যেই কারণে ঘেটু পুত্রকমলা সবার দেখন ঠিক না। (রম্য)
লিখেছেন লিখেছেন ইক্লিপ্স ২০ জানুয়ারি, ২০১৩, ১১:৫২:৫৫ রাত
হুমায়ুন আহমেদের ''ঘেটু পুত্র কমলা'' দেখে তা নিয়ে আলোচনায় বসেছে তার গল্পের চরিত্রের নায়ক নায়িকারা। আলোচনায় উপস্থিত আছেন হিমু,মিসির আলি, মৃন্ময়ী ,লীলাবতী, শুভ্র, আর হিমুর মাজেদা খালা।
(ঘরের মধ্যে পিন ড্রপ সাইলেন্স। কেউ কোন কথা বলিতেছেন না। কি দিয়া আলোচনার সূত্রপাত ঘটাইবেন কেহ বুঝিতে পারিতেছেন না।) অবশেষে কিছুক্ষণ উস্কুখুস্কু করে মাজেদা খালাই সবার আগে বলিয়া উঠিলেন ,''আরে কি দরকার কি ছিল ঐ বাচ্চা ছেলেটাকে এইভাবে মাইয়া মানুষ সাজাইবার? আমি বলি পৃথিবীতে মেয়ের কি অভাব পড়িয়া ছিল? আমাকে আগেভাগে জানালেই হইত! আমি বিদেশিনী মেয়ে ইরিনাকে আনিয়া ঘরে তালা দিতাম। উহা ছেঁকা খাইয়া সুইসাইড করিয়াছে। তাহার চেয়ে বরং জমিদারকে বিবাহ করিয়া তাহার সহিত সংসার করিত.....।''
মৃন্ময়ী মুচকি হাসিয়া বলিলঃ ইহা কি বলিলেন অ্যান্টি! তাহা কি হয়! ;
মিসির আলি সোফা বসিয়া সিঙ্গায় টান দিয়ে বিড়বিড় করিলেন ''এই মাথামোটা মহিলার যত সব আজগুবি কথা!'' X-(
মাজেদা খালা শুনিতে পাইয়া গর্জাইয়া উঠিলেন ''কি বলিলে বুড়ো ধাড়ী? নিজে তো এত বছর টিকটিকি গিরি করিয়াও একটা বউ জোটাইতে পারিলে না। সাথে হিমুটারও মাথা বিগড়াইয়াছ!''
মিসির আলী নড়িয়া চড়িয়া বসিলেন। ''কি সব আজে বাজে কথা বলিতেছেন! আমি ভদ্র লোক। হিমুর মত ভবঘুরে বখাটে লোক নই।''
হিমু(দা বস) আস্তে আস্তে মাজেদা খালার কানে কানে বলিল,''খালা ঐ ব্যাটাই আমার মাথা খাইয়াছে। সেই আমাকে বুদ্ধি দিয়াছে চাঁদনি পসর রাইতে গর্তখুড়িয়া তাহার ভিতর ঢুঁকিয়া ভূতের সন্ধান করিতে। আর তুমি যে গত বছর হাভারড পি এইচ ডি আসিবার পর খালুর সাথে ঝগড়া করিয়া রাস্তায় মানুষের ইয়েতে যে পাড়া দিয়াছিলে উহাও সেই করিয়াছে হুম...... আমি দেখিয়াছি। ..... '' মাজেদা খালা রাগে ফসফস করিতে করিতে বলিলেন,'' শুধু বসিয়া বসিয়া দেখ আমি বড়োটার কি করি! ওর যদি কিমা করিয়া সবাইকে খাওয়াইয়া না দেই আমি মাজেদা নই! হু!''
মিসির আলী ভ্রূ কুচকে বলিল '' I don't understand what you are cooking........''
লীলাবতী এতক্ষণ শুধু বসিয়া বসিয়া সব দেখিতে ছিল। সে এতক্ষণে কহিল '' বাহ! ভালো তো!'' ;
শুভ্র এতক্ষণ চুপ করিয়া বসিয়া থাকিয়া শুনিতেছিল আলাপচারিতা। সে নাকে চিমটি কাটিয়া বলিল ''আমরা কিন্তু মূল আলোচনা হইতে দূরে সরিয়া যাইতেছি। আমাদের আলোচনার বিষয় আছিল '' ঘেটু পুত্র কমলা কিউ হক্কলের দেখন ঠিক না।''
এমন সময় দরজায় নক। কেউ আসিয়াছে। মাজেদা খালা গলা উচাইয়া হিমুকে বলিলেন ''হিমু যা তো দরজা খুলিয়া দেখিয়া আয় কে আসিয়াছে?''
দরজা দিয়ে প্রবেশ করিল পরিমল। সে আসিয়াই মৃন্ময়ী আর লীলাবতীর দিকে চোখ পড়িয়ে মনে মনে বলিয়া উঠিল ' উহাদের একবার একা পাই। তারপর সোজা ধরিয়া পাট খেতে ......।''
তাহার ভাবনায় বাগড়া দিয়া বসিলেন মাজেদা খালা। ''থাপড়াইয়া তোমার সব দাঁত খুলিয়া ফেলিব বেয়াদপ ছোড়া মেয়ে দু টোর দিকে তাকাইলে। উহাদের আপন বোন ভাবিবে।'' মাজেদা খালা রাগে ফসফস করিতেছেন। পরিমল কিছুটা দমিয়া গেল। পরিস্থিতি স্বাভাবিক করিতে হিমু(THE BOSS) কথা বলিয়া উঠিলেন ''পরিমল ভাই আপনি বলুন ঘেটু পুত্র কমলা সম্পর্কে আপনার অভিমত?''
পরিমল দাঁত মুখ খিচড়াইয়া হাসি দিয়া বলিল, ''ইহা খুউব গঠন মুলক মুভি। অস্কারের জন্য মনোনয়ন পাইয়াছে। কমলাকে আমার খুবই মনে ধরিয়াছে। ওমন একটা নিজের জন্য পাইলে হইত....।'' মাজেদা খালার চিৎকারে সে থামিয়া গেল।
খালা পায়ের স্যান্ডেল খুলিয়া নাচাইয়া বলিলেন ,''তোমার তো মনে ধরিবেই হাঁদারাম কোথাকার!' X-(
মিসির আলী গজগজ করিতে করিতে বলিলেন ,'' এই হিংস্র মহিলাকে আলোচনাতে আনাই উচিত হয়নি। উহা আলোচনার পরিবেশ নষ্ট করিতেছে!'' X-(
মাজেদা খালা তাহাকে অগ্নি দৃষ্টি দিয়া ভস্মীভূত করিতে লাগিলেন। সেই অগ্নিতে মিসির আলীর পুড়িয়া ছাই হইবার আগেই ঘটিল এক আজিব ঘটনা। হতদন্থ হয়ে ঘরে প্রবেশ করিল স্বয়ং ঘেটু পুত্র কমলা! তাহাকে দেখিয়া সবার চোখ চড়ক গাছ!
সবার আগে হুশ ফিরিরে পাইল পরিমল। সে দৌড়ে গিয়া কমলাকে যাপ্টে ধরিল। কমলা ঘটনার আকস্মিকতায় হতভম্ব হইয়া পরিমলের হাতে শক্ত এক কামড় দিয়া আবার বিদেয় হইয়া গেল সদর দরজার দিয়া।
এক মাস পর.........
পরিমলের জলাতঙ্ক হইয়াছে। তাহাকে একটি রুমের ভিতর বন্দি রাখা হইয়াছে।
এই ঘটনা দেখে ঘরের সবাই ঐক্যমতে পৌছাইলেন ''ঘেটু পুত্র কমলা সবার দেখন ঠিক না। দেখলে পরিমলের মতন অবস্থা হইবার পারে।''
বিষয়: বিবিধ
১৬৬৩ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন