মুক্তগদ্যঃ আধবোজা ভাবনার সমীরণে নস্টালজিক উন্মাদনার ঘ্রাণ!
লিখেছেন লিখেছেন ইক্লিপ্স ০৫ সেপ্টেম্বর, ২০১৩, ০৩:০৬:৪৮ দুপুর
গতকাল হঠাৎ আধবোজা ভাবনার সমীরণে সেই আদিম নস্টালজিক উন্মাদনার ঘ্রাণ! তুমি দু হাত ভরে কদম নিয়ে এসে বললে শ্রাবণের প্রথম উপহার মধ্য দুপুরে লাভার মত জ্বোল ছিল তোমার বাগানে! তুমি তার আগুন ছুঁয়ে দিতে গিয়ে উষ্ণতার বদলে পেয়েছো শীতলতা! তীব্র হিম! হাড় কাঁপানো হিমবাহে উত্তর মেরুর জমাট বাঁধানো বরফ!
তুমি ঠিকরে আসা চোখের সায়রে গভীর বিস্ময় নিয়ে বললে ,''এই তুমি সেই তুমি নও! তুমি অন্য কেউ! অন্য কোন ভুবনে তোমার বাস! সেই ভুবনের এলিয়েন তুমি! অচেনা, তীব্র অচেনা। যেই ''চন্দ্রগ্রহণ''কে আমি চিনি সে তুমি নও, এত স্থির সে নয়,সে চঞ্চলা হরিণী, পুই পুই করে বাতাসের সাথে ছুটে চলা গতিময়তায় লাগামহীন অশ্বারোহী!''
আমি হেসে গড়িয়ে পড়ি! হাসতে হাসতে চোখে জমা জল নিয়ে বলি ,''তাতে তো বরং ভালোই হল! তুমি বেঁচে গেলে খড়কুটে হয়ে উড়ে আসা কীটপতঙ্গের হাত থেকে! আমি আর তোমায় কেঁদে কেঁদে বলব না শুয়াপোকার হুলের সুই ছেটে ফেলে ভুমি কন্টকহীন করে দিতে! কোন মেজর ফ্রাংকেনস্টাইনের রক্তচক্ষুতে বলব না অত্যষ্ণুর বিষ ঢেলে দিতে! আমি যে আর ছুটে চলি না! চিরচেনা পথ ভুলে পড়ে থাকি অচেনায় নির্বিঘ্নে নিশ্চিন্তে! তাই এখন আর দু পা কাটার আঘাতে হয় না রক্তাক্ত! আমি তাতে পায়েল পড়ি জানো! সেই পায়েলের রুন রুন ঝুন ঝুন শব্দে মুখর আমার চারিপাশ!''
তুমি কোঁচকানো ভ্রুতে অভিমান নিয়ে বলো ,''এত অহংকার! ক্ষণে ক্ষণে আজ তুমি ঝলসে ওঠো আগ্নেয়গিরির অগ্নুৎপাতের মত চোখ ধাঁধানো রুপের বর্ণালি স্নিগ্ধতায়! তোমার চোখের তারায় গর্জে ওঠা মহাসমুদ্র উপভোগে কত পর্যটকের সীমাহীন প্রতীক্ষা! বড্ড গোছানো তুমি, তাসের বান্ডিলে ক্রমান্বয়ে সেজে উঠা কোন সম্ভ্রান্ত মহারাণী! আজ তুমি মহাকালের হিসাব বোঝো, কোন গ্রহের পর কোন গ্রহ এলে জীবনের সীমারেখায় শনি পাড় হয়ে এসে গড়াবে বৃহস্পতি সে হিসেবও জানো! তবুও বিশ্বাস করো এই গোছানো তোমাকে আমার ভালো লাগে না! আমার চোখের তারায় এখনো স্মৃতি হয়ে সেই এলোমেলো তুমি খেলা করো, যাকে গুছিয়ে দিতে কন্ঠনালী ছেড়ে বুকের গহীনে আমার নাভিশ্বাস!''
তোমার কথাগুলো কেন যেন আমাকে ছিন্নভিন্ন করে দিতে চায়! হঠাৎ ভাবনার শিহরণে খেলা করে সেই আমিকে ফিরে পাবার সুপ্ত বাসনা! দু চোখের তারায় চিকচিক করে জ্বলে উঠে আরক্ত লালচে জ্যোতি , ছুঁয়ে দিতে চায় নস্টাজিক মায়াময় প্রহরগুলোতে কিছু পাখি, কিছু কুহুতান, কিছু সুখ-দুঃখ ভাগাভাগি, কিছু আর্দ্র, কিছু আর্ত , কিছু আর্তি!
আমি জোড় করে আবেগের রাশ টেনে ধরে বলি ''জানো কষ্ট পোষায় অনেক কষ্ট! যতই হেলার ছলে বলি না কেন আমি কষ্টবিলাসী, কষ্ট আমার ভালোলাগে না! শ্বাসরোধ হয়ে আসে! ভালোলাগে না যখন কর্কশ কাকেদের ঠোটে ছিনিয়ে আনা মরা সাপের খন্ডকে দেখে হাত তালি দিয়ে বলি ভালোবাসি, আর ভালোবাসাদের অভিমানে দূরে ঠেলে রাখি! তবুও এখানে আমি সুখ দুঃখের মাঝে মেটাফোরিক কোন জগতে বাঁচি! মন খারাপের গ্লানিময় আঁচ সমীরণে ভেসে এলে টুক করে জ্বলে ওঠে কিছু জোনাকি! আমি হাসিতে গড়িয়ে পড়ি! আরো মসৃণ হই সিক্ত আবহাওয়ার কুসুম জ্বলা মিষ্টি রোদের আমেজে! আগের মত খরতাপে ঝলসে উঠি না!''
তুমিও বোঝো আমার কষ্টগুলোকে! তাই আমাকে পুরনো আমি হতে কন্ঠের জোর দাবীকে দমিয়ে রেখে গল্প, কবিতা, সুর, ছন্দহীন নিষ্ঠুর জগতকেই তুমি বেঁছে নাও তোমার জন্য! যেই জগতে শুন্যতায় কেউ কেবলই তলিয়ে যায়! কিন্তু আমিও জানো বড়ই নাছোড়বান্দা! চিরতরে সেই পুরনো আমিকে হারিয়ে ফেলার আগে নস্টালজিক হয়ে জেগে উঠবো বারে বারে! তোমার মনের কোণে হঠাৎ উঁকি দিয়ে ছলাৎছল হাসিতে তোমার মৌনতা ভাঙ্গাবো!
বিষয়: সাহিত্য
৩৪৩০ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন