ছায়া সুনিবিড় পল্লীতে এক দিন
লিখেছেন লিখেছেন ইক্লিপ্স ০৭ অক্টোবর, ২০১৪, ০৯:৫৫:২৫ রাত
টই টই করে ঘুরে বেড়াতে না পারলে আমার কাছে ঈদ কে ঈদ মনে হয় না। আজকে আলহামদুলিল্লাহ্ সে সুযোগ পেয়ে গেলাম। সুযোগ পেয়ে দুই বান্ধবী মিলে গাজীপুর এরিয়া রিকশায় করে চোষে বেড়ালাম। গতকাল গিয়েছিলাম কাশবনে। শরতের সময়ে কাশবনে না গেলে শরতের আসল সৌন্দর্যটাই মিস। তাই কাশবনে গিয়ে শরতের কিছু সৌন্দর্য করে ছিলাম ক্যামেরার ফ্রেমে বন্দী।
আজকে সকাল থেকেই ভাবছিলাম কোথায় যাওয়া যায়। ফ্যান্টাসি কিংডম আর নন্দন পার্কার মত পার্কগুলো যেতে যেতে পুরনো হয়ে গেছে। তাই আর যেতে ইচ্ছে করল না। দুই বান্ধবী মিলে যাত্রা শুরু করলাম গাজীপুরের গ্রামগুলোর দিকে। গাজীপুর এসে মনে হল এত দূর যখন এসেছি ঘুরে যাই নুহাশ পল্লী। এটা একটু ভিতরের দিকে হওয়ায় আমার আগে যাওয়া হয়নি। হোতা পাড়া পার করে দু বান্ধবী এসে পৌছালাম নুহাশ পল্লীর গেটে। ভালোই সৌখিন মানুষ হুমায়ুন আহমেদ। বেশ সুন্দর করে সাজিয়েছেন তার এই কৃত্রিম পল্লীটি। শহর থেকে দূরে প্রশান্তির নিশ্বাস নিতে চাইলে জায়গাটা খারাপ না।
গেট থেকে ঢুকেই বিশাল মা ছেলের মূর্তি। ছেলে মায়ের হাত ধরে দাঁড়িয়ে আছে।
কিছু দূরে মানুষের খুলির মূর্তি। এটা থেকে বেশ মজা পেলাম।
আরো কিছু দূরে ওনার বানানো গাছের উপর ঘর। এর উপর অনেক নাটকের সুটিং করেছেন তিনি। নুহাশ পল্লীতে আসা ভিজিটরদের মাঝে দেখলাম গাছের উপর বানানো ঘরটিকে ঘিরে অন্য রকম আগ্রহ। নারী পুরুষ সবাই একবার হলেও ঘরটি ঢুকে দেখছেন। আমি আর উচু সিঁড়ি দেখে ভয়ে ঢুকলাম না।
তারপর হুমায়ুন আহমেদের টিনের চালের'' বৃষ্টি বিলাশ'' বাড়িটি। এখানে টিনের চালের উপর বৃষ্টির শব্দ শুনতে চলে আসতেন লেখক।
নানা রকম মূর্তি পাশা পাশি এখানে অনেক রকম গাছও দেখলাম। বেছে বেছে বোধয় লেখক অনেক প্রজাতির গাছ এনে লাগিয়ে ছিলেন। ছায়া সুনিবিড় ছোট্ট গ্রাম যেন।
কিছু দূরে ছোট মাটির ঘর। ''একটা ছিল সোনার কন্যা মেঘ বরণ'' গান টি মনে পড়ে যায় ঘরটিকে দেখলে।
বিনোদনের জন্য ছোট পার্কও বানিয়েছেন এই পল্লীর ভিতরে। ক্লান্ত ভিজিটিরদের হাসি আনন্দে মেতে উঠতে দেখা যায় এখানে।
আমার কাছে সব থেকে ভালো লেগেছে ঘাট বাঁধানো দীঘিটি। এর নাম তিনি রেখেছেন ''লীলাবতি দীঘি''। হুমায়ুন আহমেদের কন্যা লীলাবতির নাম অনুযায়ী বোধয় রেখেছিলেন দীঘিটির নাম। যেই কন্যা পৃথিবীতে আসার আগেই পৃথিবী ছেড়ে গেছে।
দীঘিটির মাধ্যমে বোধয় তাকে বাঁচিয়ে রাখতে চেয়েছিলেন লেখক।
দীঘিটির পাশে নড়বড়ে বাঁশের সাঁকো। মনে হয় সত্যি সত্যি যেন গ্রামে চলে এসেছি।
পল্লীটির এক পাশে লেখকের কবর। সবুজ পল্লীর মনোরম পরিবেশে নীরবে ঘুমিয়ে আছেন তিনি!
অনেক হাসি আনন্দের দিনটা যেন খুব তাড়াতাড়ি শেষ হয়ে গেলো! অবশেষে ক্লান্ত দুজন বাড়ি ফিরে আসলাম।
বিষয়: বিবিধ
২৭০১ বার পঠিত, ২৮ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
গতবছর ডীপার্টমেন্টের সঙ্গঠন মনা কিছু ভাই মিলে গাজী পুরের উদ্দেশ্যে যাত্রা করি, সবার প্রথম পছন্দ ছিল নুহাশ পল্লী। তাই সেখানেই প্রথম নামি, টিকেটের দাম শোনে (২০০টাকা) ভাবলাম আহামরি সুন্দর কিছু হবে! সময় দিল মাত্র আধা ঘন্টা! কি আর করা! প্রবেশ করলাম। এদিক সেদিক ঘুরাঘুরি করে ফটো সেশন করে বের হওয়ার সময় সবার মুখে অতৃপ্তি লক্ষ করি। কারণ আর কিছু নয়, প্রত্যাশার চাইতে প্রাপ্তি খুব সামান্যই। হুমায়ূন আহমেদ একটি জনপ্রিয় নাম, উনার নাম বিক্রি করে নুহাশ পল্লী মানুষের কাছে আকর্ষণের কেন্দ্রবিন্দু( সেখানে যাবার আগ পর্যন্ত)।
তারপর সাফারী পার্ক, ভাওয়াল জাতী উদ্যানে ইচ্ছেমত ঘুরে মনে অতৃপ্তি তৃপ্ততায় রুপ দিলাম ।
ধন্যোবাদ, আপনার উপস্থাপনা, ছবিসহ অনেক সুন্দর হয়েছে। ভাল থাকবেন।
ঢাকায় ওমন ভালো লাগার মত আর কি আছে বলুন? একটা সমুদ্রও নাই। যেই সব পার্ক আছে ওগুলোতে যেতে যেতে বিরক্ত। তাই নুহাশ পল্লী আমার কাছে খারাপ লাগে নি। আর ভাওয়াল উদ্যান বোরিং।
সব থেকে বড় কথা হল আমার এই বান্ধবীটার সাথে আমি সময় কাটাতে পছন্দ করি। তাই ভালো লাগারও কমতি ছিল না। ধন্যবাদ।
জী ঢাকা নেই তাতে কি। আমাদের কুমিল্লায় চলুন, ভাল না লেগে পারবেনা। পাখিদের অভয়ারন্য বার্ডে হয়ত গিয়ে থাকবেন। তাছাড়া আরো নানান রকম মজার জায়গা, খুব বেশ দূরে নয়, ঘুরে আসুন না।
আপ্নাকেও ধন্যোবাদ। তবে কুমিল্লায় যাবেন কিন্তু!
খুব সুন্দর করে বর্ণনা দিয়েছেন।
নুহাশ পল্লী আমার খুব পছন্দের একটি যায়গা। আমি বাই রোদে যাই না অবশ্য। তুরাগ নদীতে ট্রলারে করে সবসময় যাই। আমার কর্মস্থল গাজীপুরের কোনাবাড়ি। অফিস সংলগ্ন নদীর ঘাটেই থাকে পিকনিকে ভাড়া খাটার সিদৃশ্য ট্রলারগুলো।
আর শাল এবং গজারি বনের ভিতর দিয়ে পায়ে চলা মাটির রাস্তাটি কিভাবে যে মনকে আন্দোলিত করে, সেটি লিখে বোঝানো যায় না। যে বাশের সাঁকোটির ছবি দিয়েছেন ভুতবিলাস এর পিছনের পুকুরসংলগ্ন, সেই পুকুরের মাঝের কৃত্তিম দ্বীপটিতে 'স্যার' অনেক সময় কাটাতেন লিখালিখির সময়ে। আসলেই মনের মাধুরী দিয়ে সাজিয়েছেন এই নুহাশ পল্লীকে।
আজ সবই রয়েছে, কিন্তু সেই মানুষটি নেই। এই বাস্তবতায় মন কেমন যেন করে উঠে। আমাকেও সব ছেড়ে চলে যেতে হবে একদিন।
খুব ভালো লাগলো আপনার পোষ্টটি।
জাজাকাল্লাহু খাইর।
আমি এই জায়গাটিতে আগে যাইনি। তাই আমার অনেক ভালো লেগেছে। লেখকের সমাধী দেখে ব্যথাতুর হয়েছিলাম। সব আছে শুধু লেখকদের নেই। আর একদিন ''নেই'' হয়ে যাওয়া আমাদের সবার নিয়তি!
ময়মনসিংহে মহিলা টিচার্স ট্রেনিং কলেজ এবং পুরুষ টিচার্স ট্রেনিং কলেজে গিয়েছেন ? সুন্দর পুকুর, শান বাঁধানো ঘাট, জমিদার বাড়ি......
ময়মনসিংহের অনেক জায়গায়ই গিয়েছি তবে খুব একটা ভালো লাগেনি। আমার বোধয় ঐ জায়গাটা পছন্দ না। তাই ওখানের কিছুই ভালো লাগে না।
আল্লাহ হুমায়ুন আহমেদকে ক্ষমা করুন, কবরের আযাব থেকে ও জাহান্নাম থেকে রক্ষা করুন! উনার পরিবার পরিজনদের হিদায়াতের আলো দিন! আমীন!
অনেক অনেক শুকরিয়া আপুনি!
আল্লাহ পাক হুমায়ুন আহমেদের গুনাহগুলো ক্ষমা করে তাকে জান্নাত নসীব করুন এই দোয়া।
ঈদের শুভেচ্ছা।
ঈদের শুভেচ্ছা
ঈদ মোবারক প্রিয় আপুনি!
আর হ্যাঁ, সালনা বাজার পেরিয়ে কিন্তু যেতে হয় হোতাপাড়া। সালনা বাজারের পাশ্বেই আমার বৌ এর বাড়ী।
উপভোগ করলাম..
আপনাকে অনেক ধন্যবাদ, জাযাকাল্লাহ
পাঠের জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ।
মন্তব্য করতে লগইন করুন