ছেলেটির নাম ফারুক ..
লিখেছেন লিখেছেন জুনাইদ হোসেন সবুজ ০৭ এপ্রিল, ২০১৫, ১১:২৪:৪৫ সকাল
ছেলেটির নাম ফারুক । পিতার নাম নুর আলম।
ছোট বেলা থেকেই খুব ভাল ছাত্র ছিল।
অদম্য সাহস আর দৃড় মনোবল ছিল ফারুকের্।
সুন্দর চাহুনী আর মুখের মিস্টতায় আপন করে নিয়েছিল পাড়া প্রতিবেশী সবাইকে।
স্কুলের স্যাররাও তাকে অনেক ভালবাসত।
একদিন পাশের বাড়ির এক ছেলে স্কুলে এসেছে না খেয়ে।
ক্লাসের মাঝখানে হটাত করে অজ্ঞান হয়ে যায়।
ফারুক তার মাথায় পানি ঢেলে দেয় । নিজের টিফিনের খাবার খাইয়ে হেডস্যারের অনুমতি নিয়ে তাকে বাসায় পৌছে দেয়। তার এই অসাধারন অবদানের জন্য সে বছর সেরা ছাত্রের পুরস্কারটা তাকেই দেয়া হয়।
একদিকে যেমন ভাল ছাত্র অন্যদিকে ইবাদতের দিক দিয়েও ফারুক ছিল অত্যন্ত নিয়মিত।
কোরআন , হাদীস , ইসলামী সাহিত্য সে নিয়মিত পড়ত। সবাইকে তা পড়ে শোনাত।
বাবা মাকে সবসময় নামাজের জন্য তাগিদ দিত ফারুক।
ফারুকের বাবা মায়ের অনেক স্বপ্ন ফারুককে নিয়ে। তারা জানে তাদের ফারুক এখন যেমন ভালবাসা দিয়ে তাদের এলাকার সবাইকে জয় করে নিয়েছে, একদিন সে বিশ্ব জয় করবে।
ইসলামী বই পড়তে পড়তে একটা সময় ইসলামী আন্দোলনের দিকে ঝুকে যায় ফারুক।
সমাজের খেটে খাওয়া মানুষগুলোর জন্য তার মন কাদে।
আজ যদি সমাজে যাকাত ব্যবস্থা পুরোপুরি চালু হত, তবে এই বৈষম্য থাকত না।
ফারুক ভাবে সবাইকে ইসলামের পথে আনতে হলে ইসলামী আন্দোলনের বিকল্প নেই।
এরপর থেকে ফারুক যোগ দেয় ইসলামী আন্দোলনের একমাত্র প্রতিষ্ঠিত সংগঠন বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্র শিবিরে।
সেখান যোগ দিয়ে ফারুক আরো নিজেকে চিনতে পারে। দাওয়াতী কাজের মাধ্যমে সারাটা দিন কাটিয়ে দেয় ফারুক।
সমাজের অবহেলিত মানুষগুলোও ফারুককে নিয়ে স্বপ্ন দেখে।
ফারুক তাদের শীতে দিনে নিজের জামা খুলে দেয়। অসুখে তাদের পাশে এসে দাড়ায়।
ফারুক মাত্র এইচএসসি পরীক্ষা দিবে।
কিন্তু এই সময়েই জনগনের ভালবাসায় ফারুক হয়ে যায় একজন ইসলামী স্কলার্। তার সুন্দর বাচন ভঙ্গীতে শত্রুও আপন হয়ে যায়।
ফারুকের ইসলামী আন্দোলন এগিয়ে যেতে দেখে তার থানার আওয়ামীলিগ নেতাদের রোষানলে পরে সে।
অনেকবার ফারুককে তারা বলেছে, এইসব ইসলামী টিসলামী কাজ বাদ দিতে। কারো বিপদে না যেতে।
কিন্তু ফারুক তা শোনবার নয়।
ইসলামকে বুকে ধারন করে, জনগনের মুক্তির সংগ্রামে সে এগিয়ে যায় বীরদর্পে।
তার এগিয়ে যাওয়া ভাল লাগে না আওয়ামী হায়েনাদের্।
গভীর রাতে থানার ওসি এসে ধরে নিয়ে যায় ফারুককে। না , কোন থানায় তাকে নেয়া হয় না। ফারুকের চোখ বাধা ।
গাড়ি থেকে নামলে ফারুক বুঝতে পারে আশে পাশে কোন জনবসতি নেই।
তার পায়ের নিচে শুধুই বালি।
- ওসি সাহেব, আমার চোখটা একটু খুলে দিবেন ? খুব ব্যথা করছে।
- চুপ কর শুয়ার বাচ্চা। তোর চোখ জন্মের মতই খুলে দেব । মড়ার আগে তোর কোন ইচ্ছা আছে নাকি বল।
- ওসি সাহেব, আমাকে তো অন্ধকারে ধরে নিয়ে এলেন। মাকে বলে আসি নি। মায়ের মুখটা দেখতে খুব ইচ্ছা করছে।
- হারামীর বাচ্চাটা বলে কি ? হা হা । উপর থেকে তোর মা বাবা সবাইকে দেখতে পারবি। কালেমা পড়।
- ওসি সাহেব, এক গ্লাস পানি খাব। খুব তেস্টা পেয়েছে।
- না, কোন পানি টানি হবে না। এই শুয়ার বাচ্চাটা এত কথা বলে কেন ?
জোরে উচ্চস্বরে কালেমা পড়ে ফারুক।
কালেমা শেষ হওয়া মাত্রই রাইফেলের কয়েকটা গুলি।
উহ ! করে একটা মাত্র শব্দ।
তারপরেই সব নিথর, নিস্তব্ধ।
ফারুক নামের হাসিখুশী ছেলেটা হারিয়ে যায় চিরদিনের মত।
এখন আর তার মাকে মা বলে কেও ডাকবে না। বাবাকে ওযুর পানি এগিয়ে দিবে না ফারুক।
ফারুক ঘুমিয়ে গেছে চিরদিনের মত।
বয়স্ক বুড়িটাকে কেও পান কিনে দিয়ে বলবে না, বুড়ি মা আমার জন্য দোয়া করো।
ফারুক আজ হারিয়ে গেছে । শূন্য করে দিয়ে গেছে হাজারো মায়ের বুক। শূন্য করে দিয়ে গেছে হাজারো স্বপ্ন।
* হ্যা আমি সেই ফারুকের কথা বলছি। যে ছিল সংগঠনের একজন সাথী। গতরাতে তার গুলিবিদ্ধ লাশ পাওয়া গেছে। তার বাড়ি ছিল নোয়াখালী। মাইজদী পাবলিক কলেজের ছাত্র ছিল সে।
এভাবেই কি সমাজের আগামীর সেনাগুলোকে হারাতে থাকব আমরা ?
উত্তর চাই জাতির কাছে।
#বুদ্ধিদীপ্ত_সমালোচক
বিষয়: বিবিধ
৮৮৯ বার পঠিত, ৬ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন