কুড়িয়ে পাওয়া মুনি মুক্তা।
লিখেছেন লিখেছেন স্বপ্নতরী ১২ জুন, ২০১৩, ০৯:৪৮:৪৯ রাত
আমরা তাফসির পড়তে ভালোবাসি। অনেকেই হয়তো রেগুলার তাফসির পড়েন কিন্তু যেভাবে নোট করে তাফসির পড়তে হয় সেভাবে কয়জন পড়ি। যেমন ধরুন শোকর কাকে বলে এটা নিয়ে কি আমরা কোন নোট করেছি। যদি আল্লাহ শুকরিয়াই না করতে পারলাম তাহলে ইবাদত করবো কি করে। এই শুকরিয়া নিয়ে হয়তো আমাদের মধ্যে হাজারো মত তৈরি হবে। অথচ কত চমৎকার ভাবে এই শোকর শব্দটির ব্যাখ্যা দেওয়া হয়েছে। দেখুন না একবার তাকিয়ে। আশা করছি ভালো করে পড়ে কমেন্ট করবেন। যাদের মওদূদী এলার্জি আছে তারা যত্ন করে এড়িয়ে যান।আপনার জন্য আমি কষ্ট করছি না।
مَّا يَفْعَلُ اللَّهُ بِعَذَابِكُمْ إِن شَكَرْتُمْ وَآمَنتُمْ ۚ وَكَانَ اللَّهُ شَاكِرًا عَلِيمًا
“আল্লাহর কি প্রয়োজন তোমাদের অযথা শাস্তি দেবার, যদি তোমরা কৃতজ্ঞ বান্দা হয়ে থাকো৷ এবং ঈমানের নীতির ওপর চলো ? আল্লাহ বড়ই পুরস্কার দানকারী ও সর্বজ্ঞ৷
সুরা নিসা-১৪৭।”
মূল আয়াতে (شَكَرْ) 'শোকর' শব্দ ব্যবহার করা হয়েছে। (شَكَرْ) 'শোকর' শব্দের আসল অর্থ হচ্ছে নেয়ামতের স্বীকৃতি দেয়া ও কৃতজ্ঞতা স্বীকার করা এবং অনুগৃহীত হওয়া। এ ক্ষেত্রে আয়াতের অর্থ হচ্ছে, যদি তোমরা আল্লাহর প্রতি অকৃতজ্ঞ না হও এবং তার সাথে নিমকহারামী না করো বরং যথার্থই তার প্রতি কৃতজ্ঞ ও অনুগৃহীত থাকো, তাহলে আল্লাহ অনর্থক তোমাদের শাস্তি দেবেন না।
একজন অনুগ্রহকারীর প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশের সঠিক পদ্ধতি কি৷ হৃদয়ের সমগ্র অনুভুতি দিয়ে তার অনুগ্রহের স্বীকৃতি দেয়া, মুখে এই অনুভূতির স্বীকারোক্তি করা এবং নিজের কার্যকলাপের মাধ্যমে অনুগৃহীত হবার প্রমাণ পেশ করাই হচ্ছে কৃতজ্ঞতা প্রকাশের সঠিক উপায়। এই তিনটি কাজের সমবেত রূপই হচ্ছে 'শোকর'। এই শোকরের দাবী হচ্ছে প্রথমত অনুগ্রহকে অনুগ্রহকারীর অবদান বলে স্বীকার করতে হবে। অনুগ্রহের শোকরগুজারী করার এবং নেয়ামতের স্বীকৃতি দেবার ক্ষেত্রে অনুগ্রহকারীর সাথে আর কাউকে শরীক করা যাবে না। দ্বিতীয়, অনুগ্রহকারীর প্রতি প্রেম, প্রীতি, বিশ্বস্ততা ও আনুগত্যের অনুভূতিতে নিজের হৃদয় ভরপুর থাকবে এবং অনুগ্রহকারীর বিরোধীদের প্রতি এ প্রসংগে বিন্দুমাত্র প্রীতি, আন্তরিকতা, আনুগত্য ও বিশ্বস্ততার সম্পর্ক থাকবে না। তৃতীয়ত, কার্যত অনুগ্রহকারীর আনুগত্য করতে হবে, তার হুকুম মেনে চলতে হবে এবং তিনি যে নেয়ামতগুলো দান করেছেন সেগুলো তার মর্জীর বিরুদ্ধে ব্যবহার করা যাবে না।
কুরআনের আয়াতে এখানে মূলত (شَاكِرً) 'শাকির' শব্দ ব্যবহার করা হয়েছে। এর অনুবাদ করতে গিয়ে আমি 'বড়ই পুরস্কারদানকারী' শব্দ ব্যবহার করেছি। আল্লাহর তরফ থেকে যখন বান্দার প্রতি শোকর করার কথা বলা হয় তখন এর অর্থ হয় 'কাজের স্বীকৃতি দেয়া বা কদর করা, মূল্য দান করা ও মর্যাদা দেয়া'। আর যখন বান্দার পক্ষ থেকে আল্লাহর প্রতি শোকর করার কথা বলা হয় তখন এর অর্থ হয়, নেয়ামতের স্বীকৃত দান বা অনুগৃহীত হবার কথা প্রকাশ করা। আল্লাহর পক্ষ থেকে বান্দার শোকরিয়া আদায় করার অর্থ হচ্ছে, আল্লাহ বান্দার কাজের যথার্থ মূল্যদান করার ব্যাপারে কুণ্ঠিত নন। বান্দা তাঁর পথে যে ধরনের যতটুকা কাজ করে আল্লাহর তার কদর করেন, তার যথার্থ মূল্য দেন। বান্দার কোন প্রত্যেকটি কাজের তার প্রাপ্যের চাইতে অনেক বেশী প্রতিদান দেন।
মানুষের অবস্থা হচ্ছে, মানুষ যা কিছু কাজ করে তার প্রকৃত মূল্যের চাইতে কম মূল্য দেয় আর যা কিছু করে না সে সম্পর্কে কঠোরভাবে পাকড়াও করে। বিপরীত পক্ষে আল্লাহর অবস্থা হচ্ছে,মানুষ যে কাজ করেনি সে ব্যপারে জিজ্ঞাসাবাদ করার ক্ষেত্রে তিনি অত্যন্ত কোমল, উদার ও উপেক্ষার নীতি অবলম্বন করেন। আর যে কাজ সে করেছে তার মূল্য তার চাইতে অনেক বেশী দেন, যা তার প্রকৃতপক্ষে পাওয়া উচিত।
(তাফহীমুল কোরআন)
বিষয়: বিবিধ
১৫৯৩ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন