শুদ্র দ্য গংরিড: ডাইনিপুত্র খাবলুশ

লিখেছেন লিখেছেন মোস্তাফিজ ফরায়েজী জেরী ০২ নভেম্বর, ২০১৪, ০৯:৪৯:৪১ রাত

U13

‘এটা সত্যি, সেখানে একজন আছে। আমি এও শুনেছি বনের প্রাণিদের নিয়ন্ত্রণ করতে পারে সে। আমি জানি এটা তোমার জন্য ভয়ঙ্কর।’, তিররি বলে।

খাবলুশ বাজখাই গলায় চিৎকার করে বলে, ‘এসব আমি শুনতে চাই না। উপায় বাতলাও।’

তিররি বলে, ‘এটা তুমি ভালো করেই জানো। একটাই উপায়। গাছের শক্তি দিয়ে নিজেকে ভরপুর করে নেওয়া। আর সেটা করতে হলে তোমাকে বঙ্গরাজ্য জয় করতেই হবে। বঙ্গের বিশাল জঙ্গল সম্পর্কে সবাই জানে।’

খাবলুশ বলে, ‘ঠিক আছে, আমি বঙ্গ জয় করে তারপর ওকে শেষ করবো। বঙ্গজয় আমার কাছে হাতের মামুলি এখন।’

তিররি বলে, ‘বঙ্গরাজ্য জয়টা পতঙ্গরাজ্য জয়ের মত সহজ হবে না। কেননা ওদের সন্না আছে। আমাদের আরো কালো জাদুকর দরকার।’

খাবলুশ সেনাপতিকে ডেকে নির্দেশ দেয়, ‘পতঙ্গ রাজ্যের সাধকদের ডেকে আনো।’

সেনাপতি সাধকদের ডেকে আনলে, খাবলুশ তাদের কালো জাদুকরদের দলে যোগ দিতে বলে। একজন সাধক বলে ওঠে, ‘না, আমরা কালো পথে যেতে পারবো না।’

সাথে সাথে সেনাপতি তার তরবারি বের করে তার মাথাটা ধড় থেকে আলাদা করে দেয়, গল গল করে রক্ত বের হয়। এরপর একজন সাধক তার কারিশমা প্রয়োগ করার চেষ্টা করে সেনাপতির উপর। তিররি তার হাতের দন্ডটা দিয়ে ইশারা করতেই লোকটা শুন্যে উঠে যায়, দন্ডের ইশারায় নিচে পড়ে থেতলে যায় তার মাথা, তার নিঃশ্বাস এক নিমেষে ফুরিয়ে যায়।

এবার খাবলুশ বলে, ‘আর কেউ?’

সাধকেরা খাবলুশের পায়ে মাথা ঠুকে চলে যায়। পরদিন থেকে তাদেরকে কালো জাদু বিদ্যা শিক্ষা দিতে থাকে তিররি। কয়েকদিনেই তারা সৈন্যদের গায়ে আগুন ধরানোর পদ্ধতি শিখে ফেললো। এমনকি এই শিক্ষা দিতে গিয়ে নিজেদের সৈন্যদের পুড়িয়ে মারতে দ্বিধা করলো না।

এখন কথা হলো খাবলুশ কেন কালো জাদুর দিকে ঝুকলো, কেনোই বা তার কোন মায়া দয়া নেই। সে ঘটনা আরো মর্মান্তিক। খাবলুশ যে রাজ্যের রাজা ছিল, সে রাজ্যের নাম ভেলকি। ভেলকি রাজ্যে ছিল এক রাজা যার নাম ছিল তাবলুশ, তাবলুশ ছিল একজন দুশ্চরিত্রা রাজা। রাজ্যের সুন্দরী সব নারীদের জোর করে ভোগ করতো সে।

একদিন তাবলুশ রাজ্যের সেরা সুন্দরী ‘রূপবতী’-কে বিয়ে করলো। রূপবতী ছিল সে রাজ্যের মন্ত্রীর মেয়ে। বিয়ের পরও রাজা তার কুকর্ম ছাড়তে পারলো না। বরং রূপবতীকে রাতে সময় না দিয়ে অন্য নারীদের নিয়ে মত্ত থাকতো। তাই রূপবতীর দিন কাটাতো অতি দুঃখে। রূপবতীর এই দুঃখ দেখার কেউ ছিল না। ছিল শুধু এক ডাইনি। ডাইনিটা প্রতিদিন রাতে রূপবতীর কান্না করা দেখতো আর মাঝে মাঝে অট্টহাসিতে ফেটে পড়তো। আর মাঝে মাঝে এমন কান্না শুরু করতো যা রূপবতীর কান্নাকেও ছাড়িয়ে যেতো। ডাইনি অপেক্ষা করতো হয়তো কোনো এক রাতে রূপবতী জানালা খুলবে। তবে বছরের পর বছর পার হলেও রূপবতী জানালা খুলতো না। এরি মাঝে রূপবতীর একটা মেয়ে সন্তান হলো। তাবলুশ এতে বিরক্ত হলো। নিষ্ঠুর তাবলুশ জানালো তার ছেলে সন্তানই চাই, তাই সেই মেইয়ে সন্তানকে আঁতুড় ঘরেই হত্যা করা হলো। একথা রূপবতী জানতে পারলো না। রূপবতী ভাবলো সে নিজেই অপয়া, তাই মৃত সন্তান জন্ম দিয়েছে। এরপর থেকে তাবলুশ রূপবতীকে একদমই সময় দিতো না।

এসব কোন কিছুই ডাইনির অগোচরে থাকলো না। ডাইনি সব কিছুরই খোঁজ খবর নিয়ে রাখতো। ডাইনিটা সব ঘটনা জানার পর তাবলুশের প্রতি তার ভালোবাসার সৃষ্টি হলো। খারাপ শক্তির ভালোবাসা খারাপের প্রতিই হবে, এটাই স্বাভাবিক। ডাইনি তাবলুশকে মন থেকে ভালোবাসতে লাগলো। তবে রূপবতী তার জানালা খোলার আগে কিছুই করার ছিল না।

তবে ডাইনির সেই শুভক্ষণ চলে আসলো। একবার রাজ জ্যোতিষীরা বললো, আজকে যে পূর্ণ চাঁদ দেখা যাবে এক জীবনে তা আর দেখা যাবে না। এ কথা জানতে পেরে রূপবতীর মন উসখুস করতে লাগলো চাঁদ দেখার জন্য। তাই রূপবতী সেই রাতে আকাশের পূর্ণ চাঁদ দেখার জন্য রূপবতী বাইরে আসলো। এটা দেখে ডাইনি খুশিতে আত্মহারা হলো। এরপর কি হয়েছিলো তা কেউ জানে না, তবে রূপবতীর রূপ ধারণ করলো ডাইনিটা। ডাইনিটা হয়ে গেলো রাণী। ডাইনি রূপবতীর বেশে তাবলুশের কাছাকাছি আসলো। ডাইনি তার কালো ক্ষমতার বলে তাবলুশকে আবিষ্ট করে ফেললো। তাবলুশ অন্য নারীদের ছেড়ে ডাইনিকেই সময় দিতে শুরু করলো। এর কিছু দিন পরেই ডাইনির পেটে জন্ম হলো এক সন্তান যার নাম রাখা হলো খাবলুশ।

তাবলুশতো এতে খুশিতে আত্মহারা। রাজ্যে আনন্দের জোয়ার বইতে লাগলো। তবে ডাইনির মনে আরো খারাপ ইচ্ছা ছিল। ডাইনি তার নীলনকশা আঁকতে থাকে। এদিকে ডাইনি রাণী হবার পর রাজপ্রাসাদে মাঝে মাঝেই একটা ঘটনা ঘটতে লাগলো। একে একে রাজকর্মচারীরা উধাও হতে শুরু করলো। মন্ত্রী এ বিষয়ে রাজাকে জানালেও তাবলুশ বিষয়টাকে উড়িয়ে দিলো।

এছাড়া রূপবতীর ছদ্মবেশী ডাইনিকেও সন্দেহ করতে লাগলো মন্ত্রী। মন্ত্রীর নিজের কাছে তার মেয়ে আচরণ সন্দেহজনক লাগে। আগে প্রতিদিন রূপবতী তার খোঁজ নিতো, তবে এখন আর প্রায় খোঁজই নেয় না। এছাড়া রূপবতীর চোখ হঠাৎ করে কিভাবে রক্তবর্ণ হলো তাও বুঝতে পারলো না। যখনি এ বিষয়ে সে জানতে চেয়েছে তখনি রূপবতী বলেছে, ‘ও কিছু না বাবা, রাতে ঘুমাতে পারি না ঠিক মতো এখন।’ তবে ওই রক্তিম চোখ যে নির্ঘুম থাকার জন্য তা মন্ত্রী মেনে নিতে পারে না। কেননা, রুপবতীর চোখ যে শুধু রক্তবর্ণ হয়েছে তা নয়, চোখের আবেগও হারিয়ে ফেলেছে। রূপবতীর মায়াবী চোখটাকে এখন ভয়ঙ্কর লাগে মন্ত্রীর কাছে।

সে যাই হোক, তাবলুশ আর ডাইনির মিলনে খাবলুশ জন্ম নেওয়ায় খাবলুশ ছোট থেকেই অন্য রকমের হলো। রক্ত মাংসের মানুষ হলেও তার ভিতর খারাপ শক্তি লুকায়িত ছিলো। ছোটবেলায় তাকে কেউ কোলে নিয়ে আদর করতে গেলে তার হাত কামড়ে দিতো, এমন কি রাজা তাবলুশের হাতেও একদিন কামড় বসিয়ে দেয়। আস্তে আস্তে সে যত বড় হতে লাগলো ততো ভয়ঙ্কর হতে থাকে খাবলুশ। পাঁচ বছর বয়সেই ছুরি দিয়ে এক নারী রাজকর্মীকে হত্যা করে ফেলে খাবলুশ। নিজের ছেলের খারাপ শক্তির এই উত্থান দেখে ডাইনি শুধু হাসতে থাকে আর তার লালিত আশার আরো ডালপালা গজাতে থাকে। এছাড়া ছোটবেলা থেকেই খাবলুশ প্রাণীদের হত্যা করতে থাকে। প্রাণীদের হত্যা করে সে খুব মজা পায়। পাখি ধরে ধরে হত্যা করা তার কাছে মজার ব্যাপার হয়ে দাঁড়ায়। এছাড়াও আস্তাবলের ঘোড়াদের হত্যা করেও সে মজা পেতো।

এরি মাঝে ডাইনি তার স্বরূপ উন্মোচন করলো। একের পর এক রাজকর্মচারীর রক্ত তো খেতে লাগলোই, এছাড়া খাবলুশকে কালো শক্তির শিক্ষা দিতে লাগে। কালো শিক্ষা পেয়ে খাবলুশ আরো শক্তিশালী হয়ে উঠলো, আরো নিষ্ঠুর হয়ে উঠতে লাগলো।

তখন থেকেই খাবলুশ যেদিকে যেত, পশু পাখিরা তাকে দেখে পালাতো। খাবলুশের উপস্থিতিতে পিঁপড়ারা নড়াচড়া করতে ভয় পেতো। এভাবে যখন খাবলুশের বয়স বারো বছর হলো, ডাইনি তার আসল চাল দিলো। সে খাবলুশকে স্বপ্নের ভিতর ফুসলাতে লাগলো তাবলুশকে হত্যা করার জন্য। ডাইনিটা স্বপ্নে এসে বলতো, ‘হত্যা কর তোর বাবাকে, তুই হয়ে যাবি রাজা। একটা ছুরিকাঘাতই যথেষ্ট। হত্যা কর, তুই মহান রাজা হয়ে যাবি।’

এমনিতেই বাবাকে দেখতে পারতো না খাবলুশ, তার উপর আবার এই স্বপ্ন তাকে তাড়া করে বেড়াতে লাগলো। তাই একদিন ঘুমন্ত রাজা তাবলুশকে হত্যা করে ফেলে তার নিজ পুত্র খাবলুশ। এসব ঘটনা শুধু একজনই জানতো সেটা হলো রূপবতীবেশী ডাইনি। তাই রাজার মৃত্যুর পর রাজার আসনে খাবলুশকে বসানো হলো। খাবলুশ রাজ আসনে বসার পর থেকে আরো শক্তিশালী হয়ে উঠলো। ডাইনি তার সন্তানকে রাজার আসনে দেখে খুশিতে আত্মহারা। ডাইনি খাবলুশের ভিতর কালো শক্তির সমস্ত নির্যাস একে একে দিতে থাকে, আর খাবলুশ ভয়ঙ্কর হতে থাকে। তার চেহারাও হয়ে উঠতে থাকে ভয়ঙ্কর। শোষণে শোষণে ভেলকি রাজ্য নিঃশেষ হতে থাকে।

যে রাজ্য একদিন ছিল শান্ত-সুখের রাজ্য, সে রাজ্যে কালো ছায়া নেমে আসে। কৃষকের ফসলাদি উৎপাদন বন্ধ হয়ে যায়। সবাই নির্ভরশীল হয়ে ওঠে রাজা খাবলুশের উপর। খাবলুশ এক সময় ঘোষণা করে, সেই স্রষ্টা। তাকে বাদে রাজ্যের কেউ অন্য স্রষ্টা মানলে তাকে হত্যা করে হবে। এসময় ভেলকি রাজ্যে অনেক বিদ্রোহী সৃষ্টি হয়, যাদের সবাইকে কারাবন্দী করে রাখে খাবলুশ।

*************************************

বিষয়: সাহিত্য

১১০৩ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File