালা।
কিন্তু বাঁদর তো বড়ই পাঁজি। সে সারাদিন রাজকুমারীর সাথে খেলা করে। কিন্তু হঠাৎ হঠাৎ সে রাজকুমারীর কাঁধে উঠে চুল টেনে ধরে, রাজকুমারীর কান মলে দেয়।
রাজকুমারী তো ভীষণ বিরক্ত! সে ভাবে কি করা যায়? কি করা যায়? সমাধান করে দিল তার বাবুর্চি। বাবুর্চি রোজ সন্ধ্যাবেলায় একটা চিকন বেত দিয়ে বাঁদরকে একটা বাড়ি দিয়ে যেত। এতে সে আর দুষ্টমি করতে সাহস পেতো না। একেবারে সুবোধ বালক। )বাবুর্চি আসার সময় পাতিলকে ঢোল বানিয়ে বাঁজাতে বাঁজাতে আসতো। এরপর থেকে কি হল বাঁদর পাতিলের উপর বাড়ি শুনলেই ভাবতো বাবুর্চি আসছে। সে দুষ্টমী করা বন্ধ করে দিতো। তাকে আর পিটুনি দিতে হত না।
এদিকে তো বাঁদরের তো আর ভালো লাগে না সে বাঁদরামি করতে পারে না। সে রাজকুমারীকে গিয়ে বলল ,''বাবুর্চির রান্না পচা। খেয়ে তার পেট খারাপ করেছে। বাবুর্চিকে বিদেয় করে দাও।'' বোকা রাজকুমারী বাঁদরের বাঁদরামি ধরতে পারলো না। সে বাবুর্চিকে কিছু টাকা পয়সা দিয়ে বিদেয় করে দিল। বাঁদর তো মহা খুশি। এখন সে ইচ্ছে মত রাজকুমারীকে বিরক্ত করে। তার চুল টেনে দেয়, কান মলে দেয়, গাল টেনে দেয়, তার কবিতার বই নিয়ে লুকিয়ে রাখে, তার লেখা কবিতা উল্টো করে আবার তাকে শোনায়। রাজকুমারীর তো গালে হাত।
হঠাৎ রাজকুমারীর মাথায় খেলে গেল এক দুষ্টু বুদ্ধি। সে বাঁদরের লেজে পাতিলের শব্দের এলারম ক্লক ঝুলিয়ে দেয়। এলারম ক্লক নিদিষ্ট সময় পর পর ঢং ঢং করে বেজে উঠে। আর বাঁদর ভাবে বাবুর্চি বুঝি ফিরে এসেছে! সে বাঁদরামি বাদ দিয়ে সুবোধ বালকের মত রাজকুমারীর সাথে খেলা করে। রাজকুমারীও থাকে মহাখুশি। )
বিষয়: সাহিত্য
৬৩৮৯ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন