Good Luckআচ্ছা মরার সময় মানুষের ভেটকি দেয়া কি খুব জরুরী?

লিখেছেন লিখেছেন ইক্লিপ্স ০৩ মে, ২০১৩, ০২:০০:১৩ দুপুর



ফেসবুকে একটা মরা মানুষের ছবির নিচে ক্যাপশন দেয়া দেখলাম লোকটা মরার আগে নাকি ভেটকি দিয়েছে! মানে হাসি মুখে মরেছে, তাই নাকি সে খুব পুণ্যবান! এখন আমার প্রশ্ন হইল কেউ যদি মরার আগে ভেটকি না দিতে পারে তাহলে কি সে পুণ্যবান হবে না? তবে কি মরার আগে ভেটকির উপর নির্ভর করবে কে কত খানি পাপ কাজ করেছে বা ভালো কাজ করেছে পৃথিবীতে? মানুষ মরার পর তার শরীরের মাসেলগুলো স্টিফ হয়ে যায়। একে বলে রিগোর মরটিস(RIGOR MORTIS)। মরার প্রায় এক ঘন্টার মধ্যে হৃদপিন্ডের মাসেল এবং চোখের পাতার মাসেল স্টিফ হয়ে যায়। তাই মানুষ মরার পর পরই চোখের পাতা বন্ধ করে না দিলে কিছুক্ষন পর আর বন্ধ করা যায় না। আমরা বাঙালিরা সব কিছু নিয়ে কাহিনী বানাতে পছন্দ করি। এখন যদি কেউ লাশের খোলা চক্ষু দেখে কমেন্ট করেন ,'বেচারা দুনিয়ায় খালি খারাপ জিনিস দেখতেন, তাই চক্ষু খোলা রাইখা মরছেন' তাতেও অবাক হওয়ার কিছু থাকবে না।

যা হোক মরার ২-৪ ঘন্টার মধ্যে স্টিফ হয় গলা, মুখ আর চোখের মাসেল। এ অবস্থায় কোন লাশের ঠোট যদি খোলা হয়ে যায় আর কারো যদি না হয় তাহলে এটা কি লাশের দোষ? হায়রে বাঙালি!

মাঝে মাঝে আবার কেডেভারিক স্পাজম (CADAVERIC SPASM) দেখা যায়। যদিও এটা খুব রেয়ার। এতে শরীরের যে মাসেলগুলো জীবিত অবস্থায় সংকোচিত ছিল সেগুলো মরার সাথে সাথে শক্ত হয়ে যায়। আগুনে পোড়া রোগী, ভয়, খুব উত্তেজনা, মারাত্মক ব্যাথা , মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণজনিত রোগীদের মরার পর এমন অবস্থা দেখা যেতে পারে। তাহলে কি আমরা বলব এ সব লোক জন পাপী লোক ছিল? কোন একটা হাদিসে পড়েছিলাম আগুনে পুড়া লোকজন শহীদের মর্যাদা পায়।

আর মানুষ মরার পর পচে যাওয়াটাও কিছু ফেক্টর দ্বারা ইনফ্লুয়েন্সড হয়। যেমন গরমকালে বডি তাড়াতাড়ি পচে। আবার শীতকালে একটু দেরিতে। গরম কালে বডিতে কাপড় থাকলে পচে যাওয়ার প্রসেস একটু ধীর গতিতে আগায়। আবার শীতকালে বডিতে কাপড় থাকলে দ্রুত পচে। বদ্ধ বাতাশে তাড়াতাড়ি পচে। বাতাশ চলাচল স্বাভাবিক থাকলে একটু দেরিতে। আবার বডি যদি পানিতে ডুবন্ত থাকে তাহলেও পচতে কিছুটা দেরি হয়। পোকা মাকড় ধরলে আবার পচার প্রসেস দ্রুত হয়। পচার ক্ষেত্রে নারী পুরুষের মধ্যে তেমন কোন পার্থক্য নাই। তবে মেয়েদের বডি চর্বির কারণে হিট ধরে রাখে। তাই মেয়েদের বডি একটু আগে পচে। আবার রোগাটে ডেড বডি স্বাস্থ্যবান ডেড বডির চেয়ে কিছুটা দেরিতে পচে। ইনফেকশনের কারণে যদি কেউ মারা যায় তবে তার বডিও কিছুটা দ্রুত পচে।

এই হল পচা দুনিয়ায় মানুষের পচে যাও্য়ার কাহিনী! কি দরকার এই স্বল্প সময়ে না জেনে, না বুঝে কুৎসা রটানোর? উপরের আলোচনা থেকে আশা করি বুঝতে পেরেছেন যে মরার আগে যে আপনি ভেটকি দিতে পারবেনই তার কোন গেরান্টি নাই। কতক্ষন বডি না পইচা থাকবে তারই কোন গেরান্টি নাই আবার ভেটকি? তাই মরার আগে যদি কেউ ভেটকি না দিতে পারেন একদম মন খারাপ করবেন না। কেউ যদি বলে তুই পাপী, তুই মরার আগে ভেটকি দিতে পারস নাই, তার গালে ভুত হয়ে একটা চটকানে দিয়ে চলে আসবেন। কোন কথা বলবেন না। বেকুফের সাথে কথা নাই।

বিষয়: বিবিধ

৪৪৪০ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File