Good Luck তুমি দেখ না আমার বৃষ্টি, তুমি দেখো না আমার ঝড়

লিখেছেন লিখেছেন ইক্লিপ্স ১৫ মার্চ, ২০১৩, ০৬:৩০:০২ সন্ধ্যা





আজকের রাতটা অদ্ভুত রকমের বিষণ্ণ! আকাশের কপালে চাঁদের গোল টিপ একটু পর পর ঢেকে দিচ্ছে পাষণ্ড মেঘ! দমকা হওয়া এসে ক্ষণে ক্ষণে ছুয়ে যাচ্ছে শিমুল পলাশের ডাল। অস্থির চাপা উদ্বেগে থর থর রাতের নীরবতা! কি যেন দুঃখ লুকানোর রাখঢাক চেষ্টা সবখানে! ছলছল চোখে আকাশের দিকে চেয়ে আছে অবন্তিকা! এই আকাশের সাথে তার অনেক মিল। অনেক কথা হয়ে যায় নীরবে। কেউ জানে না। কেউ শুনতে পায় না। কিছু আর্তনাদ বোঝার মত মন পৃথিবী হারিয়েছে বহু আগে। কিন্তু আকাশ এখনো তার বিশালতায় ধরে রেখেছে হৃদয়ের সব আহ্বান। দুনিয়ার দূষণ এখন তেমন প্রভাব ফেলেনি আকাশের বুকের জমিনে।

যখন কেউ থাকে না ,হুতুম পেচার কালো ডানার ছায়ায় শ্বাসরোধী অন্ধকারে রুদ্ধ চারিপাশ, তখন এই আকাশ জ্বেলে দেয় নক্ষত্রের মত ছোট ছোট আলোকবর্তিকা! প্রশান্তি আসে ভীত মনগুলোতে। ''সেও তো আমার মনে প্রশান্তির আলো জ্বেলেছিল।'' ভাবে অবন্তিকা! ''তাই আমি তার নাম দিয়েছিলাম 'নক্ষত্র।' যখন হায়ানার বীভৎস চিৎকারে দু হাতে কানের কপাটিকা শক্ত করে চেপে ধরেও কষ্টে কাঁপছিলাম সে প্রতিরোধের মোলায়েম চাঁদর দিয়ে আমাকে আচ্ছাদিত করে দিয়েছিল। অথচ আজ তার পাশে আমি নেই!''

''আচ্ছা আকাশ মানুষ যখন খুব কষ্টে থাকে তখন সবার আগে সে কাকে মনে করে? যাকে খুব ভালোবাসে তাকে তাই না? জানো সে আমাকে মনে করেছিল! কিন্তু আমি যেতে পারি নি! আমি যে অপারগ! মানুষ এত অসহায় কি করে হয় বল তো আকাশ? কেন এত নিঃস্বতা চারিদিকে!'' অঝোরে কাঁদে অবন্তিকা!

''সে রাতে সে আমাকে বলেছিল ভালোবাসি। এতটুকুই ছিল অপরাধ! আমি তীব্রভাবে তাকে তিরস্কার করেছিলাম। কারণ ভালোবাসায় যে আমার বড্ড ভয়! বহু আগে এক অদেখা অচেনা কাউকে মন উজার করে দিয়েছিলাম! পরে সে বুঝেছি সে ছিল হিংস্র প্রেতাত্মা! বড় অযতনে সে আমার মন ভেঙেছে! এতটুকু দয়া করেনি! তাই সেই হিংস্র প্রেতাত্মার সাথে গুলিয়ে ফেলেছিলাম জগতের সব পবিত্র প্রাণগুলোকে! একবারো মনে আসে নি এত বড় অঘটন ঘটে যাবে! সে এভাবে হারিয়ে যাবে নীরবে! হে নিয়তি আমাকে ক্ষমা কর! আমি যে তাকে একবারো বলতে পারি নি সাবধানে থেকো বন্ধু। ভালো থেকো!''

২।

সে রাতে আমি অবন্তিকাকে বলেছিলাম ভালোবাসি! জানি সে আমাকে ভালোবাসে না। তার মন বাঁধা অন্য কোন মনের নোঙরে! তবু আমি তাকে ভালোবাসি! সর্বস্ব উজার করে দিয়ে ভালোবাসি! যখন সে আমায় বলেছিল আমাকে ভালোবাসে না হঠাৎ করে যেন ধসে গেল বুক! চোখের সামনে তছনছ হয়ে যেতে থাকল পৃথিবী! ভেঙে চুড়ে একাকার হয়ে বুক জুড়ে জমা হতে লাগল লন্ডভন্ডো স্বপ্নের ধ্বংস স্তূপ! এমন সময় শুনতে পেলাম বাহির থেকে চিৎকার ,''পালাও, এদিকেই আসছে সাঁড়াশি প্রেতাত্মা!'' কিন্তু আমার পৃথিবী স্থবির অবন্তিকাকে ঘিরে! চারিদিকে শুধু বাজছে একটি নাম অবন্তিকা!

তারপর হঠাৎ কি যে হল! বোধয় জ্ঞান হারিয়ে ফেলেছিলাম! কয়েকদিন পর হুশ ফিরে পেয়ে বুঝলাম আমি এখন অনেক দূরে! অবন্তিকার থেকে দূরে! আমি তোমার থেকে দূরে অবন্তিকা! মিলিয়ন ট্রিলিয়ন মাইল দূরে! তুমি তো তাই চেয়েছিলে! দেখো কত দূরে চলে এসেছি ! যদি পার একবার শুধু দূর থেকে দেখে যেও তোমার নক্ষত্রকে। কষ্টে সে পুড়ে পুড়ে এখন নিভন্ত প্রায়!

৩।

তুমি কেমন আছো নক্ষত্র? তুমি শুনতে পাচ্ছ কি আমার কথা? তুমি আর কেঁদো না নক্ষত্র! দেখো এই অন্ধকারের ঢলেই তুমি আবার জ্বলে উঠবে। তোমাকে যে জ্বলতেই হবে নক্ষত্র! আমি ছায়াপথের পথ ধরে চেয়ে আছি!

অন্ধকারের ব্ল্যাক হোলে তুমি হারিয়ে যেতে পারো না! তুমি হারিয়ে যেতে পারো না নক্ষত্র। সে দিন তোমাকে বলেছিলাম আমি তোমাকে ভালোবাসি না! কারণ আমি তোমাকে দিয়েছি তার চেয়েও উপরের কোন স্থান! এর নাম মানবিকতা। তুমি আমার মানবিকতার মূর্তি নক্ষত্র! যে ভালোবাসা তুমি চেয়েছিলে আমি বহু আগে তাকে দেখে জেনেছি পৃথিবী বড় কুৎসিত আর তোমাকে দেখে জেনেছি এখনো কিছু প্রাণ অবিরাম মোমের মত জ্বলে নিজেকে ক্ষয় করে পৃথিবীকে করে রেখেছে আলোকিত। তুমি যে আমার সেই নক্ষত্র!

বিষয়: সাহিত্য

১৮৬২ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File