Good Luck অর্ধেন্দু বনাম নিন্দুক (উৎসর্গঃ মোহায়মেন ভাইয়া)

লিখেছেন লিখেছেন ইক্লিপ্স ২২ অক্টোবর, ২০১৩, ০৯:৪৩:৫৫ রাত



অর্ধেন্দু ধীরে ধীরে পূর্ণ চাঁদ হয় পৃথিবীর ভালোবাসায়! ক্রন্দসী ছাড়িয়ে ইন্দ্রধনুর সীমানায় জ্যোৎস্নার বিজয়ী উল্লাসে স্লানিত হয় মহাকালের রাজাধিরাজ! কত কবি, কত চিত্রাকর থেমে যায় চাঁদের জৌলসে! ও দিকে ভুমির নিন্দুক হিসিয়ে বলে, ''যতই তুমি জ্যোৎস্না ছড়াও চন্দ্র সম্রাজ্ঞী, তুমি তো কলঙ্কিনী! কালো কালো কিছু পাহাড় পর্বত বুকে ধারণ করে হতে পারবে কি আর অন্তরীক্ষের শ্রেষ্ঠ রুপবতী?''

চাঁদের কিছু যায় আসে না! তবু নিন্দুকের নিন্দায় অমাবশ্যা এনে দেখায় ''দেখো আমি ছাড়া কি প্রগাঢ় অন্ধকার!! আর তুমি আমাকে বলো কলঙ্কিত ? আমি তো বীর মায়েদের মত বক্ষে ধরেছি দৃঢ়তার পাহাড়, স্তরে স্তরে কঠিন শিলায় গেঁড়ে দিয়েছি সংকল্পের স্তম্ভ!! এমন মায়েদের তোমরা রত্নগর্ভা বলো, আর আমাকে বলো কলঙ্কিত? কি বিচিত্র তোমাদের উপহাসের গড্ডলিকা প্রবাহ! ''

তবু নিন্দুক থামে না! নিন্দুকের বুকের হাহাকারগুলো গর্জন করে ওঠে! চাঁদের উপমায় নিজেদের কলংক লুকানোর স্বপ্ন ভেস্তে যেতে দেখে খিস্তি খেউরীর সব দাঁত বিকশিত করে বলে ''আরে ওহে চন্দ্ররানী, গত জ্যোৎস্নায় শ্যাওলা পুকুর আর নর্দমার জলে তোমায় ভেসে বেড়াতে দেখেছি! ছি ছি কি দুর্গন্ধেই না লুটোপুটি খেলে বিবশ রজনী! ও দিকে লজ্জায় ক্ষণে ক্ষণে মুখ লুকিয়ে মূর্ছা গেছে আমার ঘরের বদ্ধকপাটের সত্বী সাধ্বী নারী! এখনো কি মানবে না তুমি কলঙ্কিনী? ''

চাঁদ হেসে বলে,'' ওহে নিন্দুক শোনো! তুমি কোহিনুর পাথর নিয়ে যাও পদ্মপুকুরে জলে! সেখানেও দেখবে জলের বুকে কোহিনুরের অংকিত জীবন্ত জলছবি! তবে কি আজ থেকে তুমি বলে বেড়াবে কোহিনুরও কলংকিত রত্নরানী?''

'' তোমরা নিন্দুকেরা হলে হুতুমপেচার মত! হতাশার গহীনে ডুবে ডুবে বাস করো! কখনো কি আলোকবর্তিকা হয়ে দেখেছো কত পথিক সেই আলোতে পথ খুঁজে পায়? আমি হয়েছি! শত সহস্র পথ ভুলো পথিককে জনম জনম ধরে পথ দেখিয়েছি! আর তুমি? নিন্দা করে চেয়েছো তোমার বাসস্থান হতাশার নর্দমার দুর্গন্ধময় গহ্বরে টেনে হেঁচড়ে ফেলে দিতে সুখের স্বপ্ন দেখা নিষ্পাপ অবুঝ কিছু মুখগুলোকে! তুমি হতাশায় বাস করো, অনেক দুঃখ তোমার! তাই তুমি ছিদ্রান্বেষী হয়ে ছিদ্র খোঁজো! নিজের ব্যর্থতাকে ঢাকতে করে যাও খিস্তি খেউরীর কর্কশ উচ্চবাচ্য!''

অবশেষে পরাজিত নিন্দুক সুশীলতার আড়ালে ঢেকে রাখা পৈশাচিক দন্ত আরো বিকশিত করে! '' মহাকাশে তো আরো বহু গ্রহ আছে! রোজ অন্তরীক্ষে অসংখ্য স্টার ফুলের মত ফোটে! কই তারা তো পায় নি কলঙ্কিত উপাধী? তুমি কেন পেলে?''

চাঁদ বিরক্ত হয়ে বলে ,'' সভ্যতার পক্ষ থেকে এক দলা থুতু হে নিন্দুক তোমার মত অসভ্যের মুখে! এমন প্রশ্ন করা তোমার মত অথর্বরই সাজে!

চেয়ে দেখো ঐ আলোক রেখাকে! যে বিন্দুর পথ ধরে সিন্ধুতে গিয়ে নবউদয়ের সুখের পসরা সাজিয়েছে ভোরের সূর্যের বুকে! কত জ্যোতির্ময় করেছে চারিদিক! আর তুমি? শুধু আঁধারেই চেয়েছো মানুষের জীবন ঢেকে দিতে! বহুকাল হেঁটেও তুমি পারো নি পথিক হতে! এখনো রয়ে গেছো খড় কুটো! তাই নব উন্মেষের পথের পথিক দেখে তুমি ঈর্ষালু আঁখি মেলো! ওদিকে তোমার চোখে ছাই ছিটিয়ে দিয়ে অন্তরীক্ষে উড়ে যায় স্বপ্নীল প্রজাপতি! তুমি গালি দেয়াকে তোমার বিজয় বলো? তাহলে ফ্রাংকেন্সটাইন তো হবে সব চেয়ে বড় বিজয়ী? কি বলো তুমি নিন্দুক? তোমার জন্য ইতিহাসের আস্তাকুড়ে পুড়ে পুড়ে দহিত হওয়া হল নির্মম নিয়তি!''

আর এটাও নিয়তি চালনী জনম জনম ধরে বলে যাবে ''সুই দ্যাখ তোর কতো ফুটো!'' শৈবাল দীঘিরে শির উচ্চ করে বলে যাবে ,''লিখে রেখো! এক ফোটা শিশিরে ঋণে সারা জীবন ঋণী থেকো!''

তাই নিন্দুকের নিন্দায় কষ্ট পাওয়া অর্থহীন। আর আমরা কে কি আমাদের প্রভু ভালো করেই জানেন। '' ''কাজেই তোমরা আত্মশুদ্ধি ও পবিত্রতার বড়াই করো না। প্রকৃত আল্লাহ ভীরুকে তা তিনিই ভালো করেই জানেন।'' (নাজমঃ৩২)''

কাউকে সম্মানিত করার দ্বায়িত্ব বিশ্বজাহানের মালিক আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের হাতে। তাই অন্যের নামে দুইটা কুৎসা গেয়ে, ছিদ্র অন্বেষণ করে নিজেকে বিজয়ী ভাবার কিছু নেই। আল্লাহ পাক যাকে চান চাঁদের মত বিজয়ী করেন! নিন্দুকের ধরা ছোঁয়ার বাহিরে নিয়ে যান! তাই ''বলোঃ হে আল্লাহ ! বিশ্ব –জাহানের মালিক! তুমি যাকে চাও রাষ্ট্রক্ষমতা দান করো এবং যার থেকে চাও রাষ্ট্রক্ষমতা ছিনিয়ে নাও। যাকে চাও মর্যাদা ও ইজ্জত দান করো এবং যাকে চাও লাঞ্চিত ও হেয় করো। কল্যাণ তোমার হাতেই নিহিত । নিঃসন্দেহে তুমি সবকিছুর ওপর শক্তিশালী -(সুরা ইমরান:২৬)''

বিষয়: সাহিত্য

৪০৯৪ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File