যদি কেঁড়ে নিতে বলে শেকড়ে গাঁথা মাটি যেন আমি কাঁড়তে দেব না।(উৎসর্গ মুক্তিকন্যা সুমাইয়া)
লিখেছেন লিখেছেন ইক্লিপ্স ০৫ জুন, ২০১৩, ০৮:৫৭:২৫ রাত
বেশ কিছু দিন ধরেই একটা বিষয় নিয়ে ভাবছিলাম। বিষয়টা হল কয়েকজন ইসলামিস্ট নিয়ে। তাদের কিছু কাজ দেখে বার বার এ কথা মনে হচ্ছিল আচ্ছা ওরা তো ইস্লামিস্ট, ওরা কি করে এমন হল? আমি কিছুতেই আমার প্রশ্নের উত্তর খুঁজে পাচ্ছিলাম না, তাই কষ্ট একটু বেশিই হচ্ছিল। যাই হোক তবুও আমি সব কিছুর সাথে মানিয়ে নিয়েছিলাম। কারণ ভাঙা গড়ার নামই জীবন। হয়তবা ভাঙব কিন্তু নিশ্চয়ই উঠে দাঁড়াব। আর একজন ইস্লামিস্টের জন্য হতাশ হয়ে হাল ছেড়ে দেয়া অন্যায়। মনের মাঝে দৃঢ় বিশ্বাস আল্লাহ পাক নিশ্চয়ই কষ্টগুলোকে একদিন সুখ দিয়ে মুছে দিবেন। আর কেউ যদি কোন অন্যায় করে থাকে এটা পৃথিবীর নিয়ম তাকে প্রায়শ্চিত্ব করতেই হবে। কিন্তু মুসলিম হিসেবে আমরা কিছুতেই প্রতিশোধের স্পৃহা মনে ধারণ করতে পারি না। কারণ আমাদের ধর্ম সে অনুমতি আমাদের দেয় না। তাই একটাই পথ আমাদের সামনে খোলা, আর তা হল ক্ষমা। হুম সেই পথ ধরেই আমি আগাচ্ছিলাম। নিজের মত করে নিজেকে গুছিয়ে নিয়েছিলাম। সারাদিন ওয়ার্ড , পড়াশুনা, মাঝে মাঝে বন্ধুদের সাথে কিছুটা সময় কাটানো এভাবেই পার হচ্ছিল দিন। আমি ভার্চুয়াল জগত ছেড়ে পুরোপুরি ব্যস্ত হয়ে পড়তে চাইছিলাম এনালগ জীবন নিয়ে। এবং অনেক খানি সফলও হয়েছি।
কিন্তু আজ থমকে দাঁড়ালাম সামুতে মুক্তিকন্যা সুমাইয়ার একটি পোষ্ট পড়ে। সে খুব সম্ভবত তার মাকে হারিয়েছে! তার একটি লেখা পড়ে বুকটা হাহাকার করে উঠলো। আমি ভাবতাম হারানোর তালিকাটা সম্ভবত আমার একারই অনেক বড়। কিন্তু আজকে তাকে দেখে মনে হল সে যা হারিয়েছে তা আমি চিন্তাও করতে পারি না। হোস্টেলে থাকি মাঝে মাঝেই খুব নিঃসঙ্গ একা অনুভব করি। যে কোন কষ্টেই সবার আগে আম্মুকে ফোন দিয়ে মনের সব কথাগুলো উগড়ে দিয়ে মনটা কিছুটা হালকা করি। অনেক সময় কষ্ট যদি খুব বেশি হয়ে যায় তবে বাসায় চলে যাই। আবার নিজেকে নতুন করে গুছিয়ে নিয়ে হোস্টেলে আমার ব্যস্ত দুনিয়ায় ফিরে আসি। এভাবেই চলে আমার ভাঙা গড়ার জীবন। হয়ত এটা সবার ক্ষেত্রেই। খুব সুখে না হোক ,কষ্টে এক মাত্র আশ্রয় হয় মা। সুখের সময় তো অনেককেই পাওয়া যায়। বসন্তের কোকিলেরা তখন দূর দিগন্তের সব চেনা অচেনা রাজ্যগুলো থেকেও ফিরে আসে। কিন্তু দুঃখের দিনে কারো হদিস পাওয়া যায় না। মজার কথা হল অনেক ইস্লামিস্টও এই শৃঙ্খল থেকে বের হতে পারেন নি। এক সময় যারা কথার খই ফোটাতে ফোটাতে ক্লান্ত হতেন না, অনেক সময় হাজারটা বার্তা দিয়েও তাদের থেকে পাওয়া যায় না কোন উত্তর! যাই হোক এটা মানুষের স্বভাবজাত নেচার। সে এই শৃঙ্খল থেকে কখনোই বের হতে পারে না। কিন্তু দুঃখ হয় ইস্লামিস্টদের নিয়ে। মাঝে মাঝে ভাবি তারাও যেভাবে জগতের স্রোতে তাল মিলিয়েছেন সেই জগত প্রীতিই ইস্লামিস্টদের জন্য নিষিদ্ধ। দুনিয়ার প্রেম যদি প্রভুর প্রেমের থেকে বড় হয়ে যায় তাহলে তারা কেমন ইস্লামিস্ট?
এই যা অন্য দিকে চলে যাচ্ছি! যাই হোক বলছিলাম মুক্তিকন্যা সুমাইয়াকে নিয়ে। কোন একটি ব্লগে আমার যে সব ব্লগারদের ভালো লাগতো তাদের মধ্যে সেও ছিল একজন। তাকে ভালো লাগার আরেকটা বিশেষ কারণ ছিল। কারণটা হল আমি একটা অল্পবয়সী মেয়ে হিসেবে ব্লগে যে সমস্যাগুলো ফেস করতাম আমি বুঝতে পারতাম মুক্তিকন্যা সুমাইয়াও একদিন সে সমস্যাগুলো ফেস করবে। ইনফেক্ট তার ক্ষেত্রেও বলা যায় শুরু হয়ে গিয়েছিল। এছাড়াও অন্য একটি ব্লগে দেখতাম তাকে খুব বাজে বাজে কথা বলা হত। সে সুন্দর করে ছড়া কেটে কেটে তার উত্তর দিতো। চঞ্চল একটু গুণী প্রকৃতির কোন মেয়ে(মুক্তিকন্যাকে নিয়ে বলছি) যদি আমাদের সমাজ পায় তবে নিজের অজান্তেই সমাজের কিছু মানুষ হয়ত ইভটিজারে পরিণত হয়। তারা যে ইভটিজার নামক নোংরা পশুতে পরিণত হয়েছে সেই সেন্স হয়ত তাদের নিজেদেরও থাকে না। কিন্তু দেখুন কোন মেয়ে যদি আবার নির্যাতিত হয় তবে তারাও সবার সাথে কন্ঠে কন্ঠ মিলিয়ে তার প্রতিবাদ জানায়। অথচ এ দিকে তাদের দ্বারাই হচ্ছে অনেকটা সেইম কাজই হয়ে চলেছে। এ ক্ষেত্রেও তাদের যুক্তির শেষ নেই এবং আমরা বিবেকহীন কিছু মানুষ শুধু মাত্র নিজেদের স্বার্থে সে সব যুক্তিতে সম্মতি দেই। অথচ আল্লাহ পাক কুরআনে বলেছেন, ''জালিমের জন্য কেউ দরদী বন্ধু হয়ো না আর না এমন কোন সুপারিশকারী হবে যার কথা মেনে নেয়া হবে।''
হাদিসে আছে ,''মুসলিম হচ্ছে সেই ব্যক্তি, যার কথা ও কাজ দ্বারা অন্য মুসলিম নিরাপদ থাকে।''
একটা প্রশ্নের সম্মুখীন সমাজের অনেক মেয়েকেই হতে হয়। ''ঐ মেয়ের তো সমাজে চলাচলে কোন সমস্যা হচ্ছে না, তোমার কেন হচ্ছে?'' আমার মনে হয় সমাজের সব থেকে অথর্ব মানুষ হিসেবে অযোগ্য কিছু লোকই এই প্রশ্ন করতে পারে। সমাজে সব মেয়ে সমান গুণবতী, রুপবতী হয় না। তাই সবার প্রতি সমাজের দৃষ্টিভঙ্গিও একই হয় না। অনেকে হয়ত প্রশ্ন তুলবেন মানুষের মনের মর্যাদা সর্বাধিক, এখানে রুপ গুণের প্রশ্ন আসবে কেন? উত্তর হল ভোগবাদী সমাজে যোগ্যতার মাপকাঠিই হল রুপ, গুণ। আমরা গলার জোরে ভোগবাদীতাকে অস্বীকার করলেও বলা যায় বেশিই ভাগই একে আষ্টেপৃষ্ঠে লালন করে চলেছি। তাই প্রতিনিয়ত সুন্দর মনগুলো মৃত্যু বরণ করছে আমাদের সবার অজান্তে।
যাই হোক পরিশেষে ঐ ছোট মেয়েটার(মুক্তিকন্যা সুমাইয়া) জন্য এই দোয়া সে যেন তার শোকগুলো কাটিয়ে উঠতে পারে। আল্লাহ পাক যেন তাকে সবর করার তৌফিক দেন। আল্লাহ পাক যেন আমাদের সবার কষ্টগুলো সুখ দিয়ে মুছে দিন। যেন বহুদিন পর যদি আবারো একই রাস্তায় দেখা হয় আমরা যেন একজন আরেকজনকে নিয়ে গর্ব করে বলতে পারি ''এই মহান মানুষটি আমার একজন ব্লগ বন্ধু।''
(মুক্তিকন্যা সুমাইয়াকে নিয়ে এই ব্লগে কেনো লিখলাম? কারণ মুক্তিকন্যা বা ইক্লিপ্স -আমরা দু'জনই হয়েছি এই ব্লগে আসা অন্যকোন ব্লগের কিছু পরিচিত মানুষের মাধ্যমে। জাজাকাল্লাহ)
বিষয়: বিবিধ
২৯৬৭ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন