অপারেশান সার্চ লাইট বনাম অপারেশান মতিঝিল।
লিখেছেন লিখেছেন স্বপ্নতরী ০৬ মে, ২০১৩, ১২:৩৬:৫৩ দুপুর
সময় কাল ঃ ১৯৭১।
প্রতিপক্ষ ঃ পাকিস্তানী হানাদার বাহিনী।
অপারেশানঃ অপরেশান সার্চলাইট।
ইতিহাসের বর্বরতম গনহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটিত হয় এই দিনে। পাকিস্তানের সামরিক জান্তা গনমানুষের ন্যায্য দাবিকে পাস কাটাতে বেছে নেয় এক নির্মম গনহত্যার। সেদিনের এই গনহত্যায় গোটা পৃথিবী অবাক হয়ে গিয়েছিল। সাধারন নিরস্ত্র মানুষে ওপর রাতের আধারে এমন এক নিমর্ম আক্রমন গোটা দুনিয়ার কাছে পাকিস্তানী শাষকদের কে হায়না হিসেবে পরিচিত করে দিয়েছিল। বিশ্ব বিবেক তাদের সর্বশক্তি দিয়ে এর প্রতিবাদ করেছেন। সেদিনের সেই গনহত্যার সঠিক চিত্র গনমাধ্যমের কাছে ছিল না। কারণ হিসেবে বলা হয় যে, এই গনহত্যার পরিকল্পনা কালিন সময়ে সকল মিডিয়া কর্মীদের কে নজর বন্দি করা হয়। আজকের মতো সেদিন যদি এত টেলিভিশন চ্যানেল থাকতো তাহলে হয়তো সেদিনের ঘটনাকেও বিশ্ব বিবেকের কাছ থেকে গোপন করার জন্য যা যা করার করতো সেই হায়নার দলেরা। গনমাধ্যম কে এড়িয়ে গিয়ে চালানো সেই হত্যা কান্ডের জন্য আমরা পাকিস্তানী বাহিনীর বিরুদ্ধে অস্ত্র হাতে তুলে নেই। দল মত নির্বিশেষে গোটা দেশ এর বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলে। পরিনামে আমরা পেয়েছি একটি নতুন মানচিত্র।
কোন সরকার যখন তার অপরাধকে গোপন করার হিনপ্রচেষ্টা চালায় তখন তারা গনমাধ্যম কে নিয়ন্ত্রন করার ব্যর্থ চেষ্টা চালায়। পাকিস্তানী শাষকরাও তার ব্যতিক্রম কিছু করেননি। বিদেশী মিডিয়াগুলোকে সেই দিনের নিষ্টুর গনহত্যার কোন সঠিক চিত্র সাথে সাথে দেশ বাসিকে জানাতে দেয়নি। সেন্সরশিপের ভয় এড়িয়ে গিয়ে যারা জীবনের ঝুকি নিয়ে পাকিস্তানী হানাদার বাহিনীর অপকর্মকে বিশ্বদরবারে উপস্থান করে তুলছিলেন তাদের অনেককেই পাকিস্তানী হায়েনা স্বৈরাচারী সরকার গুম করে ফেলেছিল। অনেকের লাশ এখনো খুজে পায়নি নিহতের স্বজনরা। মার্চের সেই গনহত্যা আমাদের কে যেমন শক্তি জুগিয়েছে এবং স্বাধীনতা ও স্বধিকার আন্দোলনের সাফল্য পেতে সহয়তা করেছে এবং পাকিস্তানী শাষকদের স্বৈরচারী শাষন ব্যাবস্থা থেকে আমাদের কে মুক্তি দিয়েছে, তেমনি করে আবার দুনিয়ার সকল স্বৈরচারী সরকারের জন্য একটি বার্তাও দিয়ে দিয়েছে যে, গায়ের জোড়ে, স্বৈরচারী কায়দায় গনমানুষের ওপর স্বৈরাচারী শাষন ব্যাবস্থা দির্ঘায়ীত করা যায় না। মানুষের শান্তপ্রিয় আন্দোলন কে অত্যাচারের মাধ্যমে দমন করা যায় না। মানুষের ন্যায্য দাবিকে প্রতিরোধের জন্য যে কোন শক্তি প্রয়োগের নিতীমালা বুমেরাং হয়ে যায় এবং তার পরিণতীও শাষকদের কে এক সময় ভোগ করতে হয়। এই বার্তার সঠিক চিত্রায়ন আমরা প্রথমে দেখিছি আমার সোনার বাংলায় তার পরে বহু বছর পড়ে আরব রাষ্টগুলোতে প্রতিফলিত হতে দেখেছি একই সুত্র। এই বার্তাকে ধারন করেই গঠিত হয়েছিল মুক্তিযুদ্ধের চেতনার নামে নতুন এক সরকার। পরবর্তিতে কিভাবে সেই বার্তাকে ভুলে গেলেন শেখ মুজিবর রহমান এবং তার পরিণতিও কি হয়েছিল তাও বোধ হয় ব্যাখ্যা করার দরকার নেই। ইতিহাস সচেতন পাঠকরা সেটা জানেন। নিজেদের দুঃশাষন এবং গনবিরোধী কর্মকান্ডকে আড়াল করার জন্য সবগুলো গনমাধ্যমকে বন্দ করে দিয়ে নিজেদের পা চাটা কয়েকটি গোলাম পত্রিকা রেখে দিয়ে মুজিব সরকার ভেবেছিল এই বুঝি গন মানুষের প্রতিবাদের ভাষা নিস্তব্দ করে দিতে পেরেছে। কিন্তু ইতিহাস স্বাক্ষি দিচ্ছে যে, পা চাটা দলকানা কয়েকটি প্রত্রিকা দিয়েও মুজিব সরকার তার শেষ রক্ষা করতে পারেননি। এমনকি তার মৃত্যুর পরে তার কাছের লোকেরাও তৃপ্তির ঢেকুর তুলে ছিলেন এই বলে যে, দেশ ফেরাউনের কবল থেকে উদ্ধার হয়েছে। লোকেরা বলেন সেই সময় ইন্নালিল্লাহ পড়ার মতো লোকও ছিলনা। আমার জন্ম সেদিন হয়নি, আফসোস ছিল যে, স্বৈরাচারি সেই ভয়াল চিত্র কাভার করতে গিয়ে অভিজ্ঞতা অর্জন করা বা শহীদি মৃত্যু বরন করার সুযোগ হয়নি। জ্ঞানীরা বলেন যে, মানুষ মন থেকে কিছু চাইলে আল্লাহ তার সখ পূরণ করেই ছাড়েন।
সময় কাল ঃ ২০১৩।
প্রতিপক্ষ ঃ নব্য বাকশালী আওয়ামী সরকার।
অপারেশান ঃ অপারেশান (ব্লাক নাইট) মতিঝিল।
আমরা নতুন প্রজন্ম কেবল অপারেশান সার্চ লাইটের নাম শুনেছি। গল্প আকারে জেনেছি যে, রাতের আধারে ঘমন্ত নিরস্ত্র মানুষের ওপর কিভাবে হায়নার মতো আতর্কিত ঝাপিয়ে পড়েছিল মিলিটারী ফোর্সেস গুলো। প্রশাসনের সকল ক্ষমতা এবং অস্ত্র শক্তিকে কাজে লাগিয়ে নির্মম গনহত্যার পথ বেছে নিয়েছিল পাকিস্তানী হায়েনারা। সেদিনের ঘটনা যাদের জন্য কল্পনার এবং আক্ষেপের কারণ হয়ে গিয়েছিল, তাদের জন্য মহান প্রভু আরেকটি অপারেশান দেখার সুযোগ করে দিয়েছেন। আজকের এই অপরাশেন কোন ভিনদেশি নাগরিকরা করেনি কেবল মাত্র এই পার্থক্যটুকো ছাড়া মৌলিক আর কোন পার্থক্য খুজে পাওয়া কঠিন হবে। গত রাতে মতিঝিলে হেফাজতের নিরীহ, নিরস্ত্র কর্মীরে ওপর বাংলাদেশের জনগনের টাকায় লালিত পুলিশ, র্যাব, বিডিয়ার এবং আওয়ামীলীগের সংঘঠিত কর্মীরা যে গনহত্যা এবং অত্যাচার চালিয়েছে তাকে আড়াল করার জন্য সরকার সেই পুরনো পাকিস্তানী ফরমুলা গ্রহণ করেছেন। রাতের শেষ ভাগে বন্ধ করে দেয়া হয় দিগন্ত এবং ইসলামী টিভির সম্প্রচার। প্রিন্ট মিডিয়ার কর্মীদের কে একঘরে করে নিয়ে যাওয়া হয় মতিঝিল সিমানার বাইরে। অন্ধকারে চালানো হয় আক্রমন। কিছু বুঝে উঠার আগেই নিরস্ত্র হেফাজত কর্মীদের অনেকেই মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েন। এলোপাথারী লাঠি চার্যে রক্তাক্ত হয়ে পড়েন অনেকে বয়োবৃদ্ধ ব্যক্তিরাও। হেফাজতের প্রতক্ষ্যদর্শি কর্মীরা এবং মতিঝিলের পাশের কয়েকটি অফিসের কর্মীরা দাবি করেছেন যে, প্রশাসনের ভুমিকা দেখে মনে হয়নি তারা বাংলাদেশের কোন বাহিনী। তারা আরো দাবি করছেন যে, এই হামলায় কয়েক শত লোক মৃত্যু বরন করেছেন। এসব তথ্য হয়তো জানার কোন সুযোগ তৈরি হবে না। তবুও গোটা এলাকা থেকে কয়েকটি লাশের পড়ে থাকা ছবি দেখা গেল একুশে টেলিভিশনের ক্যামেরায় এবং এ থেকে অনুমান করা যায় যে, প্রচুর লাশ সরিয়ে ফেলা হতে পারে। লাশের সঠিক হিসেবে মিলার আগে হয়তো পরিস্থিতির গভিরতা অনুধাবন করা কঠিন হয়ে পড়বে। আমাকে ঢাকায় কর্মরত আমার এক ভাই জানালেন যে, পুলিশের পোষাকে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একাধিক ছাত্রলীগ নেতাকে দেখেছেন হামলায় অংশ নিতে।
কিছুক্ষন আগে এক ভাই বললেন যে, রাত দুটোর সময় কিছু বুঝার আগেই গুলির শব্দে তার ঘুম ভেংগে যায়। মুহুর্তের মধ্যে লাশের মিছিলে যোগ দেয় কয়েক শত লোক। প্রশ্ন হচ্ছে লাশের এই সংখ্যা কতো হতে পারে। অনুমান করার জন্য একটি তথ্যই যথেষ্ট হতে পারে যে, লাশ বহনের জন্য কর্পোরেশানের ময়লাবাহী গাড়ির প্রয়োজন হয়ে পড়েছে। আল্লাহ ভালো জানেন যে, শহীদদের জানাজা নসিব হয় কিনা।
অবাক করা বিষয় হচ্ছে ইতিহাস কত নির্মম ভাবে আমাদের কে শিক্ষা দেয়, সচেতন করে কিন্তু আমরা যেন সেই বধির, রাত কানাদের মতোই অলস হয়ে আছি। কিছুই শিখতে পারছিনা। বালাকোটের ময়দানে যেদিন হাজারো হাফেজ, ঈমানদার ইংরেজদের হাতে শহীদ হয়েছিলেন আজেকর দিনটিও সেই একই দিন। বালাকোটের শহীদদের কে যারা দেখেননি তারা যেন মতিঝিলের শহীদদের দিকে তাকান এবং শিক্ষা নিতে পারবেন এই বলে যে, বালাকোটের শহীদদের রক্ত যেভাবে বৃথা যায়নি, মতিঝিলের শহীদদের রক্তও সেভাবেই বৃথা যাবে না। বালাকোটের ময়দানে রক্তের হোলী খেলা ইংরেজদের কে আমরা তাড়িয়েছি ঠিকই কিন্তু তাদের আদর্শে বড়া হওয়া ইংরেজদের প্রেতান্তাদের কে নিজেদের হাতে সমাজে প্রতিষ্টিত করেছি। ইংরেজদের রেখে যাওয়া এই প্রেতান্তারাও ইতিহাসের সেই পুনরাবৃত্তি ঘটিয়ে প্রমান করে দিল যে, আমরা কতটা দিন ঘুমিয়ে ছিলাম। কতটা অসেচতন ছিলাম আমরা।
হেফাজতের কর্মীদের হাতে কোন অস্ত্র ছিলনা। তারা প্রতিবাদের ভাষা হিসেবে অবস্থান কর্মসূচী পরিচালনা করার স্বিদ্ধান্ত জানিয়ে দিয়েছেন। অবস্থায় রাতের আধারে ঘুমন্ত কর্মীদের ওপর গুলি এবং হামলার ঘটনা আমাদের কে পাকিস্তানী শাষকদের অপারেশান সার্চলাইটের কথাই মনে করিয়ে দিচ্ছে। আমরা যারা পাকিস্তানী হায়েনাদের হত্যা নির্যাতন দেখার সৌভাগ্য হয়নি তাদের জন্য আওয়ামী বাকশালী সরকারের এই অপারেশান মতিঝিল কিছুটা হলেও জ্ঞান আহরনে সহায়ক হবে। পাশা পাশি প্রমানিত হয়ে গেল এই দেশের মুসলিম জাতিসত্বার বিরুদ্ধে কোন কোন মিডিয়া অবস্থান নিয়েছে এবং কারা জাতি সত্ত্বার পক্ষে অবস্থান নিয়েছেন। মিডিয়ার এই দলন নিতীতে শেখ হাসিনা সরকার প্রথিবীর বড় বড় স্বৈরাচারীদেরকেও হার মানিয়েছেন। এক কালেম তুখোর আওয়ামী বিরোধী, নিষিদ্ধঘোষিত সংঘঠনের বাম নেতা হাসানুল হক ইনুরা বাক স্বাধীনতার সবক দিতে দিতে এখন বাকস্বাধীনতা হরনের মহানায়ক হয়ে গেছেন। এর কারণ হলো রাসুলুল্লাহ (সা) সেই বানী- আল কুফরূ মিল্লতুন ওয়াহীদ, কুফর একই জাতের হয়। তারা কোন না কোন ভাবে একই ফ্লাট ফরমে এসে যায়।
সর্বশেষ খবর হচ্ছে দিগন্ত, ইসলামী টিভির সাথে নয়াদিগন্ত,সংগ্রাম সহ বিরোধী মতে কয়েকটি মিডিয়াকে বন্দ করে দেয়া হয়েছে। শফিক রেহমানের ইস্কাটনের বাসায় হামলা করেছে ছাত্রলীগ ও যুবলীগের কর্মীরা। মিডিয়া দমনের এই খেলাকে আমাদের এক ব্লগার ভাই মিডিয়া ধর্ষণ বলে উল্লেখ্য করেছেন। আল্লাহ পাক সত্যকে মিথ্যার মুখোমুখি দাড় করিয়ে দিয়ে মিথ্যার পর্দা ফাঁস করে দেন। সুশিল নামধারী মিডিয়াগুলোর নিরবতা এবং সরকারের পদলেহন দেখে আমরা মোটেও হতাশ হইনি বরং খুশি হয়েছি যে, যাদের কাছে আমরা খবরের মুখাপেক্ষি হতাম তারাই এখন আমাদের জন্য খবরের কারণ হয়ে গেলেন। এই সকল চুশিল মিডিয়ার কাছ থেকে ধোকা খাওয়ার দিন শেষ। পা চাটা দলকানা মিডিয়াগুলো সম্পর্কে আমরা এতদিন কেবল অভিযোগ আর আশংকা করে পোষ্ট দিয়েছি কিন্তু গতরাতের এই অপারেশানে প্রমানিত হয়েছে কারা পা চাটা গোলামের দল।
সবশেষে একটি আশার খবর শেয়ার করতে চাচ্ছি। দুনিয়ার কোন স্বৈরাচার তাদের অপকর্ম ঢাকার যতই চেষ্টা করুক না কেন, গনমানুষের ওপর অত্যাচারের যতই স্ট্রিম রোলার চালাক না কেন, তাদের পরিণতি ফেরাউন, নমরুদ, আবু জাহেল মতোই হবে। নবী স্বৈরাচারদের পতন এখন সময়ের ব্যাপার মাত্র। আল্লাহ বলেন, আমি যদি একটি দলকে দিয়ে আরেকটি দলকে দমন না করতাম তাহলে দুনিয়ায় বিপর্যয় নেমে আসতো- আল কোরআন। তাই একথা মনে করার কোন কারণ নেই যে, আল্লাহ রব্বুল আলামী তার সুন্নাত থেকে পিছপা হবেন। ইনশায়াল্লাহ তাগুতের পরাজয় হবেই হবে।
বিষয়: বিবিধ
১৪২০ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন