আমার চিটাগাং ট্যুর!
লিখেছেন লিখেছেন ইক্লিপ্স ০৪ এপ্রিল, ২০১৪, ১২:০৫:৫৯ রাত
টানা কয়েকমাস পরীক্ষা এবং শহুরে যান্ত্রিকতায় হাপিয়ে উঠেছিলাম। তাই একটু প্রশান্তির আশায় দূরে কোথাও বেরাতে যাবার কথা ভাবছিলাম। এদিকে আমার ভাইয়ারও ছুটি। আব্বুরও তেমন কোন কাজ নেই। সব মিলিয়ে সোনায় সোহাগা। পুরোপরিবার মিলে বেরিয়ে পড়লাম চিটাগাং এর উদ্দেশ্যে সমুদ্র দর্শনে।
অনেক বছর পর আবার চিটাগাং এলাম। এখানকার পাহাড়ি নৈসর্গিক দৃশ্য যে কাউকেই মুগ্ধ করবে। সেই সাথে এই বাস্তবতাও শেখাবে জীবনের সাথে কত যুদ্ধ করে কত কষ্টে পাহাড়ি অঞ্চলে মানুষ জীবন ধারণ করে!
চিটাগাং এসে পরের দিন সকালে গেলাম ইতিহাস বিখ্যাত ব্যক্তিত্ব বাইজিদ বস্তামির মাজার দর্শনে। ওখানে গিয়ে মর্মাহত হলাম। এতবড় পরহেজগার একজন মানুষের কবরকে ঘিরে তারা তৈরী করেছে শিরক আর বেদআতের আড্ডাখানা! ঢুকতেই হাতের বাম পাশে বড় পুকুর আর তাতে বিশাল বিশাল কচ্ছপ।
একজন আমাকে জানালেন ওগুলোকে ''কচ্ছপ'' বলে ডাকতে নেই। পীরেরা মারা গিয়ে এখন কচ্ছপের বেশে এসেছেন! তার সাথে আর কথা বাড়ালাম না। চুপচাপ পাউরুটি খাওয়াতে লাগলাম মোটা মোটা কচ্ছপগুলোকে। পাশে বেশ কয়েকজন মানত পুরণের আশায় পুকুরের নোংরা পানি মুখে মাখচ্ছিলেন। কেউ আবার গভীর শ্রদ্ধাভরে কচ্ছপগুলোকে হাত ভুলিয়ে আদর করছিলেন। কুসংস্কারের দেশ বাংলাদেশ!
তারপর গেলাম চিটাগাং এর চিড়িয়াখানায়।
মুলত আমার আব্বাজানের জন্য এখানে যাওয়া। সারাদিন টিভিতে ডিসকভারী ও অন্যান্য এনিমেল চ্যানেলগুলো দেখে ওনার জন্তুদের প্রতি বিশাল আগ্রহ। যেয়ে আমাদেরও ভালো লাগল। আমি ছিলাম বেবুনের আশায়। কারণ দুই দিন আগে টিভিতে বেবুন দ্বারা এক মহিলার বাচ্চা অপহরণের কাহিনী শুনেছি। যদিও বেবুনের দেখা পাইনি তবে পেয়েছি এক বাদর ফ্যামিলির দেখা। ওনারা একজন আরেকজনের মাথার উকুন বাছায় ব্যস্ত ছিলেন।
নিচের ছবিতে এই মহারানী হলেন ময়ূর। তার রুপের ঝলকানি দেখার আশায় ছিলাম। কিন্তু তিনি পেখম মেলেন নি।
রয়েল বেগঙ্গল টাইগারের দেখা পাইনি। তবে পেয়েছি ইন্ডিয়ান সিংহের। এনি বেশ মোটা তাজা।
নিচের ছবিতে ছোট খাট কালো প্রাণীটার নাম ভাল্লুক।
ইনি হরিণ
ইনি বাগডাস,
ওখানে আরো অনেক বিখ্যাত প্রানী ব্যক্তিবর্গ ছিলেন। কিন্তু পোষ্ট বড় হওয়াতে সবার ছবি দিলাম না।
তারপর গেলাম ফয়েজ লেকে।
এটা কিছুটা ঢাকার ফ্যান্টাসী কিংডম এবং নন্দন পার্কের মত। তবে ফ্যান্টাসী এবং নন্দন থেকে এটাকে আমার বেশি ভালো লেগেছে লেকটার জন্য।
সত্যি খুব সুন্দর একটা পার্ক। এই পার্কের মেইন আনন্দ হল বোট ভ্রমণ। বোটে করে পার্কের ''সী ওয়ার্ল্ডে'' যাওয়া।
যারা শহুরে ব্যস্ততা ছেড়ে কিছু সময়ের জন্য প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে হারিয়ে যেতে চান তারা নির্দ্বিধায় এখানে যেতে পারেন। লেকের অপর সাইডে পাহাড়ে কোল ঘেসে আছে মনোরম রিসোর্ট।
পাহাড়্গুলোও ভ্রমণ পিপাসুদের জন্য বেশ রোমাঞ্চকর। তবে আমরা দুই ভাই বোন এত উচু দেখে উঠতে সাহস করিনি। কিন্তু আমার আব্বাজান এক মাথা থেকে উঠে আরেক মাথা থেকে নেমেছেন এবং আমাদের দুই ভাই বোনকে বলেছেন ''দেখো তোমরা জুয়ান বয়োসে পাহাড়ে উঠতে পারো না, আর আমি বুড়ো বয়েসে উঠে এসেছি।''
এবার চিটাগাং এর প্রধান সৌন্দর্য অবলোকনের পালা। যার জন্য এত পথ পাড়ি দিয়ে আসা। বঙ্গোপসাগর!
যতবার এটাকে দেখি দেখার সাধ মেটে না। নদী, সাগর এগুলোর অন্য রকম আকর্ষণ। অন্য কোন মায়ায় মানুষকে টানে। তাই আমার মত যারা সাঁতার জানে না তারাও এর সান্নিধ্য পেতে পাগল।
সব থেকে বেশি আনন্দ মুলত এখানেই। স্পীড বোটে উঠা, বীচের ছোট ছোট বাইকের চড়ে সারা বীচের চক্কর, খোলা হাওয়ায় ফুচকা খাওয়া আর পানিতে পা ডুবিয়ে কিছু সময়ের জন্য স্বপ্নের ভুবনে হারিয়ে যাওয়া। সব মিলিয়ে অসাধারণ অনুভুতি।
তারপর এক ঝোলা আনন্দদায়ক স্মৃতি নিয়ে সমুদ্রকে ছেড়ে নিজের বাড়িতে ফিরে আসা।
বিষয়: বিবিধ
৪৬৪৫ বার পঠিত, ১২৭ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
আর সুমাইয়া আপুর মত আমারও প্রশ্ন-আপনি চট্রলার প্রডাকশন?
সত্যি অনেক মজা করেছি। বহুদিন পর পুরো ফ্যামিলি এক সাথে দূরে কোথাও গেলাম। সত্যি অসাম।
সুন্দর থাকুন।
অনেক ভালো লাগল আপনার সাথে পরিচিত হতে পেরে।
আহ মরণের আগে কি আর ওখানে যেতে পারবো? মনে হয় না!!
খুব ভালো লিখে মন টাকে সহিব করে দিলে এই জন্য অনেক দুআ ও মুবারকবাদ দিচ্ছি। খুব ভালো লাগলো, ক্ষণিকের জন্য হারিয়ে গেছিলা ফয়ে'স লেইকে, মক্কার সেই খুনী অথচ আত্ম গোপন করা নৌকার মাঝিটা কি আছে ওখানে। গেলেই বলতো 'শাইখ, আমার নৌকায় ওঠেন, এবং ঘুরাবার পর টাক নিতে যেয়ে লজ্জায় মরে যেত। বলতাম এই রকম মনের মানুষ, আবার মানুষ খুন করে কী করে? বলতো: শায়খ ফয়ে'স লেইকেও মাঝে মাঝে এসে লাশ ভাসতে দেখি। এত ভালো যায়গায় একজন আরেকজনকে মারে কী করে। তাকিয়ে থাকতাম ও কালো পোড়া মুখটার দিকে।
কেন যেতে পারবেন না? অবশ্যই যাবেন আবার আপনার প্রাণের শহরে। ফয়ে'স লেকটা আসলে খুব নিরিবিলি! বিশেষ করে নদীর ওপাড়ের রিসোর্টগুলো। ওখানে এমন কিছু হলেও হতে পারি! আর মাঝিটির কথা আগে জানলে খুঁজে দেখতে পারতাম।
আমার ওখানে খুব পাহাড়ি ঝর্ণা দেখার ইচ্ছে ছিল। কিন্তু ওটা সম্ভবত শুধুমাত্র বর্ষার সময় দেখা যায়। সত্যি খুব সুন্দর জায়গা। আপনাকে অনেক ধন্যবাদ সুন্দর মন্তব্যের জন্য।
যদি বাংলাদেশে আসেন তবে অবশ্যই চট্টগ্রামে আসার জন্য আপনাকে স্বগতম জানাচ্ছি।
ময়ূরটা আসলে মহারাজা আপু, পাখীদের মাঝে পুরুষরাই সৌন্দর্য প্রদর্শন করে নারীদের দৃষ্টি আকর্ষনের চেষ্টা করে, আমাদের উলটো
খাঁচাটা হয়ত বাঘডাঁশের ছিল আপু, কিন্তু প্রানীটা আসলে হরিণ
সমুদ্র খুব মিস করি, ছবি দেখে চলে আসতে ইচ্ছে হচ্ছে
স্থানীয় লোকজন নিজেদের হাঁসমুরগী রক্ষা করতে গিয়ে বাঘডাঁশ প্রায় বিলুপ্ত করে ফেলেছে, বিপন্ন প্রানী হয়ে পড়েছে বেচারারা। হুমম, এবার ঠিক আছে আপু
আমার হাতের কাছেই, অথচ এভাবে লিখতে পারিনি।
এটারও বোধ হয় কারণ আছে।
ডি এস এল আর এর সাইজ বড় তাই অলসতা করে নেই নি। এখন বুঝতে পারছি নেয়া উচিত ছিল।
কিন্তু চট্টগ্রামে আসলেন আর এতগুলা ব্লগার কে একটা খবর দিলেননা। শুটকি আর মেজবাইন্না গোস্ত খাওয়াইতাম।
খবর দিলে তো শুটকি খাওয়াতেন। জানেন না আমি শুটকি খাই না। শুটকি আগে দেখলে গন্ধেই চিটাগাং ছেড়ে পালিয়ে আসতাম। তখন কি হত?
দাওয়াতের জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ। এত ব্লগার ভাই বোন ওখানে আছেন আমার জানা ছিল না। আমরা তো আগ্রাবাদের অর্কিড হোটেলে ছিলাম। ওটা বীচ থেকে কিছুটা দূর। আপনাদের সাথে আগে আলোচনা হলে হয়ত কাছে হোটেল সম্পর্কে জানতে পারতাম। যাক এবারের মত মিস হল। নেক্সট টাইম আর করব না।
সমুদ্রের কাছে কোন ভাল হোটেল নাই। আগ্রাবাদের হোটেল গুলি মোটামুটি ভাল মানের এবং ফ্যামিলি নিয়া থাকা যায়। এছাড়া আগ্রাবাদ থেকে যেকোন জায়গায় সহজে যাতায়ত করা যায়।
আমারও খুবি প্রিয় ফয়েজ লেক। কারণটা একই, লেকটি!
ছবি ও বর্ণনা খুব সুন্দর ও ভালো লেগেছে।
স্টিকি পোস্টের জন্য অভিনন্দন আপু
কোন এক অবসরে...
ভ্রমনের যাবো ফয়েস লেক, আর সেন্টমার্টিনে
আপনাকে ধন্যবাদ চট্টগ্রাম শহরের কিছু বিষয়ের স্বচিত্র বর্ণনা দেয়ার জন্য।
আসলে প্রতিদিন চট্টগ্রাম শহরেই কর্মব্যস্থ সময় কাটায়। অথচ এখনো পর্যন্ত চট্টগ্রামের অনেক গুরুত্বপূর্ণ স্থানগুলো স্বশরীরে গিয়ে দেখার সুযোগ হয়নি। তম্মধ্যে একটি হচ্ছে বাইজিদ বোস্তামির মাজার সংলগ্ন অনেক দিনের পুরনো কচ্ছপের পুকুর দর্শনের।
আমরা আসলে মাত্র তিন দিন ছিলাম। ঢাকার বাহিরে বেশি দিন থাকার সুযোগ কই!
ডাক্তারের বর্ণনায় আবার ফিরে গেলাম সেখানে ভরাক্রান্ত মন নিয়ে।
ভালো লিখেছ। অনেক ধন্যবাদ।
সমুদ্র সত্যি খুব সুন্দর। কিন্তু ইপিজেডের জায়গায় অনেক জ্যাম হয়। এটা না হলে বেরানোটা আরো আনন্দদায়ক হত। আমরাও আরো কয়েকটা দিন বেশি স্টে করতাম।
এটা চাঁটগাঁর আঞ্চলিক গান । আপনি এখানে এসেছেন আমাদের কাউকে বলেন নি কাজটা কি ঠিক করেছেন ? আমাদের চাঁটগাঁইয়াদের মেহমানদারীটা একটু চেখে যেতেন।
মেহমানদারী যে করতে চেয়েছেন এতেই খুশি হয়েছি। অনেক সময় ''খাওয়াবো'' বললেই খাওয়ানো হয়ে যায়। ব্লগে এত্ত এত্ত দাওয়াত পেয়ে বুঝলাম চট্রগ্রামের মানুষ অতিথী পরায়ন।
স্টিকি পোস্টে অভিনন্দন ইকি'পুকে
ইনশাআল্লাহ এবার আসলে হবে। শুভকামনা।
চটগ্রাম চিডিয়া খানা: যে দুটি প্রাণি দিয়ে ফটক তৈরি করা হল অর্থাত হাতী আর জীরাফ সে দুটি প্রাণির অস্তিত্ব এই চিড়িয়া খানায় নাই. ভেতরে যে দুটি রয়েল বেঙ্গল টাইগার আছে সেগুলো এমন শুকিয়ে গেছে যেন শীত কালে রশিতে কম্বল শুকুতে দেওয়া হয়েছে.
আপনার পুরোপরিবারের সবাইকে সব সময় আল্লাহ ভাল রাখুন জাযাকাল্লাহ খায়ের
দোয়া করবেন বেশি বেশি।
কারন সী বীচের পাশেই আমার বাড়ী,
অবশ্য মাজার পূজার জন্য নয়। বরং নিজের পকেট খরছ ঠিক রাখার জন্য।
আত্মীয় স্বজনরা মাজারের জন্য পয়সা দিত। আমি সেটা আমার পেট মাজারে দিতে যেতে হত কচ্ছপ মাজারে।
সুন্দর পোস্টের জন্য ধন্যবাদ ।
শুভরাত্রি।
এগুলো আসলে মানুষের আজীব ভাবনা!
মন্তব্য করতে লগইন করুন