উপন্যাস: দ্য প্রাইম মিনিস্টার [পর্ব-৭]
লিখেছেন লিখেছেন মোস্তাফিজ ফরায়েজী জেরী ২২ নভেম্বর, ২০১৪, ০৫:০৬:২৪ বিকাল
-গতরাতের খুনটা তুমি করেছো?
-চেয়ারম্যানকে? আমি নই বিরোধীদলের নেতা করেছে, আমিতো শুধু শুট করেছি।
-কালকে এসেছিলো আক্কাস আংকেল?
-এসেছিলো, বসেছিলো, আঙুল নাড়িয়ে বলেছিলো একটা শুট করতে। আমিতো চেয়ারম্যানকে শুট করার একটা ছুতো খুঁজছিলাম। কিছু করার ছিলো না, আমার বাবা তাকে পছন্দ করেন না।
-শুট তুমি করেছো মানে খুনটাও তুমি করেছো, এতে কোনো সন্দেহ নেই।
-অনেকেই ফুটপাতের আবর্জনা পরিষ্কার করছে। তাদেরকে নিচু চোখে দেখার কিছু নেই।
তাঁর বিশ্বাস এক অসাধারণ বিশ্বাস। ঝক ঝকা ঝক ট্রেন চলেছে আমার শহরকে ফুঁড়ে আর আমি চলেছি তাঁর সাথে। আরেক শহরে যাচ্ছি আমি, আরো বড় শহরে, যেখানে প্রতিদিন প্রতিটি মানুষের মৃত্যু হয়, যেখানে বাঁচার মতো বাঁচতে হলে দম লাগে, যেখানে গাছেদের প্রাণ নেই, যেখানে বসন্ত আসে না, ঢাকা শহর! একবার এক জ্যোতিষী আমাকে বলেছিলো, তুমি কখনো ঢাকাতে যেও না, ওখানে তোমার কষ্ট আছে, গভীর কষ্ট। তবে আজ আমি ঢাকা যাচ্ছি এক গভীর পারিবারিক সমস্যার সমাধানের জন্য। বাবা আমাকে বলতে পারে নি, ‘তুমি ঢাকাতে যেও না, তোমাকে এসব নিয়ে চিন্তা করতে হবে না। সব ব্যবস্থা আমি করছি।’
কেননা তার এখন আর সেকথা বলার অধিকার নেই, তার শুধু অধিকার আছে একাকী কাঠের মতো শুয়ে থেকে মৃত্যুর জন্য অপেক্ষা করার। নিষ্ঠুর হলেও কথাগুলো সেসময়ের জন্য মিথ্যে নয়। সময় অনেক বিশ্বাসকে পাল্টে দেয়। যেমনভাবে একটা দিন পাল্টে দিয়েছিলো সেলিম শাহ্কে। বিদায়ের সময় গতদিনের রুক্ষতা তো ছিলোই না বরং হান্নাহকে বলে দিলো, ‘সাবধানে ঠুস ঠাস করিস। আমি জানি এটা কতো কঠিন কাজ।’
অস্ত্রের ভার বহন করা সত্যিই কঠিন, সন্ত্রাসীদের কাছেও পুলিশের কাছেও। চরমপন্থি এলাকায় জন্ম বলে সব কিছুই জানি এ বিষয়ে, পুলিশের ভয় সম্পর্কে নানান গল্পও শোনা যায়। একবার এক তেল পাম্পে ডাকাত পড়লে পুলিশরা পর্যন্ত দ্বিধান্বিত ছিলো তারা যাবে কিনা, অবশেষে ডাকাতি শেষ হলে তারা যায়। অস্ত্রের ভার বহন করা কলমের ভার বহনের চেয়ে বেশি কঠিন কিনা পরিমাপ করি নি কখনো, তবে সন্দেহাতীতভাবে বলতে পারি দাঁড়িপাল্লায় তুললে একটা পিস্তলের ভারের চেয়ে একটা কলমের ভার বেশি হবে না।
ট্রেনের ভিতর একবারের জন্য চোখ বুজলো না হান্নাহ। মাঝরাত হতেই একটা বই বের করলেন তিনি। আমি উৎসুক হয়ে বইটার দিকে তাকালাম। মাইন কাম্ফ! হিটলারের আত্মজীবনীমূলক বই। হিটলারের বিরোচিত ছবি শোভা পাচ্ছে প্রচ্ছদে, তবে তাঁর প্রচ্ছদে কি দেওয়া যায় এটা নিয়ে আমি আজো সন্ধিহান। কয়েকদিন ধরে ভাবছি ব্যাপারটা। গতকাল রাতেও ভেবেছিলাম। আজকে রাতেও ভাবছি। সে কি একটা পিস্তল হাতে দাঁড়িয়ে থাকবে, নাকি সে থাকবে অভিজাত ভদ্র পোশাকে, নাকি হাত উঁচিয়ে বক্তৃতা দেবে জনগণের উদ্দেশ্যে? আচ্ছা সে কি বেঁচে আছে? তিনি কি বেঁচে আছেন? হতেও তো পারে তিনি আজো বেঁচে আছেন। তবে আড়ালে আবডালে বেঁচে থাকার মানুষ তিনি নন। সুতরাং একটি বিষয়ে নিশ্চিত তিনি আর ইহজগতে নেই। তবে তাঁর যে স্মৃতিকথা আমি লিখছি তার একটা প্রচ্ছদতো থাকতে হবে। তাঁর খুব বেশি ফটোগ্রাফও আমার কাছে নেই। তাঁর সব ফটোগ্রাফ অনলাইন থেকেও অপসারণ করেছে বর্তমান সরকার, তাই তাঁর বিখ্যাত ফটোগ্রাফগুলো আর সংগ্রহ করা সম্ভব নয়। আনামের কাছে অবশ্য তাঁর বিখ্যাত একটি ফটোগ্রাফ আছে। তবে আনামকে আমি এখন কই পাই? ও কি দেশে আছে? নাকি বিদেশে পালিয়েছে? অনেকদিন খোঁজ-খবর নেওয়া হয় নি আনামের। তবে এবার মনে হচ্ছে আনামকে খুঁজে বের করতেই হবে। ওই ফটোগ্রাফটিই শুধু প্রচ্ছদে মানাবে।
যাই হোক প্রচ্ছদের কথা পরে চিন্তা করলেও চলবে। সেদিন রাতে তিনি মাইন ক্যাম্ফ পড়ছিলেন। হঠাৎ আমি জিজ্ঞাসা করে বসলাম, ‘গার্লফ্রেন্ড আছে? অথবা কোনো বন্ধু?’
তিনি বইটি পড়তে পড়তেই বললেন, ‘আমার সকল শত্রুরা একসময় আমার বন্ধু ছিলো। যে সকল শত্রুরা আমার বন্ধু ছিলো না, তারা আমার বন্ধু হবে, তারপর তারা আবার আমার শত্রু হয়ে যাবে, কেননা শত্রুরা কখনো বন্ধু হয় না।’
আমি এরপর তাঁর দিকে অবাক চোখে অনেকক্ষণ তাকিয়ে থাকলাম। আমার দিকে তিনি নজর পর্যন্ত দিলেন না, এতে করে আমি প্রথমবারের মতো দীর্ঘসময় তাঁর শীতল চোখকে অনুভব করার সুযোগ পেলাম।
****************************************************
বিষয়: সাহিত্য
৯৫৭ বার পঠিত, ৬ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
আজ প্রথম পড়লাম!সময়ের বিবর্তনে আসলেই বদলে যায়-বদলে দেয় অনেক কিছু!
এই সময়ের ঘুর্নিপাকে পড়েই এমন চিন্তা আসে-'অস্ত্র ও কলমের মধ্যে কার ভার বেশী'!
ভাল লাগা জানিয়ে আগামী পর্বের অপেক্ষায়- ভাল থাকুন-অনেক ভাল আল্লাহর কাছে এই দোয়া!
মন্তব্য করতে লগইন করুন