চরমোনাইর দৃষ্টি ভংগি দেখুন।

লিখেছেন লিখেছেন স্বপ্নতরী ২২ আগস্ট, ২০১৩, ১২:৩৩:০৮ দুপুর

তিন বছর আগের ঘটনা হবে সম্ভবত।

স্থানীয় হাসান আলী হাই স্কুল মাঠে জেলা শাষনতন্ত্র ছাত্র আন্দোলনের উদ্যোগে তাদের একটি কর্মী সমাবেশ অনুষ্টিত হয়েছি। সেখানে কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ ছাড়াও জেলার সকল নেতারা বক্তব্য রাখেন। সেদিনের সমাবেশের কয়েক জনের বক্তৃতা রেকর্ড করা হয়েছিল। স্থানীয় সাংবাদিকরা তাদের রিপোটিংয়ের স্বার্থ্যেই সেগুলো রেকর্ড করেছেন। তাদের বক্তৃতা বিবৃতিতে বাংলাদেশের ছাত্র রাজনীতির বর্তমান অবস্থার কঠোর সমালোচনা করা হয়। সমালোচনার এই ভাষায় স্থানীয় লোকজনের মধ্যে বিরুপ প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়। তার কারন গুলো বলছি।

১. এই সমাবেশ হওয়ার কয়েক দিন আগে স্থানীয় হিফজুল কোরআন পরিষদের একটি মাহফিলের অনুমতি বাতিল করে দেয় স্থানীয় প্রষাসন। পরিষদটি স¤পূর্ণ অরাজনৈতিক এবং বাংলাদেশের সকল হাফেজ বিশেষ করে আমাদের চাঁদপুরের সকল হাফেজরা দল মত নির্বিশেষে এই সংগঠনে যোগদান করেন। তাদের এই প্রোগ্রাম কে প্রথমে নিষিদ্ধ করে দেয়, পরে যখন স্থানীয় প্রভাবশালী লোকজন প্রসাষন কে বোঝাতে সক্ষম হন যে, এটা অরাজনৈতিক সংস্থা তখন শহর থেকে দুরে আউটার স্টেডিয়ামের এক কোনে মাহফিল করার অনুমতি প্রদান করা হয়। তাও আবার প্রোগ্রামের একদিন আগে। অথচ পোষ্টারিং করা হয়েছিল প্রায় দের মাস আগ থেকে। এর কিছু দিন পরে যখন স¤পূর্ণ রাজনৈতিক একটি দলের কর্মী সম্মেলনের অনুমিত অত্যান্ত দ্রুত গতিতে দেওয়া হয় তখন সাধারন লোকজন বিস্মিত হয়। বিষয়টি টক অব দ্যা টাউনে পরিনত হয়ে যায়। লোকজন বলাবলি করতে থাকে যে পীর সাহেব হুজুরের কেরামতি ছাড়া এমন ঘটনা প্রায় অসম্ভব যে, একজন হিন্দু জেলা প্রষাসক যিনি প্রায় সব ধরনের ওয়াজ মাহফিলে সেন্সর লাগিয়ে দিয়েছেন, সামান্য রাজনৈতিক পরিচয়ের গন্ধ পেলেও তিনি তাদের অনুমতি দেন না, সেই তিনি কিভাবে আওয়ামী বিরোধী মৌলবাদি রাজনৈতিক দলের সভার অনুমতি প্রদান করে পুলিশি পাহারার ব্যবস্থা করেন।

২. সেই প্রোগ্রামে শাষনতন্ত্রের নেতার দাবি করেন যে, বাংলাদেশের তিনটি ছাত্র সংগঠনের হত্যা, লুট, র্ধ্বষন, টেন্ডারবাজি আর হল দখলের অপরাজনৈতিক সংস্কৃতির কারনে ছাত্র রাজনীতি আজ কলুষিত। এই তিনটি ছাত্র সংগঠন হলো, ছাত্রদল, ছাত্রলীগ, ছাত্রশিবির। এদের অপরাজনীতির কারনে আজকের ছাত্র সমাজ মাদক, আর নারী বাড়ির পিছনে লাগামহীন ঘোড়ার মতো ছুটে বেড়িয়ে নিজেদের অমুল্য তরুন জীবনটাকে ধ্বংস করে দিচ্ছে। এই তিনটি ছাত্র রাজনৈতি যখন সাধারন ছাত্রদেরকে নেশার রাজ্যে নিয়ে গিয়ে ধ্বংস করে দিচ্ছে তখন এই বাংলাদেশের ছাত্র সমাজের জন্য আল্লাহর নেয়ামত হিসেবে শাষনতন্ত্র ছাত্র আন্দোলনের উদ্ভব ঘটেছে। যা আজকে পরীক্ষিত ব্যাপার। এই ছাত্র সংগঠনের কেউ নারী, বাড়ি, নেশা, টেন্ডার বাজি, হল দখল বা রগকাটার সাথে জড়িত এমন প্রমান কেউ দেখাতে পারবে না। শিবিরের দিকে ইংগিত করে তারা কিছু মুল্যবান মন্তব্য করেছেন। তার মধ্যে প্রনিধান যোগ্য হলো রগকাটার সংস্কৃতির আমাদানী করে শিবির ইসলামী রাজনীতির গায়ে কালিমা লাগিয়ে দিয়েছে। এই সংগঠনের ছেলেরা অন্য যে কোন সংগঠনের থেকেও ইসলাম এবং দেশের জন্য হুমকি স্বরূপ।

বাংলাদেশের ছাত্র রাজনীতি যখন দিশেহারা, পথ হারা, নেশা, টেন্ডার, আর খুনের ধারায় বহমান ছিল ঠিক তখনি ছাত্র শিবিরের পথ চলা শুরু। শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত একদল যোগ্য ছাত্র নেতা তৈরিতে শিবিরের যে ভূমিকা সেটা জাতির বিবেকবান মানুষরা চিরদিন স্মরন করবেন। নেশা আর মাদক কে স¤পূর্ণ ভাবে নিষিদ্ধ ঘোষনা করা হয়েছে কর্মী লেবেল থেকে। যে কেউ শিবির করবেন তাকে অবশ্যই মাদক থেকে দুরে থাকতে হবে। এরিয়া সম্পাদক থাকা কালিন সময়ে একজন সক্রিয় সমর্থক, যার প্রভাবে আমাদের আন্দোলনের কাজে লাগতো, তাকেও কর্মী করা হয়নি কেবল মাত্র তার সিগারেট খাওয়ার বদ অভ্যাসের জন্য। প্রায় তিন বছর পরে তাকে তার অভ্যাস ত্যাগ করতে হয়েছে এবং কর্মী পরিচয় দেওয়ার সুযোগ হয়েছে।

টেন্ডার বাজির কোন সুযোগ এই যাবত ছাত্রশিবিরের কোন নেতার নসিবে হয়নি। বিগত চারদলিয় জোটের ক্ষমতায় থাকা কালিন জামায়াতের দুই জন মন্ত্রী ছিলেন কিন্ত জামায়াতের দুশমন হিসেবে খ্যাত পত্রিকা দৈনিক জনকণ্ঠও স্বিকার করে নিয়েছে যে, বিগত চারদলিয় সরকারের সময় শিবির কোন ধরনের টেন্ডারবাজির সাথে জড়িত ছিল না। শিবিরের কোন নেতাকর্মী টেন্ডার ব্যবসার সাথে কোন অবস্থায় জড়াতে পারেনি। ছাত্র থাকাকালিন সময়ে কেউ টেন্ডার বাজিতে জড়ানোর সুযোগ কোথায়।

শিবিরের কোন দায়িত্ব্যশীল নেতা বা সক্রিয় কর্মী লেবেলের কারো দ্বারা নারী নির্যাতনের মতো কোন অপরাধ সংঘটনের কোন খোজ এখানো পাওয়া যায়নি। সারা বাংলাদেশের থানা গুলোতে খোজ নিলে একটি ধ্বর্ষণ মামলা পাওয়া যাবে না যেখানে শিবিরের কোন নেতার নাম রয়েছে। শিবিরের বিরুদ্ধ বাদীরা এই সকল দিক মাথায় নিয়ে শিবিরের প্রশংসা করেছেন যা বিভিন্ন পত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের হল দখল নিয়ে শিবির কোন পরিকল্পনা করেনা বরং নিজেদের বৈধ কর্মীদের অধিকার ফিরিয়ে দেওয়ার জন্যই লড়াই করে। সাধারনত হল গুলো তে মেধাবীদের কে স্থান দেওয়ার কথা থাকলেও ক্ষমতাসীন দলের ছাত্রনেতার বরাবর বহিরাগত আর নিজস্ব কর্মী হল দখল করার চেষ্টায় মত্ত থাকেন। এই অবস্থায় সাধারন মেধাবী, ধামির্ক ছাত্রদের জন্য হলে সিট পাওয়া খুবই দুরহ ব্যাপার ছিল। শিবির এখানে তাদের ভূমিকা নিয়েছে। যারা মেধাবী তাদের কে জোড় করে হল থেকে বের করে দেওয়ার প্রতিবাদের যদি লড়াই করতে হয় সেটাতেও শিবির পিছ পা হবে না। কারণ কেম্পাসে অবস্থান করার সুযোগ হাড়ালে ছাত্র দের মাঝে কাজ করার সুযোগ থাকেনা। ছাত্রশিবির হলের নিয়ন্ত্রন নিয়ে ব্যবসা করেনা বরং মেধাবী এবং যোগ্যদের কে সহায়তা করে। নইলে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্যান্য ছাত্র সংগঠনের নেতারা যেখানে একটি সিটের জন্য প্রচুর টাকা ডিমান্ড করেন সেখান ছাত্র শিবিরের নেতারা কেবল মাত্র দ্বীনের খেদমত টুকো কে প্রাধান্য দেন। হল বিষয়ে বিস্তারিত লিখতে গেলে আলাদা একটি পোষ্ট দরকার।

রগ কাটার অপবাদ যেই সকল পত্রিকাগুলো প্রথমে প্রচার করেছিল তারা সম্ভবত বলতে পারবে না যে, কোন কোন জেলায় শিবিরের নেতারা কারো রগ কেটে ছিলেন। জাহেলীয়াতের প্রবক্তা, ইয়াহুদী আর মুশিরকদের টাকায় লালিত পত্রিকাগুলো যদি কোন ইসলামী সংগঠনের ওপর অপবাদ না দেন তখন সেটাই অস্বাভাবিক মনে হয়। কিন্তু আমাদের কিছু হক্কানী গ্রুপের মুরব্বিরা যখন এসব অভিযোগ কে নিজেদের মতো করে রংঙ্গ মেখে প্রচার করেন তখন তাদের ইসলামী জ্ঞানের নমুনা দেখে সত্যি করুনা হয়।

তাদের আলোচনায় একটি বিষয় অত্যান্ত পরিস্কার হয়ে গেছে যে, তারা নিজেদের ছাড়া আর কারো ভালো কাজ কর্ম প্রতক্ষ্য করার সুযোগ পান না। নিজেদের ছাড়া আর কারো ভিতরে ভালো কিছু চর্চা করার নিয়ম তারা দেখতে পান না। তারা তাদের বকৃত্তা বিবৃতিতে এসব কথা বার্তা এখনো প্রচার করে চলছেন। কিছু দিন আগের পীর সাহেবের এক হক্কানী, খালেস মুরিদ তার পোষ্টে শিবিরের নেতাদের কে রগকাটা দলের কর্মী হিসেবে বর্ননা দিয়েছেণ। তারা স্পষ্ট দাবি করেছেন যে, ছাত্রদল আর ছাত্রলীগের সাথে গুনগত কোন পার্থক্য শিবিরের নেতাকর্মীদের মাঝে নেই। সেদিন আরেকটি পেজে দাবি করা হয়েছে শিবির হচ্ছে সব থেকে বড় বেয়াদব এবং উশৃংখল দল। এর কারণও আছে সরকারের সহাযতায় মিছিল মিটিং করতে পারে বলে তারা নিজেদের কে ভদ্র বলে প্রচারনার সুযোগ পেয়ে যায় কিন্তু তারা যখন হরতালে পুলিশের সাথে সংগর্ষে লিপ্ত হয়েছিল তখন সেটা জিহাদ ছিল। কিন্তু তারা একটি জিনিস ভুলে যায় যে, শিবিরের সাথে তাদের নৈতিক একটি পার্থক্য আছে সেটা হলো শিবির বাতিলের সাথে চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিয়ে নিজেদের কর্মসুচী বাস্তবায়ন করে আর তারা তাগুতের সহায়তায় নিজেদের কর্মসুচী পালন করে। অবৈধ ভাবে বাধা প্রদান না করলে শিবির যে, পুলিশকে ফুল দিতে পারে সেই নজিরও তো আছে কিন্তু তাদের অন্ধ চোখ সেটা দেখে না।

সাধারন দুটি ছাত্র সংগঠন থেকে ছাত্র শিবিরকে আলাদা করার যোগ্যতা একজন রিকশাওলা কেও আল্লাহ পাক কিভাবে দিয়েছেন সেটা আমি নিজে দেখেছি। আলাপচারিতার এক পর্যায়ে জিজ্ঞেস করলাম, চাচা আপনাদের এই এলাকার শিবিরের পোলাপান কেমন ? তিনি বলেন, শিবিরের পোলাপান দেখলেই বুঝা যায়, আর হেরা ভাড়া লইয়া তেমন ক্যাচ ক্যাচ করেনা। কম আছে, তয় দেখলে বঝা যায়, অনেকের মইধ্যে চিনা যায়। আমি সেদিন নিজের পরিচয় দিলে তিনি খুবই লজ্জিত হন।

একজন রিকশাওয়ালাও তার জ্ঞান এবং আকল কে ব্যবহার করার তৌফিক পেয়েছেন কিন্তু হিংসা আর অন্ধ শত্রুতার কারনে পীর সাহেব ও তার চেলা চামুন্ডারা সেই তৌফিক থেকেও বঞ্চিত হয়েছেন। আল্লাহ পাক তাদের কে সে ধরনের চোখ দান করেন নি যে চোখ সত্য কে সত্য বলতে পারে, মিথ্যাকে মিথ্যার সাথে তুলনা করতে পারে। শিবিরের হাজারো নেতাকর্মীদের ওপর নেশা, নারী ধ্বর্ষণ, আর টেন্ডারবাজির মারাতœক মিথ্যে অভিযোগ আনার পরেও তাদের কামালিয়াতে কোন কমতি দেখা যায় না। তাদের দেখানো তরিকায় এগুলো কোন ধরনের অপরাধের তালিকায় পড়ে না। মিথ্যে কথায় অন্যের ওপর মিথ্যাচার করার এই আইডিয়াটা নতুন নয, বরং এর উৎপত্তিস্থল হচ্ছে মাওলানা মওদুদীর ওপর মিথ্যাচারের ইতিহাস।

এ জাতিয় ব্যক্তি বা দল মুসলিম উম্মাহর কোন কাজে আসেনা। তাদের দ্বারা মুসলিম উম্মাহ কেবল বিভক্ত হবে। যারা অন্যের ভালো কাজের প্রশংসা করার জ্ঞান এবং হিকমত থেকেও বঞ্চিত তাদের কে আল্লাহ পাক সহিহ বুঝ দান করুন। মুসলিম ঐক্যবোধের জন্য আমাদের সবার উচিত হবে নিজেদের আশে পাশের সকল ইসলামী দলের বিষয়ে ইতিবাচক অবস্থান নেওয়া। আমাদের কে মনে রাখতে হবে যে, ইসলামী রাষ্ট ব্যবস্থা যারাই কায়েম করুন না কেন তাদের কে এই সকল লোকেরা সমর্থন বৈ ক্ষতি কিছু করবে না।

বিষয়: বিবিধ

২৩৮৫ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File