ব্লু ফিল্মের ভয়াল থাবা
লিখেছেন লিখেছেন মোস্তাফিজ ফরায়েজী জেরী ২১ মার্চ, ২০১৩, ১১:০০:১৩ সকাল
ব্লু ফিল্ম হচ্ছে পর্ণো মুভির অপর নাম। এই শব্দটি মূলত বাংলাদেশ, ভারত এবং পাকিস্তানে বেশী প্রচলিত। পর্ণো মুভির সাথে কাম সূত্রের একটি সম্পর্ক আছে তা হচ্ছে পর্ণো মুভিগুলোতে যে কাম দৃশ্যগুলো থাকে সেগুলোতে কাম সূত্রের প্রয়োগ বেশির ভাগ ক্ষেত্রে থাকে। তাহলে আমরা বলতে পারি ব্লু ফিল্ম কাম সূত্রের ফল। এই কাম সূত্র গুলোর আবির্ভাব আমাদের এই ভারতীয় উপমহাদেশে। তৃতীয় শতাব্দীতে ভাটশিয়ানা মল্ল নামে একজন ভারতীয় “সংস্কৃত” ভাষায় কাম সূত্রগুলো প্রদান করে। এটা হিন্দু সংস্কৃতির অংশ হিসেবে ধরা হয়। কাম সূত্র গুলোর মূল উদ্দেশ্য এবং লক্ষ হচ্ছে যৌন আকাঙ্ক্ষার পূর্ণ তৃপ্তি।
ফিল্মে পর্ণো গুলো প্রথম আসতে শুরু করে উনবিংশ শতাব্দীর প্রথম দিকে। ১৯০৮ সালে ফ্রান্সে প্রথম এরকম দৃশ্য মুভিতে প্রদর্শিত হয়। তবে প্রথম পূর্ণাঙ্গ ব্লু ফিল্ম তৈরি হয় ১৯৭০ সালে যুক্তরাষ্ট্রে যার নাম “Mona the Virgin Nymph “ । সেই থেকে যাত্রা শুরু। তারপর ইন্টারনেট আবিস্কারের পর থেকে ব্লু ফিল্ম তৈরির মহড়া চলছে। একসময় শুধু যুবক ছেলেরাই ব্লু ফিল্মের প্রতি আকৃষ্ট ছিল কিন্তু এখন এটা সবাইকে আকৃষ্ট করে। এর মাঝে এসেছে ব্লু ফিল্মের ব্যাপক পরিবর্তন। এখন বিষয়টা এমন যে আমার মাঝে মাঝে মনে হয় সভ্যতা পিছনের দিকে যাচ্ছে নাকি সামনের দিকে। মেয়েরা যে ভোগ্য পণ্য এটা প্রদর্শনের একটা মাধ্যম হচ্ছে ব্লু ফিল্ম। প্রশ্ন হল, কেন মানুষেরা ব্লু ফিল্মের প্রতি আকৃষ্ট হয়? কারণটা হচ্ছে এটা ক্ষণিকের জন্য যৌন উত্তেজনার খোরাক মিটায়। কিন্তু এর সবচেয়ে খারাপ বিষয় এটা যৌন আকাঙ্ক্ষা বৃদ্ধি করে এবং সমাজে যৌন অপরাধের পরিমাণ বৃদ্ধি করা সহ নানা অপকর্মের উত্থান ঘটায়।
ব্লু ফিল্ম যেখান থেকে যেভাবে আসুক না কেন আমার বিষয় হচ্ছে বাংলাদেশে এর প্রভাব, কারন আমি বাংলাদেশকে ভালবাসি, আমি বাংলাদেশী। বাংলাদেশে মূলত ব্লু ফিল্ম তার থাবা বিস্তার করা শুরু করে ২০০০ সালের পর থেকে। বাংলা মুভি গুলোতে যে দৃশ্য গুলো ধারন করা হয় তাতে সবচেয়ে খারাপ দৃশ্য হচ্ছে কোন মেয়েকে জোর পূর্বক ধরে নিয়ে ধর্ষণের চেষ্টা। তবুও দৃশ্যটাকে এদেশের সাধারন মানুষ খারাপ বা কু দৃষ্টিতে দেখত। ব্লু ফিল্মগুলো প্রথম পর্যায়ে যখন বাংলাদেশে আসে তখন বাংলাদেশের মানুষ জিনিসটা স্বাভাবিকভাবে নিতে পারে নি। তবে যুবক ছেলেরা এর থাবা থেকে বাঁচতে পারল না। এদেশে এটা রোধে কোন কার্যকরী আইন না থাকায় এদেশের সমাজে এটি মুটামুটি ঢুকে পড়েছে এখন। আমি এমনটিও শুনেছি ঢাকার ফ্রামগেটের ফুটপাতের সিডির দোকানে ক্লাস থ্রীতে পড়া একটি ছেলে ব্লু ফিল্মের ডিস্ক কিনতে এসে তাড়া খেয়েছে।
এদেশের ছেলে-মেয়েদের প্রেম-ভালবাসার ফরম্যাট-টাই পালটে দিয়েছে ব্লু ফিল্ম সহ পশ্চিমা সংস্কৃতি। একজন যুবক ছেলে যদি ব্লু ফিল্ম দেখে রাস্তায় বের হয়- তাহলে তার কাছে মেয়েদেরকে হট কেক মনে হতেই পারে। এখানে অনেকে প্রশ্ন করে থাকেন, পশ্চিমা দেশ অথবা চীনে মেয়েরা অনেক খোলামেলা থাকলেও তাদেরকে অন্য রকম দৃষ্টিতে দেখা হয় না কেন? উত্তর খুবই সহজ, সেখানকার সংস্কৃতি দীর্ঘদিন যাবত খোলামেলা কিন্তু আমাদেরটা নয়। আপনি যদি পশ্চিমা সংস্কৃতিতে শাড়ি যোগ করতে চান তাহলে বিষয়টা যেরকম হবে, ব্লু ফ্লিমের ক্ষেত্রেও সেরকম, অনেকটা চায়ে চিনির বদলে লবণ দেয়ার মত। ব্লু ফিল্ম সহ পশ্চিমা সংস্কৃতির প্রভাবে এদেশে যে ধর্ষণ বৃদ্ধি পেয়েছে তা না মানার উপায় নেই।
এখন খুব খেয়াল করলে দেখতে পারবেন, পশ্চিমারা তাদের সংস্কৃতি আমাদের মাঝে পুশ করছে ইন্ডিয়ান মিডিয়ার মাধ্যমে। আপনি এখন একটি ক্রিকেট ম্যাচও দেখতে পারবেন না স্বপরিবারে, কারন এখন যে বিজ্ঞাপনগুলো দেখানো হয় সেখানে বিকিনি পরা রমণীরাই বেশী থাকে- অতিশয় খোলামেলা সেগুলো। এছাড়া আপনারা জেনে থাকবেন এদেশে অনেক পর্ণো সাইট ওপেন থাকে কিন্তু সেগুলো বন্ধ করতে সরকারের কোন মাথা ব্যথা নেই।
এর আগেই আমি বলেছি ব্লু ফিল্ম সহ পশ্চিমা সংস্কৃতি আমাদের দেশে প্রেমের ফরম্যাট পালটে দিয়েছে, এখন বলব তা কিভাবে করেছে। আমরা দেখেছি আগে এদেশের প্রেমিকেরা প্রেম বলতে লাইলী-মজনু বুঝত, তখন প্রেমের ভিতর শুদ্ধতা ছিল। কিন্তু এখন প্রেমকে ভোগের বস্তু হিসেবে দেখে অনেক তরুন-তরুনীরা। এই ভোগের ধারনাটা কে ঢুকিয়ে দিল এ সমাজে। একটু খেয়াল করলেই বুঝতে পারবেন- এই ভোগের ধারনার উৎস ব্লু ফিল্ম। আর এর প্রভাবেই প্রেমের ভিতর বিশ্বাস কমে গেছে।
সর্বশেষে যা বলার তা হল, আমরা সবাই জানি সমাজ এবং সংস্কৃতি পরিবর্তনশীল। কিন্তু এই পরিবর্তন হতে যেয়ে যেন খারাপ কোন কিছু আমাদের মাঝে না ঢুকে যায় যা পরবর্তীতে আমাদের ভোগান্তির কারন হয়ে দাঁড়াবে, এদিকে আমাদের সজাগ দৃষ্টি রাখা উচিৎ। আমরা হয়তো যুক্তরাষ্ট্রের মত এমন কোন সমাজ চাই না যেখানে অধর্ষিত নারীর সংখ্যা অতিশয় কম থাকবে। আমাদের সমাজ এবং সংস্কৃতি রক্ষায় বিশ্বায়নের এই যুগে জনগণের পাশাপাশি সরকারের সুদৃষ্টি একান্ত জরুরী। ব্লু ফিল্মের মত বিষ সমাজকে কুলষিত ছাড়া ভাল কিছু ঘটাবে তা কেউই মনে করে না। তবে আমাদের দেশে অবশ্যই এমন কোন গোষ্ঠী আছে যারা এগুলো আমাদের সমাজে ঢুকাতে চাই। হাতে সময় নেই চুপ থাকার, এখন স্পেডকে স্পেডই বলতে হবে এবং কুচক্রীদের মুখোশ খুলে দিতে হবে। বলতে হবে- আমরা বাংলাদেশী, আমরা কলুষ মুক্ত সমাজ চাই।
বিষয়: বিবিধ
১৪১৫০ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন