আমার দুরন্ত শৈশব
লিখেছেন লিখেছেন ইক্লিপ্স ০৩ সেপ্টেম্বর, ২০১৪, ০৮:৫১:০৬ রাত
শৈশবের দুরন্তপনার স্মৃতি সব সময়ই নস্টালজিক করে। ভিশুদার শৈশব বিষয়ক পোষ্ট দেখে মনে হল আমার শৈশব নিয়েও কিছু লিখি। মন্দ হয় না যদি এই উচ্ছল শৈশবের কিছু অংশ ব্লগের মলাটে থাকে বন্দী। আমার শৈশব মূলত কেটেছে আমার বড় ভাইয়ের সাথে। ওর সাথে টইটই করে এদিক সেদিক ঘুরে বেড়ানোর মধ্যেই মুখোড় ছিল সেই নানা রঙের দিনগুলি। আমার বড় ভাইয়ের নাম ফয়সাল। এই নামের ছেলেগুলো বোধয় সব সময়ই খুব দুষ্টু হয়। আমি আমার লাইফে যতগুলো এই নামের ছেলে দেখেছি সবাই প্রচন্ডরকমের দুষ্টু ছিল। আমার ভাইও তাই। ছোটবেলায় তাকে দুষ্টামি হার মানানোর মত মানুষ খুব কমই ছিল। আমি শান্ত শিষ্ট থাকলেও থাকে তার পিছু পিছু ঘুরে বেড়াতাম। এভাবে হারিয়ে গিয়েছিও বেশ কয়েকবার। তবুও শৈশবের দুরন্তপনা কোন কিছুর কাছে হার মানেনি।
আমার শৈশবের গল্প বলতে গেলে যে মেয়েটার নাম বলতেই হবে সে হল খালেদা। ওকে সবাই ডাকতাম ''খালেদা জিয়া'' বলে। ও দুষ্টামিতে ছিল আমার ভাইয়ের বরাবর। আর এক রাজ্যে কখনো দুই সিংহ থাকতে পারে না বিধায় আমার ভাই ওকে দু চোখে দেখতে পারত না। সুযোগ পেলেই পিঠের উপর ধুমুর ধামুর কিল দিয়ে আসতো। সেও চেষ্টা করতো প্রতিরোধ করতে। কিন্তু আমার ভাই ওর থেকে বয়সে বড় হওয়ায় পেরে উঠেনি। তবে পারত আমার সাথে। একবার আমার মুখে খামচি দিয়ে এত বড় দাগ করেছিল সেই দাগ যেতে বহুদিন লেগেছে।
সব ছোট মেয়েদের মত আমিও হাঁড়ি পাতিল খেলতে পছন্দ করতাম। মাঝে মাঝে ছোট চুলায় আগুন ধরিয়ে ভাতও রান্না করেছি। সঙ্গী ছিল ঐ খালেদা জিয়া। ওর সাথে রান্নাবারা, পুতুল খেলা অথবা মাঠে মাঠে দৌড়ে বেরানো সবই চলত। আমার ছিল প্রায় ৩০ টার মত পুতুল। সবই ছিল আমার খালা গিফট করা। পরে কিছুটা বড় হয়ে যখন বুঝেছি পুতুল নিয়ে খেলা গুনাহ তখন সব পুতুল পুড়িয়ে ফেলেছিলাম।
আমি আর খালেদা জিয়া আমার ভাইয়ের পিছু পিছু মাঠে যেতাম ক্রিকেট আর ফুটবল খেলতে। কিন্তু আমরা একটু ছোট হওয়ায় আমার ভাই আর তার বন্ধুরা আমাদের খেলতে নিতে চাইতো না। নিলেও করত দুধ ভাত। এর প্রতিশোধ আমি নিতে না পারলেও খালেদা জিয়া নিতো। ও মাঝে মাঝে খামচি দিয়ে দৌড়ে পালিয়ে আসতো। প্রায় সব রকমের বন্ধুই জুটেছিল আমাদের। ভালো ,ভদ্র,অখাটে, বখাটে সবই ছিল নিত্য দিনের সঙ্গী। লুকায় লুকায় তিন জনে রোজ বিকালে খেলতে চলে যেতাম। আমরা সবাই মিলে একটা নৌকাকে বানিয়ে ছিলাম সিন্দাবাদের জাহাজ। আসল জাহাজের মত না হোক কল্পনা করে নিতে ক্ষতি কি?
আমার বোখাটে দস্ত গুলার মাঝে একজন বড় হয়ে হয়েছে গুন্ডা। এক দিন রাস্তায় আমি কলেজে যাওয়ার সময় আমাকে কে যেন কিছুটা দূর থেকে জিজ্ঞাসা করল ,''কেমন আছো টুম্পা? '' আমি তাকায় দেখি একটা মোটা, কালো, কিম্ভুতকিমার, থ্রি কোয়াটার পেন্ট পরা লোক আমার দিকে তাকায় হাসছে। আমি মনে মনে ইয়া নাফসি নাফসি জপতে জপতে ভাবছিলাম ,''এইডা কিডা? আমারে কেমুন আছো জিগায় ক্যান?'' পরে মনে পড়ল এইটা হল ঐ পিচ্চিপোলাটা। বড় হয়েছে। ছোটবেলায় দেখতে আমার থেকে ছোট দেখালেও এখন তাগড়া জুয়ান। ওকে দেখে চমকালেও ভাবছিলাম কি অদ্ভুত এই ছেলেবেলা! কোন ছেলে মেয়ে বিভেদ নেই, ধনী-গরীর বিভেদ নেই, বর্ণ-গোত্র কোন কিছুতেই বিভেদ নেই। সব কিছুর ঊর্ধ্বে শিশুরা মানবতার জয়গান গাইতে পারে। আমরা বড়রা পারি না। এটা আমাদের জন্য সম্ভবও না। এটাই নিয়ম।
আমার ছেলেবেলা শহরে কাটলেও আমাদের বাড়ির আশেপাশে বর্ষাকালে অনেক পানি জমতো। আর এই পানি ছোটবাচ্চাদের ডুবে মরার জন্য এনাফ ছিল। তাই অভিভাবকদের দুশ্চিন্তার অন্তত ছিল না। তবুও দুরন্ত শৈশবকে কে ঠেকায়? কখনো স্কুল তাড়াতাড়ি ছুটি হলে বাড়ি না ফিরে চলে যেতাম খেলার মাঠে। আমাদের সাথে আমাদের পাড়ার দু টো জমজ ভাইও খেলতে আসতো। একদিন খেলার মাঝে হঠাৎ শুনি মানুষের চেঁচামেচি ,কিছু লোকের হুড়োহুড়ি। পরে মাঠের পাশে পুকুরের দিকে তাকিয়ে দেখি ঐ দুই জমজ শিশুর একজন ভেসে উঠেছে। আমরা একটুও টের পাইনি কখন খেলার ভিড়ে ও পুকুরের পানিতে গিয়ে পড়ে গিয়েছিল। পরে দেখি বড় একটা খাটে পিচ্চি একটা সাদা পোটলা বেঁধে ওকে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। ওর সাইজের তুলনায় খাটের দৈর্ঘ্য এত বড় ছিল যে ওটার দিকে তাকিয়ে বার বার মনে হচ্ছিল এটা ঠিক নয়। এই মরার খাট এত ছোট একটা মানুষের হওয়া উচিত নয়। তবুও অনুচিত কাজগুলোই তো ঘটে। এটাও হয়ত জগতেরই নিয়ম। আর এই নিয়ম অনুযায়ী ইচিংবিচিংচিচিংচার প্রজাপতির মত করে উড়ে গেছে সেই দুরন্ত শৈশব। সবই আজ শুধুই স্মৃতি।
বিষয়: বিবিধ
৫২৯৩ বার পঠিত, ১১৯ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
আমরাতে আপনাদের দুইজনকেই দেখলাম অনেক দিন পর
সে একটিভ হবেনা তবে চুরি করে আপনার পোষ্ট কিন্তু পড়বে ঠিকই.....।
তুমি জানো ইকিদির ফেসবুক স্টাটাস পড়েছি আমি।
@আওনঃ আজকাল মোবাইলে গেইমই বেশি খেলা হয়। তাই ব্লগের নেশা অনেকখানি কমে গেছে। আর আপনারাও তেমন একটা লিখেন না। কি বলুন।
খুব কষ্ট হয় লিখতে
খাম্মুনি।
ইকি আপু তিনি আমার খালামুনি।
অনেক ধন্যবাদ
এবার কিন্তু আর ব্লগ ছেড়ে যাবেন নাহ্!
উপরের ছবিতে পিচ্ছিটা কি আপনি?!!
আমিও নাদুস নুদুস ছিলাম ছোট বেলায়।
তবে দুষ্টু ছিলাম।
আপনার প্রোপিকের পিচ্চিটা যে নেট থেকে তা আগে থেকেই জানতাম! আমি দেখেছিলাম নেটে! তবে আপনার নামের সাথে বেশ মানায়!
আমিও আপনাকে দেখে অনেক খুশি হলাম। আর পোষ্টের ছবিতে আমি আর আমার বড় ভাইয়া। আমার ছবিটা দেখে আশা করি বুঝে গেছেন আমার প্রো পিকে মুখে আঙ্গুল দেয়া ছবির রহস্য কি?
আপু মন ভালো করার মতো একটি কবিতা পোস্ট দেন না প্লীজ!
খুশি হলুম কবিতা লিখবেন শুনে, থ্যাংস্ আপুনি!
''৮ 261355 ০৩ সেপ্টেম্বর ২০১৪ রাত ১০:০৬
আওণ রাহ'বার লিখেছেন : আচ্ছা আমার কমেন্টসটা কই গেলো?
Crying Crying Crying Crying Crying Crying Straight Face Straight Face Straight Face Straight Face Straight Face Straight Face Straight Face Straight Face Angel Angel Angel''
চুরি করে কি পড়ব বলেন? আপনারা তো লেখেনই না ঠিক মত। তাই চুরি করে পড়ার ইচ্ছে থাকলেও সম্ভব হয়নি।
পেপের জন্য আবারো ধন্যবাদ। আমি পেপে পছন্দ করি।
,
হারিকেন ভাবি আবার মামু হইলো কবে?
আমার ব্লগের অবয়ব দেখে যাই মনে হোক না কেন বাস্তবিক লাইফে আমার দ্বারা ঝগড়া করা হয় না। হাত পা কাঁপতে থাকে। তবে মাইর দেয়ার অভ্যস বোধয় আছে। ছোটবেলায় এক মাইয়া আমার হাতে কামড় দিছিল,পরে আমি ওরে ধাক্কা দিয়ে ওয়াল থেকে ফেলে দিসি। এই ঘটনা পোষ্টে লিখি নাই। সো সাবধান। ) )
সোনা ব্লগে সে ছেলেদের মাথা খেয়ে ফেলেছিলো।
যাই হোক শৈশব নিয়ে প্রথম পোষ্টটাতেই ছক্কা!শেষ প্যারাটা যদিও একটু করুন। আমাদের সময় যে উন্মুক্ত শৈশব ছিল এখনকার শিশুরা কি তা আর পায়? নচিকেতার গানের ভাষায়
"ছোট ছোট শিশুদের শৈশব চুরি করে গ্রন্থ কিটের দল বানায় নির্বোধ"। সত্যিই নিজের চেয়ে ওজনে ভারি বই এর ব্যাগ বহন কারি অনেক শিশুকেই দেখি পরীক্ষায় ফার্স্ট হয়েও জানেনা অনেক কিছূ।
এতদিন হোস্টেলে ছিলাম। ব্যস্ততা,চুরির ভয়, অসুখ সব মিলিয়ে হোস্টেলে ল্যাপটপ নেয়া হয়নি। তাই ব্লগেও আসা হয়নি।
আজকাল শিশুরা সত্যি অনেক কিছু থেকে বঞ্ছিত হয়। আমাদের সময় যে মাঠগুলো ছিল সেগুলো এখন বাড়ি হয়ে ভরে গেছে। সত্যি খুব দুঃখজনক।
শ্বশুরবাড়ি ছিলেন।
শ্বাশুড়ির ভয়ে ব্লগে আসতে পারেননা তাই এখন বাপের বাড়িতে এসে ব্লগে একটা ঢু মারছেন।
আসলে ইকিপুর শ্বাশুড়ি খুব ভালো তবে ইকি ব্লগিং করতে যেয়ে কুরআন/তাফসির /বই পড়া বাদ দিয়ে দিছে তাই বকাঝকা করেন মাঝে মাঝে।
যে এইভাবে "মনি তুমি আবার ব্লগে বসছো যাও বই পড়ো, সন্ধ্যায় কুরআন পড়বে" ইকি আপুও লক্ষীবাবুর মত ব্লগে আর আসেনা।
এখন বাপের বাড়িতে তবে তোমার কেও কেওতে না আবার আংকল ইকিপুর শ্বাশুড়িকে ফোন দিয়ে দেয় চোপ একদম।
ইক্লিপস ক্লিয়ার করেন।
একটু আপগ্রেড ভিশুম
ওহে বড় ভাই বড় ধরনের খাওয়া দাওয়ার জন্য প্রস্তুত হন।
কনে বাড়ির মেহমান আমরা বুঝতে হবে তো।
যতসব রান্নাশালা।
আগুন জ্বালা খানা পাকা
আগুন জ্বালা।
ওরে ও মোরা কনেপক্ষ
দুভাই মিলে সাবার করবো।
সব খাবার সব খাবার সব খাবার
ভাইয়া খাবার দাবারের জন্য প্যারোডি সং রচনা হবে আরো
আওন ,হারিকেন মামুর কথায় কান দিবেন না।
শুভেচ্ছা সতত।
ভালো লাগলো আপনার শৈশবের স্মৃতি ...
না শুনালে আরো হাতুড়ি হবে।
তাহলেই হবে।
আপুতো শৈশবে নিয়মে বাধা ছিলেন
যাতে কমেন্টস জবাব এর চিন্তা না করে বেশি বেশি পোষ্ট লিখতে পারেন তাই।
শুভেচ্ছা সতত।
ও আপনি ব্যাস্ত থাকলেও বলবেন আপনার পোষ্টে কমেন্টস এর জবাব একবার দিয়ে আসবো।
সাথে বোনাস হাতুড়ি পাবেন।
কি খেলবেন বলেন?
কানধরা?
নাকি আংটিস?
তবে আমি জয়ের জন্য মুখিয়ে থাকতাম।
আপনাকেও ধন্যবাদ ভাই।
আমার ছেলের নামও ফয়সাল। সে কিন্তু আপনার দেখা ফয়সালদের চেয়ে সম্পূর্ণ আলাদা। সে অত্যন্ত ভদ্র ও লাজুক। লোকেরা বলে ও ওর বাবার মত হয়েছে
@হারিকেন মামুঃ আসলেই! থিওরী ফেইল খাওয়াতে আমিও অবাক হচ্ছি।
@আওনঃ নানি নিশ্চয়ই পরে আপনাকে দাবড়ানি দিত
শুভেচ্ছা জানবেন প্রেসিডেন্ট।
ভিশুদা যখন শিশু ছিলো কেমন ছিলো স্বভাব
এমন স্বভাব গড়েছে সে ব্লগে পড়েছে প্রভাব ।
তার প্রভাবে ব্লগ পাড়াতে পড়লো একি সাড়া
শৈশবের'ই স্মৃতি নিয়ে সবাই দিচ্ছে নাড়া ।
জানতে পারবো ছোট্টবেলার সবার মধুর স্মৃতি
কে কতটা ইছড়ে পাঁকা কার কত (কু)কৃতি ।
স্কুল ফাঁকি দিচ্ছে কারা কিংবা মক্তবের'ই পড়া
জানতে পারবো বাবা মায়ে কার কতটা কড়া ।
দুষ্টুমিতে সেরা ছিলো কে ছিলো ভাই পাজি
জানতে পারবো সেই খবরও ব্লগ পাড়াতে আজি।
আসুন সবাই একসাথে আজ হইহল্লুড়ে মাতি
ব্লগপাড়াতে আমরা হই যেন একে অন্যের সাথী।
মন্তব্য করতে লগইন করুন