শিরোনাম হীন পর্যালোচনা।

লিখেছেন লিখেছেন স্বপ্নতরী ১২ মে, ২০১৩, ০২:৫৪:২০ দুপুর

(লেখাটি সম্পাদনা করার সুযোগ হযনি। বানান সহ কিছু ভুল ভ্রান্তি এড়িয়ে যাওয়ার অনুরোধ রইল। পরবর্তিতে ভূল গুলো এডিট করে নেওয়া হবে।)

******************************************************

মাছের বাজার একদম পড়ে গেছে। ক্রেতার সংখ্যা একেবারে নগন্য। যে কয়জন আছে তাদের কেউ মাছ কিনতেই চাচ্ছে না। সবার নজর কেবল মুরগি আর গরুর গোস্তের দিকে। হবে না কেন ? গরুর গোস্ত যে মাত্র চার টাকায় পাওয়া যাচ্ছে। মুরগির দাম তো একেবারে হাতের নাগালে। মাত্র এক টাকা। তাও আবার এক কেজি মুরগির সাথে এক হালি ডিম ফ্রি। কোন কোন দোকানে আবার হরিনের গোশতও পাওয়া যাচেছ। সৌখিন মানুষরা কিনছেন দেদারছে। কোন অভাব নেই দেশে।

মাছের ব্যাবসায়ীরা কেবল অনুনয় বিনয় করছে আর মোটা মোটা মাছগুলি নষ্ট হয়ে যাবার ভয়ে পানির দামে বিক্রি করছে। কারণ বাজারে আমাদানী প্রচুর বেড়ে গেছে। মাছের কোন সংকট নেই। থাকবে কেন, সবার বাড়িতে যে, গোলায় ধান আর পুকুরে মাছে ভরপুর। কে কিনে বাইরের মাছ। শীতের সবজি এখন গ্রীষ্মেও পাওয়া যায়। খোদা তায়ালা যেন আসমান আর জমিনের বরকতের দরজাগুলো খুলে দিযেছেণ। ঈসা খাঁর আমলকে হাড় মানিয়েছে। চালের কেজি মাত্র চার আনা, ডাল তেল একেবারে বাংলালিংক দামে। সাধারন মশলাপাতির কোন দামই নেই । যার মন চায় গোডাউন থেকে নিয়ে যায়। যাওয়ার সময় লাল সালু পেচানো ডেগে কিছু দিয়ে যায়। এতেই কৃষকের যাতায়াত ভাড়া উঠে যায়। ফসল উৎপাদনে তার কোন খরচই হয়নি। সার আর বীজ সংকট কি জিনিস কৃষকরা বলতেই পারে না। তার ওপরে বিদ্যুতের যে মহা অপচয় হচেছ। সরকার নিজের খরচে বিদ্যুৎ চালিত সেচেঁর ব্যাবস্থা করে দেওয়াতে পানির কোন টেনশানই নেই বললে চলে। দেবে না, বিদ্যুৎ যে এখন ঘরে ঘরে উৎপাদন হয়।

রাস্তা ঘাটের অবস্থাতো বলার বাইরে। কি মনোরম পরিবেশ। কোন যানঝট নেই, নেই কোন কালো ধোয়া। সন্ত্রাস মারা মারি নেই বললেই চলে। যেটুকো ঝগরা বিবাদ হয় তাও সেটা খেলার ছলে রাতের বেলা আলো নিভিয়ে। কারো বুঝারই ক্ষমতাই নেই যে, দেশে কেউ কারো সাথে ঝগরা করছে, কাউকে মারছে। সবাই দেখে দেখে ঘুমায়। কারো কিছু বলার থাকে না। বলবেই বা কি করে, সবাই যে একই চেতনার মানুষ। সেখানে কেউ অচেতন হবে এমটি ভাবার আশাই করা যায় না। মন্ত্রী মহাশয়দের দেখার জন্য মানুষ তেমন করে ভির করছে যেভাবে চিড়িযাখানায় জানোয়ার দেখার জন্য ভির করে। দেশের কল্যাণ আর সমৃদ্ধির যে সয়লাব তার বয়ে দিয়েছেন তার জন্য তারা রীতিমত হিরো বনে গেছেন। একেক জন মন্ত্রীর কথা শুনার জন্য লোকজন টিভি সেটের সামনে চাতক পাখীর মতো চেয়ে থাকে।

চতুরদিকে মানুষ যেন কারো বন্দনা করছে। কেবল একটি নামের জিকির শুনা যাচেছ। কিছু মিডিয়া লোকজনের ইন্টাভিউ নিচ্ছে। লোকজন হুরমুরী খেয়ে নিজেদের জীবনে শান্তি আর শৃংখলার যে সয়লাব বয়ে যাচেছ তার বিবরন দিয়ে বিশ্ব মানবতাকে বুঝাতে চাইছে যে, শান্তিতে থাকতে চাইলে আমাদের চেতনার কাতারে আসেন। অযথা ঐসব মধ্যযুগিও ভাবনা থেকে বের হয়ে এসে আমাদের পথ ধরুন। আমাদের দেশে মানুষ মরলে জানাজাও দেয়া লাগে না। কেবল কাছা কাছি নদী থাকলেই হয়। নতুবা রেডিমেট কবর স্থানের নামে ময়লার গাড়িতে করে গর্তপুরে দিলেই সাবার। কারো কিছু বলার নেই। চেতনার টেবলেট খেয়ে সবাই যে প্রায় অচেতন।

লোকগুলো নিজেদের প্রশংসায় পঞ্চমুখ আর মিডিয়াগুলো কেবল চেতনার বয়ান ফেরি করছে আর কিছু লোক খুশিতে বার বার অচেতন হচ্ছে। ......

প্রচন্ড ঝাকুনীতে ভয় পেয়ে যায় সুমন। প্রথমে ভেবেছিলো খোদায়ী গজবে বোধ হয় ভূমিকম্প শুরু হয়ে গেছে। মতিঝিলের ঘটনার পরে এমনিতেই সাধারন মানুষ চিন্তিত, কখন যে খোদায়ী গজবের কবলে পড়ে গোটা দেশ। লাফ দিয়ে উঠে বসতেই দেখে তার প্রিয় বন্ধু খালেদ মুখের সামনে বসে আছে।

- কিরে, এত জোড়ে জোড়ে ডাকছি অথচ তোর কোন সাড়া নেই, ভয় পেয়েছিলাম বড্ড। ভাবছিলাম বেচেঁ আছিস কি না।

-নারে, নামাজ পড়ে ঘুমিয়ে ছিলাম। জানিস দোস্ত দারুন এক স্বপ্ন দেখছিলাম। মনে হয় আমাদের দেশের অবস্থাও পাল্টে যাবে কিছু দিনের মেধ্যই।

-এই দিনের বেলা স্বপ্ন দেখছিস ? মানে কি ?

- দিনের বেলা ছাড়া স্বপ্ন দেখার সময় কোথায় বল ? সারা রাত কাটে আতংকে। কখন যে কি হয়ে যায়। আজকাল তো ঘুমের ঘোরেও মানুষ গুলি খেয়ে মরছে গনহারে। এ কারনে রাতের বেলা ঘুমাতেও ভয় লাগে। সরকার তো বলেই দিয়েছে যে, কারো বেড রুম পাহারা দেয়ার ক্ষমতা তাদের নেই। একারনে রাতের বেলা মোবাইলে তিনটি এলার্ম দিয়ে রাখি। মাঝ রাতে কয়েকবার চেক করি নিজেকে। জীবন্ত আছি কিনা মাঝে মাঝে নিজেরই সন্দেহ হয়। কি এক রোগে পেয়ে বসলো বলতো ?

- তা স্বপ্নে কি কি দেখলি একটু খুলে বলতো। অনেকদিন হলো ভালো কোন স্বপ্নের বিবরন শুনিনা।

সুমন পুরো স্বপ্নের বিবরন দিল তার এক নাগারে। সুমনের মুখে আতœবিশ্বাসের অসম্ভব ছোয়া। ভাবছে খালিদও বুঝি খুশিতে আটখানা হয়ে যাবে। কিন্তু পরক্ষনে খালেদের মুখের দিকে তাকিয়ে সুমনের মুখে যেন কালো মেঘ নেমে এসেছে। কারণ ইতিমধ্যে স্বপ্নের বিবরন শুনে খালেদ যেন রাগে ফুসছে।

-এই স্বপ্ন দেখে বেলা বারোটা বাজিয়েছিস ? আর কিছু দেখেছিস, কোন নেতার মুর্তি বা ভাস্কর্য্য চোখে পড়েনি। এক নেতার এক দেশ, আমার সোনার বাংলাদেশ। এ রকম কোন শ্লোগান ?

কৌতুহলী নেত্রে প্রশ্ন করলো খালেদ।

-আরে না, দেখবো কি করে ? আরো কিছু দেখার আগেই তো তুই ঘুম থেকে জাগিয়ে দিলি। সামনে না জানি আরো কতো সুন্দর সুন্দর কিছু দেখতে পেতাম। সুমনের কন্ঠে আক্ষেপের সুর।

-রাখ ব্যাটা তোর গাজাখোরী স্বপ্ন। সামনে বেশি দুর যেতে দেইনি ভালই করেছি। নইলে হয়তো দেখতি যে, বর্তমান সরকারের শাষন আমলের সুখ শান্তি আর নিরাপত্তা খোলাফায়ে রাশেদিন কেও হার মানিয়েছে। বেশি দুর গেলে দেখতি কেবল বাপ বেটীর পুজা হচেছ। এসব স্বপ্ন তারা দেখে যারা বেশি বেশি বিটিভি দেখে। তোকে বার বার বলেছি বিটিভি দেখা বন্দ কর। বিটিবি যারা দেখে তাদের প্রত্যেকে এই রোগে আক্রান্ত। তাদের কাছে মনে হয় গোটা দেশ এখন ঈসা খার আমলকেও হার মানিয়েছে। এই সকল চামচামীর রোগ তৈরি হয় বিটিভির অতি মাত্রায় পদলেহনের কারনে। তার মধ্যে আবার টিভি মন্ত্রী হয়েছেন বিখ্যাত এক নিষিদ্ধ পার্টির নেতা। যার ইউনিয়নের মেম্বার হবার ক্ষমতা নেই সে এখন মন্ত্রী হয়ে বড় বড় কথা বলে। এসব কিছু হচেছ আদর্শের পচন আর পদলেহনের জন্য। নিষিদ্ধ দলের লোকেরা গনতন্ত্র আর ষরযন্ত্র দুটোকে একই মনে করে। এ কারনে তারা গনতন্ত্রের স্তম্ভগুলোকে ধসিয়ে দিয়ে কেবল পদলেহী কিছু টিভি রাখতে চায়। সেদিন সরকারের এক মন্ত্রী বাহাদুর তো বলেই ফেলেছেন যে, দেশে ঈসা খার যুগ চলে এসেছে। তোকে আমি সাবধান করছি, এদের কাছ থেকে বেচেঁ থাক। ভুলেও বিটিভি দেখতে বসবি না।

-দোস্ত কি করার আছে বল, মন খারাপ থাকলে মানুষ চিড়িয়াখানায় সার্কাস দেখতে যায়। পকেটের অবস্থাও তেমন ভালো না যে পরিবারের সবাইকে নিয়ে চিড়িয়াখানায় যাবো, তাই বিনে পয়সায় বিটিবির খবরে কিছু আজব প্রাণী এবং তাদের কর্মকান্ড দেখে সার্কাসের স্বাধ মিটাই। দুধের স্বাধ ঘোলে মিটাই আর কি।

-ব্যাটা ! বিনে পয়সায় সার্কাস দেখতে দেখতে যে এক অ™ভুদ চেতনার রোগে পেয়ে বসবে তখন কি হবে ? এই চেতনার রোগ যার ভাগ্যে জুটেছে তাকে শেষ পর্যন্ত নাস্তিক্যবাদের দিকে নিয়ে গেছে। তাদের জানাজা পড়ার মতো কোন আলেমও ভবিষ্যতে আর পাওয়া যাবে না। শুনেছি এ দেশের আলেমরা ঘোষনা করেছে নাস্তিক ও তাদের সহযোগী কোন সংগঠনের কারো জানাজা হক্কানী কোন আলেম পড়াবে না। তোকেও বলি, ভুলেও এই সার্কাস আর দেখিস না। হয়তো শুনবি তাদের জানাজা পড়ানোর জন্য বিজ্ঞাপন দিয়ে আলেম খোজা হচ্ছে। নতুবা মাজারের এক কোনে পড়ে থাকা কোন গাজ্ঞাখোরকে কোর্তা পড়িয়ে আলেম বানিয়ে তাকে দিয়ে জানাজা পড়াবে। ইদানিং দেশের প্রতিটি টিভির পর্দায় মাজারের কোনে পড়ে থাকা কিছু গাজাখোরের মুখ দর্শনের সুযোগ পাওয়া যাচ্ছে। মিডিয়া হক্কানী আলেমদের বিরুদ্ধে যাওয়ার জন্য নিজেদের পছন্দের কিছু দরবারী মোল্লার উদগিরন করেছে এই সব মাজার থেকে। নস্তিক মিডিয়ার পেট থেকে জন্ম নেওয়া মোল্লাদের কে এ দেশের মুসলমানরা ভালো ভাবেই চেনে।

-তাহলে কোনটা দেখবো, কি দেখবো, দেশের সব কটি মিডিয়াইতো এই বিটিভির পথ ধরেছে। এখন টিভি খুলেই যাদের দেখি, তাদের চেহারা আর কথার সাথে কোন মিল নেই। সব কয়টাই তো দেখি ইনিয়ে বিনিয়ে নাস্তিকদের জয়গান গায়। আবার মাঝে মাঝে দেখি কোরআনের আয়াতের অনুবাদও মারে। তারা দেখি ভালোই ভন্ডামী জানে। যে বিষয়ে চার আনার জ্ঞান নেই সেই বিষয়ে বিস্তর বিস্তর আলোচনা করতে শুরু করে। তাছাড়া তুইতো জানিস, অতি কষ্টে পোরা, গোমরা মুখের কাউকে যদি বিটিভির খবর দেখানো যায়, তারও নাকি হাসি পায়। তাছাড়া আমার বাচ্চারা কিছু মন্ত্রী এমপি ও তাদের নেতাদের চেহারা দেখে ও তাদের কথা বার্তা শুনে দারুন মজা পায়, এ কারনে তাদের নিয়ে বিটিভি দেখার অভ্যাস করিছি।

-কেন ? মজা পায় কেন ?

- আরে বলিসনা, সেদিন মখা আলমগীরের কথা শুনে আমার মেয়েটাতে হাসতে হাসতে বেহুশ প্রায়। মুখের ভাত মাথায় তার উঠে গিয়েছিল।

-কারণ কি, তোর চার বছরের মেয়ে আবার মখার কথায় মজা পায় কি করে ?

- পাবেনা, ব্যাটা বলে কি ! বিরোধীদলের নেতারা নাকি রানা প্লাজা ধরে নাড়াচাড়া করার কারনে সেটা ভেংগে পড়ছে। হা হা হা।

-তুই আর কোন কাজ পাসনা, এসব জোকারের উক্তি বাচ্চাদের শুনাচিছস ? ওদের কেও এসবের রোগে পেয়ে যাবে। মিথ্যা বলা শিখে যাবে।

- পেয়ে যাবে মানে, পেয়ে গেছে বল, আমার মেয়েতো এখন প্রায় সময় ওর ভাইকে বলে, ভাইয়্যা এসো, আমরা খাট ধরে নাড়াচাড়া করি, দেখি এটাও ভেংগে পড়ে কিনা। তাছারা আর কি করার ছিল বল, খবরের ভিতর যে এই জোকারটা এমন উক্তি করে বসবে সেটা কি আমি জানতাম নাকি। জানলে তো আগে থেকেই ওদের কানে তুলো দিয়ে রাখতাম।

-বাদ দে, এবার উঠ, তাড়াতাড়ি যেতে হবে।

-কেন, কোথায় যাবি ?

- গতরাতে মতিঝিলে যারা শহীদ হয়েছেন তাদের মধ্য থেকে দুজনের লাশ আসছে, জানাজা দিতে হবে না ? যাদের লাশ পাওয়া যায়নি তাদের ব্যাপারটি আল্লাহর হাতে। কিন্তু যারা আমাদের চোখের সামনে আছে তাদের কে তো দাফন করতে হবে। এখানে ভয় পেলে তো চলবে না।

-বলিস কি, আমাদের প্রধানমন্ত্রী আর তাদের নেতা কর্তা এবং পুলিশ কর্মকর্তারা তো বললেন কোন হতাহতের ঘটনা ঘটেনি, তাহলে আবার এই লাশ আসলে কোথা থেকে ? এখন তো ঘুম থেকে উঠেই শুনি অমুকের জানাজা পড়তে হবে। এর কি কোন শেষ নেই।

- তুইতো দেখি তোর মেয়ের চাইতেও বেশি বোকা। প্রধানমন্ত্রী ও তার নেতাদের কথা তুই বিশ্বাস করিস। যেখানে প্রধানমন্ত্রী সংসদে দাড়িয়ে বলেন, রানা আমার দলের কেউ নন, অথচ কয়দিন পড়ে জানা গেল রানা তার দলের আর্শিবাদ পুষ্ট সাভার থানার আহ্বায়ক। যে প্রধানমন্ত্রী সংসদের দাড়িয়ে মিথ্যা বলে, সি এন এন এর কাছে মিথ্যা বলে ধরা খেয়ে ধমক খায়, তার দলের নেতা কর্মীরা সত্য কথা বলবে এটা তই আশা করিস কিভাবে ? আর তারা যদি সত্য বলে তাহরে বিশাল ক্ষমতাধর আমাদের মাননিয় প্রধানমন্ত্রীর ইজ্জত থাকে ? আর পুলিশ কোনদিন সত্য কথা বলেছে এমন কথা তুই কারো মুখে শুনেছিস, এমন কোন ইতিহাস কেউ দেখাতে পেরেছে। এই তো দেখণি বিটিভির খবরের আছর তোর ওপর পড়তে শুরু করেছে ।

- নারে দোস্ত আমাদের দেশের সব মিডিয়া এখন বিটিভি থেকেও নিকৃষ্ট হয়ে গেছে। বিটিভি তো সরকারের নিজের টাকায় চলে, বেচারার দালালীর কিছু কারণ আছে, কিন্তু যারা নিজেদের টাকায় টিভি চ্যানেল চালায় তারা কেন দালালী করে বুঝতে পারছি না। ঈমানের প্রতি কি তাদের কোন মায়া নেই ? দু একটা চ্যানেল একটু একটু গোমর ফাক করে দিতে শুরু করেছিলো বলে তাদের কে বন্ধ করে দিয়েছে। আমার তো মনে হয় বর্তমান মিডিয়াগুলো কাকের চাইতেও বেশি নিকৃষ্ট। একটি কাক মারা গেলে হাজারো কাক এসে বিদ্রোহ শুরু করে দেয়। অথচ একটি পত্রিকা বন্ধ না করেও ছাপাতে দেওয়া হয় না, কয়েকটি চ্যানেল বন্ধ করে দেওয়া হলো, অথচ অন্য সব মিডিয়ার সাংবাদিকরা সেগুলো সমর্থন করে টকশোতে কথা বলছে। কত নোংরা এদের মন। ভাবছি আর অবাক হচ্ছি এত দলকানা মিডিয়া বোধ হয় আমাদের দেশের জন্য কলংক স্বরূপ।

- কাদের কে তুই ঈমানের কথা বলিস। সামান্য পদ পদবির জন্য যারা নবীর অপমান সয়ে যায় এবং নিজের দলের নেতাদের পক্ষে সাপোর্ট করে নাস্তিকদের পক্ষ নেয়, তাদের কে ? তারা তো দুনিয়াকে কিনে নিয়েছে আখেরাতে বিনিমিয়ে। এদের জন্য আখেরাতে কিছুই নেই। তাই দুনিয়ায় এত ভোগ বিলাশের সুযোগ পাচ্ছে। এসব দেখে হতাশ হবার কিছুই নেই।

-কেন ? এদের অনেকেই তো দেখি মসজিদে আসে। ঈদের নামাজ পড়ে টিভির সামনে দাড়িয়ে। তারপরেও তাদের কে মুসলমান মানতে তোর আপত্তি কেন ?

- তোকে কে বলেছে যে, কেবল নামাজী মানুষরাই ঈমানদার। দু চার ওয়াক্ত নয়, হাজার হাজার ওয়াক্ত নামাজ পড়েছিল আব্দুল্লাহ ইবনে উবাই। তাও আবার রাসুলুল্লাহর (স) পিছনে তার ইমামতিতে। অথচ তার ঈমান গ্রহণ করা হয়নি। আল্লাহর রাসুলের (স) চাইতে যে ব্যক্তি নিজের জীবন, স্ত্রী, সন্তান এবং নিজের ব্যাবসা বানিজ্য বা দুনিয়াবী স্বার্থ্যকে বেশি প্রাধান্য দেবে সে মোনাফেক হিসেবে গন্য হবে। আল্লাহর রাসুল(স) বলেন তোমরা ততক্ষন পর্যন্ত ঈমানদার হতে পারবে না, যতক্ষন না তোমরা দুনিয়ার সব কিছুর থেকে আমাকে বেশি মোহাব্বাত না করবে- আল হাদিস।

যে কেউ আল্লাহর রাসুলের মোহাব্বাতের মোকাবেলায় অন্য সব মোহাব্বাতকে ছেড়ে না দেবে, সে কখনো ঈমানদার হতে পারবে না। এগুলো কোন নীতি বাক্য নয় বরং বিধান। আইনের দৃষ্টিতে যেমন সবার অপরাধ সমান, তেমনি ইসলামের বিধানে একই ভাবে প্রযোজ্য হবে তাদের জন্য। যদিও তারা মুসলমান ঘরে জন্ম নিয়েছে বলেই কেবল নিজেদের নামটি মুসলমান পেয়েছে। বিশ্বাস না হলে দেখ আওয়ামী নেতাদের বক্তব্য গুলো টের পেয়ে যাবি।

- কিন্তু আমাদের প্রধানমন্ত্রী তো কোরআনের আয়াত দিয়ে প্রমান করেছেন যে, আল্লাহ পছন্দ করেছেন বলেই তাকে ক্ষমতায় বসিয়েছেন এবং আল্লাহ যাকে চাইবেন আগামীতে তাকেই ক্ষমতায় বসাবেন। তাহলে আমরা কেন তার বিরুদ্ধে আন্দোলন করছি ? তাছাড়া তিনি বার বার দাবি করছেন তিনি প্রতিদিন এক পারা কোরআন তেলাওয়াত করে দিনের কাজ শুরু করেন।

- আবারো তুই প্রধানমন্ত্রীর কথাকে আমলে নিলি ? তিনি প্রতিদিন এক পাড়া কোরআন পড়ে এটা তার দলের নেতা কর্মীরাও মনে হয় বিশ্বাস করে না একমাত্র সুরজ্ঞিত বাবু ছাড়া। কারণ বর্তমানে হাসিনার বিশ্বস্ত ব্যক্তি হচ্ছেন এই চোরদাদা খ্যাত কালো বিড়াল। দেখিস না কিভাবে একদিন আগেও যিনি দুর্নিতীর বোঝা মাথায় নিয়ে পদত্যাগ করলেন, তাকে আবার ডেকে এনে দপ্তর ছাড়া মন্ত্রী বানিয়ে দেশের টাকায় বেতন ভাতা এবং প্রটোকোল দিয়ে যাচ্ছে না। মনে হয় দেশে টাকার কোন অভাব নেই। এই ভদ্রলোকের খুটিতো আর এই দেশে নেই, তাই আমাদের প্রধানমন্ত্রী মনে হয় তাকে বেশি ভয় পান অথবা বিশ্বাস করেন। দেশের মানুষকে তিনি একটুও বিশ্বাস করতে পারছেন না, কারণ এ দেশের মানুষ তার পরিবারকে ধ্বংস করে দিয়েছে। তিনি বিবিসির সাথে একান্ত স্বাক্ষাতকারে বলেছিলেন তিনি তার প্রতিশোধ নিতেই রাজনীতিতে এসেছেন। আমরাও তার প্রতিহিংসার আগুনে জ্বলে মরছি।

আমি তোকে আগেই বলেছিলাম না যে, আমাদের দেশে কতিথ মুফাস্সির আর মুফতির কোন অভাব নেই। দেখিস না আমাদের কালো বিড়াল খ্যাত সুরজ্ঞিত বাবুও ফতোয়া দিচেছ যে, বিসমিল্লাহ বলে খেলে শুয়রের গোস্তও নাকি হালাল। এমনি সব কিছুই হালাল হয়ে যায়। এবার বুঝ আমাদের মুসলমানদের অবস্থা কোন জায়গায় গিয়ে দাড়িয়েছে। একজন হিন্দু নেতা বিসমিল্লাহর অনুবাদ লিখে দেয়, বিসমিল্লাহ নিয়ে ফতোয়া দেয়ার সাহস করে। সত্যিই আমরা নির্ভেজাল ধর্মনিরপেক্ষ হতে পেরেছি।

প্রধানমন্ত্রী কোরআনের আয়াত দিয়ে যা কিছু প্রমান করতে চেয়েছেন তার আংশিক কিছু সত্য। কিন্তু তাকে আরো একটু সামনে এগিয়ে গিয়ে আরো দু চার লাইন আয়াতের অনুবাদ পড়া দরকার ছিল। তাহলে হয়তো তিনি ফেরাউন, নমরুদ, শাদ্দাদ, হিরোক্লিসদের এবং হাজ্জাজের শাষন সম্পর্কেও কিছুটা জানতে পারতেন। নিজের পক্ষে দলিল খোজার জন্য কোরআনের আয়াত তালাশ করা কোরআন বিকৃতির নামান্তর। এ জাতিয় কোরআন তেলাওয়াত কোন ফায়দা বয়ে আনে না। তিনি যদি মনে করেন, যে আল্লাহ পাক ফেরাউনকে শাষক বানিয়েছেন, সেই আল্লাহই তাকেও শাষক বানিয়েছেন, তাহলে তাকে অবশ্যই ভেবে দেখতে হবে যে, ফেরাউনের কাছ থেকে কি কারনে কতৃর্ত্ব কেড়ে নেয়া হয়েছিল এবং কেন তাকে লা’নত করে দুনিয়াবাসীর জন্য শিক্ষনীয় হিসেবে রাখা হয়েছে। বিশেষ করে যারা দুনিয়ায় রাষ্ট্র ক্ষমতা পেযে জনগনকে নিজেদের বাপদাদার সম্পত্তি মনে করে হুকুমের গোলাম বানিয়ে নেয়, তাদের জন্য ফেরাউনের চাইতে উত্তম কোন উদাহারন ছিলনা বলেই আল্লাহ পাক ফেরাউনের দেহকে হেফাজত করেছেন। আমাদের প্রধানমন্ত্রী মনে হয় সে আয়াতগুলো পড়ার দরকার মনে করেননি। হয়তো জ্ঞাতসারে সেই আয়াতগুলোকে এড়িয়ে গিয়ে কেবল প্রয়োজনীয় আয়াতগুলোর খোজ করতে থাকেন। আসলে তারা কোরআন থেকে কিছুই শিখতে চায় না। কেবল মাত্র নিজেদের মতলবী কথাকে বৈধতা দেয়ার জন্য মাঝে মাঝে পছন্দ মতো কোরআনের কিছু আয়াতের অনুবাদ বলেন।

- কিন্ত আমাদের কিছু সরল মনা মুসলমানও তো দেখি তাদের আচরনে বিভ্রান্ত হন। বিশেষ করে কিছু মোবাল্লিগ ভাইরা তো তাদের কে গোমরাহ না বলে ইসলামী আন্দোলনের কর্মীদের কে ফেতনাবাজ, ক্ষমতার লোভী, ইসলাম বিরোধী শক্তী বলে ফতোয়া দেন। তাদের কাছে কি মনে হয়নি যে, এরা ইসলামকে বিকৃত করছে বা ইসলামের মুল পজিশান থেকে লোকজনকে গোমরাহ করছে ?

- এরা ইসলাম নিয়ে গবেষনা করার দরকার মনে করেনি। এদের কাজ হচ্ছে সস্তা কিছু আমলে দিকে দৃষ্টিপাত করে তাকে নিয়ে গবেষনা করা। একটা কথা মাথায় রাখ। কোন ব্যক্তি যখন ফরজ নামাজ আদায় করতে যায় তখন স্বাভাবিক ভাবেই নামাজের ভিতরে ও বাহিরে তার অনেকগুলো ফরজ, ওয়াজিব ও সুন্নাত পালন করতে হয় বা করা হয়ে যায়। অথচ আমরা যদি চিন্তা করি যে প্রথমে রুক দেয়া শিখিয়ে নেই, অতঃপর সিজদা দেয়াও শিখে যাবে এবং আস্তে আস্তে সে নামাজে অভস্ত হয়ে যাবে তাহলে সেটা কি সঠিক দ্বীন প্রচার হলো ? অথবা প্রথমে তাকে মেসওয়াকের মর্যাদা বুঝিয়ে দেয়া হলো এই ভেবে যে, প্রথমে একটি সুন্নাতের মর্যাদা বুঝিয়ে দেই তাহলে সে অটোমেটিকলি ফরজের মর্যাদা বুঝে যাবে, তাহলে এটা কে গোমরাহী ছাড়া আর কি বলা যেতে পারে। অথচ আমরা এমন কর্মপদ্ধতি গ্রহণ করেছি যার ফলশ্রুতিতে ইসলামকে তার পজিশান থেকে সরিয়ে দিয়েছে।

যারা এমন পদ্ধতিতে ইসলাম বুঝেছেন তারাও ইসলাম বিরোধী নেতাদের ইসলামপ্রিতী নিয়ে আতœতুষ্টিতে ভুগছেন এবং সাথে সাথে তাদের জন্য ঈমানের সার্টিফিকেট বিলি করে বেড়াচ্ছেন। আর তাদের সনদের কারনেই কিছু গোমরাহ লোক মুসলমানদের নেতৃত্ব্য পেয়েে যাচ্ছে এবং স্বাভাবিক কারনে মুসলামনরাও বিভ্রান্তিতে পড়ছে যে, আমরা যাদের নেতা বানাচ্ছি তারা ইসলামের খেদমত করছেন এবং তাদের দ্বারা ইসলামের কোন ক্ষতি হবে না। অথচ দেখা গেল যে, তাদের নেতৃত্ব্যে আসার পড়ে তরুন সমাজের বৃহত্তর অংশ গোমরাহীর অতলে তলিয়ে গেল। তরুনরা নেশা আর মাদকের কবলে পড়ে গেল। গোমরাহ নেতৃত্ব্য তাদের পজিশান ধরে রাখা এবং তরুনদের অমিত শক্তিকে ব্যাবহার করার জন্য তাদের কে গোলাম বানানোর জন্য নেশা আর নারী এই দুটি অস্ত্রকে ব্যাবহার করতে লাগলো। তাদের ইসলাম বিরোধী নেতৃত্ব্য ধরে রাখতে গেলে তরুনদের গোলাম বানানো ছাড়া আর কোন উপায় থাকে না। তরুনদের কে গোলাম বানানোর একটিই পথ। সেটি হচ্ছে তাদের কে নেশার সাগরে ডুবিয়ে দিয়ে প্রগতির চরম উৎকর্ষতার স্বপ্নে বিভোর করে দেয়া। নোংরামী আর নারী বাড়ির স্বপ্নে বিভোর তরুনরা তাদের সেই নেতাকেই খুজে নেবে যিনি তার চাহিদা পুরনে দায়িত্বশীল ভূমিকা পালন করতে পারবে। এ কারনে দেখা যাচ্ছে যে, আমাদের তরুনদের অধিকাংশ ধর্ম এবং ধর্মীয় নেতৃত্ব্য সম্পর্কে খুব কমই ধারণা রাখে।

- কিন্তু তরুনদের সবাইতো আর নেশাগ্রস্ত নয়। তাদের অধিকাংশ এমন যে, তারা জ্ঞান বিজ্ঞানের প্রতিটি ধারায় বিচরন করছে। তাদের কে কিভাবে ব্যাবহার করা যেতে পারে। তারা কেন ব্যাবহার হচ্ছে বুর্জুয়া রাজীতিতে ?

- এর দুটি কারণ থাকতে পারে বলে আমার কাছে মনে হচ্ছে। প্রথমটি হচ্ছে, তরুনরা সব সময় দল পাগল হয়। একাকি বিচ্ছিন্ন জীবন যাপন করা তাদের পছন্দ নয়। এ কারনে তারা কোন না কোন ভাবে দলবদ্ধ হয়ে যায়। আর এই সুযোগটি নেয় বুর্জূয়া নেতাদের কর্মীরা। তারা ধর্ম এবং ধার্মিক নেতাদের চরিত্রে এক ধরনের কালো পর্দা লাগিয়ে দেয়। যাতে শত নৈতিকতা এবং বিশুদ্ধ শ্লোগান ধারন করার পরেও তরুনদের একটি বিশাল অংশ তাদের বিষয়ে দ্বীধাগ্রস্ত হয়ে যায় এবং তারা সে সকল নৈতিক আন্দোলন থেকে দুরে সরে যায়। ফলাফল তো এই হয় যে, তারা দ্বীধাগ্রস্ত হয় ঠিকই কিন্তু একাকি থাকে না। কোন না কোন বুর্জুয়া দলের ক্ষপ্পরে তাকে পড়তে হয়। এভাবে তরুনদের একটি বিরাট অংশ অনৈতিক আন্দোলনে জড়িয়ে পড়ে যদিও তারা অন্তরের অন্তস্থল থেকে নিজের ধর্ম এবং ধর্মীয় বিধানকে লালন করে চলে। তরুনদের এই বিভ্রান্তির ভিত্তিকে আরো একটু শক্তিশালী করে আমাদের বিপদগামী আলেমদের ফতোয়া। তারা তরুনদের সামনে ইসলামকে উপস্থাপন করার চাইতে তাদের কে কিছু আমলের অনুশারী বানানোর জন্য উদগ্রিব হয়ে পড়েন। অথচ তারা ধারণাও করতে পারছেন না যে, অজ্ঞাতসারে হলেও ইসলাম বিরোধী শক্তির ক্রিড়ানক হয়ে আছে আমাদের এই তরুনরাই। তারা তাদের কে দ্বীন না বুঝিয়ে শরীয়াতের জ্ঞান প্রদান করেন। অথচ দ্বীনের বাইরে অবস্থান করা কোন ব্যক্তির জন্য শরীয়াতের বিধানের বয়ান এক ধরনের তামাশার শামিল। শারীয়াত তো তার জন্যই প্রযোজ্য যে ব্যক্তি দ্বীনকে দ্বীধাহীন চিত্তে গ্রহণ করেছে। কোন প্রকার কাট ছাট না করে আল্লাহর দেয়া দ্বীনকে যারা মেনে নিয়েছেন তাদের জন্য শরীয়াত পালন মোটেও কঠিন কিছু নয় কারণ তারা আল্লাহর পক্ষ থেকে সাহায্য পেয়ে থাকেন। অন্যদিকে যারা শরীয়াতের বাইরে অবস্থান করেন, অথচা দ্বীনের প্রাণসত্ত্বা অনুধাবন না করেই তার প্রতি ঠুনকো ঈমানের দাবি করেন, তাদের শরীয়াত পালনের নমুনা তো আমরা দেখতেই পাচ্ছি। ভুল ক্রমে দু একদিন যদি নামাজ কালাম করেও ফেলেন আর বাকি বছর এমনিতেই পড়ে থাকে। অন্যদিকে কারো কারো শারীয়াত পালনের অবস্থাতো এমন যে, জুমা আর ঈদের নামাজ ছাড়া তারা ইসলামের কোন হুকুম সম্পর্কেও সঠিক ভাবে জ্ঞাত নন। এ যদি হয় অবস্থায় তখন তো ভাবা দরকার যে, কেন আমরা শরীয়াত পালনে ব্যর্থ হচ্চি। কেন আমরা চাইলেও দ্বীনের সহায়ক হতে পারছি না।

আমরা যদি ইসলাম কে ইসলামের মতো করে বুঝতাম তাহলে আমরা ধরেই নিতাম যে, ইসলামের মৌলিক নীতিমালার সাথে দ্বীমত পোষন করে, ইসলামী আইনকানুন কে বর্বর মধ্যযুগিয় নীতিমালা হিসেবে আখ্যায়িত করা ব্যক্তিবর্গরা কোন অবস্থায় মুসলমান নয়। আর তাদের সহযোগী যারা তারা একই অপরাধে অপরাধী। কারণ কোরআনের ভাষা অনুযায় কেবল মাত্র ফেরাউন একা জাহান্নামী হবে এমন নয় বরং সে তার দলিয় নেতা কর্মীদের নেতৃত্ব্য দেবে। তার নেতৃত্ব্যেই তারা জাহান্নামী হবে। আল্লাহর কালামের কয়টি আয়াত খুজে পাওয়া যাবে যে এ জাতীয় লোকেদের কোন অবস্থায় কাফের ফতোয়া দেয়া যেতে পারে না।

ইসলামী আইন বিশারদরা সব একমত যে, আল্লাহর দেয়া বিধানের একটি উপধারা বা একটি শব্দের সাথে দ্বীমত পোষন করা বা রাসুলুল্লাহর (স) রেখে যাওয়া একটি বিধানকে নিয়ে কটাক্ষ করা বা বিরোধীতাকারীরা মুরতাদ হিসেবে গন্য হবে এবং তাদের কে শাস্তি দেয়ার পুর্বে তওবার সুযোগ দিতে হবে। তওবা করে নিজেদের কর্মধারা সংশোধন না করলে তাদের কে কতল করে দেওয়া হবে। তাদের স্ত্রীদের সাথে তাদের তালাক ঘোষনা করে দিতে হবে। এ অবস্থা মাথায় নিয়ে চিন্তা কর যে, আমাদের সমাজে কতজন নামধারী মুরতাদের অবস্থান রয়েছে। আর কারা এদের কে সামজিক ভাবে প্রতিষ্টিত করছে।

কোরআন বলছে- তোমার রবের শপথ, তারা কখোনো মুমিন হতে পারবে না যতক্ষন না তারা তাদের পারস্পরিক (সামজিক, রাজনৈতিক, আইনগত) বিষয়ে তোমাকে একমাত্র ফয়সালা কারী হিসেবে মেনে নেবে, এবং তুমি যে ফয়সালা করে দেবে তাকে সন্তুষ্ট চিত্তে গ্রহণ করবে এবং মনের কোঠরে বোর প্রকার জড়তা রাখবে না- সুরা নিসা।

সেদিন বিশিষ্ট আইনজীবি ড কামাল হোসেন বলেছেন যে, বর্তমান সংবিধান কে পাশ কাটিয়ে মধ্যযুগে ফিরে গেলে দেশ অন্ধকারে চলে যাবে। খেয়াল কর যে, তারা মধ্যযুগ বলতে কোন যুগকে বুঝায়। যে যুগকে আল্লাহ তার পছন্দের মানুষের যুগ বলেছেন, আল্লাহ রাুসল যাকে উত্তম যুগ বলেছেন। সেই যুগকে বর্বর অন্ধকার যুগ বলতে ড কামাল সাহেবরা সাহস পাচ্ছেন কিসের বদৌলতে ? নিশ্চয় আমাদের আলেমদের আপোষকামীতার কারনে। আল্লাহর কালামের হুকুম বর্ননা করার সময় তারা আগে পিছে কর্তন করে সত্যকে গোপন করে এতদিন ফতোয়া দিয়েছেন। তারা ভেবেছেন এভাবে হয়তো ফেতনা নির্মুল করা যেতে পারে। অথচ ফেতনা বৃদ্ধির পাওয়ার কারণও হচ্ছে সত্যকে গোপন করা এবং মিথ্যা সহযোগী হিসেবে আতœপ্রকাশ করা।

দ্বীতিয় যে কারণটি আমার কাছে মনে হয়েছে তাহলো দ্বীনের সঠিক বুঝ না দিয়ে কেবল মাত্র খুটি নাটি বিষয়কে প্রাধান্য দিয়ে শরীয়াতকে তাদের সামনে কঠিন ভাবে উপস্থাপন করা। অনেক তরুনরা ধর্মীয় আন্দোলনে কেবল এই কারনে জড়িত হতে চায় না যে, তারা ভাবে ধর্মীয় আন্দোলনে যোগ দিলে মনে হয় পোষাকে আশাকে কথা বার্তায়, চাল চলনে পরিপূর্ণ ভাবে ইসলাম মেনে চলতে হবে। কোর্তা পড়ে, পাগরি মাথায় না দিলে সে আবার ইসলামী আন্দোলনের কর্মী হয় কিভাবে। দাড়ি যদি না রাখে তাহলে তাকে ইসলামী আন্দোলনে আসতে দেয়া হবে কি করে। এ সকল কঠোর ফতোয়া তরুনদের কে হতাশ করছে। অথচ ইসলাম কারো রুচি অভিরুচিতে হস্তক্ষেপ করেনা।

দ্বীনের মৌলিক বিষয়গুলিকে সামনে রেখে একটি শক্তিশালী পরিবেশগত কর্মসুচীর মাধ্যমে মানুষের নৈতিক ইসলাহ করতে হয়। অথচ মৌলিক বিষয়গুলোকে প্রাধান্য না দিয়ে কেবল ছোট খাটো বিষয় কে আগে প্রাধান্য দেওয়া কারনে তরুনরা ইসলামী আন্দোলনের দিক থেকে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছে। তরুনদের কে এই বিষয়ে আশ্বস্ত করতে হবে যে, ইসলাম কেবল দাড়ি টুপি নিয়ে ঘোরা ফেরার নাম নয়। ইসলাম হচ্ছে এমন একটি বীজকে অন্তরে বপন করার নাম যারা ডাল পালা শরীরের প্রতিটি অংশে গজাতে সাহায্য করে। তোমরা আগে বীজকে ধারন করো, আগাছা গুলো থেকে নিজেদের পবিত্র করো, ইনশায়াল্লাহ শরীয়াতের অনেক হুকুম তোমার অগোচরে তোমার দেহে প্রতিষ্টিত হয়ে যাবে যেটা তুমি উপলদ্ধিও করতে পারবে না।

ইসলাম কে নিজের মতো না বুঝে নিজেকে ইসলামের দৃষ্টিতে বুঝার চেষ্টা করো তবেই সফলতা আসবে। আমরা কি তরুনদের কাছে এভাবে ইসলাম কে তুলে ধরেছি ? আমাদের সংকির্ন চিন্তা চেতনা এ দেশের তরুনদের কে ইসলামী আন্দোলন থেকে অনেক দুরে সরিয়ে দিয়েছে। আমরা তাদের দ্বীনের সাথে শত্রুতা বরদাশ করতে পারি, কিন্তু সামান্য সুন্নাত আর নফল ত্যাগ বরদাশত করতে পারি না। এই অবস্থায় তরুন দের কে ইসলামের দিকে আকৃষ্ট করা কঠিন হয়ে যাবে। আর তরুনদের কে যদি তাদের আপন দ্বীনের ওপর প্রতিষ্টিত করা না যায় তাহলে কোন দিনও এই ভুখন্ডে দ্বীন প্রতিষ্টিত হবে না। ইতিহাস স্বাক্ষী দেয় যে প্রতিটি নবীর অনুশারী সাহাবাদের মধ্যে তরুনরাই বিপ্লব আনতে সবার অগ্রগামী ছিলেন।

-কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে আমাদের তরুনরা তো কেবল রাজনৈতিক ভাবে নিজেদের কে বিভক্ত করেছে। তারা তো আর ধর্মকে নিয়ে কোন অবমাননা করছে না। তাদের কে যদি এ সকল বিষয় নিয়ে প্রশ্ন করা হয় তারা এক বাক্যে বলে দেয় যে, ধর্ম একটি ব্যক্তিগত ব্যাপার, এর সাথে রাজনীতির কি সম্পর্ক ? আমি ভাই কম বুঝি বলে তোকে প্রশ্ন করছি। কি জবাব দেওয়া যায় এদের কে ?

- তাদের কাছে প্রশ্ন কর যে, ধর্ম ব্যক্তিগত ব্যাপার এই বিষয়ে ইসলামী স্কলারদের কার কার মতামত তারা নিয়েছে। এই বিষয়ে তাদের কে কোন দল আশ্বস্ত করেছে ? তারা কি কোরআন হাদিসের কোন উদ্ধৃতি দিতে পারবে যে ইসলাম ব্যক্তিগত পর্যায়ের ধর্ম হিসেবে নিজেকে উপস্থাপন করেছে। অন্যদিকে রাজনীতি বলতে তারা কি বুঝে ? রাজনীতি কি নিজের দোষ অন্যের ঘারে চাপানোর মিথ্যে কুটকৌশল কে বোঝায় ? রাজনীতি কি অন্যায় ভাবে জ্বালাও পোড়াও, আর মিছিলে মিছিলে রাজপথ প্রকম্পীত করে নিজেদের অবৈধ দাবিকে প্রতিষ্টিত করাকে বোঝায় ?

যদি এগুলোকে রাজনীতি বলে তাহলে নিশ্চয় ইসলাম এগুলোকে ঘৃনা করে। কিন্তু রাজনীতির সংজ্ঞাকে যদি নিজের মতো করে না পাল্টে কেবল তার নিজস্ব শব্দের গন্ডিতে রেখে দেয় তাহলে ইসলাম হচেছ পৃথিবীতে সব থেকে বড় রাজনৈতিক মতবাদ। মরুর বিক্ষিপ্ত দুরাচারী সমাজকে কোন আদর্শ একটি শক্তিশালী স্থীতিশীল রাষ্ট কায়েম করতে শিখিয়েছে। কোন আদর্শ একটি শান্তী পূর্ণ সমৃদ্ধশালী রাষ্ট্রগঠনের রূপরেখা দিয়েছে ? কোন আদর্শ নিরাপত্তা আর সামজকি বন্ধনের উত্তম রূপরেখা দিয়ে সমাজকে নিরাপত্তার নগরে পরিণত করেছে ? কারা বিশ্ব দরবারের প্রথম নিরাপত্তার সনদ দিয়েছে ?

এ গুলো কি তারা জানে ? না জানতে দেয়া হয়েছে ? তাদের কে শিখানো হয় আধুনীক রাষ্টের আদর্শ সংজ্ঞা বোধ হয় তাদের কাছ থেকেই এসেছে যাদের নামে আজ গনতন্ত্রের চর্চা হচ্ছে। অথচ মৌলিক মানবধিকারের একমাত্র স্বিকৃতি কেবল মাত্র ইসলাম দিয়েছে। ইসলাম প্রত্যেক মানুষের মত প্রকাশের স্বাধীনতার রূপ রেখা সেই চৌদ্ধশত বছর পুর্বে দিয়েছে। খোলাফায়ে রাশেদার যুগে তার নমুনা আমরা দেখতে পেয়েছি। এসব দর্শনের প্রশংসা তারা করতে পারছে কি ? তাহলে তারা রাজনৈতিক দর্শন ইসলাম থেকে না নিয়ে বিদেশী প্রভুদের কাছ থেকে নেয় কেন ? কারণ হচ্ছে ইসলামের রাজনৈতিক দর্শন শাষক আর জনগনের মধ্যে কোন পার্থক্য করে না। শাষকদের ভোগ বিলাশের কোন পথই ইসলাম খোলা রাখেনি। জনগনের সম্পদের অবৈধ মালিক হয়ে যাওয়ার দর্শন ইসলামী রাজনীতিতে নেই। ইসলামী রাজনীতির কোন একটি পৃষ্টাও মানুষের ওপর মানুষের প্রভুত্বের কথা নেই। নিজের প্রয়োজন মতো মনগড়া আইন করে জনগনের ওপর অত্যাচারের স্ট্রিম রোলার চালানো কোন নজির নেই ইসলামের রাজনীতির দর্শনে। অথচ ইসলামী রাজনৈতিক দর্শনকে বিকৃত করতে ইসলামী রাজনীতিকে মৌলবাদ হিসেবে আখ্যায়িত করা হচেছ। কাফের রা যে মন্ত্র শিখিয়ে দেয়, কাফের দের সহযোগী ফাসেকরা তা প্রচার শুরু করলে একদল মুসলমান তা লুফে নিয়ে বলে এসবই প্রগতি।

এসব বলা হচ্ছে কেন আমরা তা জানি। ইসলাম তার আপন ঘরেই আজ পরাধীন। আলেমরাই সত্যকে গোপন করছে। ফতোয়া প্রদানের আগে নিজের পরিনতির কথা চিন্তা করছে। ফেতনার ভয়ে বেদয়াত আর শিরকের প্রচলন কে সমর্থন দিয়ে দিচেছ। মৌলিক বিষয়ে বিতর্ক না করে খুটিনাটি বিষয়ে এত বিতর্ক হয়েছে যে, সাধারন মুসলমানরাও ভিত হয়ে পড়েছে এই ভেবে যে, আসলেই ইসলাম কি রকম। এই যদি হয় শরীয়াতের পরিস্থিতি তাহলে রাজনৈতিক দর্শনের বিকৃত একটি স্বাভাবিক ব্যাপার মাত্র।

তরুনদের সামনে ইসলামের ¯¦র্ণযুগের কোন ইতিহাস তুলে ধরা হয় না। তাদের সামনে কেবল সেই সকল ঘটনা তুলে ধরা হয় যা ইসলামের নাম নিয়ে ইসলাম বিরোধী শক্তিগুলো সংঘটিত করেছে। এভাবে তাদের মন মগজে ইসলাম এবং ইসলামী রাজনৈতিক দর্শনের এক অ™ভুদ সংজ্ঞা তুলে দেওয়া হয়েছে। ফলশ্রুতিতে তারাও বিভ্রান্ত হয়েছে এবং ভীতশ্রদ্ধ হয়ে ধর্মকে তাদের খায়েশ অনুযায়ী জীবনের সকল ব্যাপ্তি থেকে সরিয়ে দিয়েছে এবং আতœতূষ্টির জন্য ব্যক্তিজীবনে ধর্ম পালনের জয় গান গাইছে। এ হচ্ছে বিকৃত মানসিকতার রূপ।

- তোর কথার সাথে দ্বীমত করার কোন সুযোগ নেই। কিন্তু কেউ কেউ প্রশ্ন করে যে, আমরা এই জ্ঞান বিজ্ঞানের যুগে কি করে চৌদ্ধশত বছর পুর্বের বিধি বিধান কে ফলো করতে যাবো। আজকে ইউরোপ আমেরিকাতো উন্নতির চরম শিখরে পৌছে গেছে, তারা তো আর কোরআনের শাষন মেনে নেয়নি। তাহলে তারা কিভাবে উন্নতির শিখরে পৌছালো। তাদের মতো শাষন ব্যাবস্থায় আমরা যদি জবাবদিহীতা আনতে পারতাম তাহলে আমরাও হয়তো এমন উন্নতি করতে পারতাম। বিষয়টি কি ভেবে দেখার বিষয় নয় ?

- অবশ্যই ভেবে দেখার বিষয়। আমরা তা ভেবেও দেখেছি। কবিতায় আছে না, নদীর এপারে দাড়ায়ে ছাড়ি বড় নিঃশাস, ওপারে তে মহাসুখ আমার বিশ্বাস। যাদের ইউরোপ আমেরিকার বাহিরের দৃশ্যটি দেখার সৌভাগ্য হয়েছে তাদের কাছে ইউরোপ আর আমেকিাতো স্বাক্ষাত স্বর্গ। অন্যদিকে যারা ইউরোপ আমেরিকার জীবনযাপনের ইতিহাস জানেন এবং যারা সেখানে দিনে দিনে বড় হচ্ছেন তারা জানেন যে, তারা কতটা নরক যন্ত্রনার মধ্যে অবস্থান করছেন। ইউরোপের একজন রাষ্টবিজ্ঞানী, এই মুহুর্তে তার নাম আমার স্মরনে আসছে না, তিনি তার এক বিশাল প্রবন্ধে দেখিয়েছেন যে কিভাবে ইউরোপ আস্তে আস্তে ধ্বংষে দিকে চলে যাচেছ। তিনি তার প্রবন্ধের নাম দিয়েছেন ” দ্যা ইন্ড অফ ইউরোপ”। আমরা কয়জন পড়েছি তাদের সেই তথ্যবহুল উক্তিগুলো।

শান্তি যদি এর নাম হয় যে, বিশাল বিশাল অট্রলিকা আর রাজকীয় প্রাসাধে নিদ্রা যাপন করা এবং অন্যের ওপর অযথা খবরদারি করা, তাহলে সেটা মনে হয় কোন জ্ঞানী ব্যক্তি মাত্র মেনে নেবেন না। শান্তির সংজ্ঞা বড়ই চমকপ্রদ। আমি সেদিকে যাবো না। আমি তোকে একটি পরিসংখ্যান দেই। গোটা ইউরোপে পরিবার প্রথা প্রায় বিলুপ্তির পথে। লিভ টুগেদার এখন সামজিক ভাবে স্বিকৃত। কারো বিয়ে শাদী করার প্রয়োজন পড়ছে না। মেয়েরা তাদের অবাধ স্বাধীনতার নামে নিজেদের পায়ে কুড়াল দিচ্ছে। যদিও কেউ বিয়ে সাদী করে ফেলেন তবুও তাদের দাম্পত্য জীবন হয় এক ধরনের ব্যাভিচারের মতো। স্ত্রীর সামনে দিয়ে স্বামী আরেক নারীকে নিয়ে রাত কাটায়, স্ত্রীও কম যায় না। বয় ফ্রেন্ড ডেকে এনে নিজের সত্তিত্বের পরীক্ষা নেয়। ভুল ক্রমে যদি একটি ছেলে বা মেয়ে তাদের সংসারে এসেও যায় তবুও তার চাইতে তাদের কুকুরের মুল্য অনেক বেশি হয়। কুকুরকে বুকে ধারন করে আর বাচ্ছাদের কে ট্রেজারে করে নিয়ে বেড়ায়। ছেলে মেয়েরা বাবা মার স্নেহ পায় খুব কমই। যুবক বয়সে এই ছেলে মেয়েরা ফ্রাস্টেশানে ভুগতে থাকে চরম ভাবে। শুরু হয় তাদের দ্বারাও অনৈতিক জীবন যাপন। বেশির ভাগ পরিবার ডিভোর্সের মতো স্বিদ্ধান্ত নিয়ে ছেলে মেয়েদের জীবনকে নরক বানিয়ে দেয়।

ফলাফল দাড়ায় এই যে, বুড়ো মা বাকে নিজের কাছে রাখার চেয়ে বৃদ্ধাশ্রমেই তাদের কে সাজিয়ে রাখে। ছেলে মেয়েরা পিতা মাতার দায়িত্ব্য পালনে ব্যার্থ হচ্ছেন দেখে নতুনরা সন্তান নেওয়ার বিপদ মাথায় নিচ্ছেন না। তার ওপর রযেছে চুক্তি ভিত্তিক বিয়ে যন্ত্রনা। এই পরিস্তিতিতে গোটা ইউরোপে জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার একদম কমে গেছে। তাদের বংশ ধ্বংস হয়ে যাওয়ার আশংকা করছেন বিজ্ঞানীরা। কতিপয় বিবাহ আইনের কারনে ছেলে মেয়েরা স্থায়ী ভাবে বিয়ে করার পরিবর্তে চুক্তিবদ্ধ জীবন যাপন করতে বাধ্য হচ্ছে। সামজিক বন্ধন সেখানে নেই বললেই চলে। কেবল যান্ত্রিক কিছু মানুষের উঠা বসা আমরা প্রতক্ষ্য করছি মাত্র। দুর থেকে দাড়িয়ে প্রগতির নামে তাদের অনৈতিক জীবন যাপন কে আমরা স্বাধীনতা ভেবে তার জন্য উঠে পড়ে লেগেছি। অথচ আমরা কেন ভেবে দেখিনা যে, মানুষ কোন দায়িত্ব্যহীন প্রাণী নয়। তাদের জীবন যাপনের নৈতিক কিছু কারণ আছে। তাদের একটি লক্ষ উদ্ধেশ্য আছে। বিগত কয়েক শতাব্দি তে ইউরোপ আমেরিকা তাদের দৈনন্দিন জীবন যাপনে ধর্মকে এড়িয়ে যাওয়ার চেষ্টা করলেও বর্তমানে তারা ধর্মের উপদেশগুলো প্রচারে বাস্তব কর্মপদ্ধতি গ্রহণ করেছে। ইতিমধ্যেই তারা শিক্ষা ব্যাবস্থায় ধর্ম শিক্ষাকে বাধ্যতামুলক করে নিয়েছে। তবুও তারা তাদের অশান্তি দুর করতে পারছে না। ইউরোপের নাগরিকদের মধ্যে জরিপ চালিয়ে প্রমান পাওয়া গেছে যে, তরুনদের শতকরা ৭৮ ভাগ অনিদ্রা আর হতাশায় ভুগছে। রাতের ঘুম তাদের জন্য সোনার হরিণ হয়ে গেছে। পারিবারিক অশান্তী এবং অন্ধকার ভবিষ্যত তাদের কে দারুন ভাবে হতাশ করে দিচ্ছে। বৃদ্ধা এবং তাদের সমবয়সি দের ওপর জরিপে একথা প্রমানিত হয়েছে যে, তারা স্বিকার করে যে তাদের জীবন পদ্ধতি তাদের কে এই অন্ধকার পথে নিয়ে এসেছে যার পরিনতি তারা এখন ভোগ করছে। এই অবস্থায় আমাদের ভেবে দেখা দরকার যে, আমরা কি আমাদের দেশকে ইউরোপ আমেরিকার মতো অনৈতিকতার স্রোতে ভাসিয়ে দেবো নাকি পারস্পরিক শ্রদ্ধা আর দায়িত্ব্যশীলতার যে জবাবদীহি মুলক জীবন ব্যাবস্থা ইসলাম দেখিয়েছে তার দিকে আকৃষ্ট হবো।

-ইসলাম কাযেম হলে দেশ কি আসলে উন্নতি করতে পারবে না ?

- কেন পারবে না। ইসলাম তো এমন একটি ব্যালেন্স নীতিমালা প্রদর্শন করেছে যেখানে রাষ্টে প্রত্যেক নাগরিক তার স্ব স্ব দায়িত্ব্য সঠিক ভাবে আঞ্জাম দিতে পারলে গোটা দেশ সমৃদ্ধশালী হয়ে যাবে। শুধু কি তাই ? ইসলাম মানুষের মৌলিক অধিকার গুলোকে হেফাজত করার জন্য কিছু কঠিন আইন কানুন দিয়েছে যাকে দুর থেকে অত্যান্ত কঠোর এবং অনেকের কাছে বর্বর মনে হতে পারে। যেমন জ্বিনার হদ বিষয়ে অধুনা আমাদের প্রগতির নামে দুর্গতী বহন করা কিছু পরজীবিরা কয়েকটি অভিযোগ করে তার মধ্যে একটি হচ্ছে, এটা অত্যান্ত বর্বর আইন। এর দ্বারা মানবাধিকার লংঘিত হয়।

একজন স্বামী তার স্ত্রীর কাছে নিজের ইজ্জত এবং সম্পদ গচ্ছিত রেখে নিজ দায়িত্ব্যপালনের জন্য যখন ঘর থেকে বের হয় তখন সেই স্ত্রীটি যদি তার বিশ্বাসের ওপর আঘাত করে অন্যের সাথে অনৈতিক সম্পর্কে জড়িয়ে পরে তাহলে সেটা কি ঐ পুরুষটি মানবাধিকা কে লংঘন করেনি। এভাবে যদি একজন নারী অথচা পুরুষ নিজ নিজ দায়িত্ব্য থেকে গাফেল হয়ে যায় তাহলে গোটা সমাজে এর বিরূপ প্রভাব ফেলতে শুরু করে। স্ত্রী এবং স্বামীর অধিকার কে সমুন্নত রাখা এবং সমাজকে অবাঞ্চিত পরিস্থিতি থেকে মুক্তরাখার জন্যই তো এই কঠোরতা। এসব ঘটনা যদি একজন ব্যক্তি পর্যায়ের বিষয় হতো তাহলে সেটাকে এত কঠিন ভাবে দেখার কোন প্রয়োজন ছিল না। কিন্তু আল্লাহ পাক খুব ভালো করেই জানেন যে, এ জাতীয় কর্মকান্ডকে প্রশ্রয় দেয়ার মানেই হলো গোটা মানব জাতিকে অশান্তির আগুনে ফেলে দেয়া। এবার বলতো গোটা জগতের মানুষকে, সমাজকে অশান্তির আগুনে ফেলে দিতে পারে যে অপরাধ, যে অপরাধের কারনে গোটা পারিবারিক বিশ্বস্ততার বন্ধন ছিন্ন হতে পারে তাকে কি এত সহজে ছেড়ে দেওয়া ঠিক হতে পারে ?

এভাবে প্রতিটি বিধি বিধানের মাধ্যমের ইসলাম একটি শান্তিপূর্ণ সমাজ নির্মানের সকল দিক নির্দেশনা প্রদান করে দিয়েছে এবং তার সাথে মানুষের নৈতিকতার উত্থানকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব্য দিয়েছে। আমরা কেবল নিজেদের খায়েশের কারনে সেগুলো মেনে নিতে পারছি না। অথচ যে সকল জীবন বিধান আমাদের কে অশান্তীর আগুনে ঠেলে দিচ্ছে সেগুলোর ওপরে আমাদের এত মোহাব্বাত। আমরা বার বার সেগুলো প্রয়োগ করে চলছি।

-আসলে ইসলাম নিয়ে আরো জানার বাকি আছে।

- আছে বৈকি, ইসলাম নিয়ে আমাদের অজ্ঞতার সুযোগ নিয়েই তো শাহরিযার কবিরের মতো রামেরা কোরআন হাদিসের ব্যাখ্যা করে, আমাদের কিছু মোনাফিক সেগুলো দেদারছে হজম করছে। আমাদের এই অজ্ঞতাকে পুজি করেই তো সুরজ্ঞিত বাবুরা বিসমিল্লাহর অনুবাদ করার সাহস দেখায়। আসলে ইসলামকে র্চচার আগে অনুধাবন করার যে প্রয়োজনীয়তা উপলদ্ধি করার দরকার ছিল সেটুকো আমাদের মুসলমানদের দায়িত্ব্যশীলরা করতে পারেননি। তারা কেবল কতিপয় আমল আখলাককে ইসলাম বানিয়ে নিয়ে জিকির করেছেন আর জনগন ভাবছে এটা তো সহজ ইসলাম। অতঃপর তারাও কিছু আমল আখলাক কে ধারন করলো এবং ইসলামের বৃহত্তরও স্বার্থ্যকে ভুলে গেল। শুধু কি তাই ,তারা নিজেরা প্রকাশ্যে ইসলাম বিরোধী ধ্যান ধারণাকে বরদাশত করে নিতে লাগল এবং কোন কোন ক্ষেত্রে তাদের সহযোগী হতে লাগল। এসব কারনে সাধারন জনগন ভাবলো ঐসকল কর্মের সাথে ইসলামের কোন বিরোধ নেই। এভাবে গোটা মুসলিম সমাজ একদিন তাদের তাহজিব তামুদ্দুন কে বিসর্জন দিয়ে বসলো।

-আসলেই আমরা ভেবে দেখিনি।

- শুধু কি ভেবে দেখিনি, নাকি চোখ খুলে চেয়েও দেখিনি ? আমরা কি দেখতে পাচ্ছি না কোন সিস্টেমে দেশ চলছে। যে সিস্টেমের খেশারত দিতে হচেছ প্রতিটি মুহুর্ত্য। সাধারন জনগন দশ টাকার টেক্স দিতে না পারলে তাদের সম্পত্তি ক্রোক করার অর্ডার আসে, সামান্য চর থাপ্পরের মামলায় মাসের পর মাস জেল খাটতে হয় বিনা বিচারে। তারিখের পর তারিখ হাজিরা দিতে হয দশটা টাকা চুরির মামলায়। অথচ হাজার কোটি টাকা চুরি করে নির্ভিগ্নে ঘুরে বেড়াচ্ছে কিছু মানুষ। তাদের জন্য কারা বানিয়েছে এমন সিস্টেম। কারা চাপিয়ে দিয়েছে ? আমরা নিজেরাই বেছে নিয়েছি। পাপ আমরা করছি আর শাষক গোষ্টিকে গালাগাল করছি। এসব নিয়ে ভাবনার সময় এসেছে। যে সমাজে বিচার ব্যাবস্থা বিলম্বিত হয়, সে সমাজের প্রতিটি রন্দে রন্দে দুর্নিতি আর অপশাষন স্থায়ী আসন গড়ে নেয়। এ কারনে ইসলাম বিচার ব্যাবস্থার প্রতি এতটা জোড় দিযেছে। সমাজ ও রাষ্টে ইনসাফ কে প্রাধান্য দিয়েছে। কে মোহাম্মদের (স) মেয়ে আর কে ইয়াহুদীর মেয়ে সেদিকে নজর দিতে স¤পূর্ণ রুপে হারাম করে দিয়েছে। বিচার করতে হবে দ্রুত এবং ইনসাফের সাথে এটাই ইসলামের বিচার ব্যাবস্থার সার কথা। অথচ আজকে বিচার ব্যাবস্থার নামে চলে নিজেদের খামখেয়ালী। মনে চাইলো তো কাউকে দশ বছর সাজা দিলাম, মনে চাইলে একই মামলায় অন্যকে বেকশুর খালাশ করে দিয়ে মামলাটিই বাদ করে দিলাম।

- আসলেই ভাবনার সময় এসেছে। সময় এসেছ ঘুমন্ত বিবেককে জাগিয়ে তোলার। যদিও মানুষ মনে করে সবাই বুঝি একই রকম। আসলে কি তাই ?

- কেবল বলেছে মানুষ এমন মনে করে, আসলে তাদের কে এমন মনে করানো হয় যাতে খারাপ লোকেরা সহজেই পার পেয়ে যায়। তাই এখন বুঝানোর সময় এসেছে। এটা ময়দানে নেমে নিজের ঈমানের ঘোষনা দেওয়ার সময়। সাধারন মানুষদেরকে বুঝাতে হবে যে, দুনিয়ার সামান্য ক্ষমতা আর ক্ষুদ্র স্বার্থ্যরে বিনিময়ে আখেরাত বিক্রি করে দেয়নি এমন মানুষ এখনো বিরল নয়। চাইলেই এমন নেতৃত্ব্য পাওয়া যায়। প্রয়োজন কেবল মাত্র শানিত বিবেক আর নিরপেক্ষ দৃষ্টিশক্তির।

বিষয়: বিবিধ

১৮৫৩ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File