Good Luckপ্রায়শ্চিত্য(গল্প)

লিখেছেন লিখেছেন ইক্লিপ্স ১২ মার্চ, ২০১৩, ০৬:৩৩:০২ সন্ধ্যা



টেবিলের উপর এক ছেনি মাংস! আহ একদম তাজা! সুবাসটাও জীবন্ত। মনে হয় এই মুহূর্তে জবেহ করার পশুর শরীর থেকে কেটে আনা! বহুদিন এমন মাংস খাওয়া হয় না। প্রফুল্ল্য মনে ভাবে আখন্দ সুত্রা ধর! ''যে দিন থেকে রক্ষিবাহিনীতে নাম লিখিয়েছি সে দিন থেকেই বুঝেছিলাম শরীরের প্রোটিনের চাহিদা। বাইসেপ্স, ট্রাইসেপ্সের স্থূলতা বেড়েছে, হয়েছে আরো প্রসস্থ কিন্তু শক্তির জোর বাড়ে নি। ঘুসের টাকায় অত কি আর পেট চলে! তবুও মেদ জমে ফুলে আছে সামনের দিকটা। ''

রিকশা আলাদের কাছ থেকে চাঁদা তুলে হয় রোজ সকালের নাস্তা। ডিমভাজি আর পরোটা। কখনো কখনো মাংসের বড়া। এতে কি আর ক্ষুধা যায়! সারা দিনের অগাধ পরিশ্রম! কখন নেতা কি বলবেন! ,''জুতো মুছে দে।'', ''ঐ পাড়ার টেরাকে ধরে নিয়ে আয়।'' টেরার পিছনে দৌড়াতেই তো পেটের সব ভাত হজম হয়ে হাওয়ায় মিলিয়ে যায়।

জমিলার সাথে প্রেম ছিল ২ বছর। সে ঝামটা দিয়ে বলেছে ''তুই মানুষ না, তুই নরখাদক!'' তারপর সে প্রেম শুরু করেছে ছমিরুদ্দিনের সাথে। পরে তাকেই বিয়ে করেছে।

সে দিন রাস্তায় ছমিরুদ্দিনের সাথে দেখা। তারপর ধরে দিলাম কয়েক খানা চটখানা আর দমাদম বুটের শক্ত লাথি। ''ব্যাটা তোর এত বড় সাহস! জানিস কার প্রেমিকাকে বিয়ে করেছিস? আমি হলাম রক্ষিবাহিনী! ''

সে হামাগুড়ি দিয়ে পা ধরে মাফ চাইল। বলে ''ছেড়ে দেরে বাপ প্রাণে বাঁচি।' আমিও তার পকেটের পয়সাগুলো রেখে ছেড়ে দিলাম। যা বেটা ভাগ! আমারও তো কিছু কর্তব্য আছে নাকি? রক্ষি হয়েছি বলে কি মানুষ নই? হাজার হোক সে আমার প্রেমিকার স্বামী।

প্রেমিকার কথা ভাবতেই আখন্দের মনে পড়ে বউয়ের কথা। তাকে কয়েক দিনের জন্য বাপের বাড়ি পাঠিয়ে দিয়েছে। ছেলেটা হয়েছে বড়ই পাঁজি! বছর পাঁচেক হবে অথচ কত বড় বুকের পাটা! বাপের দিকে আঙুল তুলে বলে '' তুই মানুষ নস, তুই খুনি!'' আমি ডিউটি করি নেতার নির্দেশে। নেতা যা বলে তাই করি। 'অত ভাবলে কি আর পয়সা আসবে? দামি স্কুলে তুই পড়তে পারবি? আসলে এখানেই হয়েছে সমস্যা! দামি স্কুলের শিক্ষিতের দল শিখিয়েছে মানুষ খুন অন্যায়! কিন্তু আমি কি খুনি? আমার তো লাইসেন্স ধারী!'

হাজার ভাবনায় মাংস কাটতে গিয়ে হাত কেটে যায় আখন্দের। সে রাগে গজগজ করতে থাকে বউ বাড়িতে নেই বলে!

অবশেষে মাংস কেটেকুটে ধুয়ে মুছে চুলায় তোলে হাঁড়ি। মশলা লবন গুনে গুনে পরিমাণ মত দেয়। আহ কি দারুন সেন্ট!

প্লেটে ভাত বেড়ে খেতে বসে আখন্দ। বড় চামচে করে তোলে তরকারি। কিন্তু একি! মানুষের রক্ত উপচে পড়ছে হাঁড়ি থেকে। ''আমি কি ভুল দেখছি। একটু আগে এক বোতল শরাব গিলেছি। তার ঘোরই হবে হয়ত!'' সে চোখ মুদে আবার চোখ খুলে। কিন্তু একই দৃশ্য! এবার আরো বীভৎস! সে দিন যে যুবকটি ছিল ক্রস ফায়ারে তার মাথা হাড়িতে ভাসছে! উফ গলা থেকে তীব্র স্রোতে উদগিরিত হচ্ছে রক্ত!

আখন্দ ঘর মোছার কাপড় দিয়ে রক্ত মুছে ফেলতে চেষ্টা করে। কিন্তু বেয়াদব যুবকের গলা থেকে যেন টিউবওয়েলের কলের মত রক্ত নিঃসরণ হচ্ছে! হচ্ছে তো হচ্ছেই। থামার নাম গন্ধ নেই!

'ধুর আজ রাতে ভাতই খাব না।' আখন্দ তীব্র বিরক্তিতে চোখ মুখ কুঁচকে ফেলে ভাবে! সে বিশাল একটা তালা রান্না ঘরে ঝুলিয়ে আসে বেড রুমে। একটা শান্তির ঘুম দরকার। মাথাটা হয়ত গরম হয়ে গেছে। কিন্তু তার বেডের উপর কে যেন কাথা মুড়ি দিয়ে ঘুমাচ্ছে! তার স্ত্রী নেই। তবে কে? আখন্দ কৌতুহলে গিয়ে চাঁদর তুলে ধরে। আরে! এ যে সেই বেয়াদব যুবক!

''বেটা মরেও আমাকে শান্তি দিলি না। এসেছিস আমার বেডে ঘুমুতে! তুই কি ভুলে গেছিস আমি কে? ভুলে গিছিস সে দিনের রাইফেলের খোঁচা?''

কিন্তু যুবক নড়ছে না। হঠাৎ তার গলা থেকে বের হতে লাগল কলকল করে রক্ত! রান্না ঘরের হাঁড়ির মত দশা! এখন গলার কাটা ক্ষত থেকে কেমন যেন ঘৎ ঘৎ শব্দও বেরোচ্ছে! যেন সে কিছু বলতে চাইছে কিন্তু বলতে পারছে না। দু চোখ ঠিকরে বেড়িয়ে আসতে চাইছে।

আখন্দ এবার তির তির করে ঘামতে শুরু করে। সে শরীরের সব শক্তি দিয়ে চিৎকার করে বলতে চায় ,''বেড়িয়ে যা ছোটলোকের বাচ্চা!'' কিন্তু কন্ঠনালি তার কথাকে ভাষা রুপ দেবার আগেই বুকের বাম দিকে চিন চিন করে ওঠে ব্যাথা! যুবকের জমাট বাঁধা রক্তে পড়ে যায় আখন্দ।

তারপর সকালে কাকের রুক্ষ চিৎকারে ঘুম ভাঙে। কিন্তু চোখ খোলার কথা ভাবতেই ভয়ে আড়ষ্ট হয়ে যায় শরীর! যদি আবার যুবকটি উঠে আসে নষ্ট রক্তের কোন পিন্ড থেকে?

এমন সময় ক্রিং ক্রিং করে বাজে কলিং বেল। সে জোর করে উঠে যায় দরজার দিকে। কি জানি কে দাঁড়িয়ে আছে ওপাশে! হয়ত যুবকটি জ্বল জ্বলচোখ নিয়ে অপেক্ষা করছে! দরজা খুলতেই জানতে চাইবে কি অপরাধ ছিল তার?

জীবনে অপরাধ করলে তার মুখোমুখি হতেই হয়! পাপ বাপকেও ছাড়ে না।

অনুশোচনায় কাতর হয়ে দরজার দিকে গুটি গুটি করে এগিয়ে চলে আখন্দ। ভাগ্যে যা আছে হবে! প্রায়শ্চিত্য তো করতেই হবে! বহুদিন পর দু চোখ গলে অশ্রু বেড়িয়ে আসে তার।

সে এক ঝটকায় খুলে দেয় সিটকিনি! ওমনি বিদ্যুতের বেগে একটা ছোট্ট শিশু দৌড়ে এসে কোলে চড়ে বলে ,''বাবা কেমন আছ?''

আখন্দ চমকে উঠে। অবাক হয়ে দেখে তার স্ত্রী সন্তান ফিরে এসেছে। ভয়ে ভয়ে সে যায় বেড রুমের দিকে। কিন্তু সেখানে কোন লাশ নেই, নেই রক্তের স্রোত! তবে কি সবই ছিল মনের ভ্রান্ত কল্পনা? হয়তবা!

বিষয়: সাহিত্য

১৮১৬ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File