এসো কোরআনের ছায়াতলে সমবেত হই

লিখেছেন লিখেছেন জান্নাতে যেতে চাও যারা ১৪ জানুয়ারি, ২০১৩, ০১:২১:২৩ রাত



বর্তমান বিশ্বে মুসলমানরা নাজুক একটি সময় পার করছে। সমগ্র বিশ্বে মুসলমানরা আজ ভয়ানক এক সঙ্কটের জালে জড়িয়ে পড়ছে। কোথায়ও তাদের আশ্রয় নেয়ার জায়গা নেই। সব কটি মুসলিম রাষ্ট্রের ওপর একের পর এক বিপদের ঘনঘটা বিস্তার লাভ করছে। সমগ্র বিশ্বে মুসলমানরাই সবচেয়ে বেশি অপদস্ততা ও অসহায়ত্বের শিকার। অপরদিকে, কাফের, মুশরিকরা সারা বিশ্বে দাপিয়ে বেড়াচ্ছে। মুসলমানদের ওপর তারা বিভিন্নভাবে ক্ষমতা ও আধিপত্য বিস্তার করে রেখেছে। অথচ কোরআনে কারিমের একাধিক জায়গায় মুমিনদের সাহায্য-সহযোগিত ও বিজয়ের স্পষ্ট ঘোষণা রয়েছে। যেমন—সুরা রুমের ৪৭নং আয়াতে আছে, ‘মুমিনদের সাহায্য করা আমার দায়িত্ব।’ সুরা হাজের ৩৮নং আয়াতে আছে, ‘আল্লাহ মুমিনদের রক্ষা করেন।’ সুরা আনফালের ১৯নং আয়াতে আছে, ‘আল্লাহ মুমিনদের সঙ্গে আছেন।’ সুরা নিসার ১৪১নং আয়াতে আছে, ‘আল্লাহ কখনোই মুমিনদের বিরুদ্ধে কাফিরদের জন্য কোনো পথ রাখবেন না।’ সুরা মুনাফিকুনের ৮নং আয়াতে আছে, ‘শক্তি তো আল্লাহর আর তার রাসুল ও মুমিনদের।’ এ সব আয়াত দ্বারা এ কথাই প্রমাণিত হয় যে, আল্লাহ তায়ালা মুমিনদের গায়েবিভাবে সাহায্য করবেন। আমরা দেখি, বর্তমানে সমগ্র বিশ্বে মুসলমানরাই সবচেয়ে বেশি অপদস্ততা ও লাঞ্ছনার শিকার। মুসলমানদের অসহায়ত্বকে পুঁজি করে কাফের, মুশরিক ও নাস্তিকরা একে একে মুসলিম রাষ্ট্রগুলো দখল করছে। তাদের নগ্ন আগ্রাসনের শিকার হয়েছে। আফগানিস্তান আর ইরাক হারিয়েছে তেলসম্পদের মূল্যবান ভাণ্ডার। এসব দেশের শিক্ষা-সংস্কৃতি জিম্মি হয়ে আছে ইহুদি-খ্রিস্টানদের হাতে। ইহুদি-খ্রিস্টানদের ইসলাম বিদ্বেষ এতটাই চরমে পৌঁছেছে যে, তারা মহানবী হযরত মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ব্যঙ্গ চিত্র প্রকাশ করে, চলচ্চিত্র নির্মাণ করে রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের পবিত্র চরিত্রকে কালিমা লিপ্ত করার মত ধৃষ্টতাও দেখাচ্ছে। প্রতিনিয়ত মুসলিম জনপদ কোনো না কোনো মজলুম মুসলমানের রক্তে রক্তাক্ত হচ্ছে। এই তো কিছুদিন আগে মিয়ানমারের রাখাইন প্রদেশে মাজলুম রোহিঙ্গা মুসলমানের কান্নায় পৃথিবীর আকাশ-বাতাশ ভারী হয়ে উঠেছে। সাম্প্রদায়িক বৌদ্ধদের নির্মম নির্যাতনের শিকার এসব অসহায় মুসলমান প্রতিবেশী দেশেও আশ্রয় পায়নি। মোট কথা দেশটির মুসলমানদের ওপর কেয়ামতের বিভীষিকা আপতিত হয়েছে। কিন্তু মজলুম মুসলমানের আহাজারি শোনার মতো কোনো মানবাধিকার সংস্থাকে তাদের পাশে পাওয়া যায়নি। শুধু মুসলমান হওয়ার অপরাধেই এই নিরপরাধ, নিরস্ত্র মুসলমানরা নির্মম নির্যাতন-নিপীড়ন ও গণহত্যার শিকার হয়েছে। প্রশাসনিকভাবে তাদের ওপর পরিচালনা করা হয়েছে মর্মান্তিক নির্মূল অভিযান। সুতরাং এ প্রশ্ন আসা স্বাভাবিক যে, কেন মুসলমানরা মাজলুম হচ্ছে কেন তারা লাঞ্ছনা-গঞ্জনার শিকার তাহলে কি তারা মুমিন নয় তারা কী কোরআনে কারিমের কৃত ওয়াদার আওতাভুক্ত নয়

আমরা যদি কোরআনে কারিম গভীরভাবে অধ্যয়ন করি তাহলে এ প্রশ্নের উত্তর পেয়ে যাব। কোরআনে কারিমে আল্লাহ তায়ালা প্রকৃত মুমিনদের বেশ কিছু গুণ ও বৈশিষ্ট্য উল্লেখ করেছেন। যেমন সুরা আনফালের ২নং আয়াতে আছে, ‘মুমিন তো তারাই যাদের অন্তর কম্পিত হয় যখন আল্লাহর নাম নেয়া হয়, আর যখন তাদের সামনে তার আয়াত পাঠ করা হয় তখন তাদের ঈমান বৃদ্ধি পায় এবং তারা স্বীয় প্রতিপালকের ওপরই ভরসা করে। যারা নামাজ প্রতিষ্ঠা করে এবং আমি তাদেরকে যা দিয়েছি তা থেকে ব্যয় করে, তারাই হলো প্রকৃত ঈমানদার।’ সুরা মুমিনুনের ১নং আয়াতে আছে, ‘মুমিনগণ কামিয়াব হয়ে গেছে, যারা নিজেদের নামাজে বিনম্র।’ সুরা তাওবার ৭১নং আয়াতে আছে, ‘ঈমানদার নর-নারী একে অপরের বন্ধু, তারা সৎ কাজের আদেশ দেয় এবং অসৎ কাজ থেকে বিরত রাখে, নামাজ কায়েম করে, জাকাত দেয় এবং আল্লাহ ও তার রাসুলের আনুগত্য করে, তাদের ওপর আল্লাহ কৃপা করবেন।’ সুরা হুজুরাতের ১০নং আয়াতে আছে, মুমিনগণ তো পরসপর ভাই ভাই, অতএব তোমরা তোমাদের দুই ভাইয়ের মাঝে মীমাংসা করে দাও। সুরা হুজুরাতের ১৫নং আয়াতে আছে, ‘তারাই ঈমানদার যারা আল্লাহ ও তার রাসুলের প্রতি ঈমান আনার পর সন্দেহ পোষণ করে না এবং তাদের জীবন ও সম্পদ দিয়ে আল্লাহর পথে জিহাদ করে তারাই সত্যনিষ্ঠ।’ সুরা নূরের ৫১নং আয়াতে আছে, ‘ঈমানদারের উক্তি তো এই যে, যখন তাদের মাঝে ফয়সালা করে দেয়ার জন্য আল্লাহ ও তার রাসুলের দিকে আহ্বান করা হয়, তখন তারা বলে আমরা শুনেছি এবং আদেশ মেনে নিয়েছি, আর তারাই সফলকাম।’ এই আয়াতগুলোকে সামনে রেখে আমরা যদি চিন্তা করি এবং কোটি কোটি মুসলমানের অবস্থা পর্যবেক্ষণ করি তাহলে দেখতে পাই, প্রকৃত মুমিনের যেসব গুণ ও বৈশিষ্ট্য কোরআনে কারিমে উল্লেখ করা হয়েছে, তার কিঞ্চিৎ পরিমাণও আমাদের মাঝে নেই। আমরা নামাজ পড়ি অথচ নামাজে আমাদের মনোযোগ নেই। অন্তরে আল্লাহর জিকির নেই। আমাদের সমাজে প্রকাশ্যে অন্যায়, অসৎ কাজ হচ্ছে, আমরা তার প্রতিবাদ করছি না। সৎ কাজে আদেশ, অসৎ কাজে নিষেধ একদম ছেড়ে দিয়েছি। সুতরাং, আমরা কোরআনের পরিভাষায় মুমিন কিনা সেটাই বড় প্রশ্ন।

ঈমান অর্থ যদি হয় কালিমা পাঠ করা এবং ইসলামের অল্প কিছু বিধান মেনে চলা, তাহলে তো আমরা সবাই মুমিন। কিন্তু মুমিন অর্থ যদি হয় কোরআনে বর্ণিত বিশেষ গুণাবলী ও বৈশিষ্ট্যসমূহ অর্জন করা তাহলে সে অর্থে আমরা কতটুকু ঈমানদার হতে পেরেছি সেটাই এখন চিন্তার বিষয়। তবে এখানে এই প্রশ্ন আসা স্বাভাবিক যে, মুসলমানদের যত দোষই থাকুক তারা তো মুসলমান। তারপরও তারা ইহুদি-খ্রিস্টানদের হাতে নির্যাতিত হচ্ছে কেন ইহুদি-খ্রিস্টানরা বিজয়ী, আর মুসলমানরা পরাজিত কেন এ প্রশ্নের উত্তর আরো সহজ। ইহুদি-খ্রিস্টানরা সৃষ্টির বিষয়ে আল্লাহ তায়ালার অনুসৃত রীতি-নীতি থেকে শিক্ষা গ্রহণ করছে এবং সে অনুযায়ী কাজ করছে। অপর দিকে মুসলমানরা তা সম্পূর্ণ ভুলে গেছে। ইহুদি-খ্রিস্টানদের পুরো জাতি বিজয়ের জন্য ঘাম ঝরাচ্ছে আর মুসলমানরা অলস ঘুমে বিভোর। ইহুদি-খ্রিস্টানরা শিক্ষা-দীক্ষায় নিয়োজিত আর মুসলমানরা মূর্খতার গ্লানি বহন করে বেড়াচ্ছে। ইহুদি-খ্রিস্টানরা যেখানে আগামী কালের প্রস্তুতি সম্পন্ন করে রেখেছে সেখানে মুসলমানরা আজকের করণীয় সম্পর্কে উদাসীন। জয়-পরাজয় ও উন্নতি-অধোগতির ক্ষেত্রে আল্লাহর বিধান কারো প্রতি অবিচার করে না। কোনো জাতির পক্ষপাতিত্বও করে না। এটা ইসলামেরই শিক্ষা। কিন্তু মুসলমানরা কেন জানি এই শিক্ষাটা গ্রহণ করতে বা বুুঝতে নারাজ। উহুদের যুদ্ধে মুসলমানদের একটি ভুল চিন্তার খেসারত দিতে হয়েছে সত্তরজন বীর মুজাহিদের জীবন দানের মাধ্যমে। তাদের মধ্যে ছিলেন রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের পিতৃব্য হযরত হামজা (রা.), হজরত আনাস বিন নজর (রা.), হজরত মুসআব বিন উমায়ের (রা.), সা’দ ইবনুর রবী (রা.)-এর মতো শীর্ষস্থনীয় মুজাহিদগণ। তারা স্বয়ং রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নেতৃত্বে যুদ্ধ করেছেন। কিন্তু এই সৌভাগ্যের কারণে তাদের বিজয় আসেনি। বা এই অজুহাতেও বিপর্যয় বন্ধ থাকেনি যে, তাদের প্রতিপক্ষ ছিল কাফের ও মুশরিক। বুঝা গেল পরাজয়ের পথ অবলম্বন করলে মুসলমান হলেও পরাজিত হবেই। আর বিজয়ের পথে হাঁটলে ইহুদি-খ্রিস্টান হয়েও বিজয়ী হতে পারে। ইসলামের এই গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষাটুকু মুসলমানরা যত তাড়াতাড়ি বুঝবে ততই তাদের জন্য কল্যাণ হবে। উহুদের যুদ্ধে মুসলমানরা পরাজয়ের পথ অবলম্বন করার করণেই পরাজিত হয়েছে। আল কোরআন বলছে, ‘এটা তাদের হাতের কামাই।’ আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘কি ব্যাপার! যখন তোমাদের ওপর একটি বিপদ আসলো তখন তোমরা বললে এটা কোথা থেকে এলো অথচ তোমরা তো দ্বিগুণ বিপদে পড়ছিলে। অতএব বলে দাও এ বিপদ তোমাদের ওপর এসেছে তোমাদেরই পক্ষ থেকে। নিশ্চয় আল্লাহ সর্ব বিষয়ে ক্ষমতাবান।’ [সুরা আলে ইমরান, আয়াত নং ১৬৫]

মুসলমানদের সরলতাকে পুঁজি করে ইহুদি-খ্রিস্টান চক্র মুসলমানদের বিরুদ্ধে সর্বগ্রাসী ষড়যন্ত্রে লিপ্ত। সুতরাং উদাস-সরলতা নয়, পূর্ণ সতর্ক থাকতে হবে। আল কোরআন মুসলমানদের সরলতার পরিচয় দেয়ার পাশাপাশি সতর্ক থাকতে, অশ্র“ বিসর্জন দেয়ার সঙ্গে সঙ্গে শত্রু মোকাবেলায় শক্তি সঞ্চয় ও প্রস্তুতি গ্রহণ করার কথাও বলেছে। ‘হে মুমিনগণ সতর্কতা অবলম্বন কর, এরপর পৃথক পৃথক সৈন্যদলে কিংবা সমবেতভাবে বেরিয়ে পড়।’ [সুরা নিসা, আয়াত নং ৭১]। কোরআনে কারিমে আরও ইরশাদ হয়েছে, ‘কাফেররা চায় যে, তোমরা অস্ত্রশস্ত্র, আসবাবপত্র সম্বন্ধে অসতর্ক হও, তাহলে তারা তোমাদের ওপর একযোগে ঝাঁপিয়ে পড়তে পারে।’ অন্য আয়াতে আছে, ‘তোমরা তাদের প্রতিরোধের জন্য যথাসাধ্য শক্তি ও অশ্ববাহিনী তৈরি রাখবে, এর দ্বারা সন্ত্রস্ত করবে আল্লাহর শত্রুকে এবং তোমাদের শত্রুকে।’ [সুরা আনফাল, আয়াত নং ৬০]

আল্লাহ আমাদের সবাইকে কোরআনের পথে চলার তৌফিক দান করুন।

বিষয়: বিবিধ

১৩৫৮ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File