শাহবাগের রেডিমেট চেতনার ভাগিদার হতে ভূল করবেন না।

লিখেছেন লিখেছেন স্বপ্নতরী ২৫ ফেব্রুয়ারি, ২০১৩, ০২:০২:৪৯ রাত

শাহবাগ আন্দোলনের শুরুতে আমি একটি পোষ্ট দিয়েছিলাম, প্রতিক্রিয়া তেমন একটা হয়নি। প্রথম দিকে অনেকে একে স্বাধীনতার চেতনার পুর্নজীবন বা নব উত্তোলন বলে আখ্যায়িত করেছিলেন। এটাকে নতুন প্রজন্মের স্বাধীনতা যুদ্ধ আখ্যা দেয়া হলো কিছু দিন পরে। ইসলাম বিরোধী মিডিয়াগুলো নিজেদের সর্ব শক্তি প্রয়োগ করছিল এই অবস্থান কর্মসূচীকে নির্দলীয় এবং নিরপেক্ষ আন্দোলন হিসেবে জাতির কাছে প্রচার করার জন্য। এ কারনে অনেকে এতে খারাপের কিছু খুজে পাননি। দেশের মিডিয়াগুলো নৈশ্য প্রলাপের আয়োজনে একে নতুন প্রজন্মের জাগরন আখ্যা দিয়ে এর সাথে একাতœতা প্রকাশ করা হচ্ছিল। কেউ কেউ একে আগবাড়িয়ে তরুন প্রজন্মের জাগরন হিসেবে আখ্যায়িত করে দেশের মানুষের কাছে একটি ভূল বার্তা দেওয়ার যথা সাধ্য চেষ্টা করেছেন। কিন্তু তাদের সেই আশায় গুড়ে বালি দিয়ে শাহবাগের নিয়ন্ত্রন ছাত্রলীগের হাতে চলে গেলো। বলতে গেলে বাম আর রামদের সম্বনয়ে মিডিয়ার ছায়ায় গড়া এই শাহবাগ চত্তরটি ভবিষ্যতের একটি মাইফ ফলক হিসেবে প্রতিষ্টিত হবে। কিভাবে হবে তা আমরা অনেকেই উপলদ্ধি করতে পারলেও অভিব্যক্তিতে কিছুটা পার্থক্য হতে পারে বিধায় আমি বিষয়টি কে একটু সরল ভাবে উপস্থাপন করতে চাই।

তরুন বলতে আমরা কাদের বুঝবো। গত জুম্মা বারে যারা নাস্তিক্যবাদের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ মিছিল করে পুলিশের নির্যাতন ভোগ করলেন তারা কি নতুন প্রজন্মের কেউ নন ? এদের অধিকাংশের বয়স ১৮ থেকে ২০ বছরের হবে। তাহলে এদের আমরা কি বলব ? আমাদের সুশীল নামের মিডিয়া অন্ধু আওয়ামী পুজারী মিডিয়াগুলো এদের কে তরুন হিসেবে মানতে রাজি নয়। এর কারন কি তা আমার বোধগম্য নয়। তবে আমাদের এক সহকর্মী তিনি রসিকতা করে বলেন, তরুন বয়সে রাসুলুল্লাহর (স) সুন্নতকে ভালো বেসে দাড়ি রেখে যেভাবে আমরা প্রগতিশীল তরুনীদের দৃষ্টিতে বার্ধ্যকে পৌছে গেছি, তেমনি চিন্তা আর বিবেকের জড়তায় ভোগা সা¤্রাজ্যবাদের মদদে প্রতিষ্টিত কর্পোরেট হাউজের দালাল ইসলাম বিরোধী মিডিয়ার দৃষ্টিতেও আমরা তরুন নই। তারুন্যের কোন সংজ্ঞাতেই আমাদের কোন স্থান নেই। তরুন বা তারুন্য বলতে যদি এই বুঝানো হয় যে, একদল ছেলে মেয়ে হাতে হাত ধরে, পাশাপাশি বসে দিনে রাতে প্রকাশ্যে বেহায়াপন করে বেড়াবে, অশ্লিল শব্দ আর অঙ্গভঙ্গির মাধ্যমে নিজেদের কে অতিআধুীক ঘরনার প্রমানের চেষ্টা করবে, তাহলে একে তারুন্য না বলে বরং মানসিক বিকাগ্রস্ততা বা একপ্রকার নৈতিক বার্ধক্যতা বলা চলে। কারন তারুন্যের জয়গান হয় সততা আর নৈতিকতার মানদন্ডের নিরিখে। অতি আধুনীকতার নামে নিজেদের পরিবারের পরিমন্ডলের ধর্মীয় চেতনাকে বলি দিয়ে প্রগতির নামে পরচুলা সংস্কৃতিরধারক হওয়াকে বুঝি তারুন্য আর প্রগতি বা মুক্তচিন্তার ধারক বলে সনদ প্রদান করা হয় এবং এদের কেই স্বাধীনতার স্বপক্ষ শক্তি বলে আখ্যায়িত করা হয়। ধর্মকে অস্কিকার করা বা ধর্মের বিরুদ্ধে জয়গান গাওয়া, একে যদি প্রগতি বা তারুন্য বলে প্রচারনা চালানো হয় তাহলে ধরে নিতে হবে এমন তারুন্য দেশ এবং দশের কোন উপকারে আসতে পারে না।

প্রশ্ন হচ্ছে এমন সব তারুন্যকে প্রমোট করার জন্য আমাদের মিডিয়াগুলো উঠে পড়ে লেগেছে কেন এবং সরকারই বা এদের কে উত্তরত সহায়তা করছে কেন ? বাংলাদেশের রাজনৈতিক আকাশে হটাৎ করে এই তারুন্যের জয়গান কেন গাওয়া হচেচ্ছ তার কিছু ধারনা নেওয়া জরুরী।

বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের রাজনৈতিক আদর্শ্যের একমাত্র পন্য হচ্ছে মুক্তিযুদ্ধ বা মুক্তিযুদ্ধের চেতনা। এই চেতনাকে পুজি করেই আওয়ামী লীগ তাদের রাজনৈতিক কর্ম পরিকল্পনা গ্রহন করে। শেখ মুজিবের রাজনৈতিক আদর্শ বলতে যা কিছু রয়েছে তাও কেবল এই মুক্তিযুদ্ধ কেন্দ্রিক ভাবনা বা চেতনার বিকাশ। এই চেতনার নাম দিয়ে আওয়ামী অংগ সংগঠনের সকল অপকর্মকে বৈধতা দেয়া হচ্ছে। নৈতিকতা শূন্য ছাত্রলীগের সকল কর্মকান্ডকে মিডিয়াগুলো কেবল মাত্র মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ধ্বজ্জাধারী হওয়ায় এদের সকল অপকর্মকে কৌশলে ডেকে যাওয়ার চেষ্টা করছে। কিন্তু আমরা যদি একটু গভির ভাবে তাকাই তাহলে আমরা নিশ্চিত হতে পারি যে,আমাদের প্রধান দুটি দলের রাজনৈতিক দলের নেতা নেত্রী- বৃন্দের কাছেও এই চেতনার যুক্তিযুক্ত কোন ব্যাখ্যা নেই। একটি রাজনৈতিক দলের রাজনৈতিক দর্শন বির্নিমানে যে চেতনা সর্বোতভাবে ভুমিকা রাখছে, সেই চেতনার কোন প্রমান শুদ্ধ অর্থ বা ব্যাখ্যা আজো অব্দি আমরা তরুনরা খুজে পাচ্ছি না। তাহলে আমরা কিসের ভিত্তিতে এই চেতনার পুর্নজাগরন চাচ্ছি।

চেতনার এই সামান্য আলোচনার উদ্দেশ্য কেবল এই তথ্যটুকো পাঠক বন্ধুদের সামনে উপস্থাপন করা যে, স্বয়ং শেখ হাসিনাও ভালো করে জানেন না যে, আসলেই স্বাধীনতার চেতনার প্রকৃত অর্থ কি। এ অবস্থায় বর্তমান তরুনেরা কেবল জামায়াত বিরোধীতাকে বা ধর্মবিরোধী পোষ্ট দিয়ে নিজেকে সেক্যুলার প্রমান করাটাকেই স্বাধীনতার চেতনা বলতে বিশ্বাস করতে শুরু করছে। এখানে সরকারের বিশেষ করে আওয়ামী শিবিরে ভাবনা দোলাচল শুর হয়েছে প্রচন্ড ভাবে। তারা বুঝতে পারছেন যে, স্বাধীনতা বিরোধীতার মুলা বেশি দিন চলবে না, কারন স্বাধীনতার পঞ্চাশ বছর পরে এসে স্বাধীনতা বিরোধী বা রাজাকার বলে দল বা ব্যাক্তিবিশেষ কে টার্গেট করার সুযোগ থাকবে না। এরি মধ্যে যুদ্ধকালিন সময়ের ব্যক্তি বিশেষের নামে পরিচালিত প্রচার প্রপাগান্ডা শেষ পর্যায়ে রয়েছে। অন্যদিকে যুদ্ধপরাধ বিচারের মাধ্যমে কিছু লোকের বিচার করার পরে যুদ্ধপরাধীর ইস্যুও শেষ হয়ে যাচ্ছে। হয়তো কয়েক বছর পরে জামায়াত শিবিরের কোন নেতা কর্তাকে রাজাকার গালি দিলে মানহানির মামলায় পড়ার সম্ভবনা থেকে যাবে, কারন স্বাধীনতার পরবর্তি প্রজন্মকে রাজাকার বলে গালি দিয়ে কেউ স্থীর থাকতে পারবে না। এই হিসেবে আওয়ামী লীগের রাজনৈতিক দর্শনের দেউলিয়াপনা ধিরে ধিরে শুন্যের দিকে এগিয়ে যাচ্্েছ। মুক্তিযুদ্ধের চেতনার ফেরিওয়ালার কাধে অন্য কোন চেতনার পন্য জনসাধারনকে খুব সহজে গেলানো যাবে বলে তারা খুব ভালো করে বুঝতে পেরেছেণ। তাছাড়া আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের নৈতিক ভিত্তি এতটা মজবুত নয় যে, তারা সম্পুর্ন খালি হাতে জনগনের কাছে সমর্থন চাইতে পারবে। অতএব প্রয়োজন হচ্ছে আরো একটি যুদ্ধের যেখানে আরো একদল বিরোধীতাকারীর জন্ম হবে এবং সাথে সাথে পাওয়া যাবে কিছু চেতনার তল্পীবাহক যুদ্ধা। এই কাজে সরকার কাকতালীয় ভাবে সাথে পেয়েছে ব্লগার নামধারী কিছু নাস্তিকদের কে। এদের ব্লগিংকে আমরা কলমের সাহায্যে প্রতিরোধ করেছি। কখনো জন সমুক্ষে এসব তুলে ধরার কোন প্রয়োজন মুসলমান ব্লগারর অনুভব করেনি। কিন্তু হটাৎ করে ব্লগারদের পাপের ষোল কলা জাতির সামনে তুলে ধরেছে দৈনিক ইনকিলাব। অথচ সুফীবাদের প্রবর্তক এই দৈনিকটিকে এড়িয়ে গিয়ে সরকার ও নাস্তিক ব্লগারদের টার্গেটে পরিনত হলেন বেচারা মাহমুদুর রহমান। তার কারন সেই একই অর্থ্যাৎ মুক্তিযুদ্ধের চেতনার নামে ফ্যাসিবাদের লালন এবং ভিন্নমত দমনের প্রচেষ্টার বিরদ্ধে কার্যকরী কলম যুদ্ধে অবর্তিন হওয়া। মাহমুদুর রহমানকে ব্যক্তিগত বিদ্ধেষের কারনে হয়রান করা হচ্ছে এমনটি ভাবা ঠিক হবে না, বরং প্রতিবেশী রাষ্ট ভারতের রাজনৈতিক নেত্রবৃন্দের আজন্ম লালিত অখন্ড ভারতে স্বপ্নের পথে যে কয়জন মানুষ মাথা চাড়া দিয়ে উঠেছেন তাদের মধ্যে মাহমুদুর রহমান একজন। আমাদের আলোচনার বিষয় সেটা নয়। আমরা চেতনার নব জাগরনের উদ্ধেশ্য এবং এর অন্তর্নিহীত তাৎর্পয নিয়ে আলোচনা করছি।

স্বাধীনতার চেতনার এই জরাজির্ন দশা, সর্বোপরি এর মেয়াদত্তির্ন অবস্থার পরে প্রয়োজন ছিল আরো একটি চেতনার উদ্ধাবনের। যেখানে হবে একটি নতুন মুক্ত যুদ্ধ, আর এই যুদ্ধের নাম হবে দ্বীতিয় মুক্তিযুদ্ধ। এর নেতৃতে¦্য এমন একটি গ্রুপকে নির্বাচিত করা হবে যারা ধর্মীয় সিমানার বহির্বত হবে এমন নয় বরং একদম এগিয়ে গিয়ে তারা হবে ধর্মের চরম দুষমন। আর এই প্রজন্মের মুক্তিযুদ্ধ হচ্ছে বর্তমান শাহবাগ যুদ্ধ। অবশেষে সরকারের পরিকল্পনা এবং মিডিয়া পরিচালনায় পাওয়া গেল এমন কিছু যোদ্ধা যাদের কে ভবিষ্যতে এই দেশের মিডিয়া শাহবাগ আন্দোলনের যোদ্ধা হিসেবে আখ্যায়িত করবে এবং গতানুগতিক ভাবে ইতিহাসের আরো একটি বিকৃত ধারার উত্থান ঘটবে। জন্ম নেবে কিছু সৈনিকের। আমরা আশা করছি ভবিষ্যতে এই যোদ্ধাদের বিভিন্ন নামে আখ্যায়িত করা হবে। কেউ হবেন শাহবাগ যোদ্ধা, কেউ হবেন শ্লোগান কন্যা ইত্যাদি। বরাবরের মতোই এই যোদ্ধাদের জন্য একটি বিরোধী ফ্রন্টের প্রয়োজনীয়তা অত্যাধিক, এই প্রয়োজনীয়তাকে উপলদ্ধি করেছেন আওয়ামী লীগ থেকে শুরু করে বাংলাদেশের সুশীল মিডিয়ার মান্যবররা। এদের হাতে জন্ম নিয়েছে আরেকটি মুক্তিযুদ্ধের বিরোধী শক্তি, বরাবরের মতো এই শক্তিও হতে হবে ইসলামী কোন শক্তি।

অতএবং যেহেতু নতুন মুক্তি যোদ্ধা পাওয়া গেল তখন প্রয়োজন হয়ে পড়েছে আরো একটি নতুন স্বাধীনতা বিরোধী গোষ্ঠির। এই স্বাধীনতা বিরোধী চরিত্র যদি রুপায়ন না করা যায় তাহলে গোটা চেতনার স্কিমই মাঠে মারা যেতে পারে। এই পরিকল্পনার অংশ হিসেবে সম্পুর্ন অগতান্ত্রিক ভাবে, জেল জুলূমের স্ট্রিম রোলার চালিয়ে জামায়াত শিবিরকে বাধ্য করা হচ্ছে রাজপথে সহিংস আন্দোলনে। স্বাভাবিক রাজনৈতিক অধিকার ভোগ করতে না পারা জামায়াত শিবিরের ছেলেরা ক্রমেই সামনে এগিয়ে এসেছে। দেয়ালে পিঠ ঠেকে গেলে যা হয় আর কি। আওয়ামী লীগ অতি সংগোপনে, নিজেদের প্রয়োজনে জামায়াতকে সহিংস হতে বাধ্য করছে। আর এই চোরাগুপ্তা পথে আবারো হোচট খাচ্ছে বাংলাদেশ জামায়াত ইসলামী। এভাবে পুর্বেই মতোই আওয়ামী লীগের চেতনার অনলে তুষের ভুমিকা নিতে হচ্ছে জামায়াত ইসলামী কে। আর স্বভাবতই নতুন মুক্তিযুদ্ধ বা শাহবাগ বিরোধী ব্যাক্তি বা দলকে রাজাকার উপাধি দিতে আইনি ঝামেলায় পড়ার সম্ভাবনাও থাকবে না বললেই চলে। অতএব নতুন মুক্তিযোদ্ধা পাওয়া গেল, সাথে আছে নতুন স্বাধীনতা বিরোধীও, এভাবে বেচে যাবে দেশের মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার অফিস এবং তাদের আশ্রয়ে থাকা পরিবার গুলো। ভোগ করতে পারবে রাষ্টের যত অনৈতিক কোঠা সুবিধা। চলতে থাকবে চেতনার শ্লোগান। এই চোরা ফাদেঁ নতুন প্রজন্মের আধূনীক যুবক যুবতিরা পড়বে কিনা তা কেবল দেখার বিষয়। তবে ইসলামী মাইন্ডের তরুন যুবকদের কে কোন অবস্থায় তারুন্যের কাতারে রাখা সম্ভব হবে না এদের কে জাতীর দুষশন হিসেবে প্রমানিত করার কাজে ব্যায় হবে দেশের তাবৎ মিডিয়া শক্তি। অবশেষে দেশকে বিভক্ত করে সা¤্রাজ্যবাদের দালালরা তাদের আখের গুছিয়ে নেবে। অন্যদিকে সাধারন পাবলিক কেবল চেতনার মালা হাতে নিয়ে অপেক্ষা করবো কোন লুটেরা এবং দুর্নিতীবাজ লম্পটের আর্শিবাদের জন্য। এভাবেই পুর্ণতা পাবে নতুন চেতনার ষোলকলা। জয়তু চেতনার জয়।

বিষয়: রাজনীতি

১১১১ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File