উপন্যাস: দ্য প্রাইম মিনিস্টার [পর্ব-৫]
লিখেছেন লিখেছেন মোস্তাফিজ ফরায়েজী জেরী ১৪ নভেম্বর, ২০১৪, ১১:৪৩:৫৩ রাত
‘প্রতিশোধ কখনো অর্ধেক নিতে হয় না। সেটা ছিলো ভুল। আমার একটি ছুরিকাঘাত করা ছিলো ভুল। আমি সেটা সংশোধন করতে আসি নি। আমি এসেছি আমার টেরোরিস্ট জীবনের প্রথম শিক্ষা দেবার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ দিতে।’
আহসান স্যার বসে আছেন চেয়ারে, একথা শুনে একরকম ঘামতে শুরু করেছেন। তবে স্যার অতটা ভীতু নন। আমি বসে আছি হান্নাহ’র পাশে, তিনি পায়ের উপর পা তুলে দৃঢ়ভাবে কথাগুলো বলে ফেললেন। বলার সময় মুখটা স্যারের দিকে ঝুঁকিয়ে নিলেন কিছুটা।
স্যার বললেন, ‘এটা তুমি বলতে পারো না। আমি তোমাকে অসৎ হতে বলি নি। আমি তোমাদের মতো পশুদের জন্ম দিই না। আমি আমার ছাত্রদের সৎ থাকার উপদেশ দিই।’
তিনি মুচকি হেসে বললেন, ‘আরমান কে?’
-আরমান? কোন আরমান?
-ছিয়াশি সালের ব্যাচ, আপনার একজন প্রিয় ছাত্র।
-ও চিনেছি, কি হয়েছে আরমানের?
-কি করে আপনার এই প্রিয় ছাত্রটি?
-আসলে আমার জীবনে এমন ভালো ছাত্র আমি খুব কম পেয়েছি। অসম্ভব মেধাবী ছিলো আরমান। ওতো এখন সচিব। তোমার মতো টেরোরিস্ট নয় সে, বুঝেছ?
-সচিব? হাহ! আপনি কি জানেন ড্রাগ ডিলার কি?
-মানে, এসব কি বলছো?
-আরমান শুধু একজন সচিব নয়, একজন ঘুষখোর, একজন ড্রাগ ডিলার। এরকম শত শত ঘুষখোর, ড্রাগডিলারদের শিক্ষা দিয়ে বানিয়েছেন আপনি। অনেক খুনিও বানিয়েছেন। অনেক মুখোশধারী বানিয়েছেন।
-তোমার কথা কি করে বিশ্বাস করি?
-বিশ্বাস এমন একটা জিনিস যেটা যে কাউকে করা যায় না। আমি আপনার সততাতে বিশ্বাস করতাম। তবে সেই রচনাতে যেদিন আপনি শূন্য বসিয়ে দিয়েছিলেন, সেদিন থেকে আমি আপনার সততাকে কি করে বিশ্বাস করি?
-তোমার কাছে কি কোনো প্রমাণ আছে? আরমান এমন কাজ করতেই পারে না।
কোমর থেকে একটা পিস্তল বার করে হাতে নাড়তে থাকেন তিনি। আমিতো স্বভাবতই ভয় পেয়ে গেলাম। স্যারকে কি তিনি শেষ করে দেবেন? তবে না তিনি তা না করে যা বললেন তাতে অবাক হলাম, ‘আমি জানি আপনি আমাকে বিশ্বাস করেন। কারণ আপনি জানেন যা লেখা ছিলো আমি তাই করছি। শুধুমাত্র আপনিই জানেন আমি কি করতে চলেছি। খুব নিখুঁতভাবে জানেন। কেননা আমি জানি আপনি সেটা পড়েছেন, একবার নয় বারবার। খাতার পাতাগুলো হয়তো কোনো এক রাস্তায় লুটোপুটি খাচ্ছে। তবে আপনি ভুলে যেতে পারেন না।’
-এখনো তোমাকে উপদেশ দিচ্ছি, তুমি ফিরে এসো। তুমি অশান্ত হবার চেষ্টা করো না।
-ভুল উপদেশ, আমি আপনার অন্য ছাত্রদের মতো নই। যেটা বলা হয়ে গেছে সেটা ফেরত নেবার উপায় নেই।
এরপর স্যার আর কিছু বললেন না। কপালটা ভাঁজ করে কপালে দুই হাতের আঙুল দিয়ে কপালের দুপাশে চাপ দিতে লাগলেন। হাতের আঙুলের ইশারায় তিনি আমাদের চলে যেতে বললেন।
তিনি আমাকে বললেন, ‘চলো। যা পাবার পেয়ে গেছি।’
ফেরার পথে আমি তাঁকে জিজ্ঞাসা করলাম, ‘কি পেয়েছো তুমি? আর পিস্তলটা বের করার অর্থ কি, তোমার পিস্তলটা আমার মনে ভয় ধরিয়ে দিয়েছিলো।’
তিনি বললেন, ‘ভয়ের চেয়ে খারাপ জিনিস নেই। ভয় মানুষের মনকে সঙ্কুচিত করে। জীবনকে দুর্বিষহ করে।’
অবাক লাগে সেসময় তিনি কতো কথাই না বলতেন, তবে দিন যতো যেতে থাকলো তাঁর কথা ততো কমতে লাগলো, তার সাথে সাথে তাঁর কথা আরো শক্ত এবং বলিষ্ট হতে লাগলো।
এলার্ম ক্লকটা বেজে উঠলো, আমার বোধ হলো, আমাকে তো এখন ঘুমাতে হবে। বড্ড সেকেলে রয়ে গেছি আমি, তা না হলে এলার্মক্লক! টেবিল থেকে উঠে রুমের জানালা দিয়ে বাইরের দিকে তাকালাম। মনে হতে লাগলো, রাতের এই অন্ধকারের ভিতর থেকে তিনি আমাকে বলছেন, ‘সাবধানে এগোও, অন্ধকারে সাবধান থাকবে, আলোর দেখা না পাওয়া পর্যন্ত সাবধান থাকবে।’
*************************************************
বিষয়: সাহিত্য
১০৮৮ বার পঠিত, ৩ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন