নারী [সংলাপ]
লিখেছেন লিখেছেন মোস্তাফিজ ফরায়েজী জেরী ০৭ ডিসেম্বর, ২০১৪, ০৯:৪৮:০৫ সকাল
-চা খাবেন?
-না সুস্মিতা, চা খাবো না। তুমি না একটা নারীবাদী সংগঠনের সাথে আছো?
-বিশ্ব নারী সংঘের সাথে আছি। আমাকে নিয়ে আপনার এতো খোঁজ কেনো শাহাদাত ভাই।
-ভাবছি প্রেমের প্রস্তাব দিবো।
-সত্যি! নাকি ঠাট্টা করছেন? এই বয়সে প্রেমের প্রস্তাব পেলে তো মন উতলা হয়ে যাবে।
-তাহলে তো ভালোই, আপত্তি নেই তো!
-এত বড় লেখকের সাথে রাত কাটানোও সৌভাগ্যের ব্যাপার। প্রেম তো পবিত্র ব্যাপার! আপত্তি থাকলে আমার মুখেই ভেসে উঠতো।
-সেটাই, এমন রূপসীর সাথে প্রেম ভালোই জমবে। তোমার ঠোঁটের স্পর্শের অপেক্ষায় থাকলাম। আচ্ছা, কয়টা মানববন্ধন করেছো এ সপ্তাহে?
-শহীদ মিনারে দুইটা, একটা সাভারে, একটা কালীগঞ্জে, একটা প্রেসক্লাবে।
-নারীরা কি জেগে উঠবে বলে মনে হয় এবার?
-না, এ সমাজের নারীদের পক্ষে জেগে ওঠা সম্ভব নয়। একটু পেট আলগা করতেই ভয় এদের আর নিজেদের মন আলগা করবে।
-তুমি কি জেগেছো?
-আমাকে দেখেই তো বুঝতে পারছেন। পোশাক-আশাকে আমি আধুনিক। এই বয়সে ঠোঁটে লালচে লিপস্টিক দিতেও ভুলি নি।
-হ্যাঁ দেখতেই তো পারছি। দারুণ আধুনিক। ঠিক আছে মানলাম, তুমি এখন কি ভাবছো?
-কই কিছু না তো, কী ভাববো এখন?
-কিছুই ভাবছো না? আমি কিন্তু অনেক কিছু ভাবছি।
-আপনিতো আমার প্রেমে মশগুল, হয়তো আমার চোখগুলো নিয়েই ভাবছেন।
-না সুস্মিতা, আমি ভাবছি তোমার মন কতটা সাগরের তলে আছে। সারাজীবন তোমরা এই মানববন্ধন খেলাই খেলে যাবে আর মনটাকে সঙ্কুচিত করে গোল একটা বলের আকার দিয়ে রাখবে। তোমার জীবন বলতে এই মানববন্ধন আর কয়েকটি পুরুষ নিয়ে ভাবনা। এর বাইরে কিছু করো তুমি?
-আপনি কি আমাকে এসব সামাজিক কাজ থেকে বিরত থাকতে বলছেন?
-না, তা নয়। সচেতনতা খুব দরকারী। নারীদের মন পরিবর্তনের জন্য যা দরকার তা হচ্ছে বলে মনে হয় না। নারীরা এখনো নিজেদের মানুষ ভাবতে শেখে নি। তারা নিজেদের শুধু দুর্বল ভাবতেই শিখেছে। একটা পুরুষকে একটা পুরুষ থাপ্পড় মারলে অগোচরে থেকে যাবে, কিন্তু একটা পুরুষ একটা নারীকে থাপ্পড় মারলে তা নিয়ে মানববন্ধন হবে, পত্রিকায় কলাম লেখা হবে।
-আমরা শারীরিকভাবে দুর্বল, তাই আমরা সেটা লোকজনের সামনে নিয়ে আসবোই।
-না, তোমরা যতটা না শারীরিকভাবে দুর্বল তাঁর চেয়ে মানসিকভাবে। যুগে যুগে পণ্য হতে হতে নিজেদের পণ্য ভাবতেই ভালোবাসো তোমরা। নিজেদের দুর্বল ভাবতেই ভালোবাসো। মানসিক দুর্বলতা নারীদের যতদিন না কাটছে ততদিন পরিবর্তন শুধু নামীয় পরিবর্তনই থাকবে।
-কবে যে সেটা হবে, সেই অপেক্ষায় প্রহর গুনতে হবে তাহলে।
-এটাই তোমাদের সীমাবদ্ধতা। অপরের উপর ভরসা করে থাকতে ভালোবাসো, যেমনভাবে একজন স্ত্রী তাঁর পতির প্রতি ভরসা করে। নিজেরা খুঁজে বের করো নিজেদের পথ। শুধু হালকা পোশাক কিংবা ঠোঁটের লিপস্টিক মানেই নারী জাগরণ নয়। শুধু নিজেদের পুরুষের অর্ধাঙ্গী হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করাই যদি উদ্দেশ্য হয় তাহলে এ পন্থায় উপকার মিলবে, তবে প্রকৃত জাগরণ থেকে তোমরা দূরেই থেকে যাবে।
-নারীরা এখন কোথায় নেই বলুন? ডাক্তার হচ্ছে, ইঞ্জিনিয়ার হচ্ছে, অভিনেতা হচ্ছে।
-গত একশ বছরে বিজ্ঞানে কতজন নারী নোবেল প্রাইজ পেয়েছে? দেশের কথাই ভাবো, একটা ভালো ডায়গোনস্টিক সেন্টারে কতজন নারী ডাক্তার থাকে, অথচ নারীদের এম বি বি এস ডিগ্রী নেবার হিড়িক। শিক্ষা গ্রহণ করে শিক্ষার প্রয়োগ করতে নারীরা ব্যর্থ।
এমন সময় রফিক আর সামিহা এসে হাজির। রফিক আর সামিহা একটা প্রাইভেট ব্যাংকে চাকুরী করে। সুস্মিতা তাদের বসতে বলে। তারপর বলে,
-কেমন আছো রফিক ভাই?
-কী আর বলবো, ব্যাংকের একটা প্রজেক্ট নিয়ে ঝামেলায় আছি। অনেক কাজের চাপ যাচ্ছে।
-তুমি, সামিহা?
-কীভাবে ভালো থাকবো বলুন? গত সপ্তাহে আসলাম ট্রেলার্সে একটা ড্রেস বানাতে দিয়ে এলাম, সাত দিন হয়ে গেলো তবু এখনো নাকি ড্রেসটা বানানো হয় নি। তুমি তো জানো কালকে আমাদের পার্টি আছে, তুমি থাকছো তো সুস্মিতা?
সুস্মিতা শাহাদাতের দিকে তাকিয়ে দেখে মুচকি হাসছে। চোখ বুজে সুস্মিতা বলে
-না, আমি যাচ্ছি না।
*****************************
বিষয়: সাহিত্য
১৭৯১ বার পঠিত, ১০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
নারীবাদের আসল স্বরুপ সুন্দর ভাবে ফুটে উঠেছে!
অনেক ধন্যবাদ ও ভাল লাগা রেখে যাচ্ছি!!!
চমৎকার লেখা।
মন্তব্য করতে লগইন করুন