মেধা লই চুদুর বুদুর চইলত ন।
লিখেছেন লিখেছেন স্বপ্নতরী ১০ জুলাই, ২০১৩, ০৬:৫৪:৩০ সন্ধ্যা
একটি কো-অপারেটিভ সোসাইটির কর্মকর্তারা (যারা একেবারে নিখাত ব্যাংকিং কার্যক্রম করছে) তাদের কোম্পানীর প্রয়োজনে একটি ডেস্কটপ ডাটাবেস সফটওয়্যার বানানোর জন্য ঢাকার কয়েকটি প্রতিষ্টানে যোগাযোগ করে। কোম্পানীর মালিক নিজেদের এক আত্নীয়র মাধ্যমে কয়েকটি সফটওয়্যার নির্মাতা প্রতিষ্টানের সাথে কথা বার্তা বলে। ব্যাংকিং সফটওয়্যারের মতো জটিল একটি কমার্শিয়াল ডাটাবেস সফটওয়্যার বানাতে কোম্পানী গুলোর যে ধরনের ডিমান্ড করার কথা তারা সেটাই করেছে। প্রতিষ্টানের মালিক একটি দামও হাকিয়েছেন। ধরুন কোম্পানী দাম চেয়েছে পাচঁ লক্ষ তারা হাকিয়েছে এক লক্ষ বা দের লক্ষ। কিন্তু সেই সফটওয়্যার কোম্পানীটি রাজি হয়নি বিধায় তারা আরো কয়েকটি প্রতিষ্টানে খোজ খবর নেয়। সবার মুল্যমান প্রায় কাছাকাছি হওয়াতে তিনি স্বিদ্ধান্ত নিতে পারেনি। কয়েকদিনের সময় নিয়ে বেচারা বাড়ি চলে আসেন।
আমাদের বিল্ডিংয়ের একটি ফ্লোরে রয়েছে প্রতিষ্টানটি। এ হিসেবে তার চেম্বারটি প্রতিদিন আমার নজরে আসে। একদিন নিজের পত্রিকা না পেয়ে তার অফিসে গেলাম পত্রিকা পড়ার জন্য। ভদ্রলোক খুবই অমায়িক এবং স্মার্ট। তিনি আমাকে দেশের বিষয়ে প্রশ্ন করে খবরা খবর জানতে চাইলেন। আমি বললাম, দেশ কিভাবে চলছে, কি হচ্ছে পত্রিকা মারফত কি জানতে পারেন না ? তিনি প্রথম আলূর নিয়মিত পাঠক। বেচারা পর্যন্ত স্বিকার করে বললেন যে, আসলে পত্রিকা পড়ে এখন আর সব কিছু জানা যায় না। কেমন যেন ধোয়াশে থাকে। আপনি তো ব্লগিং করেন। ব্লগের একটি সুবিধা হলো অনেক গোপন খবর জানা যায়। আমি বললাম প্রথম আলু পড়লে তো আলুর খবরও পাবেন না। চামচামী আর ধর্মদ্রোহীতা করা এবং ধর্মদ্রোহীদের কে সমর্থন দিয়ে প্রমোট করাই হচ্ছে প্রথম আলুর কাজ। এসব ছেড়ে দেন। ভালো কোন পত্রিকা পড়ুন। আসলেই তো ! পড়ার মতো কোন পত্রিকা আপনারা খুজেও পাবেন না। দিগন্ত পড়ার কথা বললে তো হবে না কারণ সেটার ভিতর কোরআন শরীফের আয়াত লেখা থাকলেও আপনারা ওলামালীগের পরামর্শ ছাড়া বিশ্বাস করবেন না। সেলুক্যাস আপনাদের দলপ্রীতি।
তিনি বললেন যে, আসলে আমি দলিয় পত্রিকা পড়ি না। আমি বললাম, আপনি আমাকে বলূন, কোন পত্রিকাটি দলীয় লেজুরবৃত্তি করছেনা। দিগন্ত টিভির বটম স্ক্রোলিংয়ে দেখলাম কোন এক জেলার রিপোর্ট করা হচ্ছে এভাবে যে, থানা জামায়াতের অফিসে আগুন দিয়েছে দুর্বৃত্তরা। এখানে কিন্তু দিগন্ত টিভি সহজেই বলে দিতে পারতো যে, ছাত্র লীগের সন্ত্রাসীরা জামায়াত অফিসে আগুন দিয়েছে এবং মানুষ এটা বিশ্বাসও করতো। কারণ জামায়াতের অফিসে আগুন দেওয়ার দরকার আর কারে বর্তমানে নেই। অথচ অন্য কোন টিভি হলে সহজে বলে দিত আওয়ামী অফিসে হানা দিয়েছে জামায়াত শিবিরের ক্যাডাররা এবং কিছু দিন পরে জানা যেত যে, এটা ছাত্র দলের কাজ বা তাদের আভ্যন্তরিন কোন্দলের জের। এর পরেও কি আপনারা বুঝেন না নিরপেক্ষতা কাকে বলে। সত্য বললে যদি কারো গায়ে লাগে সেটা দলিয় লেজুর বৃত্তি নয়।
বিভিন্ন কথা তার সাথে হয়েছে আমি সেগুলোর জন্য লিখছি না। যে দুঃখ শেযার করার জন্য আজকের এই লেখা সেটা হলো এই যে, ভদ্রলোককে আমি বললাম, আপনি তো আপনার প্রতিষ্টানকে ছোট খাটো ব্যাংক বানিয়ে নিয়েছেন। এখন এটাকে ডিজিটাল করুন। হিসেব নিকেশের স্বচ্ছতার জন্য এটিকে একটি ডাটাবেজের অধিনে নিয়ে আসুন। আমি তাকে টাকা জমা ও উত্তোলনের ক্ষেত্রে সফটওয়ারের কিছু সুযোগ সুবিধার কথা বললাম। বেচারা আমাকে জানালো যে, তিনি ঢাকায় এই বিষয়ে একটি কোম্পানীর সাথে কথা বলেছেন। আমি তাকে বললাম যে, আপনি ইচ্ছে করলে কাজটি আমাকে দিতে পারেন। আমি নিজেই করে দেবো এবং আপনি যে সমস্থ চাহিদা তাদের কে দিয়েছেন তার থেকে আরো বেশি আপডেট করে একটি সফটওয়্যার বানিয়ে দেবো। ভদ্রলোক বিশ্বাস করতে পারছিলেন না। তার মনে হয়েছে যে, আমরা মনে হয় কোন কাজের নই। দাড়ি টুপি মাথায় দিয়ে কেবল নামাজ রোজা করাই আমাদের কাজ।
আমি তাকে বললাম যে, একটি ব্যাংকিং ডেস্কটপ সফটওয়্যারের যে সমস্ত সুযোগ সুবিধা থাকার কথা সেটা আমি কি করে জানলাম। তাছাড়া প্রোগামিং না জানলে আমি আপনার সাথে কথা বললাম কেন। আপনি স্বিদ্ধান্ত নিয়ে আমাকে জানান। তিনি বললেন, আপনি কত টাকা নেবেন। আমি একটি এমাউন্ট তাকে অফার করলাম। তিনি বললেন, ভাই এতটাকা দিয়ে আমি কেন সফটওয়্যার বানাবো। আমি বললাম সেটা আপনিই ভেবে দেখুন। কথা না বাড়িয়ে বলাম যে, দরকার মনে করলে আমাকে ফোন করুন। পরের দিন তিনি আবার আমাকে ডেকে পাঠালেন। তিনি যা অফার করলেন সেটা ঢাকার প্রতিষ্টানের দশভাগে একভাগ ছিলো। আমি বললাম, ঠিক আছে, ভেবে দেখে জানাবো। পরের দিন তার অফিসের পিয়ন আমাকে জানালো যে, অপু ভাই, এই বেটা তো ঢাকায় গিয়ে যা বলেছে, তার দশগুন দাম আপনাকে কম বলেছে। আমি বললাম, তুমি এ কথা আমাকে বললে কেন ? পিয়নটি উত্তর দিলো যে, লোকাল পত্রিকায় আপনার লেখা পড়ে আমি খুব মজা পাই। অনেক কঠিন সত্য তুলে ধরেন। যেটা অনেকে করেনা।
বাসায় বসে ভাবলাম যে, আসলেই তো আমরা মফস্বলের লোকের মেধা মুল্যায়ন পাওয়ার যোগ্য নয়। রাজধানীর লোকজন ডাকাতী করলেও সেটা হয় ব্যাবসা। আর আমরা মফস্বলের লোকজন জান প্রাণ দিয়ে কাজ করলে সেটা হয় চুদুর বুদুর। দেশের মানুষ জন কবে কখন যে এলাকার আর প্রতিষ্টানের মুল্যায়ন ছেড়ে দিয়ে মেধা আর সততার মুল্যায়ন করবে কে জানে। সেদিন দেখার সুযোগ হবে কি না জানিনা। আজকে শাহবাগের রাস্তায় যে আন্দোলন হচ্ছে, কোটা প্রথার বিরুদ্ধে, তার জন্য আমি আমার অন্তরের অন্তস্থল থেকে দোয়া করছি। কোটা নয়, মেধাই হোক আমাদের অহংকার। এই মেধা ধ্বংসকারী কোঠা প্রথা অবিলম্বে বাতিল করতে হবে। সকল দল ও মতের ভাইরা এই আন্দোলনে শরীক হোন। চেষ্টা করলে দেশ বিনাশী এই প্রথা বাতিল হবেই হবে।
বিষয়: বিবিধ
১৪৪০ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন