সামনে ঈদে মিলাদ্ন্নবী (??) কি করবেন ? সুন্নাহ, না বেদয়াহ ?

লিখেছেন লিখেছেন স্বপ্নতরী ১৯ জানুয়ারি, ২০১৩, ১১:১৯:২০ রাত

কয়দিন পরেই বারো ই রবিউল আউয়াল। এই দিন কে কেন্দ্র করে মুসলিম দুনিয়ার কিছু ব্যক্তি বর্গের অন্তরে নবী প্রেমের জোশ উঠবে। কেউ কেউ তো বিশাল জশনে জুলুসে মাহফিল ও মিছিলের আয়োজন করবেন। কারো কারো কাছে এই দিনটি হচ্ছে দুনিয়ার সর্বোত্তম ঈদের দিন। এই দিনে খুশি হওয়া তাদের কাছে ঈমানের আলামত। তাদের এই খুশির কারনে তারা বিশাল মিছিলের আয়োজন করেন। যারা এ সকল কর্মকান্ড করেন তারা বিস্তর দলিল দস্তাবেজের কাছে যেতে চান না। তাদের যুক্তি হলো নবী প্রেমে কোন দলিল আদিল্লার প্রয়োজন নাই। তাদের এই সকল বেদয়াতী কর্মকান্ডের বিরুদ্ধে হাজারো বই - প্রবন্ধ লেখা হয়েছে। তাদের কাছে এই সকল দলিলের কোন ভিত্তি নেই। এই কারনে আমার মনে হয়েছে দলিলের যেহেতু কোন মুল্যায়ন তারা করছে না, সেহেতু যুক্তির নিরিখে দেখা দরকার যে, আসলে তাদের এই সকল বেদয়াতী কর্মকান্ডে নবী প্রেমের চিহ্ন প্রকাশিত হয়, নাকি নবীর সব থেকে যোগ্য অনুশারী সাহাবায়ে কেরামের প্রতি দোষারোপ করা হয়।

ভয়কংর বিষয় হচ্ছে যারা এই সব বাতিল আমলের সাথে জড়িত তারা আবার আমাদের কে গোমরাহ, দুনিয়াবী, ইয়াজিদের বংশধর ইত্যাদি বলে গালাগাল করতে থাকেন। তাদের দৃষ্টিতে জান্নাতে যেতে হলে নবীর প্রেমের বিকল্প কিছু নেই। নবীকে যারা মোহাব্বাত করবে, তারা নবীর জন্ম উপলক্ষে খুশি হবে। আর খুশির দিনে আনন্দ করার মাঝে বেদয়াতের কোন চিহ্ন নেই। এই সকল বন্ধুরা হয়তো ভাবেন যে, নবী প্রেমের ইজারা কেবলমাত্র তারাই পেয়েছেন। এই ঠিকাদারীর সনদ তারা যদি কোরআন এবং সুন্নাহ থেকে নিতেন তাহলে আমাদের কোন আপত্তি ছিলনা। আমরা চোখ বুঝে তা মেনে নিতাম। অতি আনন্দের সাথে তাদের সংগে যোগ দিতে আমরা একটু কার্পন্য করতাম না। কিন্তু তারা বার বার আমাদের কে হতাশ করেছেন। তারা নবী প্রেমের এত বড় সংবেদনশীল একটি বিষয়ে দলিল প্রমান দিতে গিয়ে সহিহ হাদিসের পরিবর্তে জাল, দুর্বল, এবং জিন্দিকদের তৈরি হাদিসের রেফারেন্স দিতে পছন্দ করেন। সাহাবা, তাবেয়ীন এবং তাবেয়ানদের উক্তির পরিবর্তে, পীর, সুফী আর বিতর্কিত কিছু ব্যক্তি আর কিতাবের হাওলা দিতে পছন্দ করেন। অথচ তারা জানেন যে, উপরোক্ত কোন দলিল দিয়েই নবী প্রেমের সনদ কায়েম হয় না। বরং যারা সাহাবাদের কর্মনীতিকে এড়িয়ে গিয়ে এমন কোন আমলের দিকে ঝুকে পড়েছে, তারা হয়তো শীয়া, নয়তো বাতিল কোন ফেরকার খপ্পরে পড়েছেন।

এ কারনে আমি আমার প্রবন্ধে দলিল আদিল্লার পরিবর্তে কয়েকটি যুক্তি সংগত সত্যের দিকে পাঠকদের দৃষ্টি আকর্ষন করতে চাচ্ছি। আমি জানি যে, আমার লেখা অন্ত্যান্ত লম্বা হয়ে যাচ্ছে বলে অনেকের কাছে পাঠযোগ্য নাও হতে পারে। কিন্ত এমন একটি স্পর্ষকাতর বিষয় নিয়ে হালকা পাতলা আলোচনা হিতে বিপরিত হতে পারে। আমার এই আশংকা না থাকলে আমি আরো সংক্ষিপ্ত করতে পারতাম। আরেকটি কারণ হলো আমাদের মধ্যে অনেক হক পরস্ত বন্ধুরাও চিন্তার মধ্যে আছেন যে, আসলে আমরা মিলাদুন্নবী পালন না করে কোন গোনাহ করছি কিনা। তাদের এই সকল পেরেশানী আমার লেখায় কিছুটা দুর হতেও পারে।

প্রথমে একটি বিষয় জেনে রাখা ভালো যে, আমাদের প্রিয় নবী, সাইয়্যেদুল মুরসালিন, খাতামুন্নাবীয়িন হযরম মোহাম্মদ (স) এর জন্ম বা মৃত্যু নিয়ে উম্মাতের মোহাক্কিক আলেমদের মধ্যে, বিশেস করে হাদিসের মোহাদ্দিসদের মধ্যে ব্যাপক মত বিরোধ রয়েছে। হযরতের জন্ম বা মৃত্যু নিয়ে উম্মাতের মধ্যে বহুল প্রচলিত কোন রেওয়াত না থাকাতে একটি প্রশ্ন স্বভাবতই জাগতে পারে যে, সাহাবারা (রা) কি হুজুরের (স)জন্ম বা মৃত্যুর তারিখ মনে রাখতে পারেননি ? নাকি তারা মনে রাখার মতো কোন কারণ খুজে পাননি ? তারা কি হুজুরের জন্ম মৃত্যু নিয়ে কোন ধারাবাহিক প্রোগ্রাম চালু করে যেতে পারতেন না ? দুনিয়ার অসংখ্য বিষয় এমন রয়েছে যে, সাহাবাদের মজলিশে তার বিষয়ে ইজমা হয়েছে। এমন অনেক বিষয় ছিল যেগুলো নিয়ে হযরত আবু বকর (রা) সাহাবাদের কে তলব করে সুন্নাহ জানতে চেয়েছে। কিন্তু আমরা কোথাও দেখিনা যে, চার খলিফার কেউ হুজুরের (স) জন্ম দিন উপলক্ষে বিশেষ কোন কর্মসুচি গ্রহণ করেছেন বা তার জন্মদিন নিয়ে বিভ্রান্তী এড়াতে হিজরী সালের মতো করে সাহাবাদের সাথে পরামর্শ করে একটি বিশেষ অনুষ্টান করার ব্যাবস্থা গ্রহণ করেছেণ। এর কারণ কি ছিল ?

হুজুর (স) কবে জন্ম নিয়েছেন আর কবে দুনিয়া থেকে বিদায় নিয়েছেন এই সব কিছু নিয়ে সাহাবা, তাবেয়ীন বা তাবে-তাবেয়ীনদের মাঝে তেমন কোন মাথা ব্যাথা ছিল না। এসব দিন ক্ষন তাদের কাছে মুখ্য ছিলনা, তাদের কাছে মুখ্য ছিল রাসুলুল্লাহর (স) সুন্নাহর লালন এবং প্রচার প্রসার। এসব দিনক্ষন নিয়ে উত্তম তিন যুগের কোথাও কোন অনুষ্টান বা ইবাদতের প্রচলন ছিল বলে সহিহ সনদে আমাদের কাছে এসে পৌছেনি। সাহাবারা কেউ কখনো সম্মলিত ভাবে বা রাষ্টীয় ভাবে হুজুরের (স) জীবন মৃত্যু নিয়ে কোন বিশেষ অনুষ্টান করেছেন এমন কোন সংবাদ কারো কাছে নেই। সাহাবারা ছিলেন আকীদা আর বিশুদ্ধ আমলের ক্ষেত্রে নবীর (স) যোগ্য অনুশারী। কেয়ামত পর্যন্ত উম্মাতে মোহাম্মাদীর (স) কাছে আল্লাহর দ্বীনকে প্রচারের জন্য আল্লাহ পাক যাদের কলবকে বাছাই করে নিয়েছেন তারা হলেন সাহাবায়ে কেরাম (রা)। এ কারনে আল্লাহর ফজলে তারা দ্বীন ইসলামের মুল স্পিরিট কে আমাদের থেকে হাজার গুন ভালো বুঝেছেন। নবীর জন্য তারা নিজেদের ঘর বাড়ি, সংসার এবং নিজের মাতৃভূমিকে পর্যন্ত ত্যাগ করতে সামান্য ইস্তস্ত করেননি। তারা নবীকে কি পরিমান মোহাব্বাত করতেন এবং জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে কিভাবে রাসুলুল্লাহ (স) কে আদর্শ বানাতেন তার নমুনা তো সিরাত গ্রন্থ সমুহে বিস্তারিত ভাবে রয়েছে সহিহ সনদে।

সাহাবারা নিজেদের জীবন থেকেও আল্লাহর রাসুলের প্রতি মোহাব্বাত রাখতেন। তারা নবীর দেখানো পথে এমন ভাবে চলেছেন, নবীকে মোহাব্বাতের ক্ষেত্রে এত প্রতিযোগীতা করেছেন যে, তাদের সমকক্ষ দুনিয়াতে আর কোন সম্প্রদায় আসতে পারবে না। তাদের ধ্যান জ্ঞান ছিলেন রাসুলুল্লাহ (স)। তারা ছিলেন নবী আনুগত্যের একমাত্র নমুনা। দুনিয়ার কোন কালে যদি সাহাবাদের দেখানো পথ বাদ দিয়ে কেউ নিজেদের মনগড়া ভাবে রাসুলের প্রতি ভালোবাসার প্রকাশ ঘটাতে চায়, তাহলে তা হবে মুর্খতা এবং সাহাবা বিদ্বেষের উৎকৃষ্ট প্রমান। সাহাবাদের চাইতে নবীর প্রেমে পাগল - মাশুক আর কেউ দুনিয়ায় কখনো আসবেন না। তাদের কাছে নবীর প্রেম ছিল ইবাদতের মজ্জা। তারা নবীর প্রতিটি কথা ও কাজকে শুধু অনুসরন করে বসে থাকেননি, বরং তারা তাকে হেফাজত করেছেন এবং পরবর্তি প্রজন্মের কাছে নবীর জীবনকে জীবন্তরুপে উপস্থাপন করেছেন। তাদের প্রতিটি প্রদক্ষেপ ছিল সুন্নাহর প্রতিমুর্তি। নবীর অনুশরনে কি অদম্য ইচ্ছে তাদের মাঝে ছিল তার কয়েকটি উদাহারন দিচ্ছি।

“ তাবেয়ী যাইদ বিন আসলাম বলেন যে, আমি আবদুল্লাহ ইবনে ওমর (রা) কে দেখলাম, তিনি জামার বোতাম খোলা রেখে নামাজ আদায় করছেন। আমি এ বিষয়ে তাকে জিজ্ঞেসা করলে তিনি বলেন: আমি নবীজিকে (স) এভাবে নামাজ পড়তে দেখেছি।” (ইবুন খুযাইমা, আত-তারগীব। হাদিসটি হাসান)

তাবেয়ী উরওয়া আরেক তাবেয়ী মু’য়াবীয়া ইবনু কুররা থেকে বর্ননা করেন যে, তার আব্বা সাহাবী কুররা ইবনু ইয়াস (রা) বলেছেন: “যখন আমি রাসুলুল্লাহর (স) নিকট বাইয়াত করলাম, তখন তার জামার বোতাম খোলা ছিল”। উরওয়া বলেন: আমি শীত হোক বা গ্রীস্ম হোক কখনই এই সাহাবী ও তার পুত্রকে জামার বোতাম লাগানো অবস্থায় দেখিনি। তারা সর্বদা জামার বোতাম খোলা রাখতেন। ( ইবনু মাজাহ, কিতাবুল লিবাস, সহীহুত তারগীব। হাদিসটি সহিহ)

“একদিন একজন দর্জি রাসুলুল্লাহ (স) কে খানার দাওয়াত দেয়। আনাস রা বলেন আমিও রাসুলুল্লাহর (স) সাথে গেলাম। দাওয়াতকারী রাসুলুল্লাহ (স) এর সামনে রুটি এবং লাউ ও শুকনা নোনা গোশত দিয়ে রান্না করা ঝোল তরকারী পেশ করে। আমি রাসুলুল্লাহ (স) কে দেখলাম যে, খাঞ্চার ভিতর থেকে লাউয়ের টুকরোগুলি বেছে বেছে নিচ্ছেন। আনাস রা বলেন: সেদিন থেকে আমিও সর্বদা লাউ পছন্দ করি।”

“বিখ্যাত তাবেয়ী মুজাহিদ (র) বলেন যে, আমরা এক সফরে ইবনু ওমরের (রা) সাথে সফর সঙ্গী ছিলাম। তিনি এক স্থানে পথ থেকে একটু দুরে সরে ঘুরে গেলেন। তাকে প্রশ্ন করা হলে তিনি বললেন যে, আমি রাসুলুল্লাহ (স) কে এরূপ করতে দেখেছি।”

তাবেয়ী আনাস ইবনু সিরিন বলেন:

আমি একবার হজ্বের সময় ইবুন ওমরের (রা) সাথে ছিলাম। আমরা যখন মুজাদালিফার দুই পাহারের মধ্যবর্তী সংকীর্ণ স্থানে পৌছলাম তখন তিনি উট থামিয়ে অবতরন করলেন। তাকে দেখে আমরাও উট থামিয়ে নেমে পড়লাম। আমরা ভাবলাম যে, তিনি হয়তো এখানে (মাগরিব ও এশা) নামাজ আদায় করবেন। তখন তার উটের চালক খাদেম আমাদের কে বললেন যে, তিনি এখানে নামাজ আদায় করবেন না। কিন্তু তিনি বলেছেন যে, রাসুলুল্লাহ (স) যখন এই স্থানে পৌছেন, তখন প্রাকৃতিক হাজত পুরন করে ইস্তিঞ্জা করেন, তাই তিনিও এখানে হাজত সারতে বা ইস্তিঞ্জা করতে পছন্দ করতেন।”

হাজারো ঘটনা থেকে মাত্র কয়েকটি ঘটনা উল্লেখ্য করলাম। আমরা দেখলাম যে, সামান্য জাগতিক বিষয়েও তারা কত নিখুত ভাবে রাসুলুল্লাহ (স) অনুশরন করতেন। সামান্য খাদ্য দ্রব্য যদিও ব্যক্তিগত রুচি অভিরুচির বিষয় ছিল, কিন্তু আমরা দেখলাম যে, সেখানেও সাহাবারা রাসুলুল্লাহর (স) মোহাব্বাত কে প্রাধান্য দিয়েছেন। তাদের এসব কর্মকান্ডে আমাদের সামনে একটি প্রশ্ন বার বার উকি দিচ্ছে যে, নবীর মোহাব্বাতের নামে যে সকল বেদয়াত আমরা লালন করি বা প্রচলন করে নিয়ে মহা সমারোহে পালন করি, তার সিকি ভাগও কি সাহাবায়ে কেরামের যুগে ছিল। যদি না থাকে তাহলে সেই সকল কাজকে কি করে নবীর মোহাব্বাতের নমুনা বানানো যেতে পারে যেগুলো সাহাবারা করেননি এবং তাদের ছাত্রদের কেও সেগুলো করতে বলেননি। আমরা মুলত বেদয়াতী কর্ম কান্ডের মাধ্যমে সাহাবাদের প্রতি একটি অভিযোগ উত্থাপন করছি যা আমরা আসলে অনুধাবন করতে পারছি না। আমরা আমাদের নতুন আবিস্কৃত নবী প্রেমের সবকের মাধ্যমে সাহাবাদের প্রতি মিথ্যাচার করছি যে, তারা নবীর অনেক শিক্ষা গোপন করেছেন নতুবা আমাদের কাছে ঠিক মতো পৌছে দেননি। যে কারনে আমাদের কে বাধ্য হয়ে এসব নবী প্রেমের নতুন মাল মশলা আবিস্কার করে নিতে হলো। অথবা আমরা যেন দাবি করছি যে, সাহাবার রাসুলুল্লাহর (স) ওফাতের পরে তার মোহাব্বাতকে বিসর্জন দিয়েছেন। তারা দুনিয়ার মায়ায় পড়ে গিয়েছিলেন। যে কারনে তারা নবীর জন্ম মৃত্যুর বিষয়ে স্মরনীয় কোন প্রোগ্রাম চালু করেননি। পরবর্তি উম্মাতের জন্য নবীর জন্ম দিনে মতো এত বড় ঈদের দিনকে তার জেনে বুঝে হেয় করেছেন। উম্মাতকে এত বড় ঈদের আনন্দ থেকে ইচ্ছে করে মাহরুম করেছেন। (নাউজুবিল্লাহ)

বিষয় গুলো আমাদের সামনে বার বার আসছে। কিন্তু আমরা সুন্নাতকে সাহাবাদের থেকে বেশি বুঝে গেছি ? আমাদের কে নবী প্রেমের যে সবক শেখানো হচ্ছে তা কি সাহাবারা জানতেন না ? অথচ নবীর প্রেমের সর্বোতকৃষ্ট মাপকাঠি হচ্ছে সাহাবায়ে কেরাম, কোন আউলীয়ায়ে কেরাম নন। সাহাবাদের জীবনে যে কর্মের কোন অস্তিত্ব ছিলনা, সেই কর্মকে কি করে সওয়াবের নিয়তে বা নবী প্রেমের নিশান হিসেবে পালন করা যেতে পারে আমরা তা বুঝতে অক্ষম হয়েছি। আমাদের মধ্যে যারাই এই সকল বেদয়াত কে লালন করেন তাদের কাছে আমাদের আকুল আবেদন থাকবে যে, রাসুলুল্লাহর (স) প্রতি মোহাব্বাত আপনাদের চাইতে সাহাবাদের কি কম ছিল ? আজকে দুনিয়ার সামান্য একজন নেতা যদি ক্ষুদ্র একটি জনগোষ্টির জন্য সামান্য কোন খেদমত করে দুনিয়া থেকে বিদায় নেন, তখন সেই জাতী তার প্রিয় নেতার জন্ম বা মৃত্যু দিবসকে অতি ধুম ধামের সাথে স্মরন করে। অথচ কি আশ্চার্য্য লাগছে, যে নবী (স) গোটা দুনিয়াকে অন্ধকার থেকে আলোর দিকে নিয়ে আসলেন, আরবের বর্বর একটি জাতিকে দুনিয়াবাসির জন্য উদাহারন বানিয়ে দিলেন, সেই জাতি কি করে তার জন্ম মৃত্যু দিবসকে প্রকাশ্যে দুরে থাক, গোপনে গোপনে ঘরের অন্ধকারেও পালন করলো না। তাদের দ্বারা কেন বিশাল বিশাল সব অনুষ্টানের আয়োজন করা হলো না। এমনকি যে সাহাবারা সামান্য খাদ্য তালিকা থেকেও নবীর প্রেম এবং তার স্মৃতিকে বাদ দিতে পারেননি, অথচ তাদের কাছ থেকে সঠিক ভাবে, ঐক্যমতের ভিত্তিতে তাদের ছাত্ররাও পর্যন্ত শিখতে পারলেন না যে, রাসুলুল্লাহর (স) জন্ম এবং মৃত্যুর সাল কোনটি এবং তার জন্ম মৃত্যুর দিনে কি কি আমল করতে হবে। তারা কি তাদের ছাত্রদের কে এই সত্য শিখাতে পারলেন যে, দুনিয়ার সকল ঈদের চাইতে উত্তম ঈদ হচ্ছে ঈদে মিলাদুন্নবী(??)। তারা কি ইসলাম বুঝতে ব্যর্থ হয়েছিলেন যে, নবীর প্রতি মোহাব্বাত প্রদর্শনের এত বড় আমল কে তারা ঐক্যমতের ভিত্তিতে প্রকাশে এড়িয়ে গেলেন ? সত্যিই অবাক করা ঘটনা।

এ কারনে আমাদের আহলে সুন্নাত ওয়াল জামায়াত মনে করে যে, ঈদে মিলাদুন্নবী নামে কোন ঈদের অস্তিত্ব ইসলামের কোন উত্তম যুগে ছিল না বলেই তা পরিত্যাজ্য। ইবাদতের ক্ষেত্রে এমন কোন আমল গ্রহণযোগ্য নয় যা রাসুলুল্লাহর যুগে ও তার সাহাবাদের সময়ে ছিলনা। সাহাবাদের থেকে তাবেয়ীনরাও নবীর শিক্ষাকে পূর্ণাঙ্গরুপে শিখেছেন এবং উম্মাতের কাছে তা পৌছে দিয়েছেণ। সেই তাবেয়ীনরাও একদম বেখবর ছিলেন নবী প্রেমের বেলায়, এমন কথা কি কোন মুসলমান বিশ্বাস করতে পারে ?

অনেকে বলে থাকেন যে, এমন অসংখ্য জিনিস আমরা ব্যবহার করি যেগুলো সাহাবাদের যুগে ছিলনা, সেগুলো কি বেদয়াত নয় ? আমরা মনে করি তারা জেনে শুনে বেদয়াতের পক্ষে দলিল খুজছেন। বেদয়াত হচ্ছে ইবাদতের ক্ষেত্রে নতুন কোন রসম বা কর্মকে উদ্ধাবন করার নাম। উপকরন ব্যাবহার কে বেদয়াত বলা বাতুলতা। যেমন, রাসুলুল্লাহর (স) সময় হজ্বের বাহন ছিল উট। এখন আমরা এড়োপ্লেনে করে হজ্জে যাই। এখানে কোন আহাম্মকও দাবি করেন না যে, প্লেনে করে হজ্জে যাওয়ার সওয়াব বেশি বা নবী প্রেমের নমুনা। কেউ যদি মসজিদের সৌন্দর্য্য বৃদ্ধি করে, তাতে পাথর বা মারবেলের কারুকার্য প্রদর্শন করায়, তাতে কি নামাজের সওয়াব বেড়ে যাবে মনে করা হয়। এগুলো হচ্ছে জাগতিক উপকরন মাত্র। এসবের মধ্যে দ্বীনের কোন বাড়তি কমতি হয় না। কিন্তু কেউ যদি বলে যে, সাহাবারা নবী প্রেমের নমুনা দুরুদের মাধ্যমে দিয়েছেন আমরা সেটা মিলাদের মাধ্যমে দেবো। তাহলে তিনি বেদয়াত করবেন। কেননা সাহাবারা যে আমলটি যেভাবে করেছে তাকে হুবুহু সেভাবে করাই সুন্নাহ। কেননা তারা রাসুলুল্লাহর (স) নির্দেশনার বাইরে কোন কাজ করতেন না।

সাহাবারা যেভাবে নবীর প্রেমিক ছিলেন, যেভাবে তারা নবীর মোহাব্বাতের নমুনা দেখিয়ে গেছেন, সেই পদ্ধতির কারনে গোটা কোরআনে সাহাবাদের জন্য প্রশংসার বিচ্ছুরন ঘটেছে। এখন আমরা যদি তাদের দেখানো পদ্ধতিতে সন্তুষ্ট না হই তাহলে ধরে নিতে হবে যে, আমরা আল্লাহর দেয়া সার্টিফিকেটের মধ্যেও ভুল খুজে পাচ্ছি। কেননা, তিনি এমন সম্প্রদায়কে নবী প্রেমের, নবী আনুগত্যের নমুনা বানিয়েছেন যারা নবীর প্রেমে তার জন্ম দিনটিও ঠিক মতো পালন করার যোগ্য নয়। এ ক্ষেত্রে হয়তো সাহাবাদের পরবর্তি জীবনের ঘটনাবলী না জানার কারনে তাদের কে আগে বাগে সনদ প্রদান করাও ভুল ছিল (নাউজুবিল্লাহ)। আমাদের উচিত হবে নবীর প্রেমের নমুনা প্রদর্শনের জন্য আল্লাহ ও তার রাসুলের দেওয়া সনদ প্রাপ্ত সাহাবায়ে কেরামের মত ও পথকে অনুশরন করা।

যদি ধরেও নেয়া যায় য়ে, দু একজন সাহাবী ব্যক্তিগত ভাবে নবী প্রেমের আতœহারা হয়ে ব্যক্তিগত ভাবে নবী প্রেমের মাতয়ারা হয়ে দুচারটি আমর করে গেছে বা কিছু নমুনা রেখে গেছেন, যদিও এমন ঘটনা নেই বললেই চলে, তবুও তা গ্রহণ যোগ্য নয়। কারণ সকল সাহাবাদের, বিশেষ করে চার খলিফার কর্মনীতি আমাদের জন্য নবী প্রেমের মানদণ্ড। চার খলিফার সময়ে যেহেতু নবীর জন্ম বা মৃত্যুর দিনে বিশেষ কোন আমল বা অনুষ্টানের আয়োজন করা হয়নি, তাহলে ধরে নিতে হবে যে, এ বিষয়ে সাহাবাদের ইজমা রয়েছে। যেহেতু কোন একজন সাহাবীও খলিফাদের কাছে এই মর্মে আবেদন করেননি যে, নবীর জন্ম বা মৃত্যু দিনে বিশেষ কোন আয়োজন করা হোক, সেহেতু এই সকল কর্ম কান্ড যারা করবে বুঝতে হবে তারা আহলে সুন্নাত ওয়াল জামায়াত থেকে বিছিন্ন হয়ে নিজেদের মন মত নতুন মত ও পথ তৈরি করে নিয়েছেন, যার সাথে সাহাবায়ে কেরামের কোন সম্পর্ক নেই।

বর্তমান বিশ্বের মুসলমানরা নবীর (স) সত্যিকারের আনুগত্য বাদ দিয়ে বেদয়াতের মতো আমল দিয়ে নবীকে স্মরন করে। অথচ নবীর প্রতি মোহাব্বাতের নমুনা হলো, নবীর সুন্নাতকে ভালো বাসা, নবী যাদের কে ভালোবেসে সনদ দিয়েছেন সেই সাহাবায়ে কেরামের অনুশরন করা, অন্যদিকে নবীর আদর্শকে নিজের জীবন থেকে শুরু করে জীবনের সর্ব ক্ষেত্রে একমাত্র আদর্শ হিসেবে প্রতিষ্টিত করার সংগ্রামে শরীক হওয়া। রাসুলুল্লাহর (স) দুষমন কে দুষমন হিসেব মনে করে তাদের সাথে সম্পর্কচ্ছেদ করা।

যারা রাসুলের (স) সুন্নাতকে সাম্প্রদায়কতা বলে, যারা রাসুল্লাহর আনীতা জীবন বিধানের সমালোচনা করে তাকে মর্ধ্যযুগিও বর্বর বলে সেই সব দল আর ব্যক্তির সাথে বন্ধুত্ব রেখে নবী প্রেমের মায়া কান্না এক ধরনে মোনাফেকী। অথচ আল্লাহ পাক বার বার বলেছেন যে, তোমরা ইয়াহুদী আর মোশরেকদের কে বন্ধু বানিও না। কোরআনের আয়াতের এই বাস্তবতা কে যারা পদদলিত করে ইয়াহুদী আর মুশরেকদের দালালী করে বা দালালদের সাথে বন্ধুত্ব্য করে তারা হাজারো ঈদে মিলাদ্ন্নুবীর মিছিল সমাবেশ করলেও ঈমান নিয়ে কবরে যেতে পারবে না। আহলে সুন্নাত ওয়াল জামায়াত কোন নাম নয়, একটি বিশ্বাস আর কর্ম পন্থার নাম। কেবল মুখে মুখে আর সাইনবোর্ডে আহলে সুন্নাত ওয়াল জামায়াত লিখে রাখলেই তে হবে না, কার্যত প্রমান করতে হবে যে, আল্লাহর কিতাব, তার রাসুলের সুন্নাহ ও খোলাফায়ে রাশেদার কর্মনীতির বাইরে আর কোন মত ও পথকে প্রশ্রয় দেয়া হয় না, আল্লাহর দুষমনদের বিরুদ্ধে আমরাও তেমনি কঠোর, যতটা কঠোর ছিলেন তার রাসুল (স) ও সম্মানিত সাহাবারা (রা)। এই সত্য বুঝার তৌফিক আল্লাহ পাক আমাদের সবাইকে দান করুন। আমিন।

বিষয়: বিবিধ

১৬৮৮ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File