Good Luckনিন্দিত নরকে!

লিখেছেন লিখেছেন ইক্লিপ্স ১০ নভেম্বর, ২০১৩, ১১:২৬:৫৭ সকাল



সকাল বেলা উঠিয়া মনে মনে ভাবিতেছিলাম-কবি কেন বলিয়াছেন নিন্দুকেরে আমি বাসি ভালো? ভাবিয়া ভাবিয়া পাইলাম নিন্দুকেরা আসলে আমাদের জীবনের অভাবনীয় উপকার সাধন করিয়া চলিয়াছে! তাহারা সমালোচনীয় করিয়া আমাদের দেখাইতেছে ,''সোনামনি এই গুণটা কিন্তু তোমার এখনো হয় নাই ! আর আমি ইহারই খোটা মারিলাম।'' আমার ধারণা এই ধরণের নিন্দুকের সম্মুখীন আপনারা সবাই জীবনে কখনো না কখনো অবশ্যই হইয়াছেন। তবে এদের দেখিয়া রুস্টু হওয়ারও কিছু নাই! আমি আমার জীবনের অভিজ্ঞতা বলতেছি। আমি যখন ক্লাস ফাইভে পড়ি অংকে ফেইল করিলাম। নিন্দুকেরা খিক খিক করিয়া হাসিয়া আমার আব্বাজানকে কহিল,''আপ্নার মেয়ে গোল্লায় গিয়াছে! সে অংকে সর্বনিম্ন মার্স পাইয়া রেকর্ড গরিয়াছে!'' আমার আব্বাজান দুক্কু পাইলেন। আমিও দুক্কু পাইলাম। ভাবিতেছেন কি,''আমি ফেইল করিয়া দুক্কু পাইয়াছি? অথবা আব্বাজানের মুন খারাপ দেখিয়া দুক্কু পাইয়াছি? মুটেও না। আমি তো দুক্কু পাইয়াছিলাম ক্লাসে পিটানি খাইয়া। Cryingফেইল করার অপরাধে স্যার গুনিয়া গুনিয়া পাঁচটা বেত্রাঘাত করিয়াছিলেন! আমার জ্বর আসিয়াছিল। পরে অবশ্য আমার আব্বাজান জাইয়া স্যারের সাথে গোস্বা করিয়া আসিয়াছিলেন! Frustrated

নিশ্চয়ই ভাবিতেছেন স্যারের মাইর খাইয়া আমি অংকে বেজায় ভালো হইয়া গেলাম। মুটেও না! কেউ আমাকে বকিয়া আজ পর্যন্ত তাহার দলে ভিড়াইতে পারে নাই। তাই আমিও অংকের দলে ফিরিলুম না। Don't Tell Anyone আমার একটা পুরানো নীতি যে আমার সহিত ভালো ব্যবহার করিবে তাহাকে আমি প্রয়োজনে কলিজা ছিড়িয়া খাওয়া দিব। তবে আমার কলিজা না, মুরগীর কলিজা। Tongueআর যে খারাপ বিহেব করিবে, তাহার জন্য আমি কিছুই রাখিব না। মুরগীর ঠ্যাংও না। যাহা হোউক তারপর আমি ফাইভ ছাড়িয়া সিক্সে উঠিলাম। আমার স্কুলে মেডাম আসিল। Love Struck উহারা অংকে না পারিলেও কিছু কহিত না। এতে আমি ইমপ্রেসড হইলাম। শেষ পর্যন্ত অংক পরীক্ষায় আবার রেকর্ড করিলাম! তবে এই রেকর্ড সব চেয়ে ভালো মার্ক্সের। তাহার পর আবারও আমি সমালুচনার টপিক্স হইলাম! I Don't Want To See নিশ্চয়ই ভাবিতেছেন ভালো মার্ক্স পাইয়াও কেনু সমালুচিত হইতেছি! কারণ হইল আমার ক্লাসের ছেলে মেয়েদের দল আমাকে ,''জিনিয়াস'' বলিয়া ডাকা শুরু করিয়া দিল। অবশ্যই ইহা প্রশংসা করিতে নয়। ভেঙ্গাইয়া ভেঙ্গাইয়া বিদ্রুপ করিতে! Frustrated

তাহার পর কলেজে আসিলাম! কলেজে একখান অদ্ভুত লেডির সাথে দেখা হইল। উহা আমাকে দেখিলেই ভেংচি কাটিত! Waiting আর আমার ইচ্ছা হইত যাইয়া কষিয়া গাল বরাবর এক চড় লাগাই! তবু কিছু কইতাম না। মনে মনে ফুটিলেও মনের কথা কুন দিন বাহিরে বলিতাম না। খুব ভিতু কিসিমের মেয়ে ছিলাম! যাহা হুক, আমি স্কুলে ফার্স্ট বেঞ্চার থাকিলেও, কলেজে প্রায় ব্যাকবেঞ্চার ছিলাম। পড়াশুনার জন্য নহে, লেট করিয়া যাওনের জন্যে। Don't Tell Anyone তবে একদিন একটু বেশিই লেট করিয়া ফালাইয়া ছিলাম। এখুন আমার কলেজে ক্লাস শুরু ঘন্টা বাজার পর কলেজের প্রবেশ করা নির্মম অপরাধের। ইহার শাস্তিও ভয়াবহ! Cryingছেলে মেয়ে নির্বিচারে কান ধরিয়া দাঁড় করাইয়া রাখা হয়! Tongue ভাবিতেছেন আমিও কান ধরিয়াছি? মুটেও না। এই কাজ আমি আমার ইহজনমে কুন দিন করি নাই! ভাবিতেছিলাম কি করিয়া এই শাস্তি থেকিয়া মুক্তি পাওয়া যায়? এখানে দাড়াইয়া থাকিলে চলিবে না! ধরা পড়িয়া যাইব। আর কিছু দূরেই ঐ অদ্ভুত লেডিটা দেরি করিয়া আসারর জন্য কান ধরিয়া দাঁড়াইয়া আছে! আমি দেখিয়া খুব মজা পাইলাম। Big Grin অবশ্য পরক্ষণেই বুক কাঁপিয়া উঠিল! কেহ দেখিয়া ফেলিলে আমারও সেই অবস্থাই হইবে!

অবশেষে ,''বিনা যুদ্ধে নাহি দেব ছাড়, সুচাগ্র মেদিনীর অধিকার'' বলিয়া পলানো শুরু করিলাম! পলাইতে যাইয়া দেখি পেছনে ফেরনের সুযোগ নাই! কলেজের মেইন গেটে তালা দিয়া দিয়াছে! তারপর পেছনের গেইট ধরিয়া উপ্রে গেলাম। কিন্তু যেখানে বাঘের ভয় সেখানেই আমার সকাল হইল! সামনে দেখিলাম কলেজের সহঅধ্যক্ষ! রোজ সকালে কলেজের আনাচে কানাচে চেক করা তাহার অভ্যাস! কোন ছাত্র ছাত্রী ক্লাস ফাঁকি দিয়া পলাইয়া রহিয়াছে কিনা তাহা খুঁজিয়া খুঁজিয়া বাহির করেন! বুঝিতে পারিতে ছিলাম এখানে থাকিলে নির্ঘাত কয়েক মিনিটের মধ্যে ধরা পড়িয়া যাইব! তাই ভুতুম পেঁচার মত মুখ করিয়া স্বেচ্ছায় আত্মসমর্পণ করিলাম! Waiting স্যার আমাকে দেখিয়া যথারীতি দাঁড় করাইলেন। দাঁড় কইরা অনর্গল প্রশ্ন করিতে লাগিলেন,দেরি কেন করিয়াছো?, আর কোন দিন কি দেরি করিবে? কলেজকে কি তুমি তোমার নিজের সম্পত্তি পাইয়াছো? ইত্যাদি ইত্যাদি। কিন্তু তাহার বেশির ভাগ প্রশ্নেই আমি চুপ করিয়াছিলাম। কারণ SILENCE IS THE BEST ANSWER OF ALL STUPID QUESTIONS. তবে স্যার ভাবিলেন আমি ওনার কথায় দুক্কু পাইয়া চুপ করিয়া আছি। তিনি আবার জাতীয় বাবা টাইপের লোক কিনা। নিমেষেই স্নেহ তাহা মাথা চাড়া দিয়া উঠিল। তিনি আবার কহিলেন ,''বাবু মন ক্ষ্রাপ করিও না। তোমার ভালোর জন্যই বকিয়াছি। ক্লাসে যাও!'' আমি সব দাঁত বিকশিত করিয়া বিজয়ীর বেশে ক্লাসে ঢুকিলাম। আর ঐ অদ্ভুত মাইয়াটা কাঁদিতে কাঁদিতে ঢুকিল! Cook

তাহার পরও আরো বহুবার আলুচনার সমালুচনার সম্মুখীন হইয়াছি। তবে সব ক্ষেত্রেই শেষে বিজয়ীর বেশে আসিয়াছি। এই ক্ষেত্রে আমার ডায়ালগ হইল ,''কখনো ভাঙিব না, এই দাবি করিব না, তবে যতবারই ভাঙিব ,দ্বিগুণ শক্তিতে উঠিয়া দাঁড়াইব! ইহা শতাব্দীর নিন্দুকের কাছে আমার ওয়াদা!'' আজকে হরতাল উপলক্ষে আমার নিন্দিত নরকে জীবনের কিছু স্মৃতি চারণ করিলাম। যদি কুন দিন সময় পাই বাকিটা লিখিব।

বিষয়: বিবিধ

২১৪৭ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File