উপন্যাস: দ্য প্রাইম মিনিস্টার [পর্ব-১]
লিখেছেন লিখেছেন মোস্তাফিজ ফরায়েজী জেরী ০৯ নভেম্বর, ২০১৪, ১১:০৬:২৬ সকাল
আগে ভাগেই শুরু করে দিলাম। শুদ্র দ্য গংরিডের মতো দ্রুতো এগুবে না কাহিনী। অতি স্বযত্নে তৈরি করতে যাচ্ছি দ্য প্রাইম মিনিস্টার। অনেকে আছে যারা লেখার থিম চুরি করতে পটু। তাদের বলে রাখা ভালো বাংলাদেশের আই সি টি এক্ট আছে। তার উপর আবার লেখাটি একটি অনলাইন সংবাদভিত্তিক পোর্টালে প্রকাশ হতে যাচ্ছে ধারাবাহিকভাবে। সুতরাং থিম নকলের চেষ্টা থেকে বিরত থাকুন।
-মোস্তাফিজ ফরায়েজী জেরী
------------------------------------------------------------------------------------
ছাইদানিটা টেবিলের এককোণে মিটি মিটি করে আমার সিগারেটের দিকে তাকাচ্ছে, হাতের মৃতপ্রায় সিগারেটটাকে গুঁজে দিলাম ছাইদানিতে। সামনের স্তুপাকার কাগজগুলোকে কেমন জানি মনে হতে লাগলো। এখনো অনেক বাকি। আমি পারছি তো? ভাবনাটা আমার মনকে বার বার নাড়া দিচ্ছে। তেষট্টি বছরের একজন মানুষের স্মরণশক্তি কেমন হয় জানি না, তবে আমি এখন তেষট্টিতে আছি। অনেক কিছুই ভুলে গেছি এতোদিনে, অনেক কিছুই ম্লান হয়ে গেছে, আবার চারপাশের অনেক কিছুই পাল্টে গেছে। অতি স্বাভাবিকভাবে আমার কর্মক্ষমতাও কমে গেছে। সবকিছু আর সবাইকে ছেড়ে এখন বসবাস করি একটা বাংলোতে। আমার সঙ্গী বলতে পনের বছরের একটি এতিম ছেলে আব্দুল। বেশ কাজের ছেলে আব্দুল, চা টা এতো দারুণ বানায় যে আমার ঠোঁটে সবসময় লেগে থাকে। ওর চা না খেলে আমারতো সকালটা পারই হয় না।
প্রতিদিনের মতো আব্দুল আমার টেবিলে চা দিয়ে গেলো, বললো, ‘আপনার চা।’
মাথাটা ঘুরিয়ে আব্দুলের দিকে তাকিয়ে বললাম, ‘হু, তুমি স্কুলে যাবে না।’
- আমার স্কুল একদম ভালো লাগে না।
-কি ভালো লাগে তোমার?
-ঘুরে বেড়াতে।
-সব কিছু ভালো লাগে না, কিছু কিছু জিনিস ভালো না লাগলেও করতে হয়। নিজের ভালোর জন্য করতে হয়, করতে হয় সমাজের ভালোর জন্য।
-ওকে, আমি স্কুলে যাচ্ছি। আপনি কিন্তু বাইরে যাবেন না। শুনেছি আজকাল এই এলাকায় কিছু সন্ত্রাসী ওঁত পেতে আছে। পুলিশ অবশ্য তাদের ধরার চেষ্টা করছে।
-ঠিক আছে, তুমি সাবধানে যেও।
আব্দুল চলে গেলে বেলকোনিতে আমি একা পড়ে রইলাম। আমার সঙ্গী এখন বাইরের আকাশ, বাতাস আর গাছপালা। হঠাৎ হাতের ধাক্কায় কলমটা পড়ে গেলো টেবিল থেকে। কলমটা হাতে তুলে নিলাম। ভাবতে লাগলাম, এখন কি কলম দিয়ে কেউ লেখে? না তা তো নয়। লেখকরাও এখন টাসপ্যাড অথবা কি বোর্ডে গুতোগুতিতে ব্যস্ত। আমি কি তাহলে এযুগের কোন লেখক নয়? আসলে আমি কখনোই লেখক ছিলাম না। আমার কোনো বই এখনো প্রকাশ হয় নি, প্রকাশ করতেও চাই না। প্রকাশ করেই বা কি হবে, সব কিছু কি প্রকাশ পায়? সব সত্য যেমন প্রকাশ পায় না, সব মিথ্যাও তেমনি প্রকাশ পায় না। প্রকাশিত হওয়া না হওয়া আপেক্ষিক একটা ব্যাপার। তবে অবাক ব্যাপার হলো যা প্রকাশ পায় না তার প্রতি মানুষের আজন্ম আগ্রহ। কি হয়েছিলো? কি হবে? কি হচ্ছে? এসব প্রশ্ন হচ্ছে প্রকাশকে বের করে আনার এক ধরনের বাক্যবাণ । আর আমরা এই বাক্যবাণে মন্ত্রমুগ্ধ হয়ে হর হর করে সব প্রকাশ করতে থাকি।
কলমটা এখন আমার হাতে একটু পরেই সামনের সাদা পৃষ্ঠার উপর তেলাপোকার মতো চলা শুরু করবে। আর আমার মনের কথাগুলো বলা শুরু করবে। মনের কথা মুখে আসে এটা আমরা জানি। তবে হাতের আঙ্গুলে কিভাবে আসে এটা কোন বিজ্ঞানী আবিষ্কার করতে পেরেছে কিনা জানি না, বোধ করি জানার প্রয়োজনও নেই।
মাঝে মাঝে কলমটাকে দোষারোপ করতে মন চাই, মাঝে মাঝে মনকে, মাঝে মাঝে হাতের আঙ্গুলগুলোকেও। কেননা আমি যা লিখছি তা কি ঠিক করছি? না, আমি তো কোন মহান বিষয়ে লিখছি না। আবার কোন এডভ্যাঞ্চার সিরিজও না। আমি লিখছি একজন অপরাধীর জীবনকথা। যার জীবনের শুরু থেকে শেষ পুরোটা অপরাধকর্মে ভরা। তবে যার সম্পর্কে লিখছি তিনি আমার নজরে অসাধারণ। তাঁর মতো দ্বিতীয় মানব আমি আর কখনো দেখি নি, তাঁর মতো মহান কেউ হতে পারে না। হয়তো সেজন্যই আমি লিখছি, তাঁর কাছে আমার দায়বদ্ধতা থেকে লিখছি।
আমি তাঁর সম্পর্কে জানি, কেননা সেই ছোটবেলা থেকে আমরা একি সাথে পড়েছি। আর বড়ো ব্যাপার হলো আমি ছিলাম তাঁর সেক্রেটারি। বলতে গেলে তাঁর জীবনের অনেক মূহুর্ত আমি পেয়েছিলাম। আমি তাঁকে কাছ থেকে দেখেছি, আমি তাঁকে দূর থেকে দেখেছি। আমি তাঁর মনটাকে চেনার চেষ্টা করে গেছি আজীবন। তবু আজো তাঁকে পুরোটা চিনতে পারি নি। অবশ্য তিনি এখন আমার টেবিলের ওপরেই থাকেন।
****************************************************
বিষয়: সাহিত্য
১১২০ বার পঠিত, ৯ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
ভালো লাগা রেখে গেলাম প্রথম পর্বটিতে।
গল্প ভাল হয়েছে ধন্যবাদ ভাইয়া ।
মন্তব্য করতে লগইন করুন