উপন্যাস: দ্য প্রাইম মিনিস্টার [পর্ব-২]

লিখেছেন লিখেছেন মোস্তাফিজ ফরায়েজী জেরী ১০ নভেম্বর, ২০১৪, ১০:০৬:০২ সকাল



যে কারণে সে প্রথমে আমার নজরে এসেছিলো, সে ঘটনাটি একদম ব্যতিক্রমী। কেউ এটা ঘটাতে পারে এটা ভাবাও ভুল। বিংশ শতাব্দীর শেষ বছরের কথা, আমরা তখন ক্লাস সেভেনে পড়তাম। আমাদের ইংরেজি শিক্ষক ছিলেন আহসান আলী। তিনি ক্লাসের একটা ত্রাস ছিলেন। ইংরেজি উচ্চারণ ভুল ধরার যমও বলা যেতে পারে। তার ক্লাসে কেউ কোনো ইংরেজি শব্দের ভুল উচ্চারণ করলে তাকে শাস্তি পেতেই হতো। এজন্য সবাই সতর্ক অবস্থানে থাকতো। তবে আমি তাঁকে কখনো সাবধান থাকতে দেখি নি। ক্লাসে কারর সাথে কথা বলতেও কখনো দেখি নি। তিনি বসতেন ক্লাসের শেষের সারির বেঞ্চে। ঐ বেঞ্চটার কোণার সিটটা তাঁর বুক করা ছিলো একরকম। কেউ সাহস করে ঐ বেঞ্চে বসতে পারতো না।

একবারতো একজন বসার চেষ্টা করলে তার নাক ফাটিয়ে দিয়েছিলেন তিনি। তিনি ছিলেন আমাদের ক্লাসের সবচেয়ে নীরব ছাত্র। কোনোদিন কোন মেয়ের দিকে ফিরেও তাকাতো না। কেনো তিনি এরকম তার ব্যাখ্যা কেউ করতে পারতো না।

অবশেষে ক্লাসের সবাইকে অবাক করে দিলেন তিনি। পরীক্ষায় তিনি সবসময় শেষের দিকে থাকতেন। অথচ ক্লাস সেভেনের দ্বিতীয় সাময়িক পরীক্ষায় তিনি প্রথম হয়ে গেলেন। ক্লাসের সবাইতো তার দিকে আড়চোখে তাকাতে লাগলো। তবে ক্লাসের কারো দিকে আড়চোখে তাকানোর তাঁর বুঝি ইচ্ছে কিংবা সময় ছিলো না।

যাই হোক, আহসান স্যার আমাদের ইংরেজি পড়াচ্ছিলেন, হুট করে টেকোটার মাথায় একটা বুদ্ধি খেলে গেলো। তিনি পড়াচ্ছিলেন ‘Aim In Life’ সম্পর্কে। তিনি একে একে সবার কাছে একটা প্রশ্ন করতে লাগলেন, ‘What’s your aim in life?’

সবাই যে যার মতো উত্তর করতে লাগলো। একটা বিষয় ভেবে অবাক লাগে। ক্লাসের বেশিরভাগ ছাত্র-ছাত্রীই ডাক্তার অথবা ইঞ্জিনিয়ার হতে চায়। আসলে শিক্ষা গ্রহণ করা মানে তখনকার দিনে সবাই বুঝতো ডাক্তার কিংবা ইঞ্জিনিয়ার হওয়া, এটা মনে করে থাকে সবাই। তবে অবাক ব্যাপার হলো সেটা সঠিক নয় কেননা, সবাই এটা বলে পাঠ্যপুস্তকে এগুলো লেখা থাকে বলে। পাঠ্যপুস্তক আসলে আমাদের জীবনের লক্ষ্য এবং উদ্দেশ্যকে সংকীর্ণ করে দিয়েছিলো। শিক্ষকরাও জীবনের লক্ষ্য-উদ্দেশ্যকে ছাত্র-ছাত্রীদের কাছে প্রসারিত করে দিতে ব্যর্থ ছিলেন।

সবার ডাক্তার কিংবা ইঞ্জিনিয়ার হবার আকাঙ্ক্ষা শুনে আহসান স্যারতো অনেক খুশি। তবে তিনি যখন তাঁকে জিজ্ঞাসা করলেন, ‘What’s your aim in life?’

খুব শীতলভাবে উঠে দাঁড়িয়ে উনি বললেন, ‘I want to be a terrorist’।

চকিত এই ব্যতিক্রমী কথা আহসান স্যারের কানে ঢুকলো না। কেননা তার কান প্রস্তুত ছিল শুধু দু’টি বাক্য বাক্য শোনার জন্য, ‘I want to be a doctor’ অথবা ‘I want to be an engineer’।

তাই পিছন ফিরে আহসান স্যার আবার জিজ্ঞাসা করলেন, ‘আবার বলো? এতো আস্তে কথা বলো কেনো?’

আমাদের ভিতরে কেউ কেউ তাঁর কথা শুনেছিলো, কেউ কেউ ঠিক মতো বুঝতে পারে নি। তাঁর শীতল কন্ঠস্বর এ জন্য দায়ি। তিনি শীতল কন্ঠে আবার বললেন, ‘I want to be a terrorist’।

সব ছাত্ররা তাঁর দিকে অবাক চোখে তাকিয়ে আছে। আহসান স্যার কি বলবেন কিছু হয়তো বুঝে উঠতে পারছিলেন না, দাঁতের ফাঁকে ‘টেরোরিস্ট! টেরোরিস্ট!’ শব্দটা চাবাতে চাবাতে তাঁর গালে চড় বসিয়ে দিলেন। আর বললেন, ‘মাথা ঠিক করে আমার ক্লাসে আসবে। টেরোরিস্ট, তাই না?’

ঘন্টা পড়ায় আহসান স্যার চলে গেলেন। তবে বিষয়টা ওখানেই থেমে থাকলো না। ফাইনাল পরীক্ষায় তাঁকে ফেল করানো হলো ইংরেজিতে। কেনো ফেল করানো হয়েছে তা আহসান স্যারই স্পষ্ট করলেন। আমরা বিষয়টা তখনো আঁচ করতে পারি নি, কেননা যে ছেলেটা দ্বিতীয় সাময়িকে ইংরেজিতে নাইনটি প্লাস নাম্বার পেয়েছে তার ফেল করাটা আশ্চর্যের।

তিনি ক্লাসে এসে তাঁকে সবার সামনে ডেকে মশকরা করে বলেন, ‘এই যে দেখছো ছেলেটাকে, সে তো একটা গুপ্তধন।’

তারপর কড়া স্বরে বলেন, ‘টেরোরিস্ট! টেরোরিস্ট হতে চাই। ফাইনাল পরীক্ষার খাতায় তার টেরোরিস্ট হবার পরিকল্পনা পর্যন্ত লিখে রেখে এসেছে। সাহস কতো ছেলেটার! বাংলাতে একটা কথা আছে জানোতো তোমরা? দুর্জন বিদ্বান হলেও পরিত্যাজ্য। একে স্কুল থেকে বহিষ্কারের ব্যাপারে কথা চলছে। আজকেই ওর বাবা-মাকে ডাকা হবে। যতদিন না সে তার জীবনের লক্ষ্য পরিবর্তন না করছে, ততোদিন একে ক্লাসে ঢুকতে দিয়ো না।’

আহসান স্যারের এসব কথায় তিনি একটুও ঘাবড়ে গেলেন না, বরং স্যারকে খুব স্বাভাবিকভাবে প্রশ্ন করলেন, ‘স্যার, কোন বানান ভুল ছিলো? অথবা বাক্য গঠনে? অথবা টেরোরিস্ট হতে যা যা করা লাগে তার কিছু মিসিং ছিলো?’

আহসান স্যার একটা চড় মেরে টানতে টানতে তাঁকে ক্লাসের বাইরে নিয়ে গেলো। তারপর আরো কিছু চটপট শব্দ শুনলাম, অথচ আঘাতের বিপরীতে তাঁর কোনো প্রতিক্রিয়ার শব্দ শুনলাম না। আমি সাহস করে ক্লাসের দরজা দিয়ে উঁকি দিয়ে দেখলাম, তিনি তাঁর মেরুদণ্ড সোজা করে দাঁড়িয়ে আছেন। আর আহসান স্যার তাঁর গালে চড় বসাচ্ছেন।

-----------------------------------------------------------

বিষয়: সাহিত্য

১২০৪ বার পঠিত, ২ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

282917
১০ নভেম্বর ২০১৪ দুপুর ০২:০৭
দুষ্টু পোলা লিখেছেন : ভালো লাগলো অনেক ধন্যবাদ
282981
১০ নভেম্বর ২০১৪ বিকাল ০৪:৫৫
মোস্তাফিজ ফরায়েজী জেরী লিখেছেন : ধন্যবাদ আপনাকে

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File