মুসলিম ঐক্য ভাবনা। বাস্তবতা কতটুকো ?

লিখেছেন লিখেছেন স্বপ্নতরী ১৮ আগস্ট, ২০১৩, ০৮:০২:১২ রাত

একটি সমাজের কথাই ধরুন। কত পেশার, কত নেশার লোক রয়েছে এখানে। কেউ ছোট পেশায় আর কেউ বড় পেশায। কারো অর্থ কম, আর কারো অর্থ বেশি। কেউ বা সমাজের জন্য বেশি পরিমানের খেদমত করছেন, কেউ বা নিজের অযোগ্যতার জন্য কম খেদমত করছেন। এভাবে প্রত্যেকে পেশা আর নেশার মানুষরা সমাষ্টিক ভাবে মিলে একটি সমাজ তৈরি করে। সামজিক বন্ধনগুলো যখন অত্যান্ত দৃঢ় হয় তখন তৈরি হয় একটি উত্তম সমৃদ্ধশালী রাষ্ট্র ব্যবস্থা। এই রাষ্ট্র ব্যবস্থা অত্যান্ত সমৃদ্ধশালী ও ঐক্যবদ্ধ থাকে তার একমাত্র কারন হচ্ছে রাষ্ট্র তার প্রতিটি অর্গান বা অংগ প্রত্যঙ্গ কে সমান দৃষ্টিতে দেখে। কোন একটি কে আরেকটি থেকে নৈতিক কারনে অগ্রাধিকার দিলেও আইনগত দৃষ্টিতে সমান ভাবতে শিখে।

এ ধরনের রাষ্ট্র ব্যবস্থা মানুষের জীবনে নেয়ামত হয়ে যায়। এই রাষ্ট্রে অধিবাসীরা প্রতিটি ক্ষেত্রে কেবল বিজয়ী হতে থাকে। দুনিয়ার প্রতিটি রাষ্ট্র তার কদম মোবারকের নিজেদের ভেট দিতে স্বেচ্ছায় রাজি হয়ে যায়। তরবারির ব্যবহারের কোন প্রয়োজনই পড়ে না। পৃথিবীর তাবৎ জ্ঞানীরা উৎসুক হয়ে সেই রাষ্ট্র ও তার রাষ্ট্রিয় কাঠামোকে জানার জন্য হাজার মাইল পাড়ি দিতে কুন্ঠা বোধ করে না। এই রাষ্ট্র ব্যবস্থার প্রতি মানুষের কৌতুহলের পারদ সিমানা ছাড়া হযে থাকে। এই রাষ্ট্র ব্যবস্থার বিরুদ্ধে আওয়াজ তুলার স্বপ্নও কোন মানুষ দেখে না। এমন রাষ্ট্রের অধিবাসীরা কেবল নিরাপত্তা আর সমৃদ্ধীই লাভ করে এমনটি নয়, বরং এই রাষ্ট্রের অধিবাসীরা নৈতিক ভাবে এতটা সম্মান আর শ্রদ্ধার পাত্র হয়ে যায় যে, দুনিয়ার মানুষরা তাদের কে নিজেদের আদর্শ বানাতে উঠে পড়ে লেগে যায়। দুনিয়ার অন্যান্য জাতি তাদের আদর্শকে পুথি করে নিজের ভবিষ্যত প্রজন্মের জন্য গেথে রাখে।

এই রাষ্ট্র ব্যবস্থা কে মাথায় রেখে আমার আপনার চিন্তা করা উচিত যে, এই রাষ্ট্র ব্যবস্থা কিসের ভিত্তিতে কায়েম হয়। অবশ্যই শক্তিশালী আন্দোলন বা গন জাগরনের মাধ্যমে। যেই আন্দোলন এই গন জাগরন কে নেতৃত্ব্য দেয় তাদের মধ্যে পারস্পরিক যোগাযোগ আর শ্রদ্ধা বোধ কেমন হওয়া উচিত তার নমুনা আপনি সেই রাষ্ট্র ব্যবস্থা থেকে নিতে পারেন। এখানে এই আন্দোলন প্রত্যেক পেশা,নেশা কমজোর বা বেশি প্ররিমানের যোগ্যতর লোকের প্রয়োজনীয়তাকেও স্বিকার করে নেবে। কোন একটি সম্প্রদায় বা বিশেষ কোন ধরনের লোকবল বা যোগ্যতাকে সে প্রাধান্য দেবে না। এমন একটি আন্দোলন দানা বেধে উঠলে পড়ে অন্যান্য সব অর্গান গুলো তার দিকে স্রোতের মতো করে ছুটে আসতে থাকে এবং সেই দলটি হয় সকলের দ্বারা গঠিত একটি ঐক্যবদ্ধ আন্দোলন। এই আন্দোলনকে সমাজের প্রতিটি অর্গান রশদ জোগাতে থাকে। প্রতিটি সেক্টরের মানুষ তার উন্নতি আর কল্যান কামনায় দিন রাত দোয়া করতে থাকে। এমন সংগঠন যা চায় তাই সমাজ ও রাষ্ট্রে কায়েম করে নিতে পারে। এই সংগঠন যখন কোন আদর্শ ধারন করে তার আপনা আপনি সমাজ ও রাষ্ট্রে আদর্শ হয়ে যায়।

এই সংগঠনের চাহিদা কে অত্যান্ত গুরুত্ব্যপুর্ন করে আমাদের কে শিক্ষা দেওয়া হযেছে ঐক্যবদ্ধ জিন্দেগী গঠন করার জন্য। আমরা সেদিকে ভ্রুক্ষেপ না করে নিজের মতো করে পথ চলছি। নিজের চার পাশের বিভিন্ন অর্গান কে অস্বিকার করে তাদের প্রয়োজনীয়তাকে বেমালুম ভুলে গিয়ে নিজের পায়ে কুড়াল মারছি। এই দৃষ্টি ভংগির কারনে আমাদের নৈতিকতায় কামালিয়াতের প্রচুর অভাব ঘটতে শুরু করে। এভাবে চলতে চলতে চারপাশের বহু সংখ্যক অর্গান থেকে আমি মাহরুম হয়ে যায়। এভাবে আমি নিজে হয়ে যাই প্রতিবন্ধির মতো। একে না কোন মানুষ ভয় করতে পারে না শয়তান। এর দ্বারা দুনিয়া বিজয় তো দুরে থাক, জীবন যুদ্ধের চাহিদা পুরনেও সম্পুর্ন ব্যর্থ হয় সে। এমন একটি আন্দোলন বা খেদমত কোন কালেই মুকাম্মাল দ্বীনের স্বাধ পেতে পারে না। তাদের জন্য কোন জাতি গর্ব বোধ দুরে থাক সাধারন ভয় টুকো পাওয়ার কোন কারন খুজে পায় না। আজকে গোটা দুনিয়ার জুড়ে মুসলমানদের মার খাওয়া আর হতাশায় ডুবে যাওয়ার অন্যতম কারন হলো বিভক্তির চক্রে পড়ে যাওয়া।

আমার এই আলোচনা অনেকের বোধ গম্য হচ্ছে না সেটা আমি উপলদ্ধি করছি। আমি আশা করছি সারাংশ টেনে দিলে বুঝতে আর বাকি থাকবে না। আমার উপরের উদাহারন গুলো দেওয়ার একমাত্র কারন হলো আজকে আমাদের সকল কর্ম প্রচেষ্টা কেন বিফল হয়ে যাচ্ছে তার কারন গুলোকে সামনে আনার চেষ্টা করা। ইসলামের মতো নেয়ামত কে পুজি করে পথ চলার দাবি করে আমরা গঠন করে নিয়েছি বিভিন্ন দল ও উপদল। এই দল উপদল গুলোর আভ্যন্তরিন বিষয় বাদ দিয়ে যদি বাহ্যিক দিক গুলোর দিকে তাকাই তাহলে আমরা উপরের উদাহারন কে স্পষ্ট সত্য দেখতে পাবো। বিভিন্ন আংঙ্গিকে দ্বীনের খেদমত কারীদের কে আমরা আলাদা আলাদা অর্গান হিসেবে কল্পনা করে নেই। তার পরে ভাবি যে, আমাদের ইসলাম কতটা প্রতিবন্ধির রুপ নিয়েছে। কোন ব্যক্তিই স্বর্য় সম্পুর্ন স্বাভাবিক সত্বা এমন দাবি করতে পারেন না। কারন তারা জ্ঞাতসারে অথবা অজ্ঞাতসারে তার আশে পাশের দ্বীনের খেদমতরত এমন বহু অর্গান কে অস্বিকার করে চলছেন বা অপ্রয়োজনীয় মনে করছেন যেটা তাকে তার দায়িত্ব্যের ক্ষেত্রে কামালিয়াত দান করতো। এভাবে আমাদের বহু সংখ্যক প্রচেষ্টা অত্যান্ত কষ্টকর হলেও ইসলাম কে মোকাম্মাল হায়াত হিসেবে প্রতিষ্টা করতে সক্ষম হচ্ছে না। আমাদের চারপাশের দ্বীনি খেদমত তথা অর্গান গুলো যদিও কোন কোন ক্ষেত্রে দু একটি অন্য আরেকটি কে সাথে নিয়ে জুড়ে যেতে চায় কিন্তু মজুবত বাধন বা সঠিক কর্ম পরিকল্পনা তাকে বাধা গ্রস্থ করে। সে আর সফল হয় না। এই বিষয়টি কে আরো সহজ করার জন্য আমি একটি উদাহরন দিচ্ছি।

আপনার ঘরের কোনায় রেখে দেওয়া সোফা সেট অথবা ওয়াল কেবিনেটটির দিকে একবার মনোযোগ সহকারে তাকান। তারপরে ভাবুন যে, এই সোফাটি বানাতে কতটি অর্গান স্বর্য় সম্পুর্ন হয়ে কাজ করেছে। প্রতিটি অর্গান যখন তার দায়িত্ব্য সঠিক ভাবে সামাল দিয়ে অন্য অর্গানের হাতে পরবর্তি কাজ তুলে দিয়েছে অমনি এই সোফাটি ব্যবহার উপযোগী হয়েছে এবং দর্শক এর রুপ সৌন্ধর্য্য দেখে মুগ্ধ হয়ে এমনি সোফা বানানোর পরিকল্পনা হাতে নিয়েছে। এই সোফাটির কর্ম পক্রিয়ার দিকে তাকান।

একজন গাছ রোপন করেছেন। ভবিষ্যত প্রজন্মের কল্যানের চিন্তা মাথায় নিয়ে।

আরেকজন গাছকে ভালো ভাবে বেড়ে উঠার সুযোগ দিয়েছেন প্রয়োজনীয় পরিচর্যা করেছেন।

আরেক দল গাছ কর্তন করার বিদ্যা অর্জন করে মস্ত বড় গাছ কে বিনা ক্ষতিতে মাটিতে নামিয়ে এনেছেন যাতে করে তাকে ঠিক মতো করে সাইজ করা যায়।

অতপর আরেকটি গ্রুপ এই কাঠটি কে প্রয়োজনীয় মাপে কেটে দিয়েছেন।

অতঃপর এই কাঠের টুকরো গুলো কে একজন ভালে মিস্ত্রির হাতে তুলে দিয়ে তার একটি অবয়ব গঠন করে দেওয়া হয়েছে।

এই জোড়া দেওয়া গাছ গুলোর সৌন্ধর্য্য বৃদ্ধির জন্য আরেক জন্য বার্নিস মিস্ত্রির হাতে তুলে দেওয়া হয়েছে যাতে তিনি তার সৌন্দয্য বৃদ্ধিতে ভুমিকা রাখেন।

অতপর এক শ্রেনীর লোক দিয়ে সোফাটি কে আপনার ঘরে এনে আপনি নিজের প্রয়োজন পুরন করলেন।

একবার ভাবুন কোন একটি উপাদান কে অস্বিকার করার পরে সেই সোফাটি তৈরি হওয়ার সম্ভবনা ছিল কি না। আর যদিও সেটা কেউ তৈরি করতেন তাকে কি দৃষ্টি নন্দন সোফা বলা যেত, এটা কি মানুষের হৃদয় ছুয়ে যেত। আমার বিশ্বাস আপনারাও আমার সাথে একমত হবেন যে, না এটা কোন অবস্থায় এমন সোফা হতো না।

সাধারন একটি সোফার তৈরিতে যদি আপনি এতগুলো অর্গান কে স্বিকার করে নিলেন তাহলে আল্লাহর দ্বীন কায়েমের খেদমতে আপনি অন্যান্য অর্গান গুলো কে কেন অস্বিকার করে চলছেন। শুধু কি তাই ? বলা চলে আপনি অন্যান্য অর্গান গুলোকে সম্পুর্ন অস্বিকার করে নিয়ে তাদের কে অপদার্থ বলতে দ্বিধা করছেন না। ফলাফল কি হচ্ছে আপনি নিজেও প্রতিবন্ধি হয়ে যাচ্ছেন। অন্যান্য জরুরী অর্গানগুলো কে অস্বিকার করে আপনি আপনার খেদমতকেও অসম্পুর্ন রেখে দিয়েছেন। এভাবে না আপনি স্বয়ংন সম্পুর্ন হতে পারলেন না অন্যকে আপনার সাহায্য নিতে দিলেন। বিষয়টি নিয়ে এখনি না ভাবলে আমরা কোন অবস্থায়ই ঐক্যবদ্ধ হতে পারবো না।

আজকে দুনিয়ার মুসলমানদের অবস্থা দেখুন। তারা কেউ মসজিদের খেদমত নিয়ে ব্যস্ত আছে এবং এটাই তার মুক্তির জন্য যথেষ্ট ভেবে বসে আছে। কেউ মাদ্রাসায় খেদমত করছে, তার কাছে গোটা দুনিয়ার খবর গোপন রয়ে গেছে। জানার দরকারও নেই। কেউ দাওয়াত ও তাবলীগ করছে, মুসলিম দুনয়ার কোন খবর রাখার প্রয়োজন নেই। মনে হবে তারাই কেবল মাত্র একটি স্বয়ং সম্পুর্ন দেহ। একারনে অন্যান্য ইসলামী আন্দোলনের কর্মী বাহিনীর সাথে অথবা অন্য কোন খেদমতের তাদের কোন যোগাযোগ নেই। তারা এটাকেই একমাত্র কাজ বলে মনে করছে এবং এর বাইরে কিছু চিন্তা করাকেও হারাম ভেবে বসে আছে। অন্যদিকে যারা ইসলামী আন্দোলনে থেকে সৎ কাজের আদেশ আর অসৎ কাজের নিষেদ এর হুকুম পালন করে চলছেন তারা কেবল এই টুকোকে নিজেদের মকসুদ বানিয়ে নিয়েছেন। এই কাজে যে, দাওয়াতের মেহনতকারীদের সহযোগীতা লাগতে পারে বা আরো কিছু অর্গানকে পাশে পাওয়া লাগতে পারে সেটা তাদের মাথায় আসে না, আর যদি কারো কারে মাথায় আসেও তবুও সেটা বাস্তবায়ন করতে চান না। কোথাকার ইগো যেন তাদের কে পেয়ে বসে।

পীর ফকির রুপে যারা মানুষের তাজকিয়া করার জন্য খানকা খুলে বসে আছেন তারা ঠিক মতো করে বলতে পারেন না যে, তাদের তৈরি লোকগুলোর পরবর্তি স্টেপ কি হওয়া উচিত। তাদের তৈরি করা খানকার লোকগুলো সারা জীবন তাজকিয়ার পেছনে ঘুরে ঘুরে কবরে চলে যান। ভাবখানা এমন যেন এই কাজেই তার পরিপুর্ন ইসলাম রয়েছে। অথচ তারা যাদের নফসের তাজকিয়া করছেন বলে দাবি করেন, সেই লোকগুলো যদি অন্যান্য অর্গানের সাথে সহযোগীতা করার ময়দানে গিয়ে হাজির না হয় তাহলে তার দ্বীনের কি প্রয়োজনে আসতে পারে। তলোয়ার যদি যুদ্ধ ক্ষেত্রের জন্য তৈরি করা না হয় তাহলে সেই তলোয়ারের ধার দিয়ে কি দরকার সময় নষ্ট করার। অন্যদিকে ময়দানে থাকা লোকগুলো যদি নিজেদের অমিত্ব কে দুর করতে তাজকিয়ার প্রয়োজনীয়তা অনুভব না করে তাহলে প্রত্যেকের কাজই অসম্পুর্ন থেকে যাবে। বিষয়টি মনে হয় অতটা কঠিন নয় যে, আরে কিছু উদাহারন দেওয়া লাগবে। এই ভাবে মুসলমানরা যদি একজন আরেকজন কে নিজেদের যোগ্যতা দিয়ে সহায়তা করে তাহলে দ্বীন কায়েম হতে সময় লাগে না। মুকাম্মাল প্রচেষ্টা ছাড়া কোন অবস্থায় দ্বীন কায়েম হবে না, আর জোড় করে বা কোন বিপ্লবের মাধ্যমে যদি এমন কিছু হয়ে যায়ও তাহলে সেটা ক্ষনিকের জন্য স্থায়ী হবে এবং এক সময় সেই দেশের অধিবাসীরাই দ্বীনের দুষমন হয়ে যাবে এবং তার বিরোধীতা করতে থাকবে।

আমাদের দেশের দ্বীনের খাদেমদের অবস্থাতো আরো করুন। তারা এক অংশ আরেক অংশকে সহযোগীতা করবে দুরে থাক বরং সুযোগ পেলেই বিরোধীতা করে। তার কারন হচ্ছে প্রত্যেকে নিজের কাজকে একমাত্র হক বলে ধারনা করে। মনে করুন একটি ইসলামী আন্দোলনের আমীর মনে করলেন যে, আমার কর্মীদের বিভিন্ন আমলের প্রতি মোহাব্বাত তৈরি করার জন্য তাদের কে এক চিল্লা বা দুই চিল্লায় যাওয়ার জন্য তাবলীগের সাথে যাওয়া বাধ্যতা মুলক করে দেই। অন্যদিকে দাওয়াত ও তাবলীগের মুরব্বিরা যদি ভাবতেন যে, আমাদের মধ্যে যে সকল ভাইরা মোটামোটি দ্বীনের সহিহ বুঝ পেয়ে গেছেন এবং কয়েক চিল্লার মাঝে সময় দিয়ে তারা এখন আমলের প্রতি অত্যাধিক যত্নবান হয়ে গেছেন, এখন তাদের ময়দানে যাওয়া ও দ্বীন কায়েমের জন্য জিহাদ রত ভাইদের কাতার ভারি করা এবং তাদের মধ্যে থেকে কিছু ভাইকে চিল্লায় পাঠানোর ব্যবস্থা করা দরকার। তাহলে বিষয়টি কেমন হতো চিন্তা করুন তো। এভাবে প্রত্যেকে তাদের কর্মকান্ডকে একটি মুলে নিয়ে আসতে পারতেন এবং পরস্পর ঐক্যব্ধ হয়ে যেতেন। প্রত্যেকে কথা ও কাজের মাধ্যমে অন্যের প্রয়োজনীয়তা উপলদ্ধি করতে পারতেন। তাদের কাছে মানুষ আসলে মুকাম্মাল দ্বীনের প্রয়োজনীয়তা উপলদ্ধি করতে পারতো।

কিন্তু বিষয়টি অতি সহজে হবে না তার কারন হচ্ছে সেই একই রোগ। আমরা মুকাম্মাল দ্বীন চাই না, আমরা চাই সহজ লভ্যতা। আমরা একটি অর্গানকেই দেহ বলে বিশ্বাস করতে শিখেছি, শত বছরের উল্টা পাল্টা শিক্ষা আমাদের কে এমন আকীদা বিশ্বাস লালন করতে উদ্ভুদ করেছে। এই কারনে তাবলীগের মুরব্বিরা ভাবে আমাদের লোকদের কে কোন অবস্থায়ই এসব ফেতনায় জড়ানো ঠিক হবে না, দুনিয়াবী ঝামেলায় যাওয়ার মানে হচ্ছে মানসম্মত লোকগুলো আবার দুনিয়াদার হয়ে যাবে। তাদের আমল ঠিক ছুটে যাবে। তাদের কে আমাদের হাড়ানোর দরকার নেই। এই ভাবনার পিছনে শক্তিশালী কোন যুক্তি প্রমান না থাকলে ইজতিহাদের ওপর ভর করে এমনটি করা হচ্ছে।

অন্যদিকে ইসলামী আন্দোলনের নেতারা ভাববেন, কি দরকার লোকগুলোরে এত আরামের খেদমতে পাঠানোর। পরে দেখা যাবে তারা আমাদের আন্দোলনকে ঘুনা করতে শিখবে এবং একে দুনিয়াদারী বলে গালাগাল করে জিহাদ থেকে চিরতরে হাড়িয়ে যাবে। এই অবস্থায় মুসলমানরা কি করে ঐক্যবদ্ধ হতে পারে তা আমার মাথায় আসছে না। অথচ ইতিহাস ঘাটলে আমরা দেখতে পাই যে, ময়দানে যুদ্ধরত মুজাহিদ দের জন্য আসহাবে সুফ্ফার ভাইরা কিভাবে দোয়া করতেন। মদিনার লোকেরা মুজাহিদদের কে কিভাবে সাহায্য করতেন। নতুন ঈমান আনা লোকেরা যদি কিছুটা দ্বীন বুঝে যেত সাথে সাথে তাকে জিহাদের জন্য উদ্ভুদ্ধ করা হতো। বর্তমান অবস্থা হচ্ছে কেউ যদি ইসলামী আন্দোলনে লেগে যায় তাহলে তার আর আমল আখলাকের সৌন্দর্য্য বর্ধন করার দরকার নেই। সেটাই তার জন্য কল্যানকর। অন্যদিকে যারা একবার আমল আখলাক শুদ্ধ করার ধান্দায় নেমে গেছেন তাদের কাছে এটাই মকসুদ। কিন্তু আল্লাহর দ্বীন তাদের কাছে যেটা আশা করছে, স্বর্য় আল্লাহ পাক যেটা ফরজ করেছেন সেটা তারা উপলদ্ধি করতে পারেন না। আল্লাহ পাক আমাদের কে বলেছেন যে, কোন অঞ্চলের কিছু লোক দ্বীন শেখার জন্য বের হবে পরে নিজের কওমের কাছে এসে সেটার প্রচার করবে। কিন্তু আমরা একবার বের হওয়াকে জরুরী মনে করছি কিন্তু নিজের কওমের ভিতর ডুকে তাদের কে সংশোধন করার চিন্তা করার সুযোগ পাচ্ছি না। সবাই চায় আমার কাতারে এসে দ্বীন শেখ, তোমার কাতার তো দ্বীনের কোন কাজে আসে না।

এই অবস্থার উত্তরন ঘটাতে হলে মুসলিম দায়িত্ব্যশীল এবং মুরব্বিদের কে অধিক ভুমিকা নিতে হবে। তাদের কে বুঝতে হবে যে, আল্লাহর দ্বীনকে সার্বিক ভাবে বিজয়ী দেখার জন্যই তাদের প্রচেষ্টা আর এই কাজ একা করার সম্ভব নয। সব দায়িত্ব্র সব লোকের পক্ষে করার সম্ভব নয়। যারা ইসলামী আন্দোলর করছেন তাদের লোকবল আর জন সমর্থন কিনতু মাঠ লেবেল থেকেই আসে। অতএব সতিকারের জাগরন এবং এক্যব্ধতার জন্য আমদের উচিত হবে সমাজের মতো প্রতিটি সেক্টরের প্রতিটি কাজকে শ্রদ্ধা করা এবং পারস্পরিক যোগ্যতাকে অন্যের কাজে সাহায্য করা। এই কারনে হুজুর স বলেছেন মুমিনরা হচ্ছে একটি দেহের মতো। কারন একটি দেহের কোন অর্গান কে অস্বিকার করার পরে সেই দেহটি মকাম্মাল থাকেনা বরং প্রতিবন্ধি হয়ে যায। আল্লাহ পাক আমাদের কে সহিহ বুঝ দান করুন এবং উম্মাহ কে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার তৌফিক দান করুন।

বিষয়: বিবিধ

১৬৮৩ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File