আমাদের দেশটা স্বপ্নপুরী। (রম্য)
লিখেছেন লিখেছেন ইক্লিপ্স ০৪ এপ্রিল, ২০১৩, ০৩:২০:০২ দুপুর
সে অনেক অনেক দিন পরের কথা। বিখ্যাত পর্যটক ইবনে বতুতা এসেছেন বাংলা সফরে। প্লেন থেকে নেমেই তিনি মুখোমুখি হলেন একজন বাংলাদেশী পুলিশ অফিসারের। তাকে দেখেই তার পড়িমড়ি করে ভোঁ দৌড়! বাংলাদেশী পুলিশ বলে কথা! কখন কি করে কোন ঠিক নেই! তিনি পেছনে তাকিয়ে দেখলেন পুলিশও তার পিছনে পিছনে দৌড়াচ্ছে। তিনি ভয়ে আরো জোরে দৌড়াতে লাগলেন কিন্তু বিপত্তি ঘটালো রাস্তার উপর গরুর বিষ্ঠা। তিনি তাতে পিছলে উপ্পুড় হয়ে পড়ে গেলেন। আর মনে মনে বললেন ''গোলা ভরা গরুই যত্ত নষ্টের মূল।'' তত্তক্ষণে পুলিশ অফিসার তার কাছে চলে এসেছে। তিনি বন্দুকের গুলি খাওয়ার ভয়ে ঠেসে দুই চোখ বন্ধ করে রাখলেন। কিন্তু একি! পুলিশ তার পায়ে হাত দিয়ে কদমমুসি করছে আর মুচকি হাসছে! তিনি এবার একটু আস্তত্ব হলেন। ভাবলেন তিনি বিদেশী তো তাই কিছু বলছে না। আরেকটু পর নিশ্চয়ই বকশিস চাইবে। কিন্তু পুলিশ তার কিছুই করলো না। বরং তাকে গাড়িতে করে হাসপাতালে পৌছে দিল আর বলল সে জনগনের সেবক। জনগনকে সেবা করাই তার কর্তব্য। সে বকশিস নেয় না।''
ইবনে বতুতা তো অবাক! বাংলাদেশের এত পরিবর্তন? তবে কি এই দেশে দুর্নীতিগ্রস্থ লোক সবাই ভালো হয়ে গেছে! তিনি হাসপাতাল থেকে বেড়িয়ে রাস্তায় নামলেন। কিছুদুর এসে দেখলেন ডাস্টবিনের চিপায় কালো কুচকুচে কুতকুতে শরীরের উলঙ্গ এক যুবক বসে কাঁদছে। তিনি কাছে গিয়ে জিজ্ঞাসা করলেন ,''কিরে কে তুই? আর এভাবে উলঙ্গ হয়ে বসে কাঁদছিস কেন?'' যুবকটি বলল ,''আমি খবিস শয়তান। মানুষকে দিয়ে খারাপ কাজ করানোই আমার কাজ। কিন্তু এই দেশের সব মানুষ ভালো হয়ে গেছে। কাউরে খারাপ কাজ করতে বললেও করে না। তাই আমার এখন কোন চাকরি নাই।''
ইবনে বতুতা আরো অবাক! সত্যিই কি তাই! এই দেশের মানুষ এত ভালোহয়ে গেছে যে শয়তানও অচল। সে গেলো টেন্ডার অফিসের সামনে। সেখানে গিয়ে দেখলো একদল যুবক দাঁড়ানো। সে ভাবলো মাস্তান হবে। সে শয়তানকে বলল ''যা ওদের গিয়ে বল চাদাঁবাজি করতে।'' শয়তান গিয়ে যুবকদের কানে কানে বলল,'' ইবনে বতুতাকে গিয়ে ধর। ওর কাছে অনেক টাকা। এই টাকা পেলে ধনী হয়ে যাবি, যা চাবি তাই পাবি, সুন্দরী বঊ, গার্লফ্রেন্ড, বাড়ি, গাড়ি আরো কত কি!''
কিন্তু কোন যুবকই শয়তানের কথায় কান দিল না। বরং শয়তানের গালে ঠাস করে একটা চটকানা দিয়ে বলল,'' চাদাঁবাজি, টেন্ডারবাজি, প্রলোভন এ সব অন্যায়।''
শয়তান গোমড়া মুখে ইবনে বতুতার কাছে এসে দাড়াল। চক্ষু গরম করে বলল ,''আপনার কারণে আমি চটকানা খাইছি।'' ইবনে বতুতা তো আরো অবাক। সে চড়ক গাছে চোখ তুলে দেখলো এই দেশে এখন আর কেউ খারাপ কাজ করে না, প্রতারনা করে, মিথ্যা কথা বলে না, উঠতি বয়সী ছেলেরা মেয়েদের বিরক্ত করে না, বাসে সিট মেয়েদের জন্য ছেড়ে দেয়, নারী,শিশু , বৃদ্ধা সবাইকে সবাই সম্মান করে, চারিদিকে ভালোবাসার বন্যা, ঘৃণা শব্দটিই নেই এখন ডিকশনারীর পাতাতে। সবাই এখানে সৎ!
এইবার তিনি শয়তানকে নিয়ে গেলেন একজন নেতার কাছে। ভাবলেন সবাই ভালো হয়ে গেলেও নেতা নিশ্চয়ই ভালো হবে না। তিনি এক বোতল ফ্রুটিকা কিনে মনে মনে হাসলেন, এটা খেয়ে নেতা নিশ্চয়ই তার দুর্নীতির কথা বলবে। কিন্তু নেতা ফ্রুটিকা নিজে না খেয়ে ইবনে বতুতার দিকে বাড়িয়ে দিয়ে বললেন ,''আপনি মেহমান, আপনি আগে খান।'' ইবনে বতুতার অবাক হওয়ার মাত্রা আরো কয়েক ডিগ্রি বেড়ে গেল! নেতাও এদেশের ভালো হয়ে গেছে!
তারপর তিনি যাচ্ছিলেন ম্যানহলের ধার ঘেসে। শয়তান তাকে ধাক্কা দিয়ে ম্যানহলে ফেলে দিল। পাজি শয়তান বলে কথা! সাথে সাথে মিডিয়ার লোকজন এসে ছবি তুললো এবং পত্রিকায় রিপোর্ট হল ,''শয়তানের শয়তানি। সবাই ভালো হলেও সে ভালো হলো না।'' ইবনে বতুতা এইবার সর্বোচ্চ পরিমাণে অবাক! এই দেশে মিডিয়াও এখন সব সত্যি কথা বলছে!
সত্যিই এ দেশের সবাই ভালো হয়ে গেছে। তিনি বাংলাদেশ নিয়ে রিপোর্ট করলেন '' এ দেশের থানা ভরা ভালো পুলিশ, মিডিয়া ভরা ভালো সাংবাদিক, রাজনীতি ভরা ভালো নেতা, দেশ ভরা ভালো লোক। শুধু আশে পাশে ঘুরে এক পাজি শয়তান। সেও এক সময় সব ভালোর সাথে থেকে ভালো হয়ে যাবে আশা করা যায়। স্বপ্নপুরীর দেশ আমাদের এই বাংলাদেশ।''
বিষয়: সাহিত্য
১৯২০ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন