প্রকাশ্যে শরীয়াতের দণ্ড কার্যকর করা কি বর্বরতা।
লিখেছেন লিখেছেন স্বপ্নতরী ২০ ফেব্রুয়ারি, ২০১৩, ০৮:০২:৫৯ রাত
আমাদের এক ভাই একটি লিংক দিয়েছেন এবং আমার মতামত জানতে চেয়েছেন।
লেখাটি পড়তে এখানে ক্লিক করুন। দেখুন মুসলমানদের নেতৃত্ব্যের পরিচয়ে কি হচ্ছে।
যদিও আমার জ্ঞানের সংকির্নতা অনেক বেশি পরিমানে। কিন্তু তিনি যেহেতু আমার কাছে জানতে চেয়েছেন সেহুতু আমার... কাছে রক্ষিত খোদাতায়ালার দেয়া কিছু জ্ঞান থেকে আমি তার সংক্ষিপ্ত জবাব দেয়ার চেষ্টা করছি। কারণ তিনি প্রশ্নের মাঝে আমাকে একটি ওয়াজিব পালনের সুযোগ দিয়েছেন। কারো প্রশ্নে উত্তর জানা থাকলে তার জবাব দেয়া ওয়াজিব। তার চাইতে আর জালেম কে হতে পারে যার কাছে আল্লাহ পক্ষ থেকে সত্য পোছার পরেও তাকে গোপন করে।
প্রাথমিক ভাবে একটি কথা জেনে রাখুন, কোরআনের বিধান কোন মানুষের তৈরি নয় যে,এর প্রয়োগ নীতিমালায় ভবিষ্যতের সামজিক বির্বতনের দিকে খেয়াল রাখার সুযোগ ছিল না। মানুষ এই দুর্বলতায় ভোগে, কিন্তু মহাপরাক্রমশালী আল্লাহ সুবহানুহু ওয়া তায়ালা সকল যুগ যুগান্তরের গতি বিধি পর্যালোচনা করে সকল মানুষের জন্য সেই বিধান নির্ধারন করে দিয়েছেন যা মানুষের জন্য কল্যাণকর। শুধু বিধান দিয়েই তিনি বসে থাকেননি, সাথে সাথে একজন বিশেষজ্ঞ পাঠিয়েছেন যিনি সেই বিধান কে প্রয়োগ করার নীতিমালা শিখিয়ে দেবেন বাস্তবিক উপায়ে। শুধু মাত্র থিউরী প্রকাশ করলেই হতো না বরং সাথে সাথে তাকে প্রয়োগ করে তার প্রয়োগ নীতিমালাও বাস্তবায়ন করে দেওয়া একজন নবীর কাজ ছিল। এই দায়িত্ব্য পালনে নবী করিম (স) একটুকোও কার্পন্য করেননি এবং খোদাতায়ালার ইচ্ছার বাইরে গিয়ে নিজের ইচ্ছায় কোন একটি ধাপও কাযেম করেননি বরং তিনি অহীর পূর্ণাঙ্গ বাস্তবায়ন করেছেন। এ কারনে নবীর প্রতিটি কথাকে অহী হিসেবে বিবেচনা করা হয়। আর এ কারনেই আহলে সুন্নাত ওয়াল জামায়াতের মতে নবীরাই সত্যের মাপকাঠি হন।
যার লেখার লিংক আমাকে দেওয়া হয়েছে তাকে আমি ব্যক্তিগত ভাবে না চিনলেও তার লেখা থেকে হাদিস বিরোধীদের দুর্গন্ধ পাচ্ছি। হাদিসের কোন কোন বর্ননার যাচাই বাছাই করার সুযোগ যদিও আছে কিন্তু হাদিসকে যাচাই বাছাই করে মেনে নেওয়ার কোন সুযোগ নেই। রাসুলের কথা ও কাজ হিসেবে প্রমানিত যে কোন হুকুমকে মেনে নেওয়া ঈমানদার হওয়ার শর্ত। শুধু মেনে নিলে হবে না বরং সর্বান্তকরনে মেনে নিতে হবে, অন্তরে কোন প্রকার দ্ধিধা রাখা যাবে না।
এবার আসুন প্রকাশ্যে শিরচ্ছেদ প্রসঙ্গে।
প্রত্যেক অপরাধের একটি মৌল ভিত্তি হচ্ছে মানুষের মানবিক দর্বলতা। আখেরাতে এই দুর্বলতা জনিত অপরাধের পরিণতী যদি মানুষ দুনিয়ায় দেখতে পেতো তাহলে দুনিয়ার কোথাও অপরাধ সংঘটিত হতো না। অপরাধীর সাজা যদি দুনিয়ার কারো সামনে অপরাধের পরিণতীর কথা স্মরন না করিয়ে দেয় তাহলে সেই অপরাধের শাস্তি প্রদানে অপরাধীর সাজা হলেও সমাজ ও রাষ্টের কোন কল্যাণ হতে পারে না। কারণ সাজা দেয়া হয়ে থাকে অপরাধ নির্মুল করার জন্য। আর সাজা যদি এমন হয় যেখানে যিনি সাজা পাচ্ছে তিনি ছাড়া আর কেউ এর ফলাফল দেখতে পাবে না তাহলে অপরাধের পরিণতীর চিত্র বা ভয়বহতা সমাজের কাছে গোপন থেকে যায়। এভাবে অপরাধ নির্মূল হয় না বরং দুচার জন্য অপরাধী নির্মূল হয়। ইসলাম অপরাধী নির্মুলের চাইতে অপরাধ নির্মলে বিশ্বাস করে। একারনে দেখা যায় বিশেষ বিশেষ ক্ষতিকর অপরাধের ক্ষেত্রে প্রকাশ্যে দণ্ড কার্যকরে বিশেষ বিধান রাখা হয়েছে। এর উপকারীতা প্রকাশ্য রয়েছে যা আমরা দেখার সুযোগ পাচ্ছি না।
লেখকের কোরআন হাদিসের জ্ঞানের স্বল্পতা কত বিরাট আকারে রয়েছে তার কিছু প্রমান তিনি তার লেখার মাঝেই দিয়েছেন। আমি যদি তার লেখাটি নিয়ে যুক্তিযুক্ত জবাব দিতে চাই তাহলে হয়তো আরো একটি ধারাবাহিকের কাজে হাত দিতে হতে পারে। অথচ আমার হাতে কোন সময় নেই। তারপরেও কিছু সংক্ষিপ্ত জবাব দেওয়া ইচ্ছে করছে।
তিনি লিখেছেন-“আহত ব্যক্তি বা নিহতের পরিবার যদি অভিযুক্তকে ক্ষমা করে তবে রাষ্ট্র তাকে কোন শাস্তি দিতে পারে না। (২) আহত ব্যক্তি বা নিহতের পরিবার যদি টাকা নিয়ে ক্ষমা করে তবে রাষ্ট্র কোন শাস্তি দিতে পারে না।
(৩) এ দু’টোর কোনটিতে আহত ব্যক্তি বা নিহতের পরিবার রাজী না হলে খুনের জন্য ‘‘জনসমক্ষে শিরচ্ছেদ”- কার্য্যকর হবে। এজন্যই আমাদের রাষ্ট্রপতি সৌদি বাদশাকে খুনীদের ক্ষমা করার অনুরোধে যে চিঠি দিয়েছিলেন তা ছিল ভিত্তিহীন।
সুরা বনি ইসরাইল আয়াত ৩৩ মোতাবেক নিহতের পরিবারের এই অধিকার অত্যন্ত মানবিক বিধান যা ওই গোত্রীয় সমাজে চমৎকার কাজ করেছে। পক্ষান্তরে বাংলাদেশে আমরা দেখতে পাই তোষামদি, সুপারিশ, ধড়পাকড় বা দলীয় ক্যাডার হলে রাষ্ট্রপতি এমনকি মৃত্যুদণ্ড প্রাপ্ত খুনীকেও ক্ষমা করে দিচ্ছেন। এটা অত্যন্ত মর্মান্তিক বিধান। যাদের নিরপরাধ পিতা-মাতা, ভাই-বোন, পুত্র-কন্যা নিষ্ঠুরভাবে খুন হল তাদেরকে জিজ্ঞাসা পর্য্যন্ত করা হল না অথচ রাষ্ট্রপতি সেই খুনীকে ক্ষমা করে কারামুক্ত স্বাধীন করে দিলেন, এটা নিহতের পরিবারের মনে কেমন লাগবে? এই অত্যন্ত অমানবিক বিধানটা অনেক ধর্মনিরপেক্ষ গণতান্ত্রিক দেশে আছে। ”
ইসলামী আইন শ্রাস্ত্রের বিধান নিয়ে লেখার আগে ভদ্রমহোদয়োর উচিত ছিল এ বিষয়ে কিছু পড়া লেখা করা। অথচ বেচারাদের মুর্খতার নমুনা দেখুন, তারা ধর্মীয় বিষয় নিয়ে মন্তব্য বা আর্টিকেল লিখার আগে এই বিষয়ে পড়া শুনার দরকার মনে করছেনা। বর্তমান প্রগতিশীল আর বিজ্ঞান পুজারী মানবতাবাদীদের এই এক সমষ্যা দাড়িয়েছে। তারা বিজ্ঞান সম্পর্কে ভাসা ভাসা জ্ঞান নিয়ে কোন মন্তব্য করাটাকে র্নিবুদ্ধিতা মনে করে অথচ ধর্ম এত হালকা বিষয় যে, তারা এ বিষয়ে কোন মন্তব্য করার আগে ভাসা ভাসা জ্ঞান অর্জনও প্রয়োজন মনে করেনা। তিনি কি করে বুঝতে চাইলেন না যে, ইসলাম রক্তপন নেয়ার ক্ষমতা কেবল মাত্র মৃতের ন্যায় সংগত অলীকে প্রদান করেছে। রাষ্টপ্রধানের খুনীকে ক্ষমা করে দেয়ার বিধান ইসলামের কোথাও নেই।
ইসলাম যদিও গোত্রের যুগে প্রতিষ্টিত হয়েছে কিন্তু তার আহ্বান গোটা দুনিয়ার প্রতিটি মানুষের জন্য এবং কেয়ামত পর্যন্ত আগত কোন মানুষ তাদের গোমরাহীর জন্য আল্লাহ তায়ালাকে দায়ী করতে পারবে না। তারা কোন অবস্থায় এই অভিযোগ করতে পারবে না যে, “আজকে আমাদের কে কেন কুফরির অপবাদ দিচ্ছেন অথচ আমাদের জন্য বিশুদ্ধ কোন আইন বিধান কায়েম করতে পারেননি। আমাদের কে আমাদের বিবেকের ওপর ছেড়ে না দিয়ে কোরআনকে সার্বজনিন করতে পারলেন না কেন। কেন কোরআনকে কেবল আরবের গোত্র আর বর্বর লোকদের জন্যই নির্দিষ্ট করে নাযিল করলেন। কেন আমাদের মতো আধূনীক বিজ্ঞান মনস্ক মানুষদের জন্য চির শ্বাশ্বর কোন হেদায়েত গ্রন্থ্য নায়িল করলেন না। কেন নবীকে কেবল তার সমকালিন মানুষের সমষ্যা নিয়ে চিন্তুা করা শিখালেন। অথচ তাকে কেয়ামত পর্যন্ত আগত মানুষের নবী হিসেবে উপস্থাপন করেছেন। কেন তাকে এমন বিজ্ঞান সম্মত পদ্দতি শিক্ষা দিলেন না যা আমাদের মতো আধুনীক বিজ্ঞান পুজারীদের কাছে গ্রহণযোগ্য হতো। এসব প্রশ্নের মুখোমুখি হওয়ার হাত থেকে আমার আল্লাহ অনেক আগেই নিজেকে হেফাজত করে নিয়েছে। তিনি বলেছেন যে, এই কোরআন গোটা মানুষের জন্য আমি নাযিল করেছি এবং একে আমিই হেফাজত করবো। যদি কোরআন হেফাজতের দায়িত্ব্য নিজের কাধে না নিতেন তাহলে পরবর্তি প্রজন্মের গোমরাীর জন্য উপরোক্ত প্রশ্নের জবাব দেয়া কঠিন হয়ে পড়তো। তাছাড়া নবী ও তার সত্যাশ্রয়ী খলিফাদের কর্মনীতি আজো আমাদের সামনে এত সুন্দর ভাবে গচ্ছিত রয়েছে যে, ইসলামী শরীয়াতের প্রয়োগ নীতিমালা কেন মানুষের গোটা জীবনের প্রসাধ নির্মানে হেদায়েতের জন্য একটুও পেরেশান হতে হবে না। এখানেও মহান আল্লাহ তার কুদরতী হস্তক্ষেপ ঘটিয়েছেন। অথচ বেচারা লেখকের দৃষ্টিতে র্ধমগুরুরা সেই ভুল করেছেন এবং নারীর অধিকার হরনে ভূমিকা নিয়েছে। ধর্মগুরো বলতে তিনি কাদের বুঝেন আল্লাহ মালুম।
তিনি লিখলেন-(২) আহত ব্যক্তি বা নিহতের পরিবার যদি টাকা নিয়ে ক্ষমা করে তবে রাষ্ট্র কোন শাস্তি দিতে পারে না।
তিনি আরো লিখেছেনÑ“(৪) বাংলাদেশের মত মুসলিম-প্রধান দেশে এ আইন চালু হলে গরীবের ওপর কেয়ামত নেমে আসবে। কারণ এসব দেশে অসংখ্য অত্যাচারী খুনী গজিয়েছে যাদের টাকাপয়সা অঢেল, যারা হিংস্র বাহিনী পোষে, যাদের রাজনৈতিক যোগাযোগ আছে এবং যারা নিজ এলাকায় মহাসম্রাট। এরা অনায়াসে খুন করে নিহতের গরীব অসহায় পরিবারকে টাকা দিয়া বা হুমকি দিয়ে ‘‘মাফ” করতে বাধ্য করবে, রাষ্ট্র বা শারিয়াপন্থীরা সেখানে কিচ্ছু করতে পারবে না।
(৫) অনেক শারিয়া আইনের মত মাফ করার এ আইনও চরম নারী-বিরোধী। প্রমাণঃ - ‘‘নিহতের পুত্র থাকিলে কন্যা মাফ করিতে পারিবে না” - শারিয়া দি ইসলামিক ল’ - ডঃ আবদুর রহমান ডোই –
পৃষ্ঠা ২৩৫। ‘‘মাফ করিতে পারিবে না’’ মানে কন্যারা বাবার রক্তপণ দাবী করতে পারবে না। আল্লার আইন এটা ? ধিক্ !! ”
অথচ শরীয়া আইনের প্রতিটি কিতাবে স্পষ্ট করে লিখা রয়েছে যে, খলিফা ইচ্ছে করলে যে কোন ব্যক্তির অপরাধের মাত্রা বিবেচনায় নিয়ে তাকে হত্যার আদেশ কার্যকর করতে পারেন যদিও মৃতের অলী রক্তপন নিতে প্রস্তুত হয়। তার এই আনুমানিক কেয়ামতের ধারণা কতটা অসার যে, তিনি রক্তপনকে কায়েম করার বিরোধীতা কেবল এই কারনে করছেন যে, বাংলাদেশে টাকার বিনিময়ে মানুষ খুন বেড়ে যাবে এবং খুনের পরে টাকার বিনিময়ে মুক্তি পেয়ে যাবে। তার এ বিষয়ে ধারণা নেই যে, ইসলাম এই পথ বহু আগেই বন্ধ করে দিয়েছে। কোন ব্যক্তির অপরাধ যদি ইচ্ছাকৃত হয় এবং তিনি রক্ত পনের বিনিময়ে এর আগে ছাড়া পেয়ে থাকেন তাহলে এই ব্যক্তি দ্বীতিয়বার রক্তপনের সুযোগ গ্রহণ করতে পারেন না কারণ খলীফা এই বিষয়ে হস্তক্ষেপ করবেন। রাষ্ট্র এ জাতীয় ব্যক্তিদের কে রক্তপন দেয়ার সুযোগ দেবে না। অপরাধীকে তার চুড়ান্ত শাস্তী পেতে হবে।
অন্যদিকে অতিমাত্রায় নারীবাদি হওয়াতে তার মনে এ উপলদ্ধিটুকো হলো না যে, একটি পরিবারের প্রধান হিসেবে ইসলাম পুরুষকে কিছু দায়িত্ব্য ও কর্তব্য বন্টন করে দিয়েছে। এ হিসেবে পুরুষের নৈতিক দায়িত্ব্য হচ্ছে তার গৃহের প্রত্যেকের হেফাজতের জন্য দায়িত্ব্য পালন করা। অন্যদিকে মেয়েরা সব সময় আবেগী হয়। তারা আবেগ আর জোক প্রবনতার ভিতরে স্বিদ্ধান্ত নিতে পারে। তাদের স্বিদ্ধান্তে প্রচুর ভুল হবার সম্ভবনা থেকে যায়। যে নবীর প্রতি তিনি ঈমানদার বলে প্রচার করছেন সেই নবী নিজেও বলে গেছেন নারীদের বুদ্ধিমত্তা আর জ্ঞানের কিছু সংকির্নতা রয়েছে। তাছাড়া কোন ঘরের কর্তা বেচে থাকতে রক্ত পনের মতো একটি গুরুত্ব্যর্পুন বিষয়ে মেয়েরা স্বিদ্ধান্ত নিতে যাবে কেন। এরা নারী অধিকারের পক্ষে কথা বলে অথচ লজ্জা বোধ থাকলে নারী অধিকারের বিষয়ে ইসলামের সমালোচনা করার আগে একবার নিজেদের চেহারা আয়নায় দেখে নিতো। প্রগতি আর আধুনীকতার নামে তারা নারী জাতিকে বহুজাতিক কোম্পানীর পন্যে রূপান্তরিত করেছে। তাদের তাবেদার সমাজ ব্যবস্থা নারীকে স্বাধীনতার নামে পরাধীন করেছে। তার ন্যায্য অধিকার থেকে তাকে বঞ্চিত করেছে। অথচ যত দোষ সেই ইসলামের ঘারে।
তিনি এক জায়গায় লিখছেন-“শারিয়া আইনে গোত্রীয় প্রভাব প্রবল, এ আইনটা হয়ত সেই সময়ের বর্বর সমাজের উপযোগী করে দেয়া হয়েছে যেখানে ‘‘জনসমক্ষে শাস্তি” একটা কার্য্যকর প্রথা ছিল। এখন মানবাধিকার সচেতন দুনিয়ার প্রেক্ষাপটে এটা অবশ্যই একটা বর্বর প্রথা। তাছাড়া এ প্রথা খুন-জখম কমাতে সম্পুর্ণ ব্যর্থ হয়েছে। যাঁরা এ আইন দিয়ে খুন কমানোর স্বপ্নবিলাসে ভোগেন ও এ আইনের বিরোধীদেরকে গালাগালি করেন তাঁদের জানা উচিত এ বছর অক্টোবর পর্য্যন্ত ‘‘জনসমক্ষে শিরচ্ছেদ”-এর সংখ্যা ওই সৌদি আরবেই ৫৬ জন, এবং এ সংখ্যা গত বছরের দ্বিগুনেরও বেশী ছাড়িয়ে গেছে - (বি-বি-সি)। তাহলে আর ‘‘জনসমক্ষে শাস্তি” দিয়ে ইসলাম ও মুসলমানের ভাবমুর্তি নষ্ট করা ছাড়া লাভ কি হল।
”
শরীয়া আইনের এমন সহজ সরল ব্যাখা দেওয়ার সময় ভদ্রলোকের মনে ছিলনা যে, এই আইনটি কোন মানুষের তৈরি ছিল না যারা ভবিষ্যত প্রজন্মের জোক প্রবনতা বা আচার আচরনে অতিমাত্রায় আধুনীক হবার বিষয় সম্পর্কে কোন খবর রাখতেন না। তার মনে এক মুহুর্ত্যরে জন্য এই সাধারন বিষয়টি কেন আসলো না যে, গনতন্ত্র নামের কুফরী শক্তির গর্ভ থেকে ভূমিষ্ট হওয়া মানুষের মানবিকতা এবং বিজ্ঞান সম্মত (?) আইন কানুন গোটা দুনিয়ার গরিবদের কে আইনের খেলনার বস্তুতে পরিণত করেছে। তাদের তৈরি আইনের ফায়দা কেবল শাষক আর মহাজন গোষ্টি ভোগ করেছে। এই আইনের কবলে পড়ে প্রতিনিয়ত কত লক্ষ খুন আর ধর্ষনের বিচার আদালতের টেবিলে জমা পড়ে আছে তার কোন ইয়াত্তা নেই। অথচ মাত্র ষাট জন হত্যাকারীর দৃশ্য বেচারার মনে মানবতা বোধের জন্ম দিয়েছে। এই ধরনের মানবতাবাদীরা যখন কোন আইন কায়েম করে নেয় সেখানে কেবল মাত্র ধনীক শ্রেণীর লোকেদের ফায়দা হয়। অথচ আল্লাহর আইন প্রতিটি মানুষের মৌলিক অধিকার কে রক্ষা করেছে। এদের মানবতাবাদী বিজ্ঞান সম্মত আইনে নারীর অধিকার এমন পর্যায়ে পৌছেছে যে, যে কোন নারী ইচ্ছে করলে তার স্বামীর সামনে দিয়ে বয় ফ্রেন্ডের সাথে রাত যাপন করতে পারে। নাউজুঃ) আমার কাছে অবাক লাগে তারা এসব বিষয় কে মানবিক দৃষ্টিতে দেখতে পারছে না কেন। নিজের প্রিয়তম স্ত্রী যদি অন্যের বিছানায় স্বেচ্ছায় যেতে চায় তখন এই ভদ্রলোকের কিছু বলার থাকে না কারণ তার মানবতাবাদী, আধুনীক, বিজ্ঞান সম্মত আইন তাকে সেই অধিকার দেয় না বরং নারীকে অধিকার দিয়েছে যা ইচ্ছে তাই করার। এই পন্থায় গোটা সমাজে এক অস্থিরতা কায়েম করে দেওয়া হয়েছে। এই অস্থিরতার ফলাফল আমরা অবলোকন করছি গোটা ইউরোপ জুড়ে। সেখানে প্রতিদিন হাজারো ধ্বর্ষণ আর খুনের ঘটনা ঘটছে। আর তালাকের কথা নাই বা বলা হলো। এই যদি হয় মানবতা আর আধূনীকতার নমুনা, তাহলে যুক্তির বিচারে ইসলামী শরীয়া আইন প্রামানিক বিশুদ্ধ আইন বলতে কারো সমষ্যা হবার কথা নয়। অথচ নব্য মুজতাহীদরা ইসলামী আইন শ্রাস্ত্রের কোন যুক্তি সংগত সমালোচনা না করে কেবল বর্বর আখ্যায়িত করে যাচ্ছে। তাদের কাছে এখন মৃত্যুদণ্ডই বর্বরতা। ভাবখানা এমন যেন, খুনের বদলা কেবল জেল দিয়ে মিটানো যেতে পারে। এভাবে তারা খুনের লাইসেন্স দিয়ে দিয়েছে। যার পরিনতি গোটা ইউরোপ এখন উপভোগ করছে।
সব শেষে তিনি তার খোলষ ছেড়ে বের হয়েছেন। এতক্ষন যদিও তিনি ইসলাম আর মুসলমানদের কল্যানকামী সেজে বয়ান করেছেন, কিন্তু তার ভূমিকা তিনি নিজেই ঠিক করতে ব্যর্থ হয়েছেন। এতক্ষন তিনি মুসলিম আর ইসলাম দরদি সেজেছেন কিন্তু কথা বলছেন কাফেরের ভূমিকায়। সমষ্যা হতো না যদি তিনি প্রকাশে নিজেকে ইসলাম থেকে খারিজ করে নিয়ে প্রবন্ধ লিখতেন। এবাবে তিনি কয়েকটি সুবিধা নিতে পারতেন। আমরা মনে করতাম অমুসলিমরা আমাদের ধর্মের সমালোচনা করতেই পারে। কিন্তু আমাদের সেই আশায় গুড়ে বালি দিয়ে তিনি কত নির্লজ্ঝ ভাবে তিনি লিখছেন-
‘(৭) সবচেয়ে বড় কথা এবারে বলি। সমাজের বিবর্তন একটা প্রবল বাস্তব, সেই বিবর্তনের সাথে সাথে মূল ইসলামি মুল্যবোধ বজায় রেখে সামাজিক আইনগুলো বিবর্তন করার চমৎকার নির্দেশ এবং অনেক প্রমাণ আছে কোরাণে, আছে রসুলেও। কোরাণ-রসুলের সেই গুরুত্বপুর্ণ নির্দেশ লংঘন করেছেন শারিয়া-গুরুরা। কারণ তাতে ইসলামে নামে নারী-নিপীড়ন বন্ধ হয়। সেই সমাজে পাথর বা তলোয়ার ছাড়া অপরাধীর মৃত্যুদণ্ড কার্য্যকর করা সম্ভব ছিল না কিন্তু আমরা সেই যুগে বাস করি না। এখনকার মানবাধিকার সচেতন পৃথিবীতে ‘‘জনসমক্ষে শিরচ্ছেদ” বর্বরতা ছাড়া আর কিছু নয়।’
একজন জ্ঞানীর নমুনা দেখুন আর ভাবুন। তিনি এমন একজন ব্যক্তিকে নিজের রাসুল হিসেবে মেনে নিয়েছেন যিনি তার যুগে মানুষের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করার মতো কোন উত্তম পদ্ধতির খোজ করতে ব্যর্থ হয়েছেন যা আজকে আমাদের প্রগতিশীল বন্ধুরা অনাশায়ে করে ফেলেছেন। তারা এমন এক ব্যক্তি কে রাসুল হিসেবে মানেন যিনি কোন বিষয়ে সঠিক স্বিদ্ধান্ত নেওয়ার জন্য তার খোদাতায়ালার কাছে কোন সাহায্য চাইতে পারেন না। আর তার খোদাও এমন যে, মানুষের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করার জন্য উত্তম কোন পদ্ধতি তার রাসুলকে দিতে ব্যর্থ হয়েছেন। কারণ তিনি জানতেন না যে, কোন পদ্ধতিতে মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করলে মানুষের সমাজে খুনের প্রকোপ কমবে। তিনি বোধহয় এও জানতেন না যে, প্রকাশে দণ্ডকার্যকর করা সব দেশের জন্য সমান ভাবে প্রযোজ্য নাও হতে পারে। ভুত ভবিষ্যতের কোন ঘটনা পর্যালোচনা করে বিধান দেয়ার কোন ক্ষমতাই ভদ্রলোকের খোদাতায়াল নেই। এবার বলুন তো এমন খোদা ও তার নবীর প্রতি ঈমান রাখা কোন ঈমানদারের কথায় আমার প্রভাবিত হওয়ার সুযোগ আছে কি ? এমন ঈমানদার ব্যক্তিরা যদি ইসলাম ইসলাম বলে মুখে ফেনা তুলেও ফেলে তাহলে ইসলামের না কোন কল্যাণ হতে পারে আর না কোন অকল্যান হতে পারে। এদের উচিত হবে নিজেদের ঈমান নিজেদের কাছেই রাখা, আমাদের কাছে জ্ঞানের বুলি ফেরি করে বেড়ানোর কোন প্রয়োজন নেই। কারণ আমরা তাদের মতো ঈমানদার নই। বরং আমরা এমন একজন রাসুলের প্রতি ঈমান রাখি যিনি মহাপরাক্রমশালীর পক্ষ থেকে হেদায়েতের সেই পথ দেখিয়েছেন যা নির্ভূল এবং বিশুদ্ধ। আমার এমন এক খোদার গোলামী করে তার আইন বিধানকে পালন করি যিনি মানুষের ভুত ভবিষ্যতের প্রতিটি অনুর খবরও জানতেন এবং কেয়াতম পর্যন্ত প্রতিটি পদক্ষেপের যে ছাঁপ মানুষ জমিনে রেখে যাবে তার নমুনাও তিনি জানেন।See More
বিষয়: বিবিধ
১২৫০ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন