জেগে ওঠো কলম সৈনিকেরা
লিখেছেন লিখেছেন ইক্লিপ্স ০৭ সেপ্টেম্বর, ২০১৩, ১০:৫০:৪৩ রাত
একটা ব্যাপার প্রায় লক্ষ্য করি সেকুলার লেখকরা যখন ইসলামিক ভাবধারার মনোভাবকে ইন্ডাইরেক্টলি সাহিত্য দিয়ে আঘাত হানেন তখন ইসলামিক ভাবাপন্ন মানুষদের জাস্ট প্রতিক্রিয়া দেখানো ছাড়া আর কিছুই করার থাকে না। কারণ তাদের লেখাকে প্রতিহত করার মত কলম সৈনিক ইস্লামিস্টদের মধ্যে প্রায় নেই বললেই চলে। যে কারণেই হোক সাহিত্য জগতে ইস্লামিস্টরা অনেক পিছিয়ে। তাই তারা সেকুলারদের প্রতিহত করতে যেই কাজগুলো করেন তার মধ্যে একটি হল তাদের ব্যক্তিগত জীবন নিয়ে টানাটানি। আর এতে করে অনেক সময়ই হয় হীতের বিপরীত। তারা জাস্ট ক্রিয়াহীন প্রতিক্রিয়াশীল হিসেবে পরিচিত হন সমাজের কাছে। অন্যদিকে এই সব প্রতিক্রিয়া তাদের মস্তিষ্ক এতখানি দখল করে রাখে যে ক্রিয়া করা ক্ষমতা তাদের অনেক খানি লোপ পায়। আর এতে করে কেবল পিছিয়েই পড়তে হয়! তাই সাহিত্য চর্চায় ইসলামিক লেখকদের অংশ গ্রহণের কোন বিকল্প নেই।
এখন প্রশ্ন হল ইসলামিক সাহিত্য চর্চার ওয়ে কি? শুধু কি ডাইরেক্টলি ইসলাম নিয়ে লিখলেই আমরা আমাদের আল্টিমেট গোল অর্জন করতে পারবো?
-আমি আমার ব্যক্তিগত মতামত তুলে ধরছি।
ইসলাম কি? ইসলাম হল সত্য। আমাদের গল্প উপন্যাস কেন্দ্রিক সাহিত্যগুলোতে আমাদের লক্ষ্য থাকা উচিত আমরা যেন গল্পের পরিসমাপ্তিতে যে কোন ভাবেই হোক সত্য বিজয় দেখাতে পারি।
সেকুলার লেখকরা যেমন আমাদের অনেক তরুণদের মাঝে খুবই সূক্ষ্মভাবে একটি ধারণা ঢুকিয়ে দিতে সক্ষম হয়েছেন তা হল ''মানবতার ধর্ম।'' এ ক্ষেত্রে অনেক সময়ই খুবই সূক্ষ্মভাবে ধর্মের কাছে মানবতার পরাজয় দেখিয়েছেন এবং তারা সুচারু রুপে কাজ তাদের মতাবাদ গুলো তুলে ধরেছেন এবং পৌছে দিতে সক্ষম হয়েছেন তরুণ সমাজের নিউরণে। আর তাই আজকাল এত বেশি নাস্তিক্যবাদ আমাদের চোখে পড়ে।
ইসলামিক সাহিত্যিকদের লেখার সময় লক্ষ্য রাখা উচিত তাদের লেখাগুলো যেন সার্বজনীন হয়। যে কোন ধর্মীয় মূল্যবোধের মানুষদের কাছে অন্তত ন্যূনতম পর্যায়ে হলেও যেন গ্রহণ যোগ্য হয়। এ ক্ষেত্রে সব সময়ই যে ডাইরেক্টিলি ইসলাম নিয়ে লিখতে হবে এমন কোন কথা নেই। আপনি চাইলে গল্পের নায়ক নায়িকার কাজের মাধ্যমে কোন হাদিস, ইসলামিক রুলস প্রতিষ্ঠা করতে পারেন। এতে করে অনেক অবুঝ ইন্ডাইরেক্টলিভাবে হলেও সঠিক পথে আসা শুরু করতে পারে। গল্পের নায়ক নায়িকাকে খুব আকর্ষণীয় ব্যক্তিত্ব দিয়ে সাজাতে পারেন। এতে করে পাঠক নিজেকে তেমন করে সাজাতে আগ্রহী হবে।
সেকুলাররা যা করে তা হল অনেক সময়ই খুব স্টুপিড, উগ্র বিহেভিয়ার দিয়ে নায়ক, নায়িকা কেরেক্টারগুলো তৈরী করে। এ সব পড়ে তরুণ সমাজ ভাবে আকর্ষণীয় বিহেভিয়ার হয়ত এমনই হওয়া উচিত। তারা পরে সেই নায়ক বা নায়িকার মত হতে গিয়ে ব্যক্তিগত চরিত্রের অধঃপতন ঘটায়। আবার তাদের গল্প উপন্যাসের নায়িকারা বেশির ভাগ সময়ই হয় খুব সুন্দরী। এটা পরোক্ষভাবে সমাজকে করে তুলে ভোগবাদী। হয় পুঁজিবাদীতার বিকাশ। ইসলামিক সাহিত্যিকদের লক্ষ্য থাকা উচিত যেন এই সব চিরাচরিত নিয়মগুলোকে ভেঙ্গে দেয়া যায় এবং এ জন্য খুবই দক্ষ হাতে কাজ করা প্রয়োজন। কারণ মানুষের বিশ্বাস নিয়ে কাজ করা খুব সহজ কথা নয়। আমাদের বাস্তবিক সমাজের বর্তমান প্রেক্ষাপট তার যোগ্য উদাহরণ।
ইসলামিক সাহিত্যগুলো কি ঢাল তলোয়ার পর্যায়েই সীমাবদ্ধ থাকবে? আধুনিকতায় এর বিস্তৃতি হবে কতটুকু?
-ইসলামিক সাহিত্য বলতে আমার চোখের সামনে ভেসে উঠে জনপ্রিয় লেখক নসীম হিজাজীর মত লেখকদের উপন্যাসগুলো। তবে এগুলো সেই সময়ের প্রেক্ষাপটে ঠিক আছে। এখনকার তরুণ প্রজন্ম অনেক বেশি আপ টু ডেট। তাই সেকেলে ধর্মী সামাজিক বাংলা মুভিগুলোও এ সমাজে ফ্লপ খেয়ে যায়। সে দিন দেখলাম এখনকার তরকারী বিক্রেতারাও ভিনগ্রহবাসী এলিয়েনের গল্প পড়ে। তাই সাহিত্যকে পিছিয়ে রাখার সুযোগ নেই। সাহিত্য যদি ইনফরমেটিভ ইন্টেলেকচুয়াল ধর্মী হয় তবে তা তরুণ সমাজকে আকর্ষণ করতে বাধ্য।
যেমন আমি হুমায়ুন আহমেদের লেখা মিসির সিরিজের ''জ্বীন কফিল'' উপন্যাসটার কথা বলব। আমি ছোটবেলায় খুব জ্বীন পরীদের গল্প খুব শুনতে পছন্দ করতাম। আর রাতের বেলা ঘুমাতে ভয় পেতাম। কিন্তু হুমায়ুন আহমেদের এই উপন্যাসটা পড়ার পর আমার সেই ভয় একেবারেই কেটে গিয়েছিল। তারপর থেকে আমি হুমায়ুন আহমেদের লেখাগুলোর প্রতি ইন্টারেস্টেড হই। কারণ তার বেশ কিছু লেখাতেই ইন্টেলেকচুয়ালিটি খুঁজে পেয়েছি। আর আমার মনে হয় এটাই ছিল তার পাঠক আকর্ষণের অন্যতম কারণ।
তাই সাহিত্যিকদের জ্ঞান অর্জনের বিকল্প নেই। যে কোন গল্প বা উপন্যাস লেখার আগে যেই টপিক্স নিয়ে লিখছেন তার উপর একটু পড়াশুনা করাটাও জরুরী। তবে আজকাল ইন্টারনেটের সুবাধে এটিও আমাদের কাছে অনেক সোজা গিয়েছে।
গল্প কবিতায় ভাষার ব্যবহার কেমন হওয়া উচিত?
-নিঃসন্দেহে আমরা সবাই প্রাঞ্জল চাই। তবে একটা ব্যাপার লক্ষ্য রাখা উচিত। একজন সাহিত্যিক হিসেবে একজন সাধারণ পাঠকের থেকে আপনার লেখাগুলো যেন আলাদা করা যায়। যেমন আজকাল ''আমি তুমি ভালোবাসি, ভালোবেসে কেঁদে মরি'' এই টাইপ সাহিত্যগুলো যে কেউই লিখতে পারে। তাই সাহিত্যে আপনার স্বাতন্ত্র্য বজায় রাখা জরুরী। এ ক্ষেত্রে বাংলা পড়ার কোন বিকল্প নেই। আপনি চাইলে ''বাংলা অভিধান'' এর ডিকশনারী কিনে নিতে পারেন। এর থেকে অনেক প্রাঞ্জল, শ্রুতিমধুর শব্দ আপনার আয়ত্ত্বে আসবে।
কলকাতার সাহিত্য বনাম আমাদের বাংলা সাহিত্য?
- এক সময় বাংলা সাহিত্য বলতে নাকি শুধু মাত্র কলকাতার সাহিত্যগুলো বুঝতো বাংলার লোকজন। সে পরিস্থিতি এখন কিছুটা হলেও উন্নতি হয়েছে। তবুও বলতে বাধ্য হচ্ছি এখনো তরুণ সমাজের মধ্যে কলকাতার সাহিত্য ব্যাপক জনপ্রিয়। অনেকেই প্রিয় ঔপোন্যাসিকের নাম বলতে বললে কলকাতার সাহিত্যিকদের নাম বলবেন। কিন্তু কেন? আমাদের সমাজে কি তাদের থেকে ভালো লেখক নেই? অবশ্যই আছে। কিন্তু অনেক সময় আমাদের সাহিত্যিকদের লেখনীর মাঝে ঠান্ডা সামাজিক কাহিনী ছাড়া শেখার মত তেমন কোন উপকরণ খুঁজে পাওয়া যায় না। অন্যদিকে কলকাতার অনেক সাহিত্যিকই ১৮+ বিষয় ইশ্যগুলোকে ব্যবহার করেন তাদের পাঠক আকর্ষণের অন্যতম হাতিয়ার হিসেবে। তারা শৈল্পিকভাবে নগন্যতা ছড়িয়ে দেন আমাদের সমাজে আর সেটার উপরই পাঠক হুমড়ি খেয়ে পড়ে! এই শৈল্পিক আগ্রাসন প্রতিহত করাও মুখের কথা নয়। কারণ স্বভাবতই নিষিদ্ধ জিনিসের উপর মানুষের আকর্ষণ বেশি! তাই এই আগ্রাসন প্রতিহত করতে একজন লেখককে কতখানি ইন্টেলেকচুয়াল হতে হবে সেটা আশা করি বুঝতেই পারছেন।
সাহিত্যে নারী পুরুষের মধ্যকার প্রেম অস্বীকার করার উপায় আছে কি?
-অনেক ইস্লামিস্টই এই ব্যাপারটিকে অগ্রাহ্য করতে চান। কিন্তু একে অগ্রাহ্য করার আদৌ উপায় আছে? হযরত আদম(আঃ) জান্নাতে একজন সঙ্গী চেয়েছিলেন, আর ইউসুফ জুলেখা প্রেম কাহিনী এক সময় ছিল সবার মুখে মুখে, রহিম রুপবানরাও এ ক্ষেত্রে কম যান না! যেই আকর্ষণ আল্লাহ পাকই মানুষের মাঝে দিয়েছেন তাকে অস্বীকার করে কত দূরই বা এগোনো যাবে! আর এতে করে অনেক সময় আমাদের সেইম চিন্তার লোকজনও আমাদের থেকে দূরে সরে যান। তৈরি হচ্ছে জেনারেশন গেপ। অনেক সময় সন্তান নিজেকে মেন্টাল টর্চার করে বাবা মায়ের সিদ্ধান্তকে মেনে নিচ্ছে। বাবা মাও মনে কষ্ট পাচ্ছেন। তাই দরকার উদারতা। এটা সাহিত্যের ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য। আর সাংস্কৃতিক আগ্রাসনের মাধ্যমে যেই নোংরা প্রেম, পরকিয়াকে ঢুকিয়ে দেয়া হচ্ছে তরুণ সমাজের রন্ধ্রে রন্ধ্রে সেটি থেকে বেরিয়ে আসতেও সুস্থ সাহিত্য চর্চার বিকল্প নেই।
তাই সময়ের সাথে সামঞ্জস্য রেখে যতখানি ফেলেক্সিবল করে সম্ভব সামাজিক সমস্যা, অবক্ষয়গুলোকে সূক্ষ্মরুপে প্রতিহত করার টার্গেট নিয়ে হওয়া উচিত সাহিত্যের পথ চলা।
সাহিত্যে ইসলামিক কালচার এবং আদর্শের আনয়ন কতটুকু জরুরী?
-সাংস্কৃতিক আগ্রাসনের জন্য আজকাল ''ঠিক'' হয়েছে ''দুর্বলতা'' আর ''বেঠিক'' হয়েছে ''ওয়ে অব বিহেভিয়ার!'' এ ক্ষেত্রে ইসলামিক কালচার এবং আদর্শ ফলো করার কোন বিকল্প নেই। যেমন আমাদের পুঁজিবাদী সমাজ এবং সাহিত্য আমাদের মানুষের মাঝে ক্লাসিকফিকেশন করতে শেখায়। টিভি নাটক, সিরিয়ালগুলোতে দেখা যায় বাড়ির কাজের লোকেরা সোফাসেটে না বসে ফ্লোরে বসছে, যেই পাত্রে কাজের লোক খাচ্ছে সেই পাত্রে সেই পাত্রে বাড়ির মনিব খাচ্ছে না। হচ্ছে পুঁজিবাদীতার নিশংসতম বিকাশ। আর আমরাও ভাবছি এটাই হয়ত নিয়ম! কিন্তু আসলেই কি তাই!
ইসলাম হল সাম্যের ধর্ম। এখানে সুপিরিওরিটি, ইনফিরিওরিটি বিভেদের কোন সুযোগ নেই। নেই পুঁজিবাদীতা বিকাশের সুযোগ। তাই ইসলামিক সাহিত্যিকরা যা করতে পারেন তা হল তারা তাদের গল্প উপন্যাস গুলো সুন্দর সামাজিক পরিমন্ডলের দৃষ্টান্ত উপস্থাপন করতে পারেন। একদিনেই না হলেও আশা করা যায় অদূর ভবিষ্যতে কিছুটা হলেও সমাজ চেঞ্জ হবে। ধন্যবাদ।
(আমার এই লেখাটা মূলত আমার ব্যক্তিগত অভিমত। কেউ চাইলে দ্বিমত পোষণ করতেই পারেন। তবে যুক্তি গ্রহণ যোগ্য।)
বিষয়: বিবিধ
৪৭৬৬ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন