শুদ্র দ্য গংরিড: বনরাজ্যের যুদ্ধপ্রস্তুতি
লিখেছেন লিখেছেন মোস্তাফিজ ফরায়েজী জেরী ০৪ নভেম্বর, ২০১৪, ০১:২১:৪২ দুপুর
অবশেষে সেই দিন আসলো। যুদ্ধের দিন। রক্তের দিন। মানুষের জীবন নাশের দিন। নিকৃষ্ট দিন। রাজা আজাকার বাহিনী এগিয়ে চলছে যুদ্ধ ময়দানের দিকে।
‘আমরা কি করে সহযোগিতা করতে পারি? এটা যুদ্ধ, আমাদের কাছে অস্ত্র নেই। আমরা কিছুই করতে পারবো না। অসহায়ের মতো হয়তো বঙ্গরাজের পরাজয় দেখতে হবে আমাদের।’, বাঘ অতি দুঃখের সাথে বলে।
হ্যাঁ, বনের প্রাণীরা আজ আবার একত্রিত হয়েছে। এর আগে একত্রিত হলেও তারা কোনো সিদ্ধান্ত নিতে পারে নি। শুদ্র একপাশে দাঁড়িয়ে আছে। বড্ড নীরব ভাবে দাঁড়িয়ে আছে, চোখে মুখে যুদ্ধে যাবার ইচ্ছা। তার কাছে মনে হতে লাগলো, সে আজ অনেক দূরে। সে কোন একটা কিছু হারিয়ে ফেলেছে। শুধু বনই কি তার! লোকালয় কি তার কাছে কিছু নয়? যদি তাই হয়ে থাকে তবে সে নীরব কেন। কোন শক্তি কিংবা নিষেধ কি তাকে ঠেকিয়ে রাখতে পারবে? তার কাছে তলোয়ার আছে, হাফাও দাঁড়িয়ে আছে পাশে। সে চাইলেই তো যুদ্ধের ময়দানে চলে যেতে পারছে না।
চিন্তা ভাবনা করে শিয়াল পন্ডিত বলে, ‘এটা সম্ভব নয়। তলোয়ারের সামনে আমরা অসহায়, বর্শার সামনে আমরা অসহায়। আমরা সত্যিই রাজা আজাকাকে সহযোগিতা করতে পারছি না।’
কচ্ছপ বলে ওঠে, ‘এটা করতেই হবে। একটি উপযুক্ত দল যেতে হবে সেখানে। তা না হলে রাজা আজাকার রাজ্যের পতন হবে। এই যে দেখছো গাছপালা, এগুলো স্বীকার হবে খাবলুশের নির্যাতনের স্বীকার।’
বাঘ বলে, ‘এমন কোন দল কি আছে তারা খাবলুশের বাহিনীর সাথে যুদ্ধ করতে যাবে?’
কচ্ছপ বলে, ‘তা না হলে বঙ্গরাজ্য আর বনরাজ্যের বিনাশ ঘটবে, আমাদের হতে হবে খাবলুশের দাস। তার কালো জাদুর শক্তির প্রখরতা সম্পর্কে এখনো আমরা ধারণা করতে পারছি না।’
কুমির বলে, ‘কঠিন একটা সিদ্ধান্ত এটা।’
এসব কথা বার্তা যখন চলছে তখন পিরু বলে ওঠে, ‘শুদ্র! শুদ্র!’
সবাই এদিক-ওদিক তাকিয়ে দেখে শুদ্র নেই। কোথায় গেলো শুদ্র? বন রাজা বাঘ হুকুম দিলেন শুদ্রকে খুঁজে আনতে।
শুদ্রকে পাওয়া গেলো নদীর ধারে। একা একা তার তলোয়ার দিয়ে বিভিন্ন কসরত করছিলো শুদ্র। তার এত বেশি আশাহত ছিল যে মাঝে মাঝে চিৎকার করছিলো। তার আশা ছিলো, রাজা আজাকা তাকে শেষ মূহুর্তে হলেও ডাকবে। কিন্তু ডাকে নি।
আসলে রাজা আজাকা এতটা নিষ্ঠুর নয়। রাজা আজাকা ঠিকই বুঝতে পেরেছিল, এই যুদ্ধে শুদ্রের মতো বীর যোদ্ধার গুরুত্ব কতটুকু। এছাড়া কেদুকিকে শক্তি পরীক্ষায় পরাজিত করার ঘটনাও তার কানে এসেছিল। তাই শেষ মূহুর্তে দু’দুবার বনে দূত পাঠিয়েছিল রাজা আজাকা। তবে কোনো দূতই বন পর্যন্ত পৌঁছাতে পারে নি। তাদেরকে আগেই হত্যা করেছে কেদুকির চরেরা। কেদুকি ভালো করে জানতো এ যুদ্ধে যদি শুদ্র অংশগ্রহণ করে আর যুদ্ধে যদি জয়ী হয়, বীর খেতাবটা শুদ্রই অর্জন করবে। এতে করে রাজকুমারীর কাছে তার বীর হবার সাধ মিটে যাবে।
তবে যা কিছু ঠিক মতো হয় না, তার কিছু বাকী থাকে। আর ভাগ্য যদি অতল সাগরে থাকে তাও পরিবর্তন করা যায় না।
পিরু উড়তে উড়তে এসে হাফ ছাড়তে ছাড়তে বলে, ‘সারা বন তোমাকে খুঁজে খুঁজে হয়রান।’
শুদ্র বলে, ‘কি হয়েছে? আমার শোকের দিনে আমাকে খোঁজার কি আছে? আজ বঙ্গ রাজ্যের হাজার হাজার লোক মারা যাবে। আর বনের প্রাণীরা এখনো সিদ্ধান্ত নিতে পারে নি। এর মানে বঙ্গের পতন।’
পিরু বলে, ‘মহারাজা বাঘ বলেছে তোমার কিছু করা উচিৎ। বনরাজ্যের তোমার প্রয়োজন।’
শুদ্র হাফার পিঠে উঠে সভাস্থলে যায়।
শিয়াল বলে, ‘শুদ্র তুমিই পারবে। তুমি জানো বনের কোন সিদ্ধান্ত মানষদের নেবার অধিকার নেই। তবে আজ তোমাকে সে অধিকার আমরা দিতে বাধ্য হচ্ছি। আমরা গত কয়েকদিন মিটিং করে কোন কিছু সিদ্ধান্ত নিতে পারছি না।’
বাঘ বলে, ‘তুমি জানো আমরা চেষ্টা করছি। আমরা মন থেকে চাই রাজা আজাকাকে সহযোগিতা করতে। আমরা চাই বঙ্গরাজ্যের স্বাধীনতা।’
কচ্ছপ বলে, ‘তোমাকে, তোমাকেই ঠিক করতে হবে কোন দলটি যুদ্ধে যাবে। এবং তোমাকেই তাদের যুদ্ধক্ষেত্রে নিয়ে যেতে হবে।’
শুদ্র তার তলোয়ারটা উচিয়ে চারিদিকে তাকাতে থাকে। সব শ্রেণীর প্রাণীদের দিকে তাকাতে থাকে শুদ্র। তারপর সবার মাঝখানে গিয়ে বলে, ‘অবশ্যই আমি জানি এখানে কারা যুদ্ধের জন্য সবচেয়ে বেশি উপযোগী। আর আমরা যুদ্ধে যাচ্ছি বনরাজ্যের দূত হয়ে। যেই দলটি যারাই হোক না কেন তাদেরকে কোন বিপদে ঠেলে দেওয়া হচ্ছে বলে মনে করবে না। আসলে আজ যে দলটি যুদ্ধে যাবে তারা পুরাণের আশীর্বাদপুষ্ট। তারা বনরাজ্যের বীর।’
তারপর শুদ্র চারিদিকে তাকাতে তাকাতে তার হাত উঁচিয়ে একটা দলের দিকে নির্দিষ্ট করে বলে, ‘তোমরা, তোমরাই সেই দল।’
সবাই চুপ হয়ে যায়। হ্যাঁ এরাই তো। এরাই সবচেয়ে বেশি উপযুক্ত।
দলনেতাও কিছুক্ষণ চুপ থেকে বলে, ‘কি? আমরা? হা হা হা। খাবলুশের এবার খবর আছে। আমরা খাবলুশকে ছেঁড়ে দেবো না।’
দলনেতার কথা শুনে সবাই হেসে ওঠে।
দলনেতা বলে, ‘চলো আমরা এখনি প্রস্তুত।’
শুদ্র বলে, ‘না, এখনো আমাদের হাতে সময় আছে। আমরা যদি কিছু কৌশল অবলম্বন করি তবে তোমার দলের কম ক্ষতি হবে, তাই নদীর ধারের মহাসভাস্থলে জড়ো হও। ওখান থেকেই আমাদের যাত্রা শুরু হবে।’
বাঘ দলনেতাকে বলে, ‘এখন থেকে শুদ্রের নির্দেশ মেনে চলো। যুদ্ধের শেষ পর্যন্ত মেনে চলো। যতক্ষণ প্রাণ থাকে যুদ্ধে লড়াই করে যাবে। রাজা আজাকাকে রক্ষায় তোমরা ভূমিকা রাখবে। তোমরা যুদ্ধ করবে বীরের মতো। তোমাদের কাছে অস্ত্র নেই, তবে এমন কিছু আছে যা ওদের কাছে নেই।’
শুদ্রের নির্দেশমতো দলটি জড়ো হয় মহাসভাস্থলে। শুদ্র চিৎকার করে তাদের যুদ্ধের অস্ত্রসম্পর্কে বলে, ‘তোমাদের শত্রু অনেক। তীর, তলোয়ার, বর্শা। এই তিনটি তোমাদের বড় শত্রু। এই তিন শত্রুকে জয় করতে পারলে যুদ্ধে তোমরা বীরের মতো লড়তে পারবে। তোমরা সবচেয়ে বেশি সাবধান হবে বর্শাদেরকে। আমাদের প্রথম কাজ হবে বর্শাবাহীদের উপর অতর্কিত আক্রমণ চালানো। তীব্র গতিতে ছুটে যাবো আমরা। এবং আমাদের গতি শেষ হবে যুদ্ধ শেষ হলে। খাবলুশের পরাজয় হলে।’
বনরাজ্যের যুদ্ধপ্রস্তুতির ব্যাপারটা প্রাসাদে যেয়ে পৌঁছায়। তাই একজন রাজদূত আসে বিষয়টা পর্যবেক্ষণ করতে। শুদ্র তার কাছে জানতে পারে, রাজা আজাকার বাহিনী পুর্বদিকে থাকবে, আর খাবলুশের বাহিনী থাকবে পশ্চিমে। খাবলুশ সিদ্ধান্ত নেয় তার বাহিনী আক্রমণ করবে দক্ষিণ দিক থেকে। কেননা, এই দিকটা এতটা দুর্গম যে কেউ ধারণা করতে পারবে না এইদিক থেকে কোন আক্রমণ হতে পারে। তবে শুদ্রের বাহিনীর কাছে এই দুর্গম পথ কিছুই নয়।
শুদ্র বলে, ‘তোমাদের প্রথম অস্ত্র হবে তোমাদের পা। আমরা যুদ্ধে জিততে যাচ্ছি হারতে নয়। তাই সবাই বীরের মতো লড়বে। জানিয়ে দিবে বনরাজ্য আছে তার স্বমহিমায়।’
শুদ্র তার বাহিনী নিয়ে চলছে, বঙ্গরাজ্যের যোদ্ধা হিসেবে নয়, বনরাজ্যের সেনাপতি হিসেবে। তার পিছে হাজার হাজার বন্য সৈন্য।
*****************************************
বিষয়: সাহিত্য
১০১০ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন