একটি ডাহুক ডাকা রাত
লিখেছেন লিখেছেন ইক্লিপ্স ০৮ মার্চ, ২০১৩, ১২:০১:৫৩ দুপুর
আমি ধ্যান মগ্ন এক প্রিয়সী, তুমি কি ভেবেছ কামানের গর্জনে মন্ত্রের শ্লোক ভুলে যাব! দুদিনের ঋষি আমি নই সাধনা ভঙ্গ করে নাম লেখাব নাস্তিকের খাতায়! তুমি তো নিজের মাঝে গুমরে মরা নাবিক , পথ ভুলে চলছিলে উত্তরের জন শুন্যদ্বীপের দিকে! শারদীয় বিষুব তুমি বোঝ না, জানো চন্দ্র রাতের হিসেব নিকেশ। দ্রাঘিমার রেখা বায়ে সরে গেলে কোন দিকে হয় মান মন্দির সে খোঁজও তুমি রাখো না। জানো না অক্ষাংশের রেখা। মুখ ফুটে কখনো বলই নি ভালোবাসি! আমি তো তোমায় খুঁজে নিয়েছি নৈঃশব্দ্যের কোল থেকে, মায়াবী নীলাম্ভরের পুড়ে যাওয়া নক্ষত্রের মাঝ থেকে! যে তারা খসে পড়ে জগতের সামনে এঁকে দিত প্রিয়হারার ট্রাজিডি।
তুমি তো একলা নদীর বয়ে চলা স্রোত। আমি এক আঁজলা জল তুলে দেখি তুমি দূষিত সহস্র প্রশ্নের বেড়াজালে! তুমি জানতে চাও কেন অনাহারে শিশু মরে? জানতে চাও কেন সতী নারী অপবাদ পায় কুলটা? জানতে চাও কেন পতিতার দল দু'মুঠো অন্নের খোঁজে সতীত্বকে দেয় বিসর্জন? জানতে চাও কে শেকল পড়াল বিশ্ব মানবতার দু হাত পায়ে? তুমি জানতে চাও রক্তের সাধ কি আজ এতই তীক্ষ্ণ যে ভ্যাম্পায়ারের দল চুক চুক করে শুষে নিবে?
তুমি শুধু জানতে চাও আর চাও! প্রশ্নের কষাঘাতে জর্জরিত কর মন মানবীয় আত্মা। তুমি জোছনার জল ঠোটে তুলো না, বলো পশ্চিমে কেউ মরেছে জল পিপাসায়। তুমি চাঁদ বুড়ির বালিশে মাথা রাখো না, বলো চিরশোয়ানে ঘুমিয়ে পড়েছে রেললাইনের উপর দুস্থ কৃষ্ণ কোন যুবক!
তুমি শুধু কাঁদ আর কাঁদ। আর আমি বন্দী হই তোমার টলমল যুগল চোখের স্বচ্ছ জলধারায়। তারপর কোন এক দুপুরে সূর্য যখন পান করে নিচ্ছিল তোমার ক্লান্ত প্রাণের ঘর্মাক্ত প্রাচুর্য ওরা বন্দুক তাক করে তোমার বুকের বাঁ দিকে ঠিক হৃদপিণ্ডের কপাটিকায়। একটা বুলেট ছেঁদ করে যায় অলিন্দ! তুমি ঘুমিয়ে পড়ো অরুণ রাঙা সন্ধ্যার কোমল চাঁদরে। আর আমায় দিয়ে যাও তুমি হীনা ডাহুক ডাকা রাতে একলা জেগে থাকার অভিশাপ!
আমি জেগে থাকি! চোরাবালিতে ডুবে যায় তোমার সুবাস মাখানো ভোর, দিনেরা মিশে যায় রাত্রির কালো মায়াজালে, ইন্দ্রধনু থামিয়ে দেয় রাখালিয়া বাঁশির কাব্য বুনন। লাভার স্রোতে গলে সুখ, উদগিরিত হয় অন্তিম হাহাকার। আর আমি বার বার পুড়ে হই সার্থক! দ্বিদিকজয়ী প্রিয়সী!
বিষয়: সাহিত্য
১৪৫৫ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন