ফেরাউনের হাতে মুসার অনুশারী মার খাবে না তো কি পীর সাহেব চরমোনাইর অনুশারীরা মার খাবে ?

লিখেছেন লিখেছেন স্বপ্নতরী ০৩ সেপ্টেম্বর, ২০১৩, ০৮:২০:৪২ রাত

মুফতি ওয়াক্কাস সাহেব কে গ্রেফতার করা হয়েছে এটা পুরান খবর, নতুন খবর হলো তাকে রিমান্ডে নেওয়ার জন্য আদালতে উপস্থিত করা হয়েছে। কুড়ি দিনের রিমান্ড চাওয়া হয়েছে। তার পক্ষ থেকে অনর্থক জামিন চাওয়া হয়েছিল বিধায় জামিন ও রিমান্ড শুনানী অনুষ্টিত হবে নয় সেপ্টেম্বার। হয়তো বাবুনগরীর ভাগ্য বরন করতে হতে পারে।

আমার কিছু বিষয় যখন বুঝে আসে না তখন ফেসবুকের মাধ্যমে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করার চেষ্টা করি। ওয়াক্কাস সাহেবের সংগঠন ততটা শক্তিশালী নয়। সারা দেশে এই সংগঠনটির কোন তৎপরতা নেই বললেই চলে। কয়েকটি মাদ্রাসা আর মুষ্টিমেয় কিছু ভক্ত নিয়ে তার সংগঠনটি দাড়িয়ে আছে। এ জাতিয় একটি সংগঠন সরকার বা হাসিনা কারো জন্য হুমকির কারণ হতে পারে এমনটি সম্ভবত ওয়াক্কাস সাহেব নিজেও বিশ্বাস করবেন না। তাহলে তার গ্রেফতারে সরকারের অর্জন কি হতে পারে ?

মুফতি ওয়াক্কাস সাহেব মুলত কওমী ঘরনার অতি পরিচিত একজন মানুষ। ওলামায়ে দেওবন্দের খালেস অনুশারী। জামায়াত শিবিরের সাথে তাদের দুরত্ব্য সেই পুরনো যুগের বিষয়। আমল আর আখলাকে তাদের অবস্থাও কওমী ঘরনার অন্য চারজনের মতো। তাদের আকীদা বিশ্বাসও খারাপ না। মোটামোটি সহিহ আকীদার দাবিদার তারা। তারপরে সরকার তাদের কে সহ্য করতে পারছে না। তাহলে তাদের দোষ কি ছিল।

রিমান্ডের আবেদনে পুলিশ দাবি করেছে হেফাজতের ঢাকা অবরোধ সহ হেফাজতের কর্মীদের দ্বারা সংগঠিত সহিংসতার সাথে তিনি ও তার দল প্রত্যক্ষভাবে জড়িত। পুলিশের জানা দরকার কোন সেই শক্তি যার কারনে তারা এত বড় শো ডাউন করার সাহস পেলো। ইসলামের এমন খাদেমের শাষন আমলে তারা কি করে ইসলাম কে নিয়ে ষরযন্ত্র করার সাহস পেলো। কে তাদের কে অর্থ আর সমর্থন জোগান দিয়েছে। আমি জানি যে, পুলিশ হেফাজত নেতাদের কে একের পর এক মিথ্যে মামলায় হয়রানী করার জন্য প্রায় তিরিশটি মামলা করেছে। এসব মামলায় বাবু নগরী সাহেব কে ব্যাপক নির্যাতন করে তার পায়ে পচন ধরিয়ে দেওয়া হয়েছে। অতঃপর মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ার আশংকা তৈরি হলে নজির বিহীন ভাবে প্রসিকিউশানের পক্ষ থেকে আসামী পক্ষ কে জামিন আবেদন করার অনুরোধ জানানো হয়। বিষয়টি সবাই জানেন।

মুফতি ওয়াক্কা কখনো দাবি করেননি যে, তিনি ও তার দলের কয়েক লক্ষ কর্মী হেফাজতের কর্ম কান্ডে শরীক ছিলেন। অথবা তিনি এও দাবি করেননি যে, তাদের কোন কর্মী হেফাজতের অবরোধে শহীদ হয়েছে। কিন্তু পীর সাহেব চরমোনাই তার বিভিন্ন বক্তৃতা আর বিবৃতির মাধ্যমে বার বার দাবি করেছেন যে, হেফাজতের লক্ষ লক্ষ কর্মী বাহিনীর অধিকাংশই ছিল তাদের, এমনকি তাদের তিন জন কর্মী শহিদ হয়েছে বলেও তিনি দাবি করছেন। তার শাগরেদ যারা ফেসবুকে মাঝে মাঝে বিভিন্ন ইশঠেটাসে বোমা ফাটাতে স্বিদ্ধ হস্ত তারা তো এসব দাবি করতে করতে মুখের ফেনা তুলে ফেলেছেন। কিন্তু কেউ কি আমাকে একবারও বলতে পারবেন যে, হেফাজতের বিরুদ্ধে যতগুলো মামলা হয়েছে এবং সেই মামলা গুলোতে হেফাজতের যতজন নেতাকর্মীকে গ্রেফতার করা হয়েছে তাদের মধ্যে পীর সাহেবের নেতা কয়জন আছেন ? এসব মামলায় পীর সাহেব চরমোনই বা তার দরের প্রথম সারীর কোন নেতা কি রয়েছেন ?

হেফাজতের কর্মকান্ডের পক্ষে এত বড় খেদমত করার পরেও পীর সাহেবের কোন নেতার বিরুদ্ধে ফেরাউনের সরকার একটি মামলা দুরে থাক সাধারন ডাইরিও করার দরকার মনে করেনি। তার কারণ গুলো কি তা আমাদের ভেবে দেখতে হবে।

জামায়াত শিবিরের ছেলেরা অধিকাংশ নাকি দাড়ি রাখেনা, তাদের কেউ সুন্নাতী পাঞ্জাবী পড়ে না, মাথায় পাগড়ি দেওয়ার তো ইতিহাসই নাই। তাদের আকীদা হচ্ছে গোমরাহ মওদূদীর আকিদা (??)। এসব কারনে না হয় তারা ফেরাউনের নব্য সংস্করন বর্তমান সরকারের হাতে নির্যাতিত হয়েছে এবং হচ্ছে। কিন্তু আল্লামা জুনায়েদ বাবু নগরী, মুফতি ইসহাক, মাওলানা আহমাদউল্লাহ আশরাফ, মুফতি ওয়াক্কাসরা তো পীর সাহেরদের জাত ভাই। একই সিলসিলা বা ওলামায়ে দেওবন্দের অনুশারী, তাহলে তাদের কে বেছে বেছে নির্যাতন করার কি কারন থাকতে পারে ? তাদেরও কি আকীদা খারাপ হয়ে গেল ? তারাও কি নাপাক মওদূদীর অনুশারী হয়ে গেল ? নাকি তারা হক্কানীর সনদ হাড়িয়ে ফেলেছেন ?

এর দুটি কারণ থাকতে পারে।

প্রথমটি হচ্ছে, পীর সাহেব চরমোনাই হেফাজতের কর্মাকন্ডের বিরুদ্ধে ছিলেন এটা সরকারের গোয়েন্দা মহল জানতে পেরেছে এবং হেফাজত বিরোধী প্রপাগান্ডার তথ্যও তাদের কাছে আছে। কেউ যদি প্রশ্ন করেন যে, পীর সাহেবের কর্মীরা কি হেফাজতের প্রোগ্রামে যায় নি । আমি বলবো, অবশ্যই গিয়েছে। কারণ চরমোনইর পীর সাহেব এমন একজন নেতার ছেলে যিনি নিজের মুখে বলেছিলেন যে, আমার মুরীদরাও আমার দলকে ভোট দেয় না। ভোটের হিসেব আর মুরিদের হিসেবের গরমিলের হতাশা থেকে তিনি এমন মন্তব্য করেছেন। হেফাজতের প্রোগ্রামে না যাওয়ার নির্দেশ দেওয়ার তার কোন ক্ষমতাই ছিল না, আর নির্দেশ দিলেও ভোটের মতোই কেউ তার কথা শুনতো কিনা সন্দেহ আছে। যারা অংশ নিয়েছেন তারা কেবল মাত্র নিজস্ব চিন্তা চেতনা আর শিক্ষকদের মোটেভিশানের কারনে সেখানে গিয়েছেন। চরমোনাই দল গত ভাবে লংমার্চে সমর্থন জানানোর ঘোষনা দেয় তখন যখন রাম আর বামরা মিলে শুক্রবারে হরতাল দিয়েছিল। হুজুর মশাই ভেবেছিলেন, হরতালে গাড়ি ছাড়া কেউ ঢাকায় আসতে পারবে না, এখন সমর্থন জানালে কোন সমষ্যা নেই। কিন্তু কেউ এ কথা দাবি করতে পারবেন না যে, লংমার্চে অংশ নেওয়ার জন্য কেন্দ্রিয় ভাবে নেতারা তাদের কর্মীদের কে নির্দেশ দিয়েছেন অথবা তারা কোন প্রস্ততি সভা করেচেন।

অন্যদিকে কওমী অনেক সাধারন ছাত্র ছিল যারা পীর সাহেবের দলের যে কোন প্রোগ্রামে আনন্দের সাথে অংশ নিতো, কারণ তাদের প্রোগ্রামে গেলে শয়তানও ভয় পায় না, সরকারের ভয় পাওয়ার তো কোন কারণ নেই। হেফাজতের প্রতিটি কর্মকান্ডে এই শ্রেণীর ছাত্ররা সক্রিয় ভাবে অংশ নিয়েছে। কিন্ত হেফাজতে ইসলাম ও হেফাজতের আমীর আল্লামা শফী সাহেবের সমালোচনা করে তাদের মুরিদরা নারায়গজ্ঞে যে কিতাব পাবলিশড করেছেন তার পরিনতিতে সাধারন ছাত্ররা এখন তাদের থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছেন। এখন আর তাদের প্রোগ্রামে মাদ্রাসার সাধারন ছাত্রদের কে শরীক করানো যায় না। প্রায় প্রতিটি মাদ্রাসার শিক্ষকরা এখন অনেক সচেতন হয়েছেন এই বিষয়ে। সাধারন ছাত্ররা বুঝতে শিখেছে চরমোনাইর রাজনৈতিক পজিশান আসলে কি।

]

দ্বীতিয় কারণ এটা হতে পারে যে, সরকারের সাথে পীর সাহেবের গোপন কোন কথা বার্তা হচ্ছে যাতে তিনি তাদের কে আশ্বস্ত করেছেন যে, হেফাজতের ভবিষ্যত কোন কর্মকান্ডে পীর সাহেবের নেতারা অংশ নিবেন না। এমন দাবি বিশ্বাস করার পেছনে যুক্তিও আছে। কারণ সরকার জানে যে, লংমার্চ পরবর্তি সমাবেশে পীর সাহেব কে হেফাজতের নেতারা স্টেজে উঠতে দেননি। জানা যায় যে, আল্লামা শাফী সাহেব বাবু নগরীর সাথে পরামর্শ করে দায়িত্ব্যশীল দের কে আগেই বলে দিয়েছিলেন যে, তাদের কাউকে যেন বক্তার তালিকায় না রাখা হয়, কিন্তু পরবর্তিতে দেখা গেল বক্তৃতা দুরে থাক, স্টেজেই জায়গা হলো না। এসব পরিনতিতে তারা হেফাজতের কিছু নেতার বিরুদ্ধে খালেদার দালালীর তকমা লাগানোর ব্যর্থ চেষ্টা চালান। তাদের প্রপাগান্ডার জবাবে আল্লামা শাফী সাহেব স্বয়ং বিবৃতি দিয়েছেন যে, হেফাজতের নেতারা এখনো নিজস্ক দায়িত্ব্য সম্পর্কে সচেতন এবং দায়িত্ব্যশীল আছেন। কারো পক্ষে বা বিপক্ষে কাজ করার কোন ইচ্ছে হেফাজতের নেই।

এত কিছুর পরে কেউ যদি প্রশ্ন করেন যে, এসব মনগড়া তথ্য। তাহলে তাকে আমি বলবো পিছনের ঘটনা প্রবাহ ও পীর সাহেবের বক্তৃতা বিরৃতিগুলো মনোযোগ সহকারে পড়–ন। তারপরে ভাবুন যে, কেন হেফাজতের কর্মকান্ডকে প্রথমে জামায়াতের চাল বলে সন্দেহ করেছিলেন। হেফাজতের কর্মকান্ডের কারনে জামায়াত নেতারা লাভবান হয়ে যাবেন এবং শাহবাদের আন্দোলনে সমষ্যা হয়ে যেতে পারে এই ভাবনা নিয়ে তিনি নিজস্ব পরিমন্ডলে নাস্তিক বিরোধী বক্তৃতা বিরৃতি দিলেও সক্রিয় কোন আন্দোলন গড়ে তোলার প্রয়োজন মনে করেন নি। তার পুরস্কার হিসেবে তিনি সরকারের কৃপাদৃষ্টি লাভ করে চলছেন। হাজারো মুফতি ওয়াক্কাস গ্রেফতার হলেও পীর সাহেব চরমোনাইর কোন কেশও কেউ ধরতে পারবে না। ফেরাউনের যুগে ইসলামের সৈনিকরা কেন মার খাবে

ফেরাউনের হাতে মুসার অনুশারী মার খাবে না তো কি পীর সাহেব চরমোনাইর অনুশারীরা মার খাবে ?

বিষয়: বিবিধ

৩২০০ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File