Good Luckকষা কাবিলের প্রেম কাহিনী Cook

লিখেছেন লিখেছেন ইক্লিপ্স ১৪ এপ্রিল, ২০১৩, ১১:১৯:৫৫ রাত



কাবিল সাহেব দেখতে খুব হ্যান্ডসাম ফিটফাট হলেও তার একটা সমস্যা তার পোচপাচ সদরঘাট করে দিয়েছে। তা হল সে ঘুমালে মুখ দিয়ে কষ ঝোরে। মানে লালা পড়ে। একটু পর তা শুকিয়ে সাদা হয়ে যায়। অনেক সময় মুখ ধোয়ার পরও সাদা হালকাভাবে ভাসতে থাকে। এই সমস্যাটা তার ছোটবেলা থেকেই। এ জন্য বড় ভাই বোনেরা দুষ্টামি করে তাকে বলতো 'তুই আমার আব্বু আম্মুর ছেলে না। তুই ফকিরনীর পোলা। তোকে বস্তি থেকে টোকায় আনা হয়েছে।'' এতে সে রেগে মেগে কান্না জুড়ে দিতো। আর তখন চোখের পানির সাথে সাথে মুখ থেকে আরো আঠালো কষ মানে লালা ঝরতো। তাই বন্ধুরা এবং বাসার ভাই বোনেরা দুষ্টামি করে তাকে ডাকতো 'কষা কাবিল।'' আর কাবিলও হাত পা ছুড়ে হাউমাউ কান্না জুড়ে দিতো। বন্ধুরাও মজা পেয়ে সমান তালে তাকে ক্ষেপিয়ে যেতো। সেই থেকে কেউ তাকে ''কষা কাবিল'' নামে ডাকলে সে তেলেবেগুনে জ্বলে উঠে বোম্বে মরিচে পরিণত হয়।

কষা কাবিল বড় হয়ে প্রেম শুরু করেছে শহরের এক সুন্দরী রমনীর সাথে। একদিন রমনী তাকে বলল 'সবাই বলে তুমি ঘুমালে নাকি মুখ থেকে কষ পড়ে? তোমাকে নাকি সবাই কষা কাবিল ডাকে? তোমার এ অভ্যস ত্যাগ করতে হবে। নইলে আমি তোমাকে বিয়ে করবো না।' কষা কাবিল প্রেমিকার কথায় দুঃখ পেয়ে প্রেমিকার সামনেই কান্না জুড়ে দিল। আর ওমনি ঠোটের কোণ থেকে গোল হয়ে আঠালো চুইং গামের মত এক ফোটা কষ মাটিতে পড়লো! সে সেটা প্রেমিকার আঁচল দিয়ে মুছতে গেলো। প্রেমিকা তেলে বেগুলে জ্বলে অঙ্গার হয়ে ঘৃণায় ইয়াক ইয়াক করে বমি করতে করতে কড়া দৃষ্টিতে আগুন নিক্ষেপ করে উঠে চলে গেলো কষা কাবিলের কাছ থেকে।

কষা কাবিল বিরহের কশাঘাতে কষ্টিত হয়ে লিখে ফেলল একটি কর্কশিত কাব্য।

''হাতে পায়ে আবর্জনা নিয়ে ভেসে এসেছি এ সভ্যতার ভীড়ে

প্রিয়তমা বলে উঠে বস্তির চামার

বোকা মেয়ে

বুঝেনা তো সে হারিয়ে ফেলে

ভালোবাসার হাজার একর জোড়া খামার''

এখন কষা কাবিল বিয়ের জন্য বিভিন্ন জায়গায় সমন্ধ পাঠায়। কিন্তু মেয়ের পিতারা তার হাতে নো বেল এর বেল ধরিয়ে দিয়ে চম্পট দেয়। কষা কাবিলের দুঃখের সীমা থাকে না। কন্যা দায় গ্রস্থ পিতারাও কষা কাবিলকে বেল দিয়ে তার বহুদিনের কষ্টকাঠিন্য দূর করতে চায় না।

অতঃপর কষা কাবিলেরা সংকল্প যে করেই হোক এই কষ পড়া সমস্যা দূর করতে হবে। মুখ বন্ধ করে ঘুমাতে হবে। কষা কাবিল বাজার থেকে কসটেপ কিনে এনে ঠোটে লাগিয়ে ঘুমানো শুরু করলো। কিন্তু তাতেও কাজ হল না। তার মুখের লালাতে কসটেপের আঠা ভিজে উঠে যেইকার সেই!

এদিকে সে আগের প্রেমিকাকেও ভুলতে পারে না। রোজ রাতে গান শোনে ,''ও প্রিয়া ও প্রিয়া তুমি কোথায়?''

তারপর একদিন সাহস করে সোজা চলে যায় প্রেমিকার বাড়িতে। দরজা খুলে দেয় স্বয়ং প্রেমিকার বাবা। সে তার পায়ে কদমমুসি করে বলে ,'' আংকেল আমি আপনার মেয়েকে ছাড়া বাঁচব না। তাকে আমার সাথে বিয়ে দিয়ে দেন।'' সে আংকেলের পায়ে কষে এক লাথি খাও্য়ার জন্য অপেক্ষা করতে থাকে। কিছুক্ষন পর যখন দেখল কিছুই ঘটছে সে চোখ মলে আংকেলের দিকে তাকায়। আংকেল চশমাটা উচু করে বলেন ,''ডিয়ার সান , লাইফ ইজ নট এ বেড অব রোজ।''

সে আবেগে আপ্লুত হয়ে বলে ,'' হু, লাইফ ইজ ফুল উইথ ড্রাম অফ ওয়াটার। এই জন্যই তো প্রেমিকা ছেড়ে চলে গেছে।''

যথারীতি তার মুখের স্লাইভেশন বেড়ে যায়। কিন্তু এইবার আর গড়িয়ে পড়ার আগেই সে মুখ ঠেসে বন্ধ করে নেয়। এ সব দৃশ্য দূর থেকে দাঁড়িয়ে দেখছিল তার প্রেমিকা। এবার সে সামনে এসে বলে ,''তুমি পাস করেছো প্রেমের পরীক্ষায়।''

প্রেমিকার পরনে নীল রঙের শাড়ি। চুলগুলো ছাড়া। অপরুপ মায়াবিনী রাজকন্যা মনে হচ্ছিল তাকে। কষা কাবিলের চোখ জুড়িয়ে যায়। ''মিয়া বিবি রাজি তো কেয়া কারে গা কাজি।'' আংকেলও দু' জনকে মেনে নেন। নো-বেল পাওয়া কাবিল এবার সত্যিকারের বেল বিজয়ী।

বিষয়: সাহিত্য

৩১২৭ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File