শাহবাগের মোড় থেকে ॥ আমি এক উদিয়মান নেশা খোর বলছি।
লিখেছেন লিখেছেন স্বপ্নতরী ০৬ ফেব্রুয়ারি, ২০১৩, ০২:৩০:৩৯ দুপুর
শাহবাগের ভন্ডামী দর্শন করার সুযোগ যাদের হয়েছে তারা নিশ্চয় খুব পুলকিত হয়েছেন এই ভেবে যে, আমাদের তরুনরা এখনো শেষ হয়ে যায়নি। এদের নিয়ে হতাশা আর দুশ্চিন্তার যতই কারণ খুজে ফেরা হোক না কেন, এরা সঠিক সময়ে গর্জে উঠতে দেরি করে না। মুক্তিযুদ্ধের চেতনার অনল তাদের অন্তরে কেমন দাউ দাউ করে জ্বলছে তার উৎকৃষ্ট প্রমান হলো শাহবাগের এই নৈশ্য মহড়া। তরুন আর তরুনীদের গানে নাচে মুখরীত ছিল শাহবাগের মোড়। অধুনা তাকে আবার তাহরির স্কয়ারের মতো শাহবাগ স্কয়ার হিসেবে ঘোষনা দেওয়া হয়েছে। মিশরের জনতার স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলনের কেন্দ্র বিন্দুতে রূপ নেয়া তাহরির স্কয়ারের সাথে যদি কিছু নাস্তিক আর মাতালের আড্ডাকে এক করে নেওয়া হয় তাহলে এটা হবে বিবেক বোধের সর্বোচ্চ বিসর্জন।
শাহবাগের মোড়ে যারা ছিল তাদের ফেসবুক স্টাটাস এবং ব্লগিং জগত সম্পর্কে যারা খোজ খবর নিয়েছেন তারা খুব ভালো করেই জানেন যে, এরা কোন মতাদর্শ প্রচারে নিজেদের সর্বশক্তি নিয়োগ করছেন। এরা এদেশের প্রতিটি মানুষের ধর্ম বিশ্বাসের চরম দুষমন। তাদের অধিকাংশরা নিজেদের ধর্মের বিরুদ্ধে প্রকাশ্যে অবস্থান নিয়েছেন। তাদের কাছে যুক্তির কষ্টিপাথর হচ্ছে ধর্ম আর ধর্মীয় বিশ্বাসের চাইতেও বেশি পুজনীয়। এই হিসেবে এরা গোটা মানবতার শত্রু। কারণ মানবতার যা কিছু কল্যানকর এখনো টিকে আছে, তাও সেই ধর্মের কল্যানে।
এ সকল ব্যক্তিবর্গের কয়েক জনের ব্যক্তি জীবন সম্পর্কে আমার যথেষ্ট ধারণা রয়েছে। সারা রাত নেশার ঘোরে কাটিয়ে, দিনের বেশির ভাগ সময় ঘুমের রাজ্যে বিচরন করে যেটুক সময় হাতে পায় তাতেই দেশ আর জাতীর কল্যানে ধর্ম বিতারনের জিহাদে শুরু করে দেয়। এদের ব্যক্তি জীবনের এই লাগাম ছাড়া ঘোড়ার একমাত্র শত্রু হচ্ছে এই ধর্মটি। অতএব তাদের কাছে ধর্মহীন জীবনের গুরুত্ব্য এতো বেশি পরিমানে যে, এরা ধর্মীয় কোন মত আর পথের লোকদের কে মোটেও সহ্য করতে পারছে না। ধর্ম কেদ্রিক যে কোন কাজে তাদের এলার্জি স্বাভাবিক। অতএব ধর্মীয় দলের বিরুদ্ধে প্রতিবাদী হওয়াটাই স্বাভাবিক।
এবার আসা যাক তাদের এক্টিভিটিজের ময়না তদন্তে।
কাদের মোল্লার ফাসিঁর আদেশ নিয়ে তাদের মধ্যে যে প্রতিক্রিয়া লক্ষ করা গেছে তাতে কিছু বিষয় রয়েছে যা আসলে ব্যাখ্যা সাপেক্ষের । যে কোন অপরাধীর ফাসি দাবি করাটা মোটেও অযৌক্তিক ছিল না। তারা যে কোন বিষয়ে স্বাধীন মতামত দিতে পারেন, এটা তাদের অধিকার। তাদের এই অধিকার প্রতিষ্টায় আমরাও সংগে আছি। তাদের মতো করে অন্যের মত প্রকাশের স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ করে কাউকে নিশ্চিহ্ন করে দেয়ার মতো গাজাখোরী দিবা স্বপ্ন আমরা দেখতে অভ্যস্ত নই। কিন্তু মতামত প্রদানের এই স্বাধীনতা তারা যতটা স্বাধীন ভাবে ভোগ দখল করছেন তাতে স্পষ্ট হয়ে যাচ্ছে যে, কেবল মাত্র জামায়াত বিরোধীতার কারনেই তাদের কে এত স্বাধীনতা দেয়া হচ্ছে এবং এদেশের সুশিল মিডিয়া গুলো রাত জেগে তার কাভারেজ দিচ্ছে। আমার কাছে মনে হচ্ছে দেশের স্বাধীনতা আর জনগনের স্বাধীনতার সংজ্ঞা সম্পর্কে তাদের যথেষ্ট ধারনা নেই। এরা স্বাধীনতা বলতে কেবল জামায়াত বিরোধীতাই বুঝতে শিখেছে। সিমান্তে নিরীহ ফেলানীর লাশের ছবি দেখে তারা শাহবাগের মোরে আসার সাহস করে না, কারণ এখানে মিডিয়ার কাভারেজ থাকবে না, অন্যদিকে সরকার কর্তৃক সেই স্বাধীনতাও দেয়া হবে না। এরা নিরিহ বিশ্বজীতকে হত্যা, র্যাবের হাতে অন্যায় ভাবে গুলি বিদ্ধ হয়ে পঙ্গুত্ব্য বরন করা লিমনের জন্য রাজপথে নামার চেতনা ধারন করে না। এখানেও সুশীল মিডিয়া বাুবদের কোন আনাগোনা হবে না এটাও তারা ভালো করে জানে। অধুনা ইডেন গার্ডেনের ছাত্রীদের কে একটি মাত্র সিটের জন্য কিভাবে মন্ত্রী, এমপি এবং ছাত্র নেতাদের লালশার শিকার হতে হয়েছে তা তো এই সুশিল মিডিয়া এবং বর্তমান সরকারী দলীয় ছাত্রী সংগঠনের পারস্পরিক কোন্দলের কারনে প্রকাশিত হয়েছে। এখানে মৌলবাদি জামায়াত শিবিরের কোন হাত কল্পনা করে তাকেও কেউ অস্বিকার করেননি। এসব বিষয়েও তাদের স্বাধীনতার চেতনায় কোন জোশ উঠেনা।
প্রশ্ন হচ্ছে আমাদের নাস্তিক ব্লগার বন্ধুরা কি শাহবাগের মোরে দাড়িয়ে প্রতিবাদ করার সাহস করেছিলেন নাকি সেখানে স্বাধীনতা ছিল না। তাহলে স্বাধনীতার অবাধ বিচরন করার সুযোগ কেবল জামায়াত বিরোধীতা বা ধর্মের বিরুদ্দে প্রচারনা চালাতেই তৈরি হয়েছে নাকি ? আমার মতো ক্ষুদ্র জ্ঞানের মানুষরা এই জাতীয় চেতনার সংজ্ঞাটাই বুঝতে পারলাম না। এই বিষয়ে মনে পড়ে একটি গ্রাম্য শ্লোকের কথা। “ সারা রাত সোনাবানুর পূথী শুনার পরে কেউ একজন ভোরের বেলা প্রশ্ন করে জানতে চায় সোনা বানু ছেলে না মেয়ে। ” সারা রাত শাহবাগের মোরে স্বাধীনতার চেতনা বিলি করে দিনের বেলা মুক্ত আকাশের দিকে তাকিয়ে নিজেদের বিবেক কে প্রশ্ন করে তারাও জানতে চায়, আসলে স্বাধীনতার চেতনাটাই বা কি। বরাবরের মতো জাতির জন্য অত্যান্ত দুখেঃর বিষয় হচ্ছে, প্রতিদিন পত্র পত্রিকায়, মিডিয়ায় কুশীলবরা তাদের জ্ঞানগর্ব ভাষনে, জাতির নেতারা তাদের কর্ম সুচীতে যে স্বাধীনতার চেতনা বিলি করে বেড়াচ্ছেন, সেই চেতনার প্রকৃত সংজ্ঞা আজো অব্দি রচিত হয়নি বা হয়েছে এমন দাবিও কেউ করেননি। তাহলে আমাদের অবস্থাও সোনা বানুর পূথী শোনা সেই গর্ধবের মতো যে রাতের বেলা পূথী শুনেও বুঝতে পারেন যে সোনা বানু কি ছিল।
এবার অন্য এক প্রসঙ্গে আসা যাক।
কিছু যুবক ছেলে যখন কিছু যুবতীকে নিয়ে রাতের বেলায় মোমবাতি জ্বালীয়ে পাশাপাশি বসে জামায়াত বিরোধীতার কির্তন করে, তখন সাধারন মানুষ, যাদের মধ্যে ধর্মীয় মুল্যবোধের নামমাত্র নিশানাও অবশিষ্ট আছে, তারা প্রশ্ন করে জানতে চায় যে, এই তরুনীগুলো কারা, যারা এত রাত অব্দি যুবকদের সাথে এক কাতারে বসে জামায়াত বিরোধীতার কির্তন গাইছে। তাদের বাবা মারা কি তাদের কে খোলা মাঠে ছেড়ে দিয়ে স্বাধীনতার চেতনা শিক্ষা দিচ্ছে। এই চেতনার বলি হয়ে যখন বিশ্ববিদ্যালয়ের কোন মানিকের নজরে পড়বে তখন কোথায় থাকবে তাদের সোনার বাংলা স্বাধীনতার চেতনা। তখন হয়তো এ জাতিয় নেশা খোর ধর্ম বিদ্ধেষী ব্লগার দের কে প্রতিবাদের জন্য শাহবাগের মোরে খুজে পাওয়া যাবে না। কারণ তারা জানে যে রাজশাহীর বিশ্ববিদ্যালয়ের মানিকদের ধর্ষনের সেঞ্চুরীর পিছনেও তাদের এই ধর্ম খেদাও আন্দোলনের ভূমিকা ছিল। চোখের সামনে নিজেদের সহপাঠিদের ইজ্জত নিলামের বিচার যারা দাবি করতে পারে না, তারা যখন চল্লিশ বছর আগের কথিত ধর্ষনের বিচার দাবি করে তখন তাদের এ জাতিয় স্বাধীনতার চেতনার প্রতি আমার মতো আহাম্মাকেরও ঘৃনা বোধ জন্মে যায়।
ফেন্সিডিলের দাম যতই বাড়–ক, গাজা আর ইয়াবার আমদানীতে যতই ভাটা পড়–ক না কেন, এদেশের মুক্ত চিন্তার ব্লগার দের কোন ভাবনা নেই। তাদের স্বাধীনতার চেতনায় কোন ভাটা পড়তে দেয়া হবে না। তাদের চেতনাকে সঞ্জিবিত রাখতে হবে বলেই মাদকের বিরুদ্ধে কারো কোন উচ্ছাস নেই। দেশের মাদক সেবিদের বিরুদ্ধে কার্যকর কোন ব্যবস্থাও নেই। যা কিছু লোক দেখানো হয়ে থাকে তাও বস্তির ভিটে মাটি ছাড়া হতাশ কোন যুবকের বিরুদ্ধে। উচ্চ বিত্তের নেশা খোরদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার পথ রুদ্ধ করতেই তো আবিস্কৃত হয়েছে নয়া জামানার, যেখানে কেবল চেতনা আর চেতনা। তবে এই চেতনার শ্লোগান শুরু হবে জামায়াত বিরোধীতার নামে এবং শেষ হবে ধর্মবিরোধীতার মাধ্যমে। পাশে আছে আমাদের সুশিল বাবুদের বানানো দারুন সব সুশীল মিডিয়া। অবশেষে আমার এক বন্ধুর মজাদার উক্তি দিয়ে শেষ করছি। “নেশাখোরদের কাছ থেকে যখন দেশপ্রেমের কথা শুনি তখন প্রচন্ড রাগে নিজেকেও নেশা খোর বানাতে ইচ্ছে করে ”।
বিষয়: বিবিধ
১৫৯৬ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন