অদ্ভুত সুন্দর কিছু মানুষ!
লিখেছেন লিখেছেন ইক্লিপ্স ২৩ জানুয়ারি, ২০১৪, ০৯:৪৮:৫৬ সকাল
পরীক্ষার রিটেন শেষ হওয়ার পর আর ঘরে মন টিকছিল না। প্রায় দুই মাস ধরে রুমে বন্দী। আর কত? তাই পরশুদিন খুব সকালে ঘুম থেকে উঠেই ব্লগে একটা পোষ্ট লিখলাম। তারপর বেড়িয়ে পড়লাম যে দিকে দু চোখ যায় সে দিকে! আমার হোস্টেলের কাছে একটা ছোট নদী আছে। নদীর পাড়ে আছে নৌকা ভ্রমনের ব্যবস্থা। একটা নৌকা নিয়ে নদী মাঝখানে গিয়ে বসেছিলাম কিছুক্ষণ। আবহাওয়াটাও সঙ্গ দিয়েছে দারুণভাবে। হালকা রোদ, হালকা শীত সব মিলিয়ে নাতিশীতোষ্ণ অবস্থা। একটু পর একটা কুকুর সাঁতার কেটে নদী পাড় হচ্ছিল। তার সারা শরীর পানিতে ডুবানো, শুধু গলা আর মুখ ভেসে আছে! সামনের দুই পা কিলবিল করে নাড়িয়ে অদ্ভুতভাবে নদী পাড় হচ্ছিল সে! এই দৃশ্যগুলো বরাবরই আমাকে অবাক করে। মুগ্ধ করে!
তারপর দুপুরের দিকে কোন একটা রেস্টুরেন্টে খেয়ে একটা রিক্সা ভাড়া করলাম। রিক্সা আলাটা ছিল বৃদ্ধ।তার সাথে কথা বলার সময় দেখছিলাম তার দুই সাইডে কেনাইন দাঁত নেই। মাঝখানে শুধু খরগোশের মত বড় বড় দু টো ইন্সিসর দাঁত আছে। সে এই বয়সে কেন রিক্সা চালাচ্ছে তা আর জিজ্ঞাসা করলাম না। কারণ দুঃখের কোন কাহিনী শোনার মত মুড ছিল না। আর এমন মানুষদের পেছনের কাহিনীগুলো প্রায় কমন! সন্তান দেখা শোনা করে না। তাই আমি আর শোনা কাহিনী শোনার জন্য কথা চালালাম না। তার বলা ভাড়া অনুযায়ী উঠে পড়লাম। কিছু দূর এসে একটা ফ্রুটসের দোকানের সমানে দাঁড়িয়ে নিজের জন্য ফ্রুটস কিনলাম। আর দোকানীকে বললাম রিক্সা আলাকেও এক কেজি মাল্টা দাও। দোকানী ফ্রুটের পেকেট দেখলাম তার দিকে না দিয়ে আমার দিকে দিল। তারপর আমি নিজেই রিক্সা আলার দিকে বাড়িয়ে দিলাম। বেচারা অদ্ভুত ভঙ্গিতে বিস্ময় নিয়ে তাকিয়ে বলল,'' এগুলা দিয়া আমি কি করুম?'' আমি বললাম বাড়ি গিয়ে খাবেন। তখনই সে আমার হাত থেকে নিল!
তার যেন বিশ্বাসই হচ্ছিল না কেউ তাকে পথ্যি মধ্যে কিছু কিনে দিতে পারে! আমরা মানুষেরা জগতের এতখানি নিষ্ঠরতাই তাকে দেখিয়ে দিয়েছি তার মানুষের উপর থেকে বিশ্বাস উঠে গেছে! নিজেকে খুব পাপী মনে হচ্ছিল সে সময়! আসলেই আমরা অনুভূতিহীন! তার এই বিস্ময়ের জন্য আমরাই দায়ী! আমি তার খুশি দেখে অভিভূত হচ্ছিলাম! যেখানে সমাজের ধানিক বন্ধুগুলোকে হাজার হাজার টাকার উপহার দিয়েও মন পাওয়া যায় না সেখানে সামান্যতেই এই লোকের এত খুশি! আলহামদুলিল্লাহ্। এরাই আসলে প্রকৃত মানুষ।
তারপর একবার হাসপাতালে এক পেসেন্টের সাথে পরিচয় হয়েছিল। লোকটার পেটের সাইডের হাত দিলে একটা গোল চাকার মত হাতে অনুভূত হয়। এমনটা স্টোমাক ক্যান্সারের পেসেন্টদের ক্ষেত্রে পাওয়া যায়। লোকটা এত ভালো ছিল যে এত অসুস্থ হয়েও আমার পরীক্ষা শেষ না হওয়া পর্যন্ত আমাকে তথ্য দিয়ে হেল্প করে গেছে। শেষে শুধু বলেছিল, ''মা আমি কিছু খাইতে পারি না। তবুও আমার খুব মিষ্টি খাইতে ইচ্ছা করে। আমারে মিষ্টি খায়াও মা!'' সে দিন আমি টাকার ব্যাগ নিতে ভুলে গিয়েছিলাম। তাই তাকে মিষ্টি খাওয়ার জন্য টাকা দিতে পারিনি। পরের দিন গিয়ে দেখি সে নেই! খুব কষ্ট হচ্ছিল সে দিন একটা এত অসুস্থ মানুষ আমার কাছে কিছু খেতে চাইল আর আমি তাকে খাওয়াতে পারলাম না!
তাই মাঝে মাঝে মনে হয় এই অদ্ভুত রকমের সুন্দর মনের মানুষগুলোর জন্য আমাদের এই নোংরা সমাজ না। ওদের জন্য স্বর্গের মত কিছু চাই। এত কষ্ট ওরা ডিসারভ করে না।
বিষয়: বিবিধ
১৯৫৯ বার পঠিত, ৪৭ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
ডায়লগটি সত্য
আর অনেকে চেয়েও খেতে পারেনা।
আরেকজন ভাইয়ের ঘটনা।
আর আপনার ব্লগে আমাকে মানুষ ভাঙা হাড়ি দেয় মিস্টি খেয়ে আমি সর্বোচ্চ আধাকেজি খেতে পারবো হয়ত।
সদা আলোকিত থাকুন।
যেখানে সমাজের ধানিক বন্ধুগুলোকে হাজার হাজার টাকার উপহার দিয়েও মন পাওয়া যায় না সেখানে সামান্যতেই এই লোকের এত খুশি!
এটাই আমাদের দেশের বাস্তবতা। ধনীকে খুশী করতেই সবাই ব্যাস্ত থাকে।
সতত শুভেচ্ছা।
সুন্দ্র থাকুন।
সুন্দর থাকুন।
সন্দেশ হলে এককেজি খেতে পারব।
কিন্তু আমার অভিজ্ঞতা বলে ডাক্তার রা কিছুই খাওয়ায় না। রোগি হোক আর আত্মিয় বন্ধু।
একা এক কেজি সন্দেশ! আমি তো এক মাসে খেতুম।
আর কে বলল ডাক্তাররা খাওয়ায় না? আপনার দাওয়াত রইল ব্লগের সকল ডাক্তারদের বাড়িতে। গিয়ে দেখুন তারা কেমন খাওয়ায়।
আমার মনে হয় না আমি এই মানুষগুলোর মত ভালো হতে পেরেছি। ওদের মত আমার চাহিদা কম নয়। কম হলে হয়ত হতে পারতাম। এই মানুষগুলো আসলেই চমৎকার।
শুভ সকাল।
শক্ত হয়ে গিয়েছিল। তাই ফেলে দিলাম। সাধারনত এখানে মিষ্টি পাওয়া যায় না। কেউ
ভাল মিষ্টি বানাতে পারলে এখানে লিখবেন।
আর আপু, আপনার কাছে আমারা মিষ্টি
পাওনা।
অনেক ভাল লেগেছে. ধন্যবাদ
সতত শুভেচ্ছা রইল।
সদা সুন্দর থাকুন। শুভ সকাল।
দেখেনতো আমি আপনার জন্য কত্তো বড় আইসক্রিম এনেছি
আর কান্না নয়! কেউ দেখে ফেলবে আবার!!
খুব ভালো লাগলো । ভালো থাকুন আপুনি
মন্তব্য করতে লগইন করুন