আবেগি বাঙালি

লিখেছেন লিখেছেন পরিপ্রেক্ষিত ১২ জানুয়ারি, ২০১৩, ০৪:৪৮:২৮ বিকাল

পশ্চিম পাকিস্তানের হায়েনাদের শোষণের হাত থেকে বাঁচতে, লাখো প্রাণের ত্যাগের বিনিময়ে যে স্বাধীনতাটা পেয়েছিলাম , যে স্বাধীনতাটা ছিল কোটি প্রাণের আবেগের ,যে স্বধীনতাটার সাথে মিশে আছে লাখো মায়ের নাড়িছেড়া সন্তান হারানোর আহাজারী ,আজ চল্লিশ বছর পর সত্য প্রতিষ্ঠার সুবর্ণ জয়ন্তী উৎসবের প্রাক্কালে প্রশ্ন জাগে আমরা কি আমাদের অর্জিত স্বাধীনতাটাকে প্রতীষ্ঠা করতে পেরেছি? যে মা তাঁর সন্তান কুরবানীর বিনিময়ে আমাদের স্বাধীনতা উপহার দিয়েছিল আমরা কি সেই মায়ের সামনে চোখে চোখ রাখে দাঁড়ানোর যোগ্যতা রাখি?

সারা বিশ্ব যেখানে মসৃণ গতিতে সামনে এগিয়ে চলার প্রতিযোগীতায় নেমেছে , আমার খুব কষ্ট হয় যখন দেখি আমার প্রিয় দেশটা সেই প্রতিযোগীতার লাইনেই দাঁড়াতে পারেনি এখনও। কি ঘটছে এগুলো আমাদের চারপাশে। ডিসেম্বর মাস স্বাধীনতার মাস কিংবা অধুনা আন্দোলনের মাস যাই হোক না কেন বাংলাদেশের লাখ লাখ শিক্ষার্ত্রীদের কাছে এটা পরীক্ষার মাস। স্কুল, কলেজ , বিশ্ববিদ্যালয়সহ বি.সি.এস পরীক্ষাও হচ্ছে এই মাসে । অথচ তথাকথিত জনগণের বন্ধু রাজনৈতিক নেত্রীবৃন্দ একের পর এক সরকারি-বেসরকারী হরতাল দিয়ে পুরো পরীক্ষাসূচি তথা পুরো শীক্ষাব্যাবস্থাটাকেই ভজঘটে করে ফেলেছেন। অবস্থাটা এমন দাঁড়িয়েছে যেন আমরা যেন সামনে এগিয়ে যাওয়ার বদলে দিন দিন মধ্যযুগের দিকে ফিরে যাচ্ছি। আমাদের রাজনৈতিক সংগঠনগুলো তাদের রাজত্ব কায়েম করার জন্য একদল অন্ধ তীরন্দাজ মাঠে নামিয়ে দিয়েছে । আর আমরা সবাই আক্রমনের নিশানায়। কে কখন কিভাবে মৃত্যুবরণ করে তার কোন নিশ্চয়তা নেই। আমার রাষ্ট্রে আজ আমারই নিরাপত্তা নেই।

একটা দেশের সার্বিক উন্নয়ন নির্ভর করে একটি সুস্থ ও শক্তিশালী গণতন্ত্রের উপর। আর সুস্থ গণতন্ত্র পুরোপুরি নির্ভরশীল সুস্থ রাজনৈতিক সংগঠন তথা এর কর্মীদের উপর। এরকমই একদল মুক্তিকামী আতœত্যাগী কর্মীর তৎপরতার বিনিময়েই পেয়েছিলাম আমাদের স্বাধীনতা। কিন্তু এখনকার বিভিন্ন রাজনৈতিক অঙ্গসংগঠনের আচরণ দেখলে প্রশ্ন জাগে এরাই কি মাওলানা ভাসানী, তাজউদ্দিন আহমেদ, সৈয়দ নজরুল ইসলাম , শেখ মুজিবুর রহমান এর মত নেতাদের উত্তরসূরী, এরাই কি বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ নেতা?

বাঙালি খুবই আবেগের জাতি। অতি সামান্য অর্জনেই যেমন এঁরা আনন্দে লাফালাফি করে ঠিক তেমনি খুব সামান্য ক্রিকেট খেলাতে হারলেও পুরো জাতির সবার চোখ দিয়ে জল নেমে আসে। আবেগি বাঙালির একটা দূর্নামও আছে এঁরা আবেগটাকে খুব দ্রুতই ক্রোধে রুপান্তরিত করতে পাওে, যে ক্রোধের ক্ষমতা অসিম। এই হঠাৎ ক্রোধ দিয়েই একাত্তরে তৎকালিন সুপারপাওয়ারের আশির্বাদপুষ্ট পাকিস্তানকে ধরাসায়ি করেছিল। আমাদের রাজনীতিবিদদের বুঝতে হবে কোটি প্রাণের আবেগের খুটির উপরই তাদের সিংহাসন অধিষ্টিত। এঁরা যখন বুঝতে পারবে তাদের ভাগ্য নিয়ে ছিনিমিনি খেলা হচ্ছে, তাদের অর্জিত সহস্র কোটি টাকা দেশের বাইরে পাচার হচ্ছে প্রতিনিয়ত তখন হয়তবা তারা সহ্য করতে নাও পারে। আপাত নিরীহ বাঙালীর আবেগ হচ্ছে শান্ত পানির ধারার মত। সে যখন চুপচাপ থাকে আমরা তার আনন্দে পুলকিত হই কিন্তু সে যদি বইতে শুরু করে তখন কোন বাধাই তাকে আর আটকাতে পারে না, সামনের সব কিছু ভেঙে-চূড়ে সে তার পথ করে নেয়।

বিষয়: রাজনীতি

১০৯৬ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File