মুসলিম উম্মার ঐক্য এখন সময়ের দাবি॥ সমষ্যা কোথায় ?
লিখেছেন লিখেছেন স্বপ্নতরী ১৯ জানুয়ারি, ২০১৩, ১১:৫৮:২৫ সকাল
পাঠকদের সূবিধার্থে একটি গল্প বলি। যথা সম্ভব সংক্ষেপে বলার চেষ্টা করবো।
এক গ্রামে হটাৎ করে কিছু প্রভাবশালী লোকের দ্বারা একটি মাজার তৈরি করা হয়। মাজার তৈরির প্রক্কালে তারা প্রচার করতে থাকে যে, এই এলাকার এক সময়ের হক্কানী পীর, যিনি এই গ্রামের হিন্দুদের কে মুসলমান করেছেন, তিনি চেয়ারম্যান মহোদয় কে স্বপ্নের মাধ্যমে অনুরোধ করেছেন তিনি যেন তার কবরটিকে হেফাজত করেন। কারণ কবরটির ওপর দিয়ে গরু ছাগল সহ মানুষের ...অবাধ চলে ফেরায় তার যথেষ্ট কষ্ট হচ্ছে। এই ঘোষনা শুনার পরে লোকজন তো প্রায় হুশ হাড়িয়ে ফেলেছে।
শুরু হয়ে গেল রাস্তা পরিস্কার করে মাজার তৈরির কাজ। রাস্তার পাশে একটি উচু কবরের মতো তৈরি করে তার ওপরে চালের ছাউনি দিয়ে প্রাথমিক ভাবে কার্যক্রম শুর করা হলো। আর এভাবেই শুরু হয়ে গেল মাজার ব্যবসা। ব্যাপক পরিমানে লোক জনের আনাগোন চলতে থাকলো। প্রথম দিকে কোন চাদিয়া না থাকায় লোকজন কেবল জেয়ারত আর দোয়া দুরুদের মধ্যে সিমিত ছিল, কিছু দিন পরে চেয়ারম্যান মহোদয় ঘোষনা করলেন এখানে হুজুরের ওরস করা দরকার। শুরু হয়ে গেল চাঁদা উত্তোলনের হিরিক। লক্ষ লক্ষ টাকা তুলে ডাল চাল খিচুরী করে মানুষকে খাওয়ানো হলো। বয়ানের নামে সারা রাত হুক্কা হুয়া জিকির চলল।
চাঁদার টাকা দিয়ে পাশেই একটি মসজিদ নির্মান করা হলো। সাথে সাথে একজন খাদেম নিয়োগ দেয়া হলো মাজারের জিয়ারতে আসা লোক জনকে সাহায্য করার জন্য। পাশা পাশি মাজারের সৌন্ধর্য বৃদ্ধির জন্য প্রকল্প হাতে নেওয়া হলো। মাজার কে মনোরম করে লাল সালু দিয়ে ডাকা হলো।
প্রভাবশালী মহলের চেলা চামুন্ডা দিয়ে রটিয়ে দেয়া হলো যে, অমুক অমুক ব্যক্তিরা এই মাজারে মানত করে তাদের রোগ থেকে সুস্ত হয়ে গেছেন, কেউ বা বলতে লাগলো আমার মেয়ের বিয়ে হতো না, এখন বিয়ে হয়ে গেছে। কারোবা বারো মাসের কাশি এক মানতেই শেষ। এ রকম হাজারো কেরামত প্রচার করা হতে লাগল। কিছু দিনের মধ্যেই দেশের প্রত্যান্ত অঞ্চল থেকে লোকজন মাজারে আসতে লাগল এবং প্রচুর অর্থ মানত করতে লাগলো। কেউ বা গরু ছাগল নিয়ে আসতে লাগল। কারো সামর্থ না হলে নিজের গাছের প্রথম ফলটিকে মানত করা শুরু করে দিল।
এভাবে কুচক্রিরা তাদের পরিকল্পনা মাফিক স্বার্থক মাজারের প্রতিষ্টা করে দিল। অজ্ঞ লোকের নিজেদের দুর্বল ঈমানের কারনে এই সকল ফান্দে পা দিতে লাগল। ইতি মধ্যেই সেই এলাকার হক্কানী মুসলমানরা বিষয়টির প্রতিবাদ করতে লাগলেন। তারা প্রথমে ব্যাপারটিকে এতটা গুরুত্ব্য না দেয়াতে যে সমষ্যাটি হয়েছে, তা পরবর্তিতে উপলদ্ধি করতে পেরে নিজেদের ওলামাদের সাথে পরামর্শ করতে লাগলেন। আলেমদের এই বিষয়ে একটি পরামর্শ হলো যে, তারা কোন অবস্থায় এই মাজার থাকতে দিবেন না। কথা মতো তারা মাজারের মোতাওয়াল্লী চেয়ারম্যান সাহেব কে কোরআন হাদিসের দলিল দিয়ে প্রমান করে দিল যে, মাজার প্রতিষ্টা করা জায়েজ নয়। তারা কয়েকদিনে আল্টিমেটাম দিয়ে চলে এলো।
প্রভাব শালী মহলটি চিন্তা করল, এভাবে প্রকাশ্যে এলাকার আলেমদের বিরুদ্ধে অবস্থান নেয়া ঠিক হবে না। এতে হিতে বিপরিত হতে পারে। কারণ মাজারে যারা আসে তারা অধিকাংশ অশিক্ষিত এবং দুর্বল, তাছাড়া তারা বেশির ভাগ সবাই দুর দুরান্ত থেকে আসে। তাই তারা সবাই পরিকল্পনা করতে বসল কিভাবে তাদের মাজার কে বাচিঁয়ে রাখা যায়। কারণ এর দ্বারা কুটি কুটি টাকার ইনকাম হচ্ছে। প্রয়োজনে তারা কিছু খরচ করে হলেও এই আন্দোলন কে বানচাল করতে চাচ্ছে।
পরিকল্পনা মতো তারা কিছু আলেমকে নিজেদের পক্ষে আনার জন্য অর্থ প্রস্তাব করলো। কিন্তু অধিকাংশ আলেমরা তাদের টাকার কাছে বিক্রি হলো না। তারা পরিস্কার বলে দিল, কোন অবস্থায় এই মাজার তারা থাকতে দিবে না। সামান্য কিছু দুনিয়া লোভী কিছু আলেম তাদের প্রস্তাবে রাজি হয়ে যায়।
অধিকাংশ আলেমদের এই মনোভাব দেখে তারা কিছুটা চিন্তায় পড়ে গেল। হটাৎ করে চেয়ারম্যান সাহেবের সাথে এক বৃদ্ধ লোক দেখা করতে এলো। তার চেহারা খুবই নুরানী ছিল। কথা বার্তায় বুজুর্গীর যথেষ্ট ছাপ ছিল। লোকটি চেয়ারম্যান কে বলল যে, তিনি ভারতের এক বড় পীরের খলিফা। সেই পীর আর বর্তমান মাজারে যিনি শায়িত আছেন তারা একই সিলসিলার। পীর সাহেব স্বপ্নের ভিতরে দেখতে পেয়েছেন যে, আপনি মাজার রক্ষা কমিটি করেছেন, আর কিছু বিভ্রান্ত আলেম সাধারন মুসলমানদের কে ক্ষেপিয়ে তুলেছে। তাই আপনার সাহায্যার্থে আমাকে পাঠানো হয়েছে। আপনাকে আমি কিছু পরামর্শ দেই, আপনি তা অনুসরন করুন।
চেয়ারম্যান সাহেব যেন আকাশ থেকে পড়লেন। তিনি ভাবলেন যে, মাজার আমি নিজের হাতে বানিয়েছি সেখানে যে সত্যিই কোন পীর শায়িত তা আমার জানা ছিল না। আল্লাহ হয়তো আমাকে দিয়ে তার অলীর এই খেদমত নেওয়া পছন্দ করেছেন। এসব ভেবে চেয়ারম্যান সাহেবের মনোবল আরো বেড়ে গেল। তিনি এবার স্বিদ্ধান্ত নিলেন যে, এতদিন তিনি কাজটিকে অবৈধ মনে করে নিজের স্বার্থে টিকিয়ে রাখতে চেয়েছেন, এবার তিনি কাজটি কে আল্লাহর অলীর খেদমত হিসেবে করবেন এবং যত টাকা পয়সা লাগে খরচ করবেন। এভাবেই শয়তান তার চালে চেয়ারম্যানকে নিজের কব্জায় নিয়ে আসতে লাগলো।
বৃদ্ধা শয়তানটি তাকে দুটি কাজ করতে বলল। প্রথমটি হচ্ছে এই মাজারকে টিকিয়ে রাখতে হলে স্থানীয় যুবকদের সাহায্য খুবই জরুরী। তাদের সহযোগীতা ছাড়া কোন অবস্থায় এই আন্দোলন ঠেকানো যাবে না। এই কারনে এখানে যুবকদের সব থেকে বেশি পছন্দনীয় জিনিস, নারী আর নেশার ব্যবস্থা করো। নারী আর নেশার ব্যবস্থা করে তাদের কে একসাথে করার জন্য জলশার ব্যবস্থা করো। এই জলশায় প্রচুর পরিমানে নারী আর পুরুষের অবাধ মেলামেশা করার সুযোগ তৈরি করে দাও। যদি সম্ভব হয় তাহলে প্রত্যেক দিন আসরের ব্যবস্থা করো। এসব আসরে ভক্তিমুলক গান যা খোদার নামে এবং পীরের গুনকির্তন করে করা হবে। এভাবে কিছু দিনের মধ্যে যুবকরা এই মাজারের প্রতি আকৃষ্ট হয়ে যাবে এবং মাজারের খাদেম হিসেবে তারা তোমার কথা মতো উঠতে বসতে থাকবে।
মাজার রক্ষা করার জন্য প্রয়োজন আন্দোলন কে নিশ্চিহ্ন করে দেয়া। কিন্তু এটা সম্ভব নয়, কিন্তু আন্দোলন যাাতে শক্তিশালী হতে না পারে, ওলামারা যাতে ঐক্যবদ্ধ হতে না পারে সে জন্য ব্যবস্থা গ্রহণ করো। কেননা কোন দুর্বল বিক্ষিপ্ত আন্দোলন কোন অবস্থায়ই সফলকাম হতে পারেনি। তারাও পারবে না।
চেয়ারম্যান মহোদয় জানতে চাইলো কিভাবে আন্দোলন দুর্বল করা যাবে ?
বৃদ্ধ বেশ ধরা শয়তান বলল, এটা খুবই সহজ কাজ যদি করতে পারো। প্রথমে নিজেদের লোকদের মধ্য থেকে আরেকটি মাজার বিরোধী শক্তিশালী গ্রুপ তৈরি করো। তাদের কেও মাজার বিরোধী আন্দোলনে শরীক করে দাও। কিছুদিন আন্দোলন করার পরে যখন তারা কর্মসুচী ঘোষনা করবে তখন তারা তাদের মধ্যে বিভেধ তৈরি করে দিবে।
চেয়ারম্যান জিজ্ঞেস করলো বিভেদ কিভাবে তৈরি করা হবে।
শয়তান বললো, যখন তারা মাজার ভেংগে ফেলার কর্মসুচী ঘোষনা করবে তখন তোমাদের মধ্য থেকে তৈরি দলটি মসজিদের বিষয়ে প্রশ্ন তুলবে। কারণ কিছু ওলামার ফতোয়া দেবে মসজিদও ভেঙ্গে ফেলতে হবে, কারণ মাজার আগে হয়েছে এবং মাজারের পরে মসজিদ হয়েছে, তাই এটা বৈধ নয়। অপর পক্ষ হয়তো দাবি করবে যে, আগে মাজার ধ্বংস হোক পরে মসজিদের বিষয়ে ভাবা যাবে। এক সাথে দুই বিপদ ঠেকানো ঠিক হবে না। তখন তোমাদের দলটি হাঙ্গামা শুরু করে দেবে যে, যারা মসজিদের বিরুদ্ধে কথা বলে তারা নিশ্চয় মুসলমান নয়, এরা মুনাফেক এদের আকীদা খারাপ এদের সাথে আমরা কোন অবস্থায়ই থাকতে পারবো না। যদি সম্ভব হয় তাহলে তাদের মাঝেও তোমাদের দু একজন লোক ডুকিয়ে দাও। যারা ছোট খাটো বিষয়ে করা এখতেলাফ গুলোকে বড় করে প্রচার করবে। অন্যকোন গ্রুপকে উত্তেজিত করে তুলতে সক্ষম হবে।
দ্বীতিয় যে কাজটি করতে হবে মুসলামনদের মধ্যে যারাই মাজার পুজার বিরুদ্ধে আন্দোলন করতে চাইবে, তখনি তাদের মাঝে মাযহাবী কোন্দল কে উসকে দেবে। যাতে একেজন আরেক জনকে গালি গালাজ করতে থাকে। তাদের মধ্যকার মাজহাবী বিষয়গুলো নিয়ে চরম বিরোধ তৈরি করে দেবে। তারা একজন আরেক জনকে গোমরা ফতোয়া দিয়ে নিজেদের মধ্যে বিভাজন তৈরি করে দেবে। এভাবে তোমাদের তৈরি দলটি মাজারের বিরুদ্ধে অবস্থান নেওয়া দুই দলের কাছে গোপনে দেখা করবে। তারা প্রত্যেককে বুঝাবে আপনারা অন্য দলের সাথে সঙ্গ ছাড়–ন, আমরা আপনাদের সাথে থাকবো, কারণ তাদের নিজেদের অনেক আকীদা বিশ্বাস ভালো না, তারা নামাজের ভিতরে আমাদের মাজহাব মানে না, তাদের সাথে হক্কানী কোন আলেম নাই, এদের সাথে ঐক্যব্ধ হয়ে আন্দোলন করা ঠিক হবে না। ইনশায়াল্লাহ আমরাই পারবো এই ফেতনা থেকে মুসলমানদের কে উদ্ধার করতে।
অন্যদিকে অপর দলটিকে বুঝাতে হবে যে, আপনারা কোরআন এবং সুন্নাহর কথা শুনার কারনে তারা তাদের মাজহাব কে বড় মনে করে আপনাদের কে গোমরাহ মনে করে। তারা নিজেদের কেই একাজের জন্য উপযুক্ত মনে করে। আপনারা দলে বড় হওয়া সত্ত্বেও তারা আপনাদের বিরুদ্ধে কথা বলে। এদের সাথে কোন অবস্থায়ই আপোষ করা ঠিক হবে না। আমরাও আপনাদের সাথে আছি।
এভাবে যদি তাদের মাঝে বিভেদ তৈরি করে দেয়া যায় তাহলে তারা কোন অবস্থায় ঐক্যবদ্ধ হতে পারবে না, আর তারা যদি ঐক্য বদ্ধ না হতে পারে তাহলে সাধারন মুসলমানরা তাদের সাথে থাকবে না। তারা অভিযোগ করে বলবে আগে আপনারা ঠিক হন, তারপরে আমাদের কে বলেন। এভাবে তোমাদের মাজার ব্যবসা চিরস্থায়ী হয়ে যাবে, এবং তোমার অর্থ বিত্ত বাড়তে থাকলে দেশের যুবকরাও তোমার সাথে থাকবে।
চেয়ারম্যান সাহেব অতি চাতুরতার সাথে শয়তানের দেখানো প্রত্যেকটি পদ্ধতি প্রয়োগ করে মুসলমানদের মাঝে চরম এক বিশৃংখলা সৃষ্টি করে দিল। এর পরে কারো পক্ষেই সম্ভব হয়নি সেই মাজারের বিরুদ্ধে শক্তিশালী কোন অভুত্থান সৃষ্টি করতে, যদিও তারা প্রত্যেকেই এখনো সেই মাজারের বিরুদ্ধে বই উপন্যাস লিখে, বক্তৃতা বিবৃতির মাধ্যমে জনগন কে হুশিয়ার করে দিয়ে নিজেদের দায়িত্ব্য খালাশ করে দিচ্ছে। কখনো কখনো মাজারের বিরুদ্ধে সামান্য কর্মসুচী প্রদান করে দায়িত্ব্য শেষ করে। এদিকে তাদের এই বিভেদের সুযোগে শয়তান মাজারের দ্বারা আয় করা অর্থ দিয়ে সাধারন মুসলামানদের মাঝে প্রতিনিয়ত গোমরাহী ছড়িয়ে দিচ্ছে।
গল্পটি থেকে আমরা শিখলাম যে, কোন ইসলাম বিরোধী আন্দোলনের কর্মীদের মাঝে বিভেদ তৈরি করে দেয় শয়তান। আর এই কাজে আলেম নামধারী কিছু দুনিয়া লোভী লোকদের কে ব্যবহার করা হয়। এর সাধারন মুসলমানদের মাঝে এখতেলাফি বিষয়কে বড় করে দলিল প্রদান করে যাতে কুফরের বিরুদ্ধে কেউ ঐক্যবদ্ধ হতে না পারে। একই উদ্দেশ্যে আন্দোলন করা যে কোন ব্যক্তিরা বিভিন্ন দল উপদলের মাঝখান থেকে হতে পারেন, তাদের আমলে মাযহাব গত পার্থক্য থাকতে পারে, এ কারনে ইসলাম বিরোধী আন্দোলন বা কুফরের মুলচ্ছেদ্যের সংগ্রামে তাদের দুরেঠেলে দেয়ার চক্রান্ত নিছক শয়তানী চক্রান্ত ছাড়া আর কিছু নয়। এই কাজে শয়তানের চেলারা ব্যবহার করে মানুষের ব্যক্তিগত আকীদা আর বিশ্বাস কে। প্রচার করতে থাকে অমুক দলের লোকের ঠিক মত তাহাজ্জুদ আদায় করে না, তাদের সাথে আন্দোলন নয়, কখনো শুনা যায় যে, এদের কাছে সহিহ সুন্নাহ নেই, তাই তাদের কে দুরে ঠেলে দাও। ভাবখানা এরকম যে, আগে পরিপূর্ণ মুসলামন হও তারপরে আন্দোলন করো। অথচ মাজার বিরোধী আন্দোলনের ঘটনায় আমরা দেখলাম যে, এরকম চাল শয়তানের পক্ষ থেকে এসেছিল।
গল্পটিকে প্রতিটি হিসেবে সামনে রাখুন, আর বর্তমান পৃথিবীতে মুসলমানদের অবস্থা দেখুন। তারা কুফর এবং বাতিলের সামনে এতো অসহায় কেন। তাদের মাঝে অনৈক্য কি নিয়ে ? তারা এক জন আরেক জন কে কি কারনে গোমরাহ বলে ? যে জনগন ছোট খাটো বিষয়ে আলেমদের কাছ থেকে ফতোয়া নেয়, সেই জনগন কেন কুফরের বিরুদ্ধে আন্দোলনে আলেমদের সাথে ঐক্যমত হয় না, তাদের কথা শুনতে চায় না। এসব বিষয় গুলোকে নজরে আনলে স্পষ্ট বুঝা যাচ্ছে যে, যে কোন মহৎ আন্দোলনে কোন অবস্থায় নিজেদের মধ্যে বিভেদ থাকা কাম্য নয়। আন্দোলন কারীরা একে অন্যের সাথে ইলমি বাহাস করবে, নিজের আমলে ভিন্ন কোন পথ অবলম্বন করবে কিন্তু কুফর এবং বাতিলের বিরুদ্ধে আন্দোলন সংগ্রামে সিসা ঢালা ঐক্য বজায় রাখবে। সেখানে কোন অবস্থায় এমন দাবি করবে না যে, আমাদের মাঝে অমুক ব্যক্তির আমল আখলাক বা আকীদা আমার মত নয়, তাই তাকে এই আন্দোলনে রাখা যাবে না, তাকে বাদ দিতে হবে। কুফরের বিরুদ্ধে নিজেদের মধ্যে বিভেধ তৈর হয় এমন কোন বিষয়ে আলোচনা যদি করতে হয়, তা হবে আন্দোলনের পরে, আগে নয়।
আমরা যদি সাহাবাদের কর্মনীতি খুজে দেখি এরকম হাজারো উদাহরন খুজে পাবো।
আলোচনা সংক্ষিপ্ত করার জন্য আমরা কয়েকটি উদাহারন দিচ্ছি।
রাসুল্লাহর সুন্নাহকে মানতে গিয়ে তারা একেক জন একেক রায় প্রদান করেছেন কিন্ত কেউ কারো বিরুদ্ধে টু শব্দটি পর্যন্ত করেন নি। হযরত আব্দল্লাহ ইবনে ওমর রা নিজের পিতার আমলের বিরুদ্ধে হাদিস দাড় করিয়েছেন এবং তার ছাত্রদের প্রশ্নের উত্তরে পাল্টা প্রশ্ন করেছেন যে, কার কথা বড় আমার পিতার না রাসুলুল্লাহর (স)। কিন্তু আমরা দেখছি না যে তিনি তার পিতার বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করে বলেছেন যে, যিনি সহিহ হাদিসের বিরুদ্ধে আমল করেন তিনি আবার কেমন করে খলিফা হন। তারা এসব নাপাক কাজ থেকে হেফাজত ছিলেন। আমাদের মতো তাদের ঈমানী শক্তি এত কম ছিলনা যে, তারা হুংকার দিয়ে কাউকে গোমরাহ বলে বিদ্রোহ করে বসবেন। কারণ তারা জনতেন যে, ওমর রা যে আমল করেছেন, তার বিষয়ে তার কাছেও কোন দলিল হয়তো থাকতে পারে, অথবা এই বিষয়ে তিনি সহিহ রেওয়াত না পেয়ে নিজের ইজতিহাদে আমল করেছন। আমরা হলে কিন্তু এমনটা করতাম না, বরং প্রচার করা শুরু করে দিতাম যে, ওমর রা সহিহ হাদিস মানেন না, তিনি লোকজন কে হাদিস অস্বিকার কারী বানাচ্ছেন। (নাউজুবিল্লাহ)
কুফরের বিরুদ্ধে আন্দোলন সংগ্রামেও তারা একই পদ্ধতি অবলম্বন করেছেন। কারো সার্বিক কর্মকান্ডকে সামনে রেখে তারা স্বিদ্ধান্ত নিতেন। উদাহারন হিসেবে ধরুন। হযরত মোয়াবীয়া রা এর কথা। তিনি কিভাবে খেলাফত গ্রহণ করেছেন তা ইতিহাসের সকল ছাত্ররা জানেন। ততকালিন অসংখ্য সাহাবী তাদের মতামত পেশ করেছেন যে, তার খেলাফত গ্রহনের পন্থা সুন্নাত সম্মত নয়। তারা মুয়াবীয়া রা খেলাফত স্বিকার করেননি এবং তাকে খলিফা হিসেবে মনে করেননি, এ কারনে তাকে আমীর মুয়াবিয়া রা নামে আমাদের আহলে সুন্নাত ওয়াল জামায়াত স্মরন করে।
কিন্তু কেউ কি দেখাতে পারবেন যে, ইসলামের কোন দুর্দিনে বা কুফরের সাথে সংগ্রামে কেউ আমীরে মুয়াবীয়া রা এর হাত ছেড়ে দিয়েছেন। কেউ পারবেন না। কারণ ইতিহাসের পাতায় লিপিবদ্ধ আছে যে, মুসলিম জাহান পৃথিবীর বিশাল এক অংশ তার নিজের মধ্যে শামিল করতে পেরেছে হযরত মুয়াবিয়ার রা সময়ে। তার সাহসি স্বিদ্ধান্ত এবং বিচক্ষন শাষন ক্ষমতা দুনিয়ার উল্লেখ্য যোগ্য অংশকে মুসলীম শাসনের অধিন করে দেয়। এসব সংগ্রামে যতগুলো যুদ্ধ সংঘটিত হয়েছে, প্রত্যেকটি যুদ্ধে ততকালিন প্রত্যেক সাহাবা এবং তাবেয়ীরা সরাসরি অংশগ্রহন করেছেন, কেউ এমন দাবি করেননি যে, মুয়াবিয়ার রা সাথে আমাদের এখতেলাফ রয়েছে তাই তার নেতৃত্ব্যে কোন যুদ্ধে বা আন্দোলনে অংশ নেয়া উচিত হবে না।
বনী উমাইয়াদের অত্যাচার নির্যাতনের কথা কে না জানে। কিন্তু তাদের নেতৃত্বে যতগুলো যুদ্দ কুফরের বিরুদ্ধে হয়েছে, সেখানে সত্যিকারের মুখলেস ওলামারা অংশ গ্রহন করেছেন। কারণ তারা এই বিষয়টি ভালো করে বুঝতেন যে, কোন দলের সাথে বা তার কর্মকান্ডের বিরুদ্ধে মতভেদ থাকতে পারে, কিন্ত কুফরের বিরুদ্ধে জিহাদে অনৈক্য কোন অবস্থায় জাযেজ নয়।
অথচ আজকে আমরা কোন দলের কর্মীদের দাড়ির দৈর্ঘ্য ছোট দেখতে পেলেই তাদের কে মাইনাস করে দিয়ে তাদের জন্য কুফরের সমান ফতোয়া মেরে দেই। নিজেদের সামনে বিরাট এক কুফরি শক্তির বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ আন্দোলনের চাইতে আমাদের সামনে চলে আসে এখতেলাফী বিষয়।
এসব হিংসা এবং বিদ্ধেষ ভুলে আলেম সমাজের সম্মলিত, এবং ঐক্যবদ্ধ আন্দোলন কর্ম সুচী পারে প্রত্যেকটি কুফরের বিরুদ্ধে মুসলমানদের বিজয় এবং আল্লাহর দ্বীন কায়েমের অনিবার্য দাবি। আল্লাহ আমাদের সকল ওলামাদের কে নিজেদের ব্যক্তি স্বার্থ্য এবং হিংসা বিদ্ধেষ ভুলে গিয়ে, সকল কুফরি মত ও পথকে ধ্বংস করার জন্য ঐক্যবদ্ধ প্রচেষ্টা চালানোর তৌফিক দান করুন। আমিন
বিষয়: সাহিত্য
১৪৭২ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন