কত জন মুসলমান আওয়ামী ভোটার ? আসুন হিসেব করে দেখি।
লিখেছেন লিখেছেন স্বপ্নতরী ২০ মে, ২০১৩, ১১:১০:২০ রাত
গত পাচঁটি বছরে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের শাষন আমল কে পর্যায়লোচনায় নিয়ে অনেক আওয়ামী ভক্তরা পর্যন্ত হতাশ হচ্ছেন। তারা একটি বিষয় নিয়ে যথেষ্ট উদ্ভিগ্ন বলে স্বিকার করছেন। তারাও বুঝতে পারছেন না যে, আওয়ামী লীগ নেত্রী শেখ হাসিনা হটাৎ করে কেন এতটা ইসলাম বিদ্ধেষী মনোভাব লালন করতে শুরু করলেন। কেন এদেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষের আকীদা বিশ্বাসের ওপর কুঠারাঘাত করে একের পর এক বিধিবিধান কায়েম করে যাচেছন। কেনই বা তৌহিদী জনতার সাথে এক প্রকার মুখোমুখি অবস্থানে চলে এসেছেন। বামদের পরামর্শ এতটা কেন মুল্যায়ন করতে হচ্ছে শেখ হাসিনা কে ?
অন্যদিকে রাজনৈতিক ভাবে আওয়ামী লীগ যেন বিরোধী মত ও পথ কে দমনের জন্য মরিয়া হয়ে উঠেছেন। বিরোধী নেতাদের কে রাজনৈতিক মামলায় রিমান্ডে নিয়ে নির্যাতনের রেকর্ড গড়েছেন মহাজোট সরকারের নেত্রী শেখ হাসিনা। পর্যবেক্ষকরা মনে করছেন অদৃশ্য এক হাতে ইশারায় বা নিশ্চয়তায় শেখ হাসিনা স্বৈরাচারী মনোভাব গ্রহনে উ™ভুদ্ধ হয়েছেণ। কোন শক্তি হয়তো তাকে আগামী নির্বাচনের বিজয়ের নিশ্চয়তা প্রদান করে এদেশের তৌহিদী জনতার কন্ঠ রোধ করতে তাকে এতটা বেপরোয়া হতে উৎসাহিত করেছেন।
আওয়ামী লীগের সাধারন কর্মীরা মনে করছেন যে, পরবর্তি নির্বাচনে জয় লাভের কোন আশা না দেখতে পেয়ে শেখ হাসিনা ধরেই নিয়েছেন যে, পরবর্তিতে তিনি ক্ষমতায় আসতে পারবেন না। এ কারনে বিদেশী প্রভুদের ইংগিতে তিনি তত্ত্ববধায়ক আইনটি সংবিধান থেকে সরিয়ে দিয়েছেন। এভাবে হয়তো তিনি একটি নির্বাচন করতে পারবেন কিন্তু ১৫ ই ফেব্রুয়ারী মার্কা নির্বাচনে কোন সরকার তৈরি হয় না বরং জনগন থেকে দুরে সরে যায়। এ অবস্থায় ভবিষ্যতে দলের নেতাকর্মীরা চরম বিপদে পড়ে যাবেন। বিরোধী দলের নেতাকর্মীদের হাতে নির্যাতন সইতে হতে পারে তাদের কে। আর শেখ হাসিনা তখন তাদের কষ্ট দুঃখ কে ইস্যু করে আবারো আন্দোলন সংগ্রাম করার সুযোগ পাবেন। এভাবে আমরা মাঠে মারা যাবো কিন্তু নেতারা ঠিকই আরামে থাকবেন প্রতিবেশি কোন দেশে। আওয়ামী নেতাকর্মীরা বিষয়টি টের পেলেও হাই কমান্ড যেন দিনকে দিন হাই ভোল্টেজে রূপ নিচেছ। তাদের কাছে কোন কিছুই মুখ্য নয়। যে কোন উপায়ে ক্ষমতায় আসাই তাদের লক্ষ।
আমরা জানি যে, এদেশের গন মানুষের দাবি গুলোকে একের পর এক উপেক্ষা করে সরকার এমন কিছু রাজনৈতিক স্বিদ্ধান্ত নিয়েছেন যা গনতন্ত্রের জন্য মোটেও সুখকর ছিল না। দেশের রাজনৈতিক আকাশ অনেকটা কালো রূপ ধারন করে নিয়েছে। এত সব ঘটনা অঘটনের মধ্যেও মানুষ এই দেশ বা এ দেশের সরকার কে রাজনৈতিক সরকার বা গনতান্ত্রিক সরকার হিসেবে ভাবতো, কিন্তু গত কয়েকদিনের কিছু ঘটনা মানুষকে আবারো ভাবতে বাধ্য করেছে আসলে আওয়ামী লীগ গনতন্ত্রের কোন সংজ্ঞায় আদৌ বিশ্বাস করে কিনা। সর্ব শেষ আপডেট অনুযায়ী আওয়ামী মহাজোট সকল প্রকার সভা সমাবেশের ওপর নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে। ইতিমধ্যে কয়েকটি প্রত্রিকা ও টিভি চ্যানেল বন্ধ করে দেয়ার পরেও মিডিয়া কর্মীদের তেমন তোপের মুখে পড়তে হয়নি বলেই বর্তমান সরকার বেপরোয়া ভাবে এত বড় একটি অগনতান্ত্রিক, স্বৈরচার সূলভ সিদ্ধান্ত নেওয়ার সাহস দেখালো। বাকশালের গোড় দোড়ায় দাড়ানো এই সরকারের প্রচন্ড তোষামদে লিপ্ত মিডিয়াগুলোও এখন নড়ে চড়ে বসেছেন বলে মনে হচ্ছে। তাদের সম্পাদকয়ী নীতিমালায় তারাও কিছুটা আওয়ামী তোষন থেকে বের হবার চেষ্টা করছেন।
আমরা জানিনা এটা তাদের ভবিষ্যত সরকারের হাত থেকে পিঠ বাচাঁনোর কোন কৌশল কিনা, অথবা নিজেদের হাড়ানো জনপ্রিয়তাকে উদ্ধারের শেষ রক্ত বমি কিনা। যাই হোক না কেন, এ দেশের মিডিয়া তাদের গ্রহণ যোগ্যতা ব্যাপক ভাবে হাড়িয়ে ফেলেছেন অনেক আগেই। দেশের সাধারন জনগনের একটি ব্যাপক অংশ এই সকল মিডিয়াকে আওয়ামী দালাল বলে বিশ্বাস করতে শুরু করেছে। তারা এদের সকল তথ্য এবং উপাদান কে এক বাক্যে উড়িয়ে দিচ্ছে। কিছুদিন আগেও এই অবস্থা ছিল বলে মনে হচ্ছে না। সর্ব শেষ শাহবাগের গন জাগরনের মঞ্চের ওপর নিজেদের প্রচন্ড ভক্তি প্রদর্শন করে তারা গনমানুষের দাবির প্রতি আস্থাশীল দাবি করতে থাকে। কিন্তু কয়দিন পরেই যখন জাগরন মঞ্চের গোমর ফাঁস হয়ে গেল এবং জাগরন মঞ্চের বিপরিতে হেফাজতে ইসলাম মাঠে নামলো তখনি তাদের আসল চেহারা প্রকাশ হয়ে গেল। হেফাজতের কর্মসুচীকে সেভাবে কাভারেজ না দিয়ে এক দুই শ লোকের মিছিল কে লাইভ টেলিকাস্ট করে তারাও নিজেদের গন মানুষের পক্ষ শক্তি প্রমানে বা নিরপেক্ষ মিডিয়া হিসেবে প্রমানে দারুন ভাবে হোচট খেয়েছে। তারাও সরকারের সাথে তাল মিলিয়ে হেফাজতের কর্মসুচী নিযে বিভ্রান্তি ছড়াতে শুরু করে। তাদের এই বিভ্রান্ত রিপোটিংয়ের কারনে গোটা দেশের তৌহীদি জনতা তাদের কে দালাল মিডিয়া নামে আখ্যায়িত করতে থাকে। এ অবস্থায় সরকার দিগন্ত টিভির সম্প্রচার সাময়িক ভাবে বন্ধ করে দেয়ার পরে সাধারন জনগনের কাছে সরকারের পরিচালিত মিডিয়ার তালিকা প্রকাশিত হয়ে যায়। যারা এতদিন সুশীল মিডিয়া নামে নিজেদের কে জাহির করতে পছন্দ করতেন, তাদের দালালীর মাত্রা বিটিভি কেও ছড়িয়ে যাওয়ার জনগন বিস্মিত হয়েছে।
আমার দেশ পত্রিকার সম্পাদক মাহমুদুর রহমানের বিরুদ্ধে যে সকল পত্রিকার সম্পাদকরা বিষেধগার করেছেন এবং তাকে গ্রেফতার করার জন্য তদবিরও করেছেন তারা বোধ হয় ভুলে গেছেন যে, মাহমুদুর রহমান হাতে কলমে দেখিয়ে দিয়েছেন কিভাবে সাংবাদিকতা করতে হয়, কিভাবে সত্যকে মানুষের সামনে তুলে আনতে হয়। দেশের এক শ্রেণী কিট নাস্তিক নামধারী পশুদের হাতে জগাখিচুরী মার্কা লেখার মাধ্যমে প্রিয়নবী স কে যখন ব্যাপক হারে গালাগাল করা হচ্ছিল, তখন এই জাতিয় সুশীল মিডিয়াগুলো সেটাকে মুক্তচিন্তার নাম দিয়ে জায়েজ করার কাজে ব্যাস্ত হয়ে পড়েছিলেন। অন্যদিকে মাহমুদুর রহমান যখন এই কুৎসিত চিত্র গোটা জাতির কাছে পরিস্কার করে তুলে ধরলেন এবং তাদের প্রিয় নবীর বিরুদ্ধে জগন্য অপবাদ রটনাকারীদের বিরুদ্ধে সোচ্চার হবার আহ্বান জানালেন তখন আমাদের এই মিডিয়া গুলো সেটাকে সাম্প্রদায়িক উস্কানীর অভিযোগ এনে নিবন্ধ প্রকাশ করতে শুরু করলো। তারা হয়তো নিজেদের কে সেই নবীর উম্মাতের কাতার থেকে খারিজ করে দিয়েছেন যাকে গালাগাল করে নাস্তিকরা নিজেদের মুক্তচিন্তার পতাকাবাহী হিসেবে প্রমান করার প্রয়াস পেয়েছে। নতুবা নবীর উম্মাত হিসেবে তাদেরও তো কর্তব্য ছিল এসবের বিরুদ্ধে সোচ্চার হওয়া। কিন্তু দালালী যাদের আজন্ম রোগ তারা কি পারে সত্যের জন্য, নিজেদের ঈমানকে বাচাঁতে মিথ্যের মুখোমুখি লড়াইয়ে নামতে। মাহমুদুর রহমান একজন সাংবাদিক হিসেবে যে চিরকাল অমর হয়ে থাকবেন এমনটি নয়, বরং তিনি একজন ঈমানদার মুজাহিদ হিসেবেও সম্মানিত হবেন আল্লাহ পাকের দরবারে। নতুবা এত নির্যাতনের পরেও কেউ তার আদর্শের ওপর টিকে থেকেছে এমন রেকর্ড খুব কমই খুজে পাওয়া যাবে।
সর্বশেষ হেফাজতের কর্মসুচীকে দারুন ভাবে কভারেজ দিয়ে যে বিপদ মাহমুদুর রহমান ডেকে এনেছেন তার পরিনতি আমরা দেখতে পাচিছ। হেফাজতের নেতারা বার বার বলেছেন মাহমুদুর রহমানকে গ্রেফতার করা হলে তারা দেশ কে অচল করে দেবেন। কিন্তু সকল রাজনৈতিক বক্তৃতা বিবৃতির মতো হেফাজত নেতারাও চুপশে গেলেন। তারা মাহমুদুর রহমানের জন্য কোন কর্মসুচী ঘোষনা করতে ব্যার্থ হয়েছেন। এ থেকে ধারণা করা যায় যে, রাজনীতির মাঠে কাচা এই হেফাজত নেতারা ব্যক্তি জীবনে যতই পরহেজগার হোন না কেন, নিজ নিজ বিষয়ে যতই বিজ্ঞ বা আধ্যাতিœক নেতা হোন না কেন, মাঠের আন্দোলনে তাদের অনেক কিছু শিখার আছে। তাদের কে আবেগ বাদ দিয়ে বাস্তবতা কে সাথে নিয়ে কর্মসুচী ঘোষনা করা উচিত ছিল। তারা আওয়ামী সরকারের কোন রোষানলে ইতিপুর্বে পড়েছেন বলে জানা যায় না। তাদের ঘরনার একটি দল অবলিলায় নিজের দলিয় কার্যক্রম পরিচালনা করছেন, তাদের মসজিদ ভিত্তিক বৈঠক গুলোকে গোপন বৈঠক হিসেবে বানচাল করার কোন নজির এই দেশে নেই। এ কারনে তারা ৬ই মে র ঘটনায় বিপর্যস্ত হযে পড়েছেন। তারা বুঝতেও পারেননি যে, নিজের প্রয়োজনে আওয়ামী লীগ অন্যকে কিভাবে প্যাদানী দিতে পারে। তারা ভাবতেও পারেন নি যে, আওয়ামী কর্মীদের সাজানো অগ্নিপাতের ঘটনা কতটা নাটকিয় ভাবে মিডিয়া সার্কাসের মাধ্যমে তাদের ঘারে চাপিয়ে দেওযা হবে। তারা হয়তো এখন কিছুটা উপলদ্ধি করতে পারবেন যে, এদেশে ইসলামী দলগুলো এ সকল মিডিয়ার কত মিথ্যাচারের স্বিকার হয়ে দল পরিচালন করেছেন। তারা হয়তো এও বুঝতে পেরেছেন যে, দিনের পর দিন নির্যাতিত হয়েও কিভাবে ইসলামী দলের নেতারা মাঠে দাড়িয়ে ছিলেন। যে সকল ব্যক্তি বর্গ ইসলাম এবং ইসলামী আন্দোলন নিয়ে অতিমাত্রায় গরম গরম বক্তৃতা বিবৃতি দিয়ে চলছিলেন তাদের কাউকেই এ জাতিয় নির্যাতনের স্বিকার কখনো হতে হয়নি। এ অবস্থায় তারা আল্লাহর কাছে বিচার চেয়ে দোয়া দিবস ঘোষনা করা ছাড়া আর কিই বা করতে পারেন। যদি আল্লাহর কাছ্ইে বিচার চাইতে হবে তাহলে অযথা এতগুলো প্রাণ কে কেন বিপদের মুখোমুখি করা হলো। নাস্তিকদের বিচার আল্লাহ নিজেই তো করবেন। আমরা কেবল দোয়া করে মসজিদের কোনায় বসে জিকির রত থাকতাম। কেন এত অঘটন ঘটানো হলো। কে দেবে এর উত্তর।
অনেকে ভাবছেন যে, নব্বই ভাগ মুসলমানের দেশে আওয়ামী লীগ কেন ইসলাম বিরোধী নীতিমালা করছে, কেন আলেম ওলামাদের কে নির্যাতন করার সাহস পাচ্ছে, কেনই বা নাস্তিকদের পক্ষে সরাসরি অবস্থান নিয়েছে ?
এত কিছুর পরেও কিভাবে মুসলমানরা আওয়ামী লীগকে সমর্থন দিতে পারে, ইত্যাদি ইত্যাদি। এবার এই বিষয়টি পোষ্ট মর্টেম করা যাক। দেখে নেয়া যাক যে, আসলেই কি আওয়ামী লীগ সত্যিকারের কোন মুসলমানের প্রতিনিধিত্ত্ব করে ? কোন মুসলমান কি তাদের সমর্থন করতে পারে ?
কয়েকটি নির্বাচনের ওপর ভর করে এবং নির্বাচন কমিশান থেকে প্রাপ্ত তথ্য মতে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের প্রাপ্ত ভোটের হিসেব হচ্চে সর্বোচ্চ ৪০- ৪৪ শতাংশ পর্যন্ত। গত নির্বাচনের ম্যাজিক হিসেব গনায় ধরাটা বোকামী হবে, কারণ কয়েকটি জায়গায় ১০১ থেকে ১০৫ শতাংশ ভোট গননার খবর রয়েছে। কয়েক লক্ষ ব্যালট পেপার রাস্তায় রাস্তায় খুজে পাওয়া গেছে। পরে অবশ্য আইন শৃংখলা বাহিনীর সহায়তায় সেগুলোকে ধামা চাপা দেয়া হয়েছে এবং যে সকল সাধারন জনগন ব্যালট প্যাপার খুজে বের করে দিয়েছেন তাদের কে পুলিশে হেফাজতে নিয়ে যথেষ্ট আপ্যায়নের খবরও পাওয়া গেছে। এই হিসেবেও আমরা গত নির্বাচনের রেজাল্ট কে গনায় ধরতে পারি না।
নির্বাচন কমিশনের দেয়া তথ্য মতে আমাদের দেশের মোট ভোটারের মধ্যে প্রায় ২৪ শতাংশ হিন্দু, ৪-৫ শতাংশ উপজাতি এবং অন্যান্য ধর্মালম্বীরা রয়েছেন। এই হিসেবে আওয়ামী লীগ সংখ্যা লগুদের ভোট পায় প্রায় ২৭ শতাংশ বা তারাও বেশি। কারণ হচ্ছে সাধারন সংখ্যালগুদের ভোট বি এন পি বা অন্যান্য দল তেমন একটি পায় না। ওপারেরর দাদাদের পরামর্শের বাইরে এদেশের হিন্দুরা এক চুলও নড়াচরা করে বলে কেউ শুনেনি। বি এন পির যে সকল হিন্দু নেতারা আছেন তারাও ধানের শিষে ভোট দেয় বলে স্বয়ং বি এনপি নেত্রীও বিশ্বাস করেন না। এই হিসেবে সংখ্যা লগুদের ভোট প্রায় ৯৯ শতাংশ আওয়ামী লীগ পায়। ৪৪ শতাংশ থেকে বাকি রইল আরো ১৫ শতাংশ বা তার কিছু বেশি। এই ১৫ শতাংশের মধ্যে প্রায় ৬-৭ শতাংশ ভোটার স¤পূর্ণ নিরপেক্ষ হিসেবে থাকেন। তারা কেবল মাত্র বিরোধী দলকে ভোট দেন। কারণ হচ্ছে আমাদের সোনার দেশে যে কয়জন ক্ষমতায় ছিলেন তারা নিজেদের দুর্নিতী আর স্বৈরাচারী আচরন এবং দুঃশাষনের জন্য সাধারন নিরপেক্ষ ভোটারদের সমর্থন হাড়িয়ে ফেলেন। স্বাভাবিক ভাবেই তারা বিরোধী দলের ওপর আস্থা রাখেন এবং সরকার হিসেবে বিরোধীদলের দিকে মুখ চেয়ে থাকেন। এই ভোটাররা অনেকেই ব্যক্তিগত কারনে, আতিœয়তার দোহাই দিয়ে, কেউ বা নিজের পীরের দোহাই দিয়ে, কেউ বা দরবার অথবা খানকা রক্ষার জন্য নিজ নিজ পছন্দের প্রার্থীকে ভোট দেন। এরা পাঁচ বছর পর পর নিজেদের স্বিদ্ধান্ত পাল্টে ফেলেন। এরা সব দিকেই তাকাতে পছন্দ করেন।
বাকি ৯ শতাংশ ভোটারের মধ্যে যে সকল মুসলমান পড়েন তাদের মধ্যে ৭০ শতাংশ রয়েছে প্রবল ধর্মনিরপেক্ষ এবং ধর্মকর্ম মুক্ত একদল মুক্ত চিন্তার মানুষ। এদের কাছে ধর্ম হচ্ছে একেবারে আফিমের মতো। এদের মতে এই ধর্ম থেকে যত দুরে থাকা যায় দুনিয়াটা তাদের কাছে ততই উপভোগ্য বা উচিছষ্ট হয়ে যায়। এরা ধর্মকে এর প্রকার প্রগতির দুশমন ভাবেন। এদের এই সকল চেতনাকে আরো উস্কে দেয়ার জন্য যে দলটি সব সময় এক পায়ে খাড়া থাকে এবং তাদের কে যারা লালন পালন করে আসছে দীর্ঘ্য চল্লিশ বছর ধরে সেই দলটি একমাত্র আওয়ামী লীগ। স্বাভাবিক ভাবেই তারা আওয়ামী লীগের ভোট ব্যাংক হিসেবে সংখ্যালগুদের কাতারে আসতে পারেন।
অন্যদিকে যে সকল সাধারন মুসলমানরা আওয়ামী চরিত্রকে অধ্যায়ন করতে ব্যার্থ হচ্ছেন তারাও এক প্রকার দিশে হারা মুসলমান। তারা ধর্ম সম্পর্কে একেবারে কোন ধারণা রাখেন না। কেউ কেউ হয়তো বিভিন্ন উপায়ে ধর্ম সম্পর্কে সামান্য কিছু জ্ঞান নিয়েছেন এবং ভাসা ভাসা কিছ আমল করেও যাচেছন কিন্তু প্রকৃতপক্ষে তারাও ধর্মের মুলবানী অনুধাবনে এবং ইসলামের পজিশান উপলদ্ধি করার সুযোগ পাচ্ছেন না। তাদের কাছেও ইসলাম একটি গতানুগতি ধর্মের মতো। যার রয়েছে কতগুলো ঐতিহাসিক ঘটনা প্রবাহ এবং কিছু নিয়ম কানুন। যেগুলোর ওপর বিশ্বাস স্থাপন করা এবং কিছু নিয়মকানুন মেনে চলার নামই ধর্মকর্ম। এক কথায় তারাও হিন্দু ধর্মের অনুশারীদের মতো ধর্মকে কেবল মাত্র র্চচার বিষয় বলে মেনে নিয়ে জীবন পরিচালনা করে। ধর্মের অমোঘ বানী তাদের কর্নকুহরে কখনো পৌছেনা। ধর্ম বিষয়ে তারা ততটা উদগ্রিবও নয়, তারা মনে করে যে, ধর্ম চর্চার বিষয় একে নিয়ে এত ব্যাপক ভাবনা কোন কারণ নেই। এ জাতিয় নামধারী মুসলমানদের সংখ্যাই এই দলটিতে বেশি। নতুবা ইসলামকে সত্যিকার অর্থে উপলদ্ধি করেছেন এবং তার ভাবগর্ভে প্রবেশ করার সুযোগ পেয়েছেন এমন একজন মুসলিম সমর্থকও খুজে পাওয়া দুষ্কর হবে।
বাকি যে সকল মুসলমান রয়েছেন তাদের মধ্যে বেশির ভাগ হচ্ছেন দল নিরপেক্ষ তাবলীগ জামায়াতের সময় লাগানো মানুষেরা এবং বিভিন্ন পীর ফকিরের মুরিদ বা মুতওয়াল্লী সেজে জাগতিক জীবন থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে কোন এক মাজার বা দরগার কোনে অবস্থান নিয়ে কেবল ধর্ম কর্মের নামে কিছু আচার অনুষ্টান পালন করা গোটা কয়েক মুসলমান। তারা বাহ্যিক ভাবে যতই আমলদার হন না কেন ভোটের সময় মার্কা চিনতে তাদের কোন অবস্থায় ভুল হয় না। তারা তাদের বংশানুক্রমিক দায়িত্ব্য সঠিক ভাবেই পালন করেন। এ জাতিয় লোকেরা একশত ভার হজ্জ করুক, কয়েক বছর চিল্লা কাশীতে সময় কাটাক না কেন আওয়ামী লীগের প্রিতী এদের অন্তর থেকে কোন দিনই সরানো যাবে না। এরা আওয়ামী লীগের পক্ষ হয়ে ধর্ম আর ধার্মিকতার সনদ বিলি করেন। এদের দু চার জনের দিকে তাকিয়ে আওয়ামী নেতারা সাধারন জনগন কে বোকা বানাতে অভ্যস্ত হয়ে পড়েছেন যে, দেখো ! আওয়ামী লীগ কোন অবস্থায় ধর্মহীন দল নয়, যদি তাই হতো তাহলে এতো ভালো ভালো ধার্মিক মানুষরা কি কখনো আওয়ামী লীগকে সমর্থন দিতো।
এসব কিছু দেখিয়ে কতিপয় বেয়াক্কেল কে তারা আরো বোকা বানিয়ে তাদের প্রচারনার হাতিয়ার বানিয়ে দেয়। তারা ভাবে যে, এত সব দাড়ি টুপি ওয়ালা লোক কি কিছু বোঝেনা, তারা তো আওয়ামী লীগ কে সমর্থন করে, তাহলে আলেম ওলামারা যা কিছু বলে আসলে সেটা ক্ষমতা দখল করার জন্য। কিন্তু ক্ষমতায় যাওয়ার পরে আওয়ামী লীগের ধর্মহীন চরিত্র ফাঁস হয়ে যাওয়ার পরেও তারা এই সকল কাজের জন্য লাগামহীন যুক্তির সন্ধান করতে থাকে। এরা হচ্ছে হাসিনার দৃষ্টিতে সত্যিকারের মুসলমান। এই কারনে তিনি বার বার দাবি করেছেন যে, ইসলাম যদি কেউ সত্যিকার ভাবে পালন করে তাহলে আওয়ামী লীগের নেতারাই করে, অন্যরা যা করে তাহলো ধর্ম নিয়ে ব্যাবসা। আওয়ামী লীগ ধর্মকে ব্যাবহার করে নৈরাজ্জকে একদম পছন্দ করেনা।
অধুনা আওয়ামী শিবিরে আরো কিছু ব্যক্তিবর্গের উদ্ভব ঘটেছে যাদের কে সাধারন মানুষ আলেম নামেই চেনে। এদের সম্পর্কে কিছু ধারণা না দিলে অনেকে ভাবতে পারেন যে, এতগুলো আলেম যাদের কে সাপোর্ট করে তারা কি করে ইসলাম বিদ্ধেষী হতে পারে। প্রথমত একটি কথা জেনে নেওয়া দরকার যে, যে সকল মানুষ ইসলাম কে একটি পরিপূর্ণ জীবন বিধান হিসেবে মেনে নেয়না বা মেনে নিলেও জাগতিক প্রয়োজনে নিজের স্বার্থ্য হাসিল করার জন্য নিজের বিশ্বাসের সাথে প্রতারনা করে ইসলাম তাদের কে কোন অবস্থায় মুসলমান মনে করে না, আলেম মনে করাতো আরো পরের বিষয়। যে সকল দরবারী আলেমরা সরকারের সুযোগ সুবিধা পাবার জন্য ইসলাম কে কাট ছাট করার উপায় খুজে বেড়ান এবং যুগে যুগে যারা বাতিলের কাছে নিজেদের মস্তক বিক্রি করে দিয়েছেন এবং ইসলামের চরম দুষমন দের কাছ থেকে সহানুভুতি পেয়েচেন তারা সবাই আবুল ফজলের উত্তরসুরী। তাদের কে গনায় ধরার কোন মানে হয় না।
তারা ইসলামকে নিজেদের মতো করে বুঝার চেষ্টা করেছেন। এদের বেশির ভাগ হচ্ছে মাজারের কোণে পড়ে থাকা একদল গঞ্জিকা সেবি। তারা কেবল বাতিলের বিপদের সময় মাঠে আসে। তাদের নেশার আসর জমাতে এবং বিভ্রান্ত আকিদা বিশ্বাস প্রচার করতে আওয়ামী টাইপের দলের সাথে থাকা তাদের জন্য খুবই জরুরী। নতুবা সত্যিকারের ইসলামের স্পিরিট যদি জনগনের গোর দোড়ায় পৌছে যায় তাহলে মাজারের ভন্ডামীর ব্যাবসায় লাল বাতি জ্বলবে এবং তাদের দরবার গুলো দীর্ঘ্যস্থায়ী খদ্দের শূন্যতায় ভূগতে শুরু করবে। এভাবে তাদের নেশা এবং পেশা দুটোরই বারোটা বাজবে। যদি গভির ভাবে পর্যবেক্ষন করা হয় তাহলে দেখা যাবে যে, প্রতিটি ইসলাম বিরোধী শাষকরা কোন না কোন ভাবে এই সকল ভন্ডদের কে প্রমোট করেছে নিজেদের স্বার্থ্য।ে তারা জনগনের দৃষ্টিকে অন্যদিকে প্রবাহিত করতে, নিজেদের আসল চেহারা জনগন থেকে সরিয়ে নিতে এ জাতিয় কিছু দরবারী আলেমদের কে নিজেদের সাথে রাখা পছন্দ করেন। এসব দিক বিবেচনায় নিয়ে আওয়ামী নেতারাও কিছু আলেমকে সাথে নিয়েছেন যাদের বেশির ভাগ হচ্ছে বিভিন্ন দরবারী খানকা এবং মাজারের মুতওয়াল্লী। এদের ভাষা এবং বিবৃতি শুনলে মানুষ বুঝতে পারে যে, আসলে এরা কোন দলকে বাচাঁতে মাঠে নেমেছেন।
উপরের পরিসংখ্যান যদিও একেবারে পারফেক্ট নয় তারপরেও আমরা সহজেই আন্দাজ লাগাতে পারি যে, আওয়ামী লীগ এদেশের সত্যিকারের তৌহিদী জনতার ভোট কত শতাংশ পর্যন্ত পেতে পারেন। তাদের ভোট ব্যাংক গুলো সর্ম্পুন হেফাজতে রয়েছে এবং দিনে দিনে তাদের ভোটার সংখ্যা আরো বেড়ে যাবে, কারণ হচ্ছে নতুন পজন্মের তরুনরা যে সকল কারনে ধর্ম এবং ধার্মীকতাকে ঘৃনা করতে পারে তার সব আয়োজন আওয়ামী লীগ একটু একুট করে সেরে নিয়েছে। আলেম ওলামাদের প্রতি ঘৃনা বোধ জন্মানোর জন্য তারা তৈরি করেছেন জে এমবির মতো মুর্খ্য মুজাহিদ (???) বাহিনী। যাদের কাছে না ছিল সত্যিকারের কর্মসুচী না ছিল ইসলাম সম্পর্কে সত্যিকারের ধারণা। তাদের এই সকল কর্মকান্ডকে আলেম সমাজ দারুন ভাবে প্রতিরোধ করার পরে আওয়ামী মিডিয়া জে এমবির নামে গোটা আলেম ওলামাদের এক বিকৃত চিত্র তরুন সমাজের কাছে উপস্থাপন করে। যার পরিনতিতে গোটা তরুন সমাজ আলেম ওলামাদের কাছ থেকে অনেক দুরে সরে গেছেন।
সেদিন আমার এক পুরাতন বন্ধু আমাকে দেখে জে এমবি বলে ডাকা ডাকা করছিল। বেচারার কাছ দাড়ি টুপি ওয়ালা কোন মানুষ মাত্রই জে এমবি। অথচ এই সব প্রচারনার বিরুদ্ধে যুতসই কোন জবাব আমাদের আলেমরা দিতে ব্যার্থ হয়েছেন। তারা তাদের মাদ্রাসা আর খানকার বড়ত্ব্য নিয়ে এতটাই মশগুল হয়ে পড়েছিলেন যে, তাদের নজরে এত বড় বড় মিডিয়া বিপ্লব ও মিডিয়ার নামে মিথ্যাচারে সয়লাব তাদের কাছে মোটেও ভাবনার বিষয় হয়ে উঠতে পারেনি। তারা ভাবতেন এগুলো কেবল মাত্র জামায়াত বিরোধীতার কারনে করা হচেছ, এর সাথে ইসলামের ভালো মন্দের কোন সম্পর্ক নেই। ইসলাম এর দ্বারা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে না। কিন্তু তাদের ভুল অবশেষে ভেংগেছে এবং তারাও মিডিয়ার মিথ্যাচারের কবলে পড়ে দিশা হয়ে পড়েছেন। তারা বুঝতে পেরেছেন যে, জামায়াতের নামে একে একে ইসলামী নেতৃত্ব্য এবং কুষ্টি কার্লাচারের বিরুদ্ধে এক প্রকার জিহাদ ঘোষনা করেছে আমাদের মিডিয়া গুলো। যতক্ষনে তারা চোখ খুলে দেখেছেন ততক্ষনে পানি অনেক দুর গড়িয়েছে।
তাহলে আওয়ামী লীগের ভোটের হিসেব দাড়ালোঃ
১. সংখ্যালগু সম্প্রদায় ২০-২৫ শতাংশ।
২. নিরপেক্ষ ভোটার ৭ শতাংশ।
৩. সাধারন নামধারী মুসলমান ৫-৭ শতাংশ।
৪. বাকি সব বিভ্রান্ত আমলধারী মুসলমান-৩-৪ শতাংশ বা
তুলনা মুলক ভাবে আওয়ামী লীগ মুসলমানদের ভোট পায় ১০ শতাংশ।
পরিসংখ্যানটি একেবারে তথ্যবহুল নাও হতে পারে, কিন্তু পাঠকরা সহমত হবেন যে, সত্যিকারের কোন পরিসংখ্যানই আওয়ামী লীগের ভোট ব্যাংকে মুসলমানদের ভোট সংখ্যার উপরোক্ত হিসেবের বাইরে নিতে পারবেন না।
মাত্র কয়েক শতাংশ মুসলমানের ভোট নিয়ে বিজয়ী হওয়া আওয়ামী লীগের কাছ থেকে ইসলামের খেদমত আশা করা সত্যিকার অর্থেই বোকামী। এই বিষয়টি আমাদের অনেক আলেমরা বুঝতে চান না। হেফজতে ইসলামের নেতারা বার বার দরকষাকষি করেছেন কর্মসুচী নিয়ে। তারা আওয়ামী নেতাদের সাথে একাধিকবার বসেছেন তাদের দাবি নিয়ে। কিন্তু তারা বার বার ভুলে গেলেন যে, যেই আওয়ামী লীগ সংখ্যা লগু ভোট প্রাপ্তির আশায় নিজের নামের পিছন থেকে মুসলিম শব্দটিও কেটে দিয়েছে, সেই আওয়ামী লীগ তাদের ভোট ব্যাংক রক্ষা করতে গোটা কয়েক নাস্তিক উদ্ধারের কর্মসুচী নিতেই পারে, পাশাপাশি তাদের ভোট ব্যাংকের বিরুদ্ধে গজে উঠা আন্দোলন কে তারা যে কোন মুল্যেই বিনাশ করে দিতে চাইবে এটাই বরং স্বাভাবিক বিষয়।
অন্যদিকে আমাদের তৌহিদী জনতার ভোটের হিসেব দিন কে দিন বিভক্ত হতে যাচ্ছে। তারা নিজেদের মধ্যে পদ পদবির লোভ কে সংবরন না করতে পেরে গঠন করছে নিত্য নতুন দল এবং সংগঠন। সাধারন জনগনের মধ্যে যারা ইসলাম সম্পর্কে অজ্ঞ এবং যাদের কাছে ইসলাম একটি ব্যক্তিগত ধর্ম বিশ্বাস তারা সরাসরি বি এনপির কাধে সওয়ার হয়েছেন অনেক আগেই। বি এনপিও এখন আর তাদের ভোটের ওপরও ভরসা করতে পারছেনা। কারণ হচেছ আমাদের আলেম ওলামারা একেক বার নতুন নূতন মার্কা নিয়ে ধর্ম কর্মের দোহাই দিয়ে তাদের কাছে ভোট ভিক্ষা করেন। সাধারন জনগনের মধ্যে যারা আবেগ প্রবন এবং আলেমদের কে অতি মাত্রায় শ্রদ্ধা করেন তারাও কোন হিসেব নিকেষ না কষে তাদের কে ভোট দিয়ে দেন। ফলাফল দাড়ায় আওয়ামী বিরোধী একমাত্র শক্তিশালী দলটি তাদের কিছু ভোট হাড়িয়ে ফেলে। স্বাভাবিক ভাবে বি এনপির একটি ভোট কমে যাওয়া মানে আওয়ামী লীগের দুটি ভোট বেড়ে যাওয়া।
আলেম ওলামাদের অনেকে জোশের বসে নির্বাচনী বৈতিরনী পার হবার সম্ভাবনা যাচাই বাছাই ছাড়াই নিজেদের প্রার্থী দিয়ে কেবল মাত্র আওয়ামী লীগের উপকার করেন। তারা ধারণা করেন বি এনপি ক্ষমতায় এলে ইসলামের কোন উপকার হবে না। বি এন পি কি করে ইসলাম কায়েম করবে। অথচ তারা এমন দাবিও করছেন না যে, আমরা ইসলাম কায়েম করেই ছাড়বো। বা তাদের জন সমর্থনও এমন পর্যায়ে পৌছেনি যে, তারা আওয়ামী লীগ বি এন পির মতো দলের বিপরিতে জয় ছিনিয়ে আনতে পারবেন। সেরকম সাংগঠনিক ভিত্তি তাদের হয়নি। পরন্তু তারা আলেমরা বিচ্ছিন্ন ভাবে কিভাবে ইসলাম কায়েমের চিন্তা করেন তা আমার মাথায় আসে না। কেবল মাত্র জোশের বশে নির্বাচন করা আর নিজেদের পায়ে নিজেরাই কুড়াল মারা একই কথা। সাতার না জানা ব্যক্তির যেমন জিহাদের নদী পথে ঝাপ দিয়ে পার হবার চিন্তা করা জায়েজ নয় বরং আতœহত্যার শামিল হবে, তেমনি আমাদের কেও পরিস্থিতি বিবেচনায় না নিয়ে কেবল মাত্র জোশের বশে ফতোয়া নিয়ে মাঠে নামাও জায়েজ হবে না। এই মুহুর্তে প্রয়োজন সঠিক দিক নির্দেশনা মুলক কর্মসুচী।
সাথে সাথে তারা এও ভুলে যান যে, আওয়ামী লীগ বা বি এন পির প্রতিদন্ধিতা করার মতো শক্তি অর্জন করার আগে পর্যন্ত তারা নির্বাচনী হিসেবে ভুল করা মানে হচ্ছে আওয়ামী লীগকে ক্ষমতায় বসানো। আর ইতিহাস স্বাক্ষী যে, আওয়ামী লীগ কোন কালেই ইসলামের ক্ষতি ছাড়া কোন কল্যাণ করেনি। তারা যতবার ক্ষমতায় এসেছে ততবার বাংলার জমিন আলেমদের রক্তে লাল হয়েছে। ইসলাম বিরোধী শক্তিগুলো আওয়ামী লীগকে বার বার ব্যাবহার করেছে আলেমদের বিরুদ্ধে। অন্যদিকে আওয়ামী লীগও আদর্শিক কারনে আলেম ওলামাদের কে নিজের প্রতিপক্ষ হিসেবে ভাবে। এ অবস্থায় আলেমরা যদি আবেগের বসে কোন ভুল স্বিদ্ধান্ত নেন তাহলে ইসলামের ক্ষতি ছাড়া আর কোন কল্যাণ হবে বলে আমাদের কাছে প্রতিয়মান হচেছ না।
ইসলাম কেবল আবেগের ওপর ভর করে কায়েম হয়ে যাবে না। এর জন্য চাই সুসংহত, ঐক্যবদ্ধ গনমুখী আন্দোলন। কোন অবস্থায় নিজেদের সামান্য কিছু ভোট হিসেবে নিয়ে আন্দোলন করা বা একাকি নির্বাচন করা সমুচিন হতে পারে না। আমার বিশ্বাস এ দেশের আলেমরা যদি গন মুখী আন্দোলনে নামতে পারেন এবং সত্যিকারের সকল ইসলামী দলগুলো একই ফ্লাট ফরমে আসতে পারেন, তাহলে সাধারন ভোটার যারা তারাও বি এন পির মতো মোনাফিক দল ছেড়ে আওয়ামী লীগের মোকাবেলায় এদেশের আলেমদের কে গ্রহণ করে নিবে।
এদিকে জামায়াত ইসলামী কেবল মাত্র কিছু কর্মী এবং সমর্থকদের ভোটের ওপর ভিত্তি করে নিজেদের নির্বাচনী বৈতরনী পার হবার চেষ্টা করছে দীর্ঘ্যকাল ধরে। মোটিভেটেড এবং দায়িত্বশীল কিছু কর্মী বাহিনী এখনো এই দলটির প্রাণ। একটি সময় ছিল যখন জামায়াতের কোন সমর্থক ছিলনা, যারা ছিল কেবল কর্মী হিসেবে ছিল। কিন্তু বর্তমান জামায়াতের সার্বিক কর্মকান্ডে সেই ধারা এখন আর নেই। গতানুগতি রাজনৈতিক দলের মতো তাদের কিছু র্কমী যেমন রয়েছে তেমনি রয়েছে কিছু সমর্থক। এই সকল সমর্থকদের অনেকে আবার নির্বাচন কালিন সময়ের গুরুত্ব্য বিবেচনায় নিয়ে বি এনপির বাক্সে নিজের ব্যালট ফেলে দেন। এই কারনে জামায়াত ইসলামীও তাদের সত্যিকারের নির্বাচনী সামর্থ্য আন্দাজ করার সুযোগ পায়নি। আর এই সুযোগে বাতিল মিডিয়াগুলো প্রচার করতে থাকে জামায়াতের ভোট ৩ শতাংশ। জামায়াতের মধ্যে আওয়ামী বিরোধী এই ধারাটি কেবল মাত্র আওয়ামী লীগের ইসলাম বিরোধী কর্মকান্ডের ওপর ভিত্তি করে তাদের রায় কায়েম করে নেন। এখানে দলিয় কোন স্বার্থ্য বড় হয়ে দেখা দিতে পারেনি। তারা মনে করেন সামান্য কিছু ভোটের কারনে বি এন পি প্রার্থী হেরে যাবেন এবং স্বাভাবিক ভাবেই সেখানে আওয়ামী প্রার্থী জয় লাভ করে ফেলবেন। এভাবে যদি কয়েকটি আসনে ফলাফল পাল্টে যেতে থাকে তাহলে সেটা আওয়ামী লীগের জন্য বোনাস আকারে ধরা দেয় এবং তাদের জন্য ক্ষমতায় যাওয়া সহজ হয়ে যায়। আর তাদের ক্ষমতায় আসার পরিনতি আমাদের আলেমরা হারে হারে টের পাচ্ছেন। এসব দিক বিবেচনায় নিলে জামায়াতের কর্মীদের ভূমিকা অনেকটাই বৈধ বলে মনে হয়।
ভোটের এই হিসেব নিকেশকে মাথায় রেখে বর্তমান আওয়ামী সরকার কয়েকিট ইসলামী দল এবং সংগঠনকে তাদের কর্ম কান্ড বৃদ্ধির জন্য যথাসাধ্য সাহায্য করেছেন। তারা জানেন যে, ভোটের মাঠে সাধারন মুসলমানদের ভোট কে যত ভাগ করা যাবে, তাদের নির্বাচনে বিজয় লাভ করা ততই সহজ হবে। আওয়ামী লীগ জানে যে, তাদের ভোট ব্যাংকে হামলা করার মতো আদর্শ বা কর্মসুচী কোনটাই নেই বর্তমান বি এন পির। রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা আওয়ামী লীগের এই পাতা ফাঁদ চিনতে পারলেও যে সকল ইসলামী সংগঠন আওয়ামী লীগের ফাঁদে পা দিয়েছেন তারা সেটা মোটেও উপলদ্ধি করছেন না। কেউ কেউ হয়তো কোন এক অদৃশ্য হাতের ইশারায় আওয়ামী শিবিরের উপকারে নিজেদের ঐতিহ্যকে কাজে লাগাচেছন। বিষয়টি খোলাশা হয়ে যায় যখন দেখা যায় যে, দেশের সকল হক্কানী আলেম ওলামাদের বিরুদ্ধে খড়গহস্ত হয়ে যাওয়ার পরেও কেবল মাত্র বিশেষ কোন পীরের দলকে বা গোটা কয়েকটি ভুই ফোর দলকে আওয়ামী লীগ সরকার দারুন ভাবে প্রমোট করছে। দেশের সকল বিরোধী দল সাংবিধানীক অধিকার বলে তাদের কর্মসুচী পালন করতে পারছে না এবং নিজেদের দলিয় অফিসেও বসতে পারছেন,অথচ বিশেষ কতিপয় ইসলামী দলকে পুলিশি পাহারায় মিছিল মিটিং করতে দেয়া হয়, তাদের বিভিন্ন কর্মসুচী পালন করতে ক্ষমতাশীন দলের র্কমী বাহিনীরা দারুন ভাবে সহায়তা করছেন। সরকারের কতিপয় মন্ত্রী এমপি তাদের সার্বিক কর্মকান্ডকে সহায়তা করার জন্য সরকারী ও বেসরকারী প্রতিষ্টান কে নির্দেশ প্রদান করছে।
এ অবস্থায় ধারণা করে নেওয়া সহজ হয়ে যায় যে, নির্বাচনী বৈতরনী পার হওয়ার জন্য তৌহিদী জনতার ভোটের হিসেব কে পাল্টে দিতে কেবল মাত্র আওয়ামী লীগের প্রয়োজনে কারা নির্বাচনের সময় নিজেদের একক প্রার্থীতা নিয়ে মাঠে নামে। এদের সম্পর্কে সকল জনগন তথা তৌহিদী জনতাকে সচেতন হতে হবে। বিশেষ করে কওমী ঘরনার আলেমদের কে এই সকল আওয়ামী দালাল দের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে। কোন প্রকার আবেগের বশে না গিয়ে বর্তমান পরিস্তিতিকে বিবেচনায় নিয়ে তাদের সকল কর্মকান্ডকে পরিচালিত করতে হবে। তাদের কে মনে রাখতে হবে যে, আওয়ামী লীগ সরকার দ্বীতিয় বার ক্ষমতায় আসার মানে হচ্ছে এ দেশের কওমী ঘরনার সকল আলেমকে নিজেদের মতাদর্শের গোলাম বানিয়ে নেওয়া। কওমী মাদ্রাসা গুলো কে বিলুপ্ত করে দিয়ে দেশ থেকে ইসলাম এবং ইসলামী শিক্ষা-সংস্কৃতিকে বিলুপ্ত করে দেওয়া। এটা করার জন্য ইদানিং নারী নেতৃত্ব্য ফতোয়াটিকে আওয়ামী ঘরনার কিছু আলেম ওলামারা প্রচার শুরু করে দিয়েছেন জোড়ে শোড়ে। এই কাতারে আছেন স্বজ্ঞানে হ্ক্কানী আরেক জন পীর সাহেব। তিনি নির্বাচন কালিন সময়ে আর কোন কথা খুজে পান না, নারী নেতৃত্ব্য হারাম এই শব্দটি কেবল তার রাজনৈতিক পুজি হয়ে গেছে। তিনি মনে হয় নারীর কবল থেকে দেশকে উদ্ধার করার পরিকল্পনা নিয়ে মাঠে নেেেমছণ। অথচ তিনি ভালো করেই জানেন যে, নারী নেতৃত্ব্যের ফতোয়া কেবল মাত্র মুসলামনদের কাছেই দেয়া যেতে পারে, বিশেষ করে যারা সাধারন মুসলমান তাদের কাছে প্রচার করলে আওয়ামী বিরোধী ভোট কমে যাবে এবং মুসলমানদের ভোট সংখ্যা বিভক্ত হতে থাকবে, যার ফলাফল পরোক্ষ ভাবে আওয়ামী লীগের কাজে লাগবে। এভাবে যদি দ্বীতিয় বার আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসতে পারে তাহলে বর্তমানের মতোও আওয়ামী লীগের সহায়তায় নিজেদে দলিয় কর্মকান্ড চালাতে তাদের কোন বেগ পেতে হবে না, তারা আস্তে আস্তে দেশে ইসলাম কায়েম করে ফেলবে।
তারা হয়তো ঘুমের ঘোরে এই স্বপ্ন দেখছে নতুবা তারা আওয়ামী লীগের চরিত্র সম্পর্কে জেনে শুনে নিজেদের প্রয়োজন কে অগ্রাধিকার দিয়ে এই পন্থা অবলম্বন করছেন। নতুবা তারা কি করে আশা করেন যে, আওয়ামী লীগের মতো একটি দল স্থায়ী ক্ষমতায় প্রতিষ্টিত হয়ে গেলে তারা ইসলামী রাজনীতি করার কোন পরিবেশ অক্ষুন্ন রাখবে। ইসলামী রাজনীতি দুরে থাক, তখন ইসলাম পালন করাই দুষ্কর হয়ে পড়বে। এ সাধারন জ্ঞানটুকো যাদের নেই তারা কি করে গন মানুষের নেতৃত্ব্য দেওয়ার যোগ্যতার রাখে। এ কারনে যারা কেবল মাত্র নির্বাচন কালিন সময়ে নারীনেতৃত্যের ফতোয়া দিয়ে মুসলামনদের ভোট কে বিভক্ত করার চেষ্টা চালাবে তারা আওয়ামী বিরোধি দালাল বলে চিহ্নিত হয়ে যাবে।
সাথে সাথে যে সকল দালালরা নারী নেত্রীত্বের ধোয়া তুলে মুসলমানদের কে বিভ্রান্ত করার চেষ্টা চালাবে কওমী আলেমদের কেও তাদের বিরুদ্ধে ৫ ই এপ্রিলের মতো দায়িত্ব্যশীল এবং দুরদর্শি ভূমিকা নিতে হবে। ইসলাম এবং মুসলিম মিল্লাতের দুশমন এই সকল কথিত হক্কানী দের কে ৫ ই এপ্রিলের মতো শিক্ষা দিয়ে তাদের কে প্রত্যাখান করতে হবে। হয়তো একটি সময় আসবে যখন এদেশের আলেমরা নিজেদের কে একটি শক্তিশালী ফ্রন্ট হিসেবে দাড় করিয়ে নিতে পারবে, সেদিন হবে একতরফা নির্বাচন। একদিকে থাকবে ইসলাম বিরোধী সকল মত ও পথ অন্যদিকে থাকবে কেবল মাত্র ইসলামী মোর্চা যার নেত্রীত্বে থাককে এদেশের হক্কানী আলেমরা। ইনশায়াল্লাহ সেই দিন আর বেশি দুরে নয়।
বিষয়: রাজনীতি
২৩৬২ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন