***** মেঘনায় লঞ্চ ডুবি এবং প্রেতাত্মাদের কান্না *******
লিখেছেন লিখেছেন জুনাইদ হোসেন সবুজ ২১ মার্চ, ২০১৪, ১২:৩৮:৪৩ দুপুর
বরিশাল যাব বলে রাতে লঞ্চে উঠলাম ।একটা কেবিন ভারা করেছিলাম আগেই। তাই জিনিসপত্র নিয়ে সেখানেই উঠে পড়লাম। রাত আনুমানিক ২ টা। হটাত করে কে যেন আমার কেবিনের দরজায় নক করল। উঠে খুলে দেখি, মাঝ বয়সী একটা লোক । বলল ভাই আমি আপনার পাশের রুমেই উঠেছি। একা ঘুম আসছে না, তাই গল্প করার জন্য চলে এলাম। ভাবলাম , এ আবার কোন ঝামেলা। আমারও ঘুম আসছিল না। তাই রাজি হলাম।
আমি তাকে তার নাম জিজ্ঞেস করলাম। জিজ্ঞেস করলাম বাড়ি কোথায়। লোকটি উত্তর দিল। তার বাড়ি চাঁদপুরের মতলবে, নাম বাহার আলী।পড়াশুনা শেষ। চাকরি খুজছে অনেকদিন। বাড়িতে বাবা, মা, ছোট বোন এবং ছোট এক ভাই আছে। বাবা কৃষক। তাই পরিবারের হাল ধরার জন্য চাকরীর জন্যে হন্যে হয়ে ঘুরছে। কিন্তু চাকরি কোথায় পাচ্ছে না খুজে। চাকরি পেতে মামু, খালুর জোর লাগে, রাজনৈতিক পরিচয়, টাকা পয়সা লাগে। মামু খালু টাকা পয়সা কোনটাই যোগাড় করার সামর্থ্য তার নাই। কিন্তু রাজনীতি তো করা যেতে পারে। তাই একটি রাজনৈতিক দলে যোগ দেয় সে। কিন্তু কিছুদিন বাদেই সেখানে হতে থাকে নির্যাতিত। নেতা নেত্রীরা লাশ চায়। জীবনে যে কোনদিন একটা চাকু পর্যন্ত ধরে নি, তাকে নাকি তুলে নিতে হবে রাম দাঁ, পিস্তল। কিন্তু করার তো কিছু নেই। বাবার বয়স ৬০ পার হতে চলেছে। আর কতদিন তার ঘাড়ের উপর চরে খাবে। তাই একদিন হাতে অস্র তুলে নিল।
এবার আমি তার কথা শুনে ভয় পেয়ে গেলাম। তবে কি আমার কাছে টাকা পয়সা চায় নাকি? বসতে দিয়েই মস্ত ভুল করে ফেললাম নাতো?
কিছুক্ষন পরেই আবার শুরু করল, ভাই ভয় পাবেন না। আপনাকে আমার কেন যেন খুব আপন মনে হল। তাই কথা গুলো বললাম। তবে এখন আর আমি ওইসব কাজ করি না। সব ছেড়ে দিয়েছি। আমার ছোট ভাইটার চাকরি হয়েছে, ছোট বোনটার বিয়েও হয়েছে। কিন্তু আমি তাদের জন্যে কিছুই করতে পারি নি ।প্রতিহিংসার রাজনীতি করে একবার জেলে গেলাম। কিন্তু কেও আমাকে একবারের জন্যেও দেখতে আসে নি। জেল থেকেই খবর পেলাম বাবার মৃত্যু হয়েছে। আমাদের পরিবারের তখন কি অবস্থা চিন্তা করুন। ৬ মাস পরে জেল থেকে ছাড়া পেয়ে আবার যোগ দিলাম সেই নোংরা রাজনীতিতে, যেখানে নেই কোন নীতি, আদর্শ।
এরপর একদিন লঞ্চে করে ঢাকা থেকে বাড়ি যাচ্ছিলাম। লঞ্চে উঠেই আমার প্রতিপক্ষ রাজনৈতিক দলের একজনকে দেখলাম। তাকে আমি একবার রাম দাঁ দিয়ে কুপিয়েছিলাম। কিন্তু ভাগ্যক্রমে প্রানে বেঁচে যায়। তাকে দেখেই আমার কেন যেন খুব ভয় হচ্ছিল। আবার প্রতিশোধ নিবে না তো ? আনুমানিক রাত ২.৩০ টায় আমার দরজায় কে যেন কড়া নাড়ল। খুলে দেখি সেই লোক। সাথে আরও কয়েকজন। সবার হাতে রাম দাঁ। আমাকে এলোপাথাড়ি কোপাতে লাগল।
জ্ঞান যখন ফিরল তখন দেখি আমি পানিতে পরে আছি। কিন্তু কোন কথা বলতে পারছি না। গায়ে কোন ব্যাথাও নেই। একি আমি বাতাসে ভাসতে পারছি। মনে হল যেন পাখির মত উড়তে পারছি। কিন্তু আমার দেহটা এক জায়গায়তেই ভাসছে। কিছু মাছ দেখলাম আমার গায়ে বসে আছে। কয়েকটা কাক আমার ভাসমান বুকের উপর বসে মাংস খাবার চেষ্টা করছে। অথচ আমি কিছুই বলতে পারছি না। এতক্ষনে বুঝলাম আমি মারা গেছি।
লোকটার কথা শুনে আমি ঘেমে নেয়ে উঠেছি ভয়ে। অনেক চেষ্টা করেও মুখ দিয়ে কথা বের করতে পারছি না। কিন্তু সে কথা গুলো বলেই যাচ্ছিল। হ্যাঁ, এই সেই কেবিন, যেখানে আমাকে হত্যা করা হয় রাম দাঁ দিয়ে কুপিয়ে। আমি এর প্রতিশোধ নিব। চরম প্রতিশোধ। যারা আমাকে বাচতে দেয় নি, যাদের জন্য আমি নোংরা রাজনীতিতে নিজের জীবনকে নিঃশেষ করেছি , যারা আমাকে অস্র হাতে তুলে নিতে বাধ্য করেছে তাদের বিরুদ্ধে প্রতিশোধ। আমি আরও প্রতিশোধ নিব , সেই ১৬ কোটি জনগনের যারা আমার মত হাজারো ছেলে নষ্ট হয়ে যাবার পরেও কোন প্রতিবাদ করে নি। আমি কাওকে ছাড়ব না। একে একে সবাইকে শেষ করব।
একি ! তার হাতে দেখছি রাম দাঁ। তবে কি সে আমাকে খুন করবে?
চিৎকার দিলাম জোরে । ঘুম ভেঙ্গে গেল। তবে কি আমি এতক্ষন স্বপ্ন দেখলাম ? উহ বাবা, কি ভয়টাই না পেয়েছিলাম। যতসব আজগুবি স্বপ্ন । একটু পরেই শুনলাম বাইরে লোকজনের চেঁচামেচির শব্দ। একটা লাশ নাকি পানিতে ভাসছে । বেশ কয়েকদিন ধরেই পানিতে ভাসছে মনে হচ্ছে । অর্ধ গলিত, পচে গন্ধ বের হয়েছে।
attosomorponkari protinidhi
বিষয়: বিবিধ
১১৪৯ বার পঠিত, ৪ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
ধন্যবাদ।
অনেক ধন্যবাদ। ভালো লাগলো
মন্তব্য করতে লগইন করুন