পচঁন বাবু নগরীর পায়ে নয়, ধরেছে আমাদের মনুষ্যত্ব আর মুসলমানিত্বে।
লিখেছেন লিখেছেন স্বপ্নতরী ৩১ মে, ২০১৩, ০৪:৫৪:৪৫ বিকাল
আজকে জুমার দিনে আমাদের মসজিদে একটি আবেগ ঘন পরিবেশের সৃষ্টি হয়ে গিয়েছিল। জুমার নামাজ শেষে সম্মলিত ভাবে কত বছর আগে মুনাজাত করেছি তার হিসেব মনে নেই। কিন্তু আজকে ইমাম সাহেব যখন শাইখুল হাদিস জুনায়েদ বাবুনগরীর জন্য দোয়া করতে করতে অঝোরে কাদঁছিলেন তখন আমি অনুভব করলাম যে, আমার চোখে পানি ঝড়ছে আর আমার হাত দুটো মুনাজাতরত হয়ে বুকেরওপর উঠে গেছে। এমনিতে সাধারনত আমার চোখে পানি আসে না। বিশেষ কতগুলো মুহুর্ত্য ছাড়া অযথা কান্নাকাটি করা আমার একদম পছন্দ নয়। আমাদের হ্নদয়ের কঠোরতা এতটা ছেয়ে গেছে যে ইচ্ছে করলেই আমরা আমাদের চোখে পানি আনতে পারিনা। এমন বহু আপনজন কে হাড়িয়েছি যাদের জন্য আমার চোখের কোনে পানি আসেনি। দায়িত্ব্য হিসেবে সবাইকে স্বান্তনা দিয়েছি। যতটুকো পেরেছি নিজেকে স্বান্ত রাখতে চেষ্টা করেছি।
কিন্তু আজ জুমা বারের এই হ“দয় বিদারক আহাজারী আমাকেও কাদাঁলো। অথচ বাবুনগরী আমার কেউ নন, তিনি আমার একদম পরিচিত নন। কিন্তু বাবুনগরীর এই অবস্থা দেখে নিজের চোখের পানির দিকে তাকিয়ে কেবল মাত্র একটি কথাই মনে হয়েছে যে, ইসলাম রক্তের সম্পর্কের চাইতেও দ্বীনের সম্পর্কের বেশি অগ্রাধিকার দেয়। আর এই কারনেই হয়তো বাবুনগরীর মতো অচেনা মানুষের জন্য চোখ থেকে পানি ঝাড়ে। হেফাজতের আন্দোলনের শরিক হবার আগে তার নাম আমি শুনেছি বলে মনে নেই। দেশের ক্ষমতার পালা বদলের সাথে এই লোকটির কোন সংযোগও ছিলনা কোন কালেই। বিতর্কের নামে অন্য কোন দল বা মতের বিরুদ্ধে প্রচার প্রচারনা চালাতেও আমরা তাকে দেখিনি। উপমহাদেশে যতজন হাদিস বিশারদ কেবল মাত্র নিজেদের জীবনের অমুল্য সময়টুকো হাদিসের দারসের ময়দানে ব্যায় করেছেন সম্ভবত জুনায়েদ নগরী তাদের একজন হবেন। বলা যায় যে, তাদের মধ্যে অগ্রগামীদের একজন। অথচ আজকে সেই ব্যক্তিটির জন্য আমাদের কে দোয়া করতে হচ্ছে এই বলে যে, আল্লাহ পাক তাকে জালেমের হাত থেকে উদ্ধার করুন, তাকে সুস্থ্যতা দান করুন। কিন্তু কেন এমনটি হলো ? কে দেবে এর উত্তর ? উত্তর জানতে হলে আমাদের কে একটু পিছনের ইতিহাস ঘেটে দেখতে হবে যে, কোন কোন জায়গায় আমরা কি কি ভুল করে এসেছি।
পরিচিত এক ভাইয়ের কাছে জানতে পেরেছি শাইখুল হাদিসের পায়ে পচন ধরেছে। তার কিডনি অকোজো হয়ে গেছে। শরীরের রক্তের পরিমান কমে গিয়ে এক ধরনে রক্ত শূন্যতার সৃষ্টি হয়েছে। সাথে রয়েছে ডায়াবেটিসের প্রাদুর্ভাব। বাবুনগরীর পায়ে পচঁন ধরেছে এই বিষয় টি নিয়ে আমি উদ্বিগ্ন কিন্তু একটি বিষয় যদি আমরা গভির ভাবে চিন্তা করি তাহলে স্বিকার করে নিতে হবে যে, এটা বাবুনগরীর পায়ের পচঁনের চিহ্ন নয়, এটা বরং আমাদের চিন্তুা শক্তির জড়তা, আমাদের দর্শন এবং ভাবনার দেয়ালের পচনের উপসর্গ। যে ভাবে আমরা দুনিয়া করেছি, যাকে আমরা সত্য আর মিথ্যার মানদণ্ড বানিয়েছি, যে ধরনের ইসলামের সংজ্ঞা আমরা এতদিন ধরে প্রচার করে এসেছি, যেভাবে আমরা ইসলামকে মুল্যায়ন করতে শিখেছি তার দর্র্শনের মধ্যে যে অজ্ঞতা, স্বার্থ্যপরতা আর গোজামিল ছিল তার সিনড্রোম হচ্ছে এই বাবু নগরীর পায়ের পচন। অনেকে অবাক হতে পারেন যে, আমরা তাহলে এতদিন কি করেছি। আসলেই আমরা কেবল আমাদের নিয়ে ব্যস্ত ছিলাম। সামান্য স্বার্থ্যরে কারনে যাদের কে আমরা এতদিন মুসলমান তো বটেই বরং ক্ষেত্র বিশেষ আল্লাহর অলীর খেতাব পর্যন্ত দিতে কার্পন্য করিনি তারাই আজকে আমাদের ঈমানের দুষমন হিসেবে আবির্ভুত হয়েছে। যাদের কুফরি কাজ কে আমরা দিনের পর দিন তাচ্ছিলের বসে সহ্য করে এসেছি আজকে তাদের সংখ্যাধিক্য আমাদের কে ভাবনায় ফেলে দিয়েছে যে, এতগুলো বনী আদমের কুফরির দায়িত্ব্য কে নেবে ? যাদের কে নিজেদের ছাউনিতে রেখে দিয়ে ইসলাহ করার দায়িত্ব্য ছিল আমাদের কাধেঁ, তারাই আজকে শত্রু ছাউনিতে দাড়িয়ে আমাদের বিরুদ্ধে জিহাদরত। ভাবনার বিষয় হচ্ছে এত কিছুর পরে আমাদের সমাজের আলেম নামের কিছু কুলাংগাররা এখনো বুঝতে পারছে না যে, হকের পথে থাকার প্রথম এবং বিশুদ্ধ নমুনা বা সিনড্রোম হচ্ছে বাতিলের হাতে নিষ্পেশিত হওয়া এবং তাদের অত্যাচারে নিজ দেশে পরবাসী হয়ে যাওয়া। খোদ রাসুলুল্লাহর (স) জীবনি আমাদের কে এই সত্যের দিকেই ইংগিত দিয়েছে।
দেশের মিডিয়াগুলো এই সমস্ত খবরকে গুরুত্ব্য দিয়ে প্রচার করেনি বরং বিভ্রান্তী ছড়াচ্ছে যাতে তাদের প্রভুদের পক্ষ থেকে পুরস্কারের পরিধিটা আরো বেড়ে যায়। নিজেদের প্রভুদের পদলেহনের পরে যা কিছু বোনাস হিসেবে পাওয়া যায় তার সবটুকো কেবল মাত্র ইসলাম এবং ইসলামী ব্যক্তিত্ব বা দলের বিরুদ্ধে মিথ্যাচার করার জন্যই পাওয়া। এই কারনে এই সকল পত্রিকার খবর কে গুরুত্ব্য দেওয়া একেবারেই ছেড়ে দিয়েছি। এই সব পত্রিকা কিনেছি বলে ইদানিং আমার মনে পড়ে না। সেদিন লঞ্চে ঢাকা যাচ্ছিলাম। হকার এসে বলল পত্রিকা লাগবে কিনা। জানতে চাইলাম দিগন্ত আছে কিনা, বলল নাই। সংগ্রমা, ইনকিলাব এগুলো কি নেই ? হকার বলল, হুজুর এসব পত্রিকা এত তাড়াতাড়ি আসে না। আর আসতে চাইলেও বাধা দেয়। আমি তাকে বললাম যে, দেশের সুুশীলরা দাবি করে এ জাতিয় পত্রিকার কোন কাটতি নেই। এগুলো কেউ পড়ে না, তাহলে এসব পত্রিকা প্রচারে বাধা দিয়ে তারা কি লাভ করে। যাই হোক আলোচনার উদ্দেশ্য এটা ছিল না, কিন্তু প্রসঙ্গত এসে গেল। যে কারনে বাবুনগরীর বিষয়ে নিজেদের এক ভাইয়ের সাথে কথা বললাম এবং স্যোসাল মিডিয়ার বন্ধুদের দেওয়া তথ্য এবং সুত্রের দেওয়া তথ্যগুলোকে এক করে যা বুঝলাম তাকে আরো একটু বিশ্বাসযোগ্য করার জন্য নিজের এক বন্ধুকে ফোন করলাম। বন্ধুটি এখন ঢাকায় দায়িত্ব্য পালন করছে। পুলিশের চাকরী নিয়ে তার অনেক গর্ব থাকলেও এবার বাড়িতে এসে তেমন কোন উচ্ছাস দেখাতে পারেনি। এলাকার লোকজন বলছিল পুলিশের চাকুরী করা আর লা’নতের ভাগিদার হওয়া একই কথা। অথচ কিছুদিন আগেও এই পেশাটি ছিল সোনার হড়িনের মতো।
পুলিশের চাকুরীতে ঢুকেছিল কনেস্টবল হিসেবে। অথচ আজকে সাব ইন্সপেক্টর। দলিয় বিবেচনায় তাকে এতটা সম্মানিত করা হয়েছে। কট্টর আওয়ামী ঘরনার এই বন্ধুটি অকাতরে স্বিকার করে নিল বাবুনগরীর ওপর নির্যাতনের কথা। প্রথম দিকে তাকে কেবল মানসিক টর্চার করার নির্দেশ ছিল। বিভিন্ন কুটিল প্রশ্নের বানে রেখে, নির্ঘুম রাত কাটিয়ে, মাঝ রাতে হটাৎ করে সামান্য তন্দ্রাচ্ছন্ন ভাব থেকে জাগিয়ে নিয়ে দারুন ভাবে নির্যাতন করা হতো। এগুলোর সব কিছুই ছিল মানসিক যন্ত্রনা। অকথ্য ভাষায় গালি গালাজ করে তাকে মানসিক ভাবে বিপর্যস্ত করে ফেলার চেষ্টা ছিল প্রথম দিকে। কিন্তু বাবুনগরীকে দিয়ে যখন মিথ্যে স্টেসমেন্ট দেওয়ানোর পরিকল্পনা সরকার হাতে নিল তখন থেকে শারিরিক নির্যাতনের পর্ব শুরু হয়ে যায়। এমন কোন পদ্ধতি নেই যে ভাবে তাকে নির্যাতন করা হয়নি। পুলিশের এই বন্ধুটিকে প্রশ্ন করলাম যে, একজন আলেমের গায়ে হাত দিতে কি তোদের এতটুকো বিবেক বাধা দেয়নি। বন্ধুটি যদিও সেই বাবু নগরীরর সাথে কথা বলতে পারেনি বা তার রিমান্ডের সাথে তার কোন সম্পর্ক নেই। তবে তাকে রিমান্ডের নামে কি ধানের নির্যাতন করা হয়েছে তার সবটুকো সে অবলোকন করেছে।
পুলিশের এই নির্মমতায় আমাদের কে আবারো ভাবিয়ে তুলছে যে, আসলেই কি দেশের কোন বিবেকবান মুসলমান পুলিশের সাথে নিজেদের আতিœয়তা করার সাহস করবে বা তাদের সাথে আতিœয়তার বন্দন রচনা করা জায়েজ হতে পারে ? আমাদের মুফতি সাহেবরা ফতোয়া দিতেন যে, অপরাধের সাথে জড়িত প্রত্যেক ব্যক্তির মতো অপরাধ সহ্য করা ব্যক্তিরাও সমান অপরাধী। যদি তাই হয় তাহলে পুলিশের বন্ধুরা কি এই অপরাধ বোধ থেকে বেচেঁ যেতে পারবেন ? তারা কি এর বিরুদ্ধে উপযুক্ত কোন প্রতিবাদ জানাতে পারতেন না। তারা কি কেবল নিজেদের চাকুরী বাচাঁতেই সরকারের অমানবিকতাকে সার্পোট করে যাচ্ছেন। ভাবখানা দেখে তো এমন মনে হয় যে, ভবিষ্যতে কোন সরকার যদি তাদের কে সিজদা করার হুকুমদেয় তারা সেটাও মেনে নেবেন সামান্য দুনিয়ার স্বার্থ্য।ে এই যদি হয় অবস্থা তাহলে ভবিষ্যতে পুলিশের অবস্থাও হবে আমাদের দেশের ডাক্তার দের মতো যাদের অধিকাংশ সন্তানরা হয় মানসিক বা শারিরিক প্রতিবন্ধি। কথিত আছে মানুষের জীবন নিয়ে বানিজ্যের কারনে ডাক্তাররা হাজারো মানুষের লানতের ভাগিদার হন বলেই তাদের এই অবস্থা। ভবিষ্যতে পুলিশের ছেলে মেয়েদের পরিনতিও এমনটি হবে বলে সাধারন মানুষ মনে করছে। জানিনা তারা আর কত অসহায় আলেম ওলামারা লানত কাধেঁ করে বেড়াবেন।
বাবুনগরী হুজুর সুস্থ্য হয়ে না ফিরা পর্যন্ত অনেক গুলো প্রশ্নের জবাব খুজে পাওয়া যাবে না। পুলিশ তাকে দিয়ে যে সকল মিথ্যা স্বাক্ষ্য বা স্টেটম্যান্ট দিয়েছে, বিশেষ করে বি এন পি এবং জামায়াত কে জড়িয়ে তার সততা কতটুকো ছিল। এরি মধ্যে একদল আলেম দাবি করা শুরু করে দিয়েছেন এবং তাদের অন্ধ কর্মীরা বিভিন্ন সাইটে পোষ্ট দিয়ে দাবি করেছেন যে, হেফাজতের কর্মসুচীতে সরকারের ক্রেকডাউনের কারণ হচ্ছে এই অরাজনৈতিক আন্দোলনটি কে জামায়াত তার স্বার্থ্যে ব্যাবহার করতে শুরু করা। তাদের দাবি অনুযায়ী যাদের কর্মসুচীতে পুলিশ পাহারা দেবে, সরকারের ওপর মহল সন্তুষ্ট চিত্তে অনুমতি দেবে তারাই হকপন্থী। তারা দাঁত বের করে হাসছেন আর দাবি করছেন যে, আমাদের নেতারা দারুন এক স্বিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন যে, হেফাজতের সাথে সরাসরি জড়াবেন না। যদি জড়াতেন তাহলে আজকে ব্যর্থতার দায়িত্ব্য তাদের কে নিতে হতো। অসম্ভব মুর্খতার পরেও তারা নাকি ইসলামী দলের নেতা। মদিনার মুনাফিকরাও এমন দাবি করতো যে, আমরা যুদ্ধে যাবো না, কারণ তোমরা হেরে গেলে আমাদের কে দায়ি করবে। এ জাতিয় অনেক কথা বলে মুনাফিকরা যুদ্ধ থেকে গা বাচিয়ে রাখতো। আসলে তাদের উদ্ধেশ্য ছিল কোরায়েশদের সহায়তা করা। তারা জানতো যে, কোরায়েশদের বিরুদ্দে ঐক্যব্ধ ভাবে কোন যুদ্ধ না করাই ছিল তাদের কে সহায়তা করা। ততকালে সাহাবায়ে কেরাম মুনাফিকদের এই চাল ঠিকই বুঝেছিলেন। বর্তমানেও মুনাফিকদের কথা বার্তায় সেই একই আলামত দেখা যাচ্ছে। মনে হচ্ছে হেফাজতের সাময়িক ব্যর্থতায় তারা সন্তুষ্ট। কিন্তু তারা ভুলে যাচ্ছে যে, দু একজন বাবুনগরীর পায়ে পচন ধরেছে বলে হেফাজতের গায়ে পচন ধরেনি। হেফাজতের কুটি কুটি কর্মী বাহিনীর মাথায় পচন ধরেনি। তারাও মুনাফিকদের কে সমুলে বিনষ্ট করে তৌহিদী জনতার ঐক্যপ্রতিষ্টা করে ছাড়বে। সেদিন কারো ফতোয়ার চটি কিতাব কোন কাজে আসবে বলে মনে হয় না।
বিষয়: রাজনীতি
১৫৭৭ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন